এক নজরে বই পরিচিতি:
বই: মার্ডার অ্যানালাইসিস
লেখক: মোঃ সহিদুল ইসলাম রাজন
প্রাকাশনী: বই বাজার প্রাকাশনী
ধরন: সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার
প্রচ্ছদ অংকন: আবুল ফাতাহ মুন্না
পৃষ্ঠা : ১৬৮
প্রচ্ছদ মুল্য : ৩০০৳
প্রথম প্রকাশ : অমর একুশে বইমেলা ২০২২।
রিভিউ লেখিকা১ : আমেনা আক্তার
রিভিউ লেখিকা২ : আমিনা প্রভা
![]() |
Cover image : murder analysis |
মার্ডার শব্দের অর্থের মতই নিষ্ঠুর এবং ভয়ানক ঘটনা নিয়ে মার্ডার অ্যানালাইসিস যার লেখক মোঃ সহিদুল ইসলাম রাজন সাথে যুক্ত আছে পারিবারিক,সামাজিক সমস্যা,একাকীত্ব, হতাশা,প্রিয়জনের অবহেলা। বাবা মায়ের অসহায় অবস্থা আমরা কোন সন্তানই সহ্য করতে পারি না।ভালোবাসার মানুষ গুলোর ভাগ দিতে চাই না।বইটি ছিলো থ্রিল আর রহস্যে ভরপুর। বইটা পড়তে গিয়ে মনে হয়েছিল আমরা মানুষ গুলো কতইনা অসহায়।বইটার প্রতিটা পৃষ্ঠা টুইস্ট এ ভরপুর,পড়তে পড়তে কখনওভালো লাগায় হারিয়ে গিয়েছি,কখনও খুববেশি কষ্ট পেয়ছি।পড়া শেষে বুঝতে পেরেছিলাম চোখে পানিও ছিল।
প্রচ্ছদ যেন বইয়ের পুরো ঘটনা গুলোর ভয়াভহতার প্রতিচ্ছবি।যেটা পাঠককে বই এর প্রতি আকর্ষন অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।
মা, বাবা,ভাই, বোন এর বাইরে আমরা যাদের উপর ভরসা করতে পারি,যাদের ছায়ায় টিকে থাকি তাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা।
কেন্দ্রীয় চরিত্র শ্রাবন এবং পুষ্প।তাছাড়া বাবা-মা,ছোট খালা,নীলিমা,রিফাত,নুপুর,কাজের খালা,রশিদ মাম সহ আরো অনেকে।
বাব এবং ছোটখালার চরিত্রগুলো বাস্তবতাকে অনেক বেশি ছুঁয়ে গেছে।রশিদ মামা চরিত্রটা অন্য রকম ভালো লাগা ছুঁয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে নুপুরকে।
শ্রাবনের বাবর অস্বাভাবিক মৃত্যু, বাবার মৃত্যু মানতে না পেরে মায়ের ব্রেইনস্টোক করে প্যারালাইজ হয়ে যায়।
শ্রাবনে জীবনে জড়িয়ে যায় আর একটি নাম পুষ্প।
হঠাৎ তাদের একসাথে থাকা ভালো সময়গুলোর অবসান ঘটে তৃতীয় কোন একজন এর আগমনে।
শ্রাবন পরে জানতে পারে শুধু তৃতীয় নয় আরো অনেকেই ছিলো পুষ্পর জীবনে।
শ্রাবনকে ভালোবাসতো এ রকম আর একটা মানুষছিল তার ছোট খালা।
ছোট বেলায় একদিন হুট করে তাকে না জানিয়ে হারিয়ে যায়,যদিও পরে দেখা হয় কথা হয়।
বাবার মৃত্যু, মায়ের অসহায় অবস্থা, প্রেমিকার অন্যজন এর সাথে সম্পর্ক এইসব শ্রাবনকে এক ভয়ানক পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। তখন সে মানসিক শান্তির জন্য বেছে নেয় অন্য এক পথ।
সেই পথ কি শ্রাবনকে শান্তি দিতে পেরেছিলো?
কেনই বা শ্রাবনের বাবার এমন মৃত্যু হলো?
মায়ের শেষ পরিনতি কি হয়েছিল?
