পাইথন প্রোগ্রামিং ফর লিটল স্টারস

পাইথন প্রোগ্রামিং ফর লিটল স্টারস বইটি মূলত শিশু ও কিশোরদের উদ্দেশ্য করে লেখা হলেও যেকোনো বয়সের যেকোনো মানুষ পাইথন প্রোগ্রামিং ফর লিটল স্টারস বইটা পড়ে প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত হতে পারবে এবং হাতেকলমে শেখার মাধ্যমে প্রোগ্রামিংয়ের আরো বেশি দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।

একনজরে পাইথন প্রোগ্রামিং ফর লিটল স্টারস

  • বই : পাইথন প্রোগ্রামিং ফর লিটল স্টারস
  • লেখক : ইয়াসির আরাফাত রাতুল
  • প্রকাশনী : অদম্য প্রকাশ
  • বিষয় : কম্পিউটার প্রোগ্রামিং
  • পৃষ্ঠা : 168, কভার : পেপার ব্যাক
  • আইএসবিএন : 9789849665533, ভাষা : বাংলা

বর্তমান বিশ্ব তথ্য প্রযুক্তির একটি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের আবির্ভাবের পর থেকে পৃথিবী দেখেছে একের পর এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। আমরা চাইলেই এখন ঘরে বসে খাবার অর্ডার দিতে পারি, গাড়ি ভাড়া করতে পারি। আমাদের বাসার টিভি, ফ্যানসহ অনেক কিছুই এখন মুখে বললেই সে চলতে শুরু করে। আমরা দেখেছি কীভাবে রোবট সোফিয়া মানুষের মতো কথা বলতে পারে, বুঝতে পারে। এসব কিছুর পেছনে যে জিনিসটা কমন সেটি হলো প্রোগ্রামিং।

এই বিপ্লবের সবে সূচনা মাত্র। ভবিষ্যতের পৃথিবীটা হবে আরও বেশি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। সেই অত্যাধুনিক পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও গড়ে তুলতে হবে স্মার্ট ভাবে।

বলা হয় যেমন বীজ বপন করবে, তেমন ফসলই ফলবে। তাই বীজের অঙ্কুরোদগমের সময়টাতেই বেশি যত্ন নিতে হবে।

আর মানুষের অঙ্কুরোদগমের সময়টা হচ্ছে স্কুল জীবন। তাই স্কুল জীবন থেকেই যদি বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটান যায়।

তাহলে যে কারোরই পরবর্তী জীবনটা অনেক মসৃণ হয়। জীবনযুদ্ধে ও কর্মক্ষেত্রে তারাই অন্যদের চাইতে এগিয়ে থাকে।

তাই বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য ছোটবেলা থেকেই গণিত, প্রোগ্রামিং এর মতো বিষয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। এ বিষয়গুলো মানুষকে সূক্ষ্ম চিন্তা করতে শেখায়। চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায়।

তবে বিষয়গুলো শেখাতে গিয়ে যাতে তার উপর চাপ প্রয়োগ না হয়ে যায়, তাও খেয়াল রাখতে হবে। আনন্দের সাথে শেখাতে হবে। এই বইটিতে প্রোগ্রামিং এর মৌলিক বিষয়গুলো খুবই সহজ ও জীবন সম্পর্কিত উদাহরণের মাধ্যমে, চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যা বাচ্চাদেরসহ যেকোনো বয়সের মানুষের কাছেই সহজবোধ্য হবে। মুনির হাসান, যুব কার্যক্রম প্রধান, প্রথম আলো।

লেখকের কথা

উচ্চ মাধ্যমিকে ‘আইসিটি’ বিষয়ে প্রোগ্রামিংয়ের সাথে পরিচয় হলেও প্রেমটা জমে ওঠে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করার সময়। তখন উপলব্ধি করলাম এত মজার ও গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ের সাথে যদি স্কুল জীবনেই পরিচিত হতাম কত ভালো হতো।

একদিন অদম্য প্রকাশের প্রকাশক নাজিব রাফে ভাইয়ের সাথে আলোচনায়, তিনি বললেন যে কিশোর কিশোরীদের জন্য একটা বই লিখতে। আমি বললাম, ভাই আমি তো কিশোর ঔপন্যাসিক না। তিনি আমাকে বললেন প্রোগ্রামিংয়ের বই লিখতে, বাচ্চাদের জন্য। প্রস্তাবটা আমার কাছে ভালো লাগল। আমি তখনই রাজি হয়ে গেলাম। এরপর যখন ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলাম, দেখলাম বাচ্চাদের জন্য প্রোগ্রামিং এর অনেক অনেক রিসোর্স। তার মানে আধুনিক বিশ্বে এই চর্চা আরও অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে।

