হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা | লেখক শাইখ আবু আহমাদ সাইফুদ্দিন বেলাল মাদানী

  • বই : হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা
  • লেখক : শাইখ আবু আহমাদ সাইফুদ্দিন বেলাল মাদানী
  • প্রকাশনী : দারুল কারার পাবলিকেশন্স
  • বিষয় : আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
  • সম্পাদক : ওমর ফারুক আব্দুল্লাহ
  • পৃষ্ঠা : 48, কভার : পেপার ব্যাক
  • ভাষা : বাংলা

আল্লাহর প্রিয় ও মাহবুব বান্দা হওয়া কী সম্ভব? আল্লাহ কি তাঁর কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন? হ্যাঁ, সম্ভব এবং আল্লাহ তা’আলা তাঁর কিছু বান্দাকে ভালোবাসেন।

আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, এর চেয়ে উত্তম ও আনন্দের ভালোবাসা আর কিছুই হতে পারে না। এ ভালোবাসার উপরে আর কোনো ভালোবাসার স্থান নেই।যদি কেউ আল্লাহকে ভালোবাসে বা আল্লাহকে ভালোবাসার দাবি করে, তবে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন তা বলা অসম্ভব।

অসংখ্য মানুষ আল্লাহর ভালোবাসার দাবীদার। কিন্তু সত্যিকারে আল্লাহ তা’আলা কাকে ভালোবাসেন এবং কাকে ভালোবাসেন না তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। এ ভালোবাসা খুব কম সংখ্যক মানুষের ভাগ্যে জুটে। এটা এমন এক ভালোবাসা যার প্রতিযোগিতা করে প্রতিযোগীরা।

যাঁরা নিজেকে সর্বদা ব্যস্ত রাখে এ মহান ভালোবাসা অর্জনের জন্য। এরই সৌরভে বিচরণ করে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকারীগণ। এ ভালোবাসা অন্তরের জন্য খাদ্য এবং আত্মার জন্য পুষ্টি ও চোখের জন্য প্রশান্তি যোগায়।

যে ব্যক্তি আল্লাহর ভালোবাসা হতে বঞ্চিত তার জীবন মৃত্যু সমতুল্য।

হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা

এটা আলো স্বরূপ, যে এটি থেকে বঞ্চিত হলো সে গহীন অন্ধকারে হাবুডুবু খেল। এটা মহাঔষধ যে পেল না তার অন্তর ব্যাধিগ্রস্ত। এটা এমন মজার জিনিস, যে অর্জন করতে অক্ষম তার সমস্ত জীবন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও ব্যথাতুর।

এ ভালোবাসা ঈমান ও আমল….. ইত্যাদির আত্মা। এটা ব্যতীত সবকিছুই আত্মাশূন্য শরীরের মতো। আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীস এবং সালাফে সালেহীনদের নির্ভরযোগ্য বাণীসমূহ দ্বারা “হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা!” বিষয়ে আপনাদেরকে এ ছোট বইটি উপহার দিচ্ছি।

বইটি প্রথমবার প্রকাশ করতে পারায় আমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। পাঠক মহোদয় এটা থেকে উপকৃত হলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। যাঁরা এ মহৎ কাজে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সকলকে আমাদের সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ জানাই।পরিশেষে আমাদের নিবেদন এই যে, সংশোধনের কাজ কোনো দিনও চূড়ান্ত করা যায় না।

অতএব,

হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা বইটি পড়ার সময় কোনো ভুল-ত্রুটি বা ভ্রম কারো দৃষ্টিতে পড়লে অথবা কোনো নতুন প্রস্তাব থাকলে তা আমাদেরকে অবহিত করলে সাদরে গৃহীত হবে। আর পরবর্তী সংস্করণে যথাযথ বিবেচনা করা হবে ইনশা-আল্লা-হআল্লাহ তা’আলার নিকট আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর মাহবুব ও প্রিয় বান্দা হিসেবে গ্রহণ করেন।

হে আল্লাহ! আমাদের এই মহতী উদ্যোগ ও ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কবূল করুন। আমীন! আবু আহমাদ সাইফুদ্দিন বেলাল।

সবচেয়ে মজার ও উঁচুমানের ভালোবাসা কী জানেন? এ এমন এক ভালোবাসা যার উপরে আর কোনো ভালোবাসা হতে পারে না।

প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা

ভাবছেন এ ভালোবাসা প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা!

