The Kite Runner – Khaled Hosseini

The Kite Runner – Khaled Hosseini
“When you kill a man, you steal a life. You steal his wife’s right to a husband, rob his children of a father. When you tell a lie, you steal someone’s right to the truth. When you cheat, you steal the right to fairness.”


আমেরিকায় বসে ৩৮ বছর বয়সী আমির ২০০১ সালের এক মেঘলা শীতের দিনে অতীতের ভাবনায় নিবদ্ধ হয়ে ভাবছিল ১৯৭৫ সালের এমনই এক শীতের কথা। তখন আমির ১২ বছরের বালক। আফগানিস্তানের কাবুলের কাছাকাছি ওয়াজির আকবর খান শহরে বাবার সাথে বসবাস করতো সে। জন্মের পর মাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তাই বাবার সান্নিধ্যেই বেড়ে উঠেছে সে। তাদের বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে আলী এবং আমিরের বয়সী এক সন্তান হাসান বসবাস করে। হাসানের মা হাসানকে ছোট বেলাতেই রেখে অন্যত্র চলে যায়, তাই এদিকে হাসানও মা হারা শিশু। আমির ও হাসান তখন একই দুধ মায়ের স্তন্যে পালিত হয়েছে। আমির ছিল পশতুন ও সুন্নি, অন্যদিকে হাসান ছিল হাজারা ও শিয়া সম্প্রদায়ের। এতে যদিও তারা একই বাড়িতে একইসাথে বেড়ে উঠছিল তবুও আমির হাসানকে ঠিক বন্ধু হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। আর হাসানও আমিরকে বাড়ির মালিক হিসেবেই দেখে আসছে সবসময়।


কাবুলে তখন ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা হতো। সেই প্রতিযোগিতাতে একে অপরের ঘুড়ি কাটার পর যে ঘুড়িটি টিকে থাকতো সেই ঘুড়িটিই বিজয়ী হতো। এমনকি কেটে যাওয়া ঘুড়ি কে দৌড়ে গিয়ে প্রথমেই ধরতে পারে তাই নিয়েও প্রতিযোগিতা চলতো। হাসান ও আমির এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। আমির সবসময়ই ছিল ভীরু; অন্যদিকে হাসান ছিল সাহসী প্রকৃতির। তাই আমির চেয়েছিল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাবার কাছে নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিতে। প্রতিযোগিতার দিন বিকেলে তাদের দুজনের সাথে এমন এক ঘটনার অবতারণা হয় যা আমিরকে ভুগিয়েছে দীর্ঘ কয়েক দশক।


১৯৭৮ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পিডিপিএ আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে । দলটি দেশজুড়ে প্রচলিত ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস করে কার্ল মার্কস এর কমিউনিজম আগ্রাসনের সূচনা করে, যা ধর্মপ্রাণ জনসাধারণ এবং প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতার কাঠামোর অধিকারীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ এর জন্ম দেয়। আফগান সরকার কঠোরভাবে বিরোধিতা দমন করে, হাজার হাজার লোককে গ্রেপ্তার করে । ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে আফগানিস্তানের বড় একটি অংশ জুড়ে বিদ্রোহ দেখা দেয়। আফগান কমিউনিস্ট শাসকদের দ্বারা কমিউনিজম এর স্বার্থ পুরোপরিভাবে উদ্ধার না হওয়ায় এবং আফগানিস্তানে ব্যাপক বিদ্রোহের কারণে লিওনিদ ব্রেজনেভের নেতৃত্বে সোভিয়েত সরকার ১৯৭৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর আফগানিস্তানে সোভিয়েত ৪০তম আর্মি মোতায়েন করে। এর মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যক্ষ আগ্রাসনের সূচনা হয়।


আমিরের ভাষায় আফগানিস্তান চিরদিনের জন্য পরিবর্তন হয়ে যায়। একসময় রাশিয়ান আগ্রাসনের বলি হয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় আমির ও তার বাবা। পাকিস্তান হয়ে আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করে এবং সেখানে জীবনযাপন শুরু করে। দীর্ঘদিন পর পাকিস্তান হতে আমিরের বাবার ব্যবসায়িক সহযোগী এবং পরবর্তীতে আমিরের বন্ধু রহিম খান ফোন করে পাকিস্তান যেতে বলে। পুরনো এক হিসাব হতে মুক্তির আশায় আমির পাকিস্তান চলে যায়। কী ছিল সেই হিসাব? কোন অপরাধের ফল এতদিন ধরে বয়ে বেড়াচ্ছে আমির? আমির কি পারবে সেই অসহ্য যন্ত্রণা হতে মুক্তি পেতে?


সহজ ভাষায় লেখা অসাধারণ এক উপন্যাস। আফগানিস্তানের যুদ্ধ পূর্ববর্তী, যুদ্ধকালীন এবং পরবর্তী সময়ের এক আখ্যান উঠে এসেছে লেখকের কলমের জাদুতে। বইটি উত্তম পুরুষে লেখা। গল্প কথক আমির; যে কিনা এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। এর পাশাপাশি আমিরের বাবা, হাসান, আলি, রহিম খান, সোহরাব, সুরাইয়া একটি বিরাট অংশ জুড়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে। গল্পের বর্ননায় কোনো বাহুল্যতা নেই। কিছু কিছু জায়গায় পরবর্তী ঘটনা কোন দিকে মোড় নিবে জানার জন্য উত্তেজনা কাজ করেছে। লেখকের জন্ম আফগানিস্তানে। তিনি নিজেও আমিরের মতো সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন পরিবারের সাথে। তাই যখন তিনি আফগানিস্তান থেকে পালানোর বর্ননা দিচ্ছিলেন তখন সেখানে বাস্তব চিত্রই ফুটে উঠেছে।


আমির চরিত্রটি এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যেন আমেরিকাপন্থী সোভিয়েত বিদ্বেষী একজন ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপিত হয়। মুসলিম পরিবারে জন্ম হলেও আমিরের মনে দ্বিধা আছে সৃষ্টিকর্তা আছেন কি না! এমনকি তার বাবা আলেমদেরকে পছন্দ করেন না, অথচ ছেলেকে তাদের কাছে পড়ান। সোভিয়েতরা আফগানিস্তানে যা করেছে, একই কাজ যখন আমেরিকা করলো তখন আমিরের বক্তব্য পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। মূলত এটি আমেরিকানদের আফগানিস্তানে হামলার বৈধতা দানের অপচেষ্টা মাত্র।
বইটিকে দ্রুত না পড়ে সময় নিয়ে অল্প অল্প পড়া উচিৎ। এতে করে বইটি উপভোগ্য হবে বেশি। হ্যাপি রিডিং। sanowar hossin
Leave a Reply 12

Your email address will not be published. Required fields are marked *