ভাবা শুরু করলাম, কীভাবে লেখা যায়। কিশোর কিশোরীদের কথা মাথায় রেখে লিখতে গিয়ে অনেক ভাবতে হয়েছে। প্রথম বই ‘পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ – ৩’ লেখার পর একটা অভিযোগ শুনেছিলাম যে বইটা অতি সহজ করে লিখিনি। অভিযোগটা আংশিক সত্য। সে বইয়ে আমার উদ্দেশ্য ছিল প্রোগ্রামিং যারা কিছুটা জানে, তাদের জন্য বইটা। তবে চেষ্টা করেছি এই বইতে সহজ থেকে সহজতর করে বোঝাতে।

প্রোগ্রামিং শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় কনসেপ্টগুলো বাস্তব জীবনের ঘটনার মাধ্যমে জীবনঘনিষ্ঠ, মজাদার ও সহজবোধ্য করে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি।

ভার্সিটিতে পড়াতে গিয়েও এই উদাহরণগুলোই আমি ব্যবহার করেছি। দেখেছি ছাত্রছাত্রীরা বোঝে কিনা। তাদের কাছে সহজবোধ্য হয় কিনা। সেই উদাহরণগুলোকেই আরও সুন্দর করে, ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি এখানে। আশা করি সবার জন্য সেসব উদাহরণ উপকারী হবে।

প্রোগ্রামিংয়ের পথচলা অনেক দীর্ঘ। সে দীর্ঘ পথে হাটা শুরু করতে যাচ্ছো তোমরা। তোমাদের এ পথচলা আনন্দময় হোক। শুভকামনা রইলো।

বিশেষ ধন্যবাদ জানাই, তারেক ওবায়দা, এনায়েতুর রহীম, জুনায়েদ আহমেদ, মুস্তাকিমুর রহমান, মেহেদী হাসান পিয়াশ ভাইদের। যারা তাদের ব্যস্ত সময়ের মাঝেও বইটির রিভিউ করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, ভুলত্রুটি সংশোধনে সহায়তা করেছেন। এই বইয়ের ব্যাপারে যেকোনো পরামর্শের জন্য আমাকে ই-মেইল করতে পারো ratul.yeasirarafat@gmail.com তে।

পাইথনের ইতিহাস


গুইডো ভ্যান রসাম

যেকোনো কিছু শেখার আগে সে বিষয়ের ইতিহাস একটু জানা থাকলে মন্দ হয় ন। যে লোকটাকে দেখতে পাচ্ছ ওনার নাম গুইডো ভ্যান রসাম। এই লোক ১৯৮৯ সালে এক ক্রিসমাসের ছুটিতে মজার ছলে পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ তৈরি করার কাজ শুরু করেন। সেই মজার ছলে বানানো একটা ল্যাংগুয়েজই সবচেয়ে জনপ্রিয়। গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজান, উবার, নাসার মতো বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি পাইথন ব্যবহার করে।

পাইথন শুনতে যদিও মনে হয় এটি অজগরের নামে নামকরণ করা হয়েছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে গুইডো তার একজন প্রিয় কৌতুক অভিনেতা “মন্টি পাইথন”-এর নামে এর নামকরণ করেন।

বর্তমানে পাইথনের দুটো ভার্সন প্রচলিত আছে ২.০ সিরিজ এবং ৩.০ সিরিজ। এই বইয়ে আমরা সবচেয়ে লেটেস্ট ৩.১০ ব্যবহার করেছি।

প্রোগ্রামিং পরিচিতি

আমাদের আগে জানা উচিত আমরা কী শিখতে যাচ্ছি। শিখলে কী কাজে লাগাতে পারব। আমরা আসলে এই বইতে শিখব কীভাবে বিভিন্ন প্রোগ্রাম বানাতে হয়। এখন তোমাদের মনে প্রশ্ন আসছে যে….

প্রোগ্রাম কী?

সহজ বাংলায় একটা কাজ বা অনেকগুলো কাজকে একসাথে করাকে আমরা প্রোগ্রাম বলব। ধরো, সকালে তুমি স্কুলে যাবে, তারপর ক্লাস করবে, ছুটি হলে বাসায় ফিরে খাবে, তারপর খেলাধুলা করতে মাঠে যাবে। এই প্রত্যেকটা কাজ একেকটা প্রোগ্রাম, বা সবগুলোকে একসাথে আমরা এক দিনের প্রোগ্রাম বলতে পারি।

এ কাজগুলো মানুষ করে। কিন্তু একটা ফোন বা কম্পিউটার সে কী কী কাজ করে? একটা কম্পিউটারে তুমি যে গেম খেলছ, কার্টুন দেখছ, মোবাইলে ছবি তুলছ সেগুলোই তার কাজ। এগুলোই প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার।

প্রোগ্রামিং কী?