বর্ণিত আছে যে, একজন দরবেশ সবকিছু ছেড়ে শুধুমাত্র আল্লাহর ‘ইবাদতে মশগুল থাকত। একদিন এক অপূর্ব সুন্দরী খ্রীস্টান মহিলাকে দেখে প্রেমে মত্ত হয়ে পড়ে। বিবাহের প্রস্তাব দিলে সুন্দরী প্রত্যাখ্যান করে বলে যদি তুমি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ কর, তবে তোমার আশা পূরণ হতে পারে। তাই সে দরবেশ সুন্দরীকে পাওয়ার জন্য ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহণ করে।

কিন্তু সুন্দরীর সাথে সাক্ষাতের পূর্বেই কুফ্রী অবস্থায় মারা যায়। না’ উযু বিল্লা-হি মিন যালিক! ঐদিকে সেই সুন্দরী দরবেশের মৃত্যুর কথা জানতে পেরে তার প্রেমিককে জান্নাতে একসাথে পাওয়ার আশায় ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে এবং মুসলিম অবস্থায় মারা যায়।

আরো বর্ণিত আছে যে, এক প্রেমিক তার প্রেমিকার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকার পর যখন সে তার সামনে হাজির হল, তখন সে তার ভালোবাসা প্রকাশের জন্য প্রেমিকার দুই পায়ের মাঝে মাটিতে সিজদায় পড়ে গেল। আর এ অবস্থায় মৃত্যুর ফেরেশতা তার জান কবজ করে নিল। ফলে সে মুশরিক হয়ে মৃত্যুবরণ করল। না উযু বিল্লা-হি মিন যালিক!

আরো বর্ণিত আছে যে, বাগদাদে এক যুবক নিয়মিত আযানের পূর্বে মাসজিদে উপস্থিত হত। যুবকটি মুয়াযযিনের নিকট আযান দেয়ার সুযোগ গ্রহণের প্রবল ইচ্ছা প্রকাশ করল। নাছোড়বান্দা দেখে পরিশেষে মুয়াযযিন সাহেব যুবকটিকে আযান দেয়ার অনুমতি দিলেন। কিন্তু বললেন যে, “হাইয়া ‘আলাস্ সলা-হ” ও “হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ্” বলার সময় ডানে-বামে ঘাড় যেন না ফিরায়।

একদিন যুবকের মাথায় খেলল আযানে “হাইয়া ‘আলাস্ সলা-হ” ও “হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ” বলার সময় ডানে-বামে ঘাড় ঘুরানো একটি সুন্নাত, যা ছেড়ে দেয়া মোটেই ঠিক হচ্ছে না। তাই ডানে ঘাড় ঘুরাতেই যুবক পার্শ্বে ছাদের উপর দেখতে পেল এক বাগদাদী সুন্দরী যুবতী। আযান শেষ না করতেই যুবক দৌড়ে মেয়েটির বাড়ীতে গিয়ে বিবাহের পয়গাম দিয়ে বসল।

যুবতী বলল : আমার বাবা আছেন তাঁর সাথে কথা বল। সে মেয়েটির বাবার অপেক্ষায় রইল। মেয়েটির বাবা পৌঁছা মাত্রই মনের বাসনা প্রকাশ করল যুবক।খ্রীস্টান বাবা বলল : তুমি মুসলিম আর আমার মেয়ে খ্রীস্টান। তাই তোমার সাথে আমার মেয়ের বিবাহ সম্ভব না। যুবক মেয়েটির প্রেমে এমনিই মত্ত হলো যে, সাথে সাথে বলে ফেলল : আমি তাকে ছাড়া বাঁচব না।

তাই আমি খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহণ করলাম। এবার আপনার মেয়ের সাথে আমার বিবাহ দেন। না উযু বিল্লা-হি মিন যালিক! ইউসুফ -কে জুলায়খা-এর একপক্ষের ভালোবাসার কথা আল্লাহ তা’আলা কুরআনে এভাবে বর্ণনা করেছেন।

ووراودته التي هو في بيتها عن نفسه وغلقت الأبواب وقالت هيت لك قال معاذ الله إنه ربي أحسن مثواي إنه لا يفلح الظالمون ) “আর সে যে মহিলার ঘরে ছিল, ঐ মহিলা তাকে প্ররোচিত করতে লাগল এবং দরজাসমূহ বন্ধ করে দিল।

সে মহিলা বলল : শুন! তোমাকে বলছি এদিকে আসো! সে বলল : আল্লাহ রক্ষা করুন; তোমার স্বামী আমার মালিক। তিনি আমাকে সযত্নে থাকতে দিয়েছেন। নিশ্চয় সীমালঙ্ঘনকারীগণ সফল হয় না।

”وقال نسوة في المدينة امرأت العزيز تراود فتاها عن نفسه قد شغفها حبًا إنا لنراها في ضلال مبين)“

আর নগরে মহিলারা বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আযীয-এর স্ত্রী স্বীয় গোলামকে কুমতলব চরিতার্থ করার জন্য প্ররোচিত করছে। সে তার প্রেমে উন্মত্ত হয়ে গেছে। আমরা তো তাকে প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি।”সাবধান! ভালোবাসার ফাঁদে ও প্রেমের ফাঁদে পড়ে কত ছেলে-মেয়েরা তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন নষ্ট করছে। যারা এ ফাঁদে পড়ে গেছেন, তারা এ থেকে বাঁচার চেষ্টা করুন। আর যারা পড়েননি সতর্ক হোন।

Leave a Reply 0

Your email address will not be published. Required fields are marked *