মুমিনের চরিত্র

মুমিনের চরিত্র বই পড়ে আপনি নতুন করে ভাবতে শিখবেন। বদলাতে চাইবেন নিজেকে। জানতে পারবেন কেমন হওয়া উচিত ছিলো আপনার চরিত্র। জাহিলয়াতের ঘোর আঁধারে আপনি দেখতে পাবেন আলোর মশাল। সে মশাল জ্বেলে আপনি প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করবেন নিজেকে। সাড়া দেবেন আপনার রবের ডাকে।

একনজরে মুমিনের চরিত্র

  • বই : মুমিনের চরিত্র
  • লেখক : উস্তায আবু উসামা আল হিন্দি
  • প্রকাশনী : ফাতিহ প্রকাশন
  • বিষয় : আদব, আখলাক
  • ভাষা : বাংলা

গুনাহের জন্য অনুশোচনা

রবের সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে, তবে আল্লাহ তাবারাক ওয়া তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন, তার গুনাহ পাহাড়সম কিংবা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণই হোক না কেন! হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক লোক এমন ছিলো, যে গুনাহে নিমজ্জিত হয়ে নিজের উপর সীমা অতিক্রম করে ফেলেছিলো। নিজের প্রতি অবিচার করেছিলো। যখন তার মৃত্যুর সময় এলো, তখন সে তার সন্তানদের ডেকে জিজ্ঞাসা করলো, হে আমার সন্তানেরা! আমায় বলো, আমি তোমাদের কেমন পিতা? তারা বললো, সর্বোত্তম পিতা। সে বললো, হে আমার সন্তানেরা! মৃত্যুর পূর্বে আমি তোমাদের একটি অসিয়ত করছি।

আমি যখন মারা যাবো তখন তোমরা আমার দেহটিকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলবে। তারপর সে ছাইগুলোকে পিষে ফেলবে। এরপর সেগুলোকে ঝড়ো বাতাসে উড়িয়ে দেবে, যাতে করে আমাকে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান না হতে হয়। কেননা, আমি এতো সীমা অতিক্রম করেছি যে, আল্লাহ যদি আমাকে পান, তবে তিনি আমাকে এমন শাস্তি দিবেন যা অন্য কাউকে দেন নি। অতঃপরতার যখন মৃত্যু হলো তার সন্তানরা বুকে পাথরচাপা দিয়ে পিতৃআদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করলো। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বায়ুকে নির্দেশ দিবেন তার অভ্যন্তরে এ ব্যক্তির যা আছে তা যাতে উপস্থিত করে। সমুদ্রকে আদেশ করবেন তার অভ্যন্তরে যা আছে, তা বের করতে। অতঃপর আল্লাহ তাকে পুনরায় জীবিত করবেন।

আল্লাহ তাকে প্রশ্ন করবেন

তখন আল্লাহ তাকে প্রশ্ন করবেন, “কিসে তোমাকে এরূপ করতে প্ররোচিত করলো? তুমি কি ভেবেছ যে আমি তোমাকে পুনরায় জীবিত করতে সক্ষম নই?’ তখন সে জবাব দিবে, “আমি এতো পাপ করেছি যে, তার অনুশোচনা ও ভয়ে আমি আপনার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করছিলাম।’ তখন আল্লাহ ফিরেশতাদের ডেকে বলবেন, “হেআমার ফিরেশতারা! তোমরা সাক্ষী থাকো। আমি আমার এই বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।’ এই লোকটি আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়েছিলো। তবু তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। কারণ সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়েছিলো। সে নিজের গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়েছিলো। তার গুনাহ তাকে অনুশোচনার অনলে বিদ্ধ করেছিলো। একজন মুমিনের অবস্থাও এরূপ। সে তার প্রতিটি গুনাহের জন্য অনুশোচনা করে ।