ছোটখালা কি নিজের থেকে চলে গিয়েছিল?
এতো সব প্রশ্নের উত্তর পেতে অবশ্যই বইটা পড়তে হবে।
লেখক এর লেখা সম্পর্কে বা বললেই নয়, লেখক গল্পে পারিবারিক সমস্যা, সমাজিক সমস্যা, একাকীত্ব,হতাশা,থ্রিল,রহস্য কি রাখেননি!
আরো ফুটিয়ে তুলেছেন অসহায় হয়ে যাওয়া মানুষের শেষ পরিনতি,অল্পেই সুখী মানুষ এর জীবন কাহীনি।সাথে হিংসা,ক্ষোভ, অভিযোগ এর ভয়ানক বহিঃপ্রকাশ।
বই এর শুরুটা যেমন সুন্দর, শেষটাও ছিল করুন সুন্দর।পাঠককে পুরোটা গল্পে ভাবতে বাধ্য করবে এর পর কি হবে?
বইটা থেকে পাঠকরা পারিবারিক,সামাজিক অনেক শিক্ষাও নিতে পারবে।
বইটা সব বয়সের পাঠকের বোধগম্য।বানান ভুল হাতেগোনা কয়েকটা। পাঠকেরা পড়ে তৃপ্তি পাবে।
প্রিয় কিছু লাইন:
১.আমি যাকে খুব সহজ, সরল এবং একা ভেবে কাছের করে নিয়েছিলাম সেই আমাকে এক সময় সবচেয়ে কঠিন মানুষ হয়ে দেখিয়েছে।
২.বাবার লাশ কাঁধে নেওয়ার পর বুঝলাম, নিস্তব্ধ একা হয়ে যাওয়া মানুষ গুলো ঠিক কতটা ভারী হয়।
৩.অন্যের সাথে প্রিয় মানুষটার শারীরিক সম্পর্কের গভীরতা থেকেও মানসিক সম্পর্কের ভভীরতা আমাদেরকে বেশি যন্ত্রণা দেয়।
৪.পোস্টমর্টেম রিপোর্টে ও সাধারন সড়ক দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয় এবং আর কোন কিছুই হলোনা কারও।
কেবল বাবার বীভৎস মৃতদেহের দাফন এবং মায়ের প্যারালাইজড হয়ে যাওয়া ছাড়া।
প্রারম্ভিকা: ‘মার্ডার অ্যানালাইসিস’ নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বইয়ের ভেতরকার ভয়াবহতা। নামই যখন মার্ডার দিয়ে শুরু তাহলে কি বইটিতে শুধু খুন আর খুন! না, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। সম্পূর্ণ বইটি পড়ার পর বুঝতে পারলাম পারিবারিক সমস্যা, একাকীত্ব, হতাশা, প্রতিহিংসা, সামাজিক সমস্যা, সিরিয়াল কিলিং, ভয়াবহতা, টুইস্ট এবং শেষে নির্মম পরিণতি দিয়ে লেখক সাজিয়েছেন পুরো বইটিকে।
বইয়ের প্রতি আকর্ষণের আরেকটি কারণ প্রচ্ছদ। বইটির প্রচ্ছদও তার গল্পের মতো ভয়ানক। আমরা না চাইতেও অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। আমাদের অবচেতন মন ঠেলে দেয় বিবেকের বিরুদ্ধে। প্রচ্ছদের ছায়ায় তেমনই প্রতিফলন দেখতে পাই। বিবেকের বিরুদ্ধে গিয়ে একের পর এক খুন করতে থাকে শ্রাবণ। হাতে চাইনিজ কুড়াল নিয়ে আনমনে হেটে যাচ্ছে। চারদিকে কোনো খেয়ালই নেই যেনো তার। মাথায় চলছে হয়তো ভয়ংকর কোনো খুনের পরিকল্পনা।
চরিত্র,কাহিনী,প্রেক্ষাপট সবমিলিয়ে নাম করন ও প্রচ্ছদ স্বার্থক
‘শ্রাবণ’ পরিচিত একটি নাম তাই না? সুইসাইড নোটে শ্রাবণের দেখা পেয়েছিলাম এবং মার