আমরা তো মানুষ। সৃষ্টির সেরা জীব। আমাদের জ্ঞান বুদ্ধি সবই আছে। কেউ আমাদের দেখিয়ে না দিলেও আমরা নিজের কাজ নিজে করতে পারি। কিন্তু কম্পিউটার হলো একটা বোকা বাক্স। বলে না দিলে কিছুই করতে পারে না। তাই কম্পিউটারকে প্রত্যেকটা কাজ বলে দিতে হয়।

তুমি যে মাউস দিয়ে ক্লিক করলেই কম্পিউটার কোনো কাজ করছে এর পেছনেও আছে প্রোগ্রামিং। মোবাইল ফোন, ক্যালকুলেটর, স্মার্ট ওয়াচ, রোবট সবকিছুকেই তার নিজের ভাষায় বলে বোঝাতে হয়। তারপর সে কোনো একটা কাজ করতে পারে। তাই আমরা বলতে পারি ‘কম্পিউটারকে তার ভাষায় কোনো কাজ করার জন্য নির্দেশ দেওয়ার পদ্ধতিকেই প্রোগ্রামিং বলে।

প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ (কম্পিউটারের ভাষা)

কম্পিউটার এত বোকা যে সে আমাদের ভাষাও বোঝে না। বাংলা ও না, ইংরেজিও না। তাকে তার ভাষায় বললেই কেবল সে বোঝে। তার জন্যই আমাদের প্রয়োজন প্রোগ্রামিং ভাষা। এখন আমরা যদি একজন জাপানি মানুষের সাথে কথা বলতে যাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের আগে জাপানি ভাষা শিখতে হবে।

তাই কম্পিউটারের সাথে কথা বলতে হলেও আমাদের কম্পিউটারের ভাষা শিখতে হবে। কম্পিউটার আসলে অনেকগুলো ভাষা বোঝে। যেমন: সি, সি++ (সি গ্লাস গ্লাস), পাইথন, জাভাস্ক্রিপ্ট ইত্যাদি। এগুলো প্রত্যেকটা ভাষা দিয়ে অনেক ধরনের কাজ করা যায়। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ গুলোর একটি হলো পাইথন।

পাইথন শিখলে তুমি গেম বানাতে পারবে, রোবট বানাতে পারবে, ওয়েবসাইট বানাতে পারবে। ওয়েবসাইট হলো একটা বইয়ের মতো। যেখানে অনেক তথ্য থাকে। বইয়ের পাতার মতো ইন্টারনেটের পাতাকে বা অনেকগুলো পাতাকে একসাথে ওয়েবসাইট বলে।

যেমন www.facebook.com (এটাকে পড়বে এভাবেঃ ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট ফেসবুক ডট কম) একটা ওয়েবসাইট, www.google.com (ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট গুগল ডট কম) একটা ওয়েবসাইট।

প্রোগ্রামিং শিখে কী লাভ?

আমরা যা কিছুই করি তার কোনো না কোনো উদ্দেশ্য থাকে। বিশেষ করে তোমাদের এখন যে বয়স এ বয়সের ছেলেমেয়েদের কাছে তো পড়ালেখা একটা বিরক্তির কাজ। এ বয়সে ভালো লাগে খেলাধুলা করতে। নতুন নতুন গেম খেলতে। গাড়ির মোটর খুলে একটা ফ্যান বানাতে বা এটা ওটা দিয়ে কিছু একটা বানিয়ে দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিতে। এখানেও আমরা তাই করব। গেম আগে নিজে বানাব তারপর খেলব। তবে গেম বানানোর আগে গেম বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও জ্ঞান জোগাড় করতে হবে।

তবে অনেকের মনে হতে পারে, বাচ্চাদের প্রোগ্রামিং শেখার কি দরকার! মাইক্রোসফট এর সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস যে টানা অনেক বছর বিশ্বের এক নম্বর ধনী ছিলেন, ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গসহ, গুগল, টুইটারের ফাউন্ডাররা কিশোর বয়স থেকেই প্রোগ্রামিং শুরু করেছিলেন। তোমাদের মধ্যে থেকেও কেউ কেউ এমন কিছু আবিষ্কার করবে যা বদলে দেবে ভবিষ্যতের পৃথিবী।

তা ছাড়া প্রোগ্রামিং যে কেবল সফটওয়্যার বানানোর কাজেই ব্যবহার করতে হবে তা কিন্তু না। প্রোগ্রামিং মানুষকে চিন্তা করতে শেখায়। মানুষের চিন্তার পরিধিকে বিস্তৃত করে। লেখক নাজমুস সাদাত পারভেজের ‘ক্রিটিক্যাল থিংকিং’ বইটি পড়ে জেনেছি মানুষের চিন্তা করার পদ্ধতি দুরকম। ‘অটোমেটিক থিংকিং’ ও ‘ক্রিটিক্যাল থিংকিং’। ক্রিটিক্যাল থিংকিং মানুষকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বেশি সহায়তা করে। আর ‘ক্রিটিক্যালি থিংক’ করা একটি অভ্যাসের ব্যাপার। আমি বিশ্বাস করি, প্রোগ্রামিং, এ অভ্যাস গড়ে তোলায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শুধু আমি না এ কথা বিশ্বাস করে রথী-মহারথীরাও।

পাইথন প্রোগ্রামিং ফর লিটল স্টারস বইটি অনলাইনে ওয়াফিলাইফ ও রকমারিতে পাওয়া যাচ্ছে

Leave a Reply 2

Your email address will not be published. Required fields are marked *