গুনাহ করার পর অনুশোচনার অনল তাকে দগ্ধ করতে থাকে। অনুশোচনার করালস্রোত তাকে চারদিক হতে ঘিরে ধরে। তাকে শান্তিতে নিশ্বাস নিতে দেয় না, তাকে চোখ বুজে প্রশান্তিভরে বাতাস নিতে দেয় না। তার গুনাহের দরুন সৃষ্ট অনুশোচনা তার টুটি চেপে ধরে। তার শ্বাসনালিকা বন্ধ করে দিতে চায়। এমতাবস্থায় সে কিছুতেই শান্তিতে থাকতে পারে না। পরিশেষে, সে আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে। এটি মুমিনের একটি বিশেষ গুণ।

আর যারা গুনাহ করার পর অনুশোচনা করে না, নিজেদের পাপকর্ম যাদের অন্তরে ভাবান্তর ঘটায় না, যারা নিজেদের গুনাহ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাবারাক ওয়া তাআলা বলেন, لهم قلوب ل ا يفقهون بها ولهم أعين لا يبصرون بها ولهم آذان لا يسمعون بها أوليك كالأنعام بل هم أصل أوليك هم الغافلون “তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা উপলদ্ধি করে না। তাদের চক্ষু আছে তা দ্বারা দেখে না, তাদের কর্ণ আছে তা দ্বারা শুনে না; এরা হলো পশুর ন্যায়। বরং তদপেক্ষা নিকৃষ্ট; তারা হলো অচেতন। ২৮গুনাহের জন্যে অনুশোচনা বান্দার জন্যে আল্লাহর দয়া, রহমত ও ক্ষমা ডেকে আনে।

গুনাহের প্রতি অনুশোচনা না হওয়া অহংকারের আলামত। যে ব্যক্তি গুনাহ করে কিন্তু নিজের গুনাজের দরুন আল্লাহ তাবারাক ওয়া তাআলার নিকট অনুশোচনায় বিদ্ধ হয় না, সে আল্লাহর সাথে অহংকার করে। আদম সৃষ্টির প্রাক্কালে আল্লাহ তাআলা যখন নির্দেশ দিলেন তাঁকে সিজদা করার জন্যে তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করলো। ইবলিস অহংকারবশত অবজ্ঞাভরে বললো,قال أنا خير منه ‘আমি তার থেকে উত্তম।” তার এ অহংকার তাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করলো। সম্মানজনক আসন থেকে সে বঞ্চিত হলো।

এরপর তার কৃতকর্মের দরুন আল্লাহ তাবারাক ওয়া তাআলা যখন তাকে সম্মানজনক আসন থেকে বহিষ্কৃত করলেন তখনও নিজের এ ধৃষ্টতার দরুন অনুশোচিত না হয়ে অহংকার বজায় রেখে Read More.

রাত্রি জাগরণ

শেষরাত্রি; এ সময় ঘুমটা বেশ ভালো জমে। তাই এ সময় কাউকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলাটা একপ্রকার অসম্ভব। পাতলা ঘুমের অধিকারীরাও এ সময় হয়ে যায় ঘুমকাতুরে। আর রাত্রির এ সময়টাতেই আরশের অধিপতি মহান মাবুদ অবতরণ করেন ধুলির ধরার নিকটবর্তী আসমানে। আহ্বান করেন তাঁর বান্দাদের। জানতে চান তাদের সুখ-দুঃখ। হতে চান তাদের নির্জন মুহূর্তের সঙ্গী। পূরণ করতে চান তাদের প্রয়োজন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রতিরাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, ‘কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো! কে আছে এমন, যে আমার কাছে চাইবে আর আমি তাকে তা দেবো! কে আছে এমন যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করবো! ৫১এ সময়টি অতীব মর্যাদাপূর্ণ এ সময়ে বান্দা তাঁর প্রভুর সাথে একান্তে মিলিত হয়। তাঁর সাথে সময় অতিবাহিত করে। নিজের সমস্ত প্রয়োজন তাঁকে জানায়। নিজের মনের সমস্ত দুঃখ ও বেদনার কথা রবের কাছে প্রকাশ করে। তাঁর সিজদা য় মাথা নুইয়ে দেয়।

বিপদাপদ ও সমস্যা

জীবনের সমস্ত বিপদাপদ ও সমস্যা সমাধানে এবং নিজের জীবনকে আরো সুন্দর, সুবাসিত ও সুরভিত করে তুলতে তাঁর নিকট ধরনা দেয়। এ সময়টি এত গুরুত্বপূর্ণ যে, এ সময়ে বান্দা তাঁর প্রভুর নিকট যা কামনা করে মহান আল্লাহ তাবারাক ওয়া তাআলা তাকে তাই দান করেন।জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘রাতের বেলা এমন এক সময় আছে, যে সময়টিতে একজন মুসলিম আল্লাহ তাআলার নিকট উত্তম যা কিছুই চায়, তিনি তাকে তাই দান করেন। ৫২ রব্বুল আলামিনের এই ডাক সকলের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না। বেশিরভাগই বেঘোরে ঘুমিয়ে থাকে। আল্লাহ তাবারাক ওয়া তাআলার ডাক তাদের হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে না।

উৎসঃ ৫১. সহিহ মুসলিম: ৭৫৮, আস সুন্নাহ: ১০০৯, আশ শরীয়াত: ৭০১, আন নুযুল: ১২। ৫২. মুসনাদে আহমাদ: ৭৪০৪, সুনানে আবি দাউদ : ১৩১০।

সালাতে বিনয়ী

সালাতে দাঁড়ালেই আমাদের রাজ্যের সব হিসেব নিকেশের কথা মনে পড়ে। বীজগণিতের অমীমাংসিত অঙ্ক আর রসায়নের সবচে জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে শুরু করে ডিএনএ-র মডেলও তখন দুধভাত হয়ে যায়।মনের জানালায় উকি দেয় নিত্যনতুন ভাবনা। এর কারণ হলো শয়তানের ওয়াসওয়াসা। শয়তান কখনোই আমাদেরকে আল্লাহ তাআলার নিকট বিনীতভাবে ও মন ও মননকে উপস্থিত হতে দিতে চায় না। তাই সে প্রতিনিয়ত সালাত আদায়কারীর অন্তরে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে। তাদের অন্তরকে সালাত আদায় থেকে গাফিল করতে চায়। আর যারা শয়তানের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যায় তাদের জন্য কেবল ধ্বংসই রয়েছে। তাদের হৃদয় হয়ে পড়ে শুষ্ক, পাতাঝড়া, মুকুলশূন্য বৃক্ষের ন্যায়। তাদের অন্তর হয়ে যায় মলিন ও কঠিন । তারা নিজেদের স্থান জাহান্নামে ঠিক করে নিয়েছে।فويل للقاسية قلوبهم من ذكر الله أوليك في ضلال مبين‘অতএব, ধ্বংস সে সকল লোকদের জন্য যাদের হৃদয় কঠিন হয়েগেছে আল্লাহর স্মরণ থেকে। তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে নিপতিত।

কিন্তু মুমিনগণ শয়তানের পাতা ফাঁদে পা দেয় না। সে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয় না। খুশু-খুজুর সাথে সে সালাত আদায় করে দুনিয়ার কোনো কিছুই তাকে সালাত আদায় থেকে, আল্লাহর স্মরণে নত হওয়া থেকে বিরত করতে পারে না। দুনিয়ার কোনো লাভ তাকে সালাত আদায়ের থেকে আটকে রাখতে পারে না। আল্লাহ তাবারাক ওয়া তাআলা বলেন,فاسعوا إلى ذكر الله وذروا البيع ذلكم خير لكم إن كنتم تعلمون“আল্লাহর স্মরণের দিকে (সালাত) শীঘ্রই ধাবিত হও, ক্রয়-বিক্রয় পরিত্যাগ করো। এই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে। ১৯ ২৫ ১২৪. সুরা যুমার : ২২। ১২৫. সুরা জুমুআহ ৪৯।

আর্টিকেল টি ভালো লাগলে এখনি মুমিনের চরিত্র লেখক : উস্তায আবু উসামা আল হিন্দি এর বইটি আপনার প্রিয়ো অনলাইন পশ থেকে ক্রয় করুন।

Leave a Reply 0

Your email address will not be published. Required fields are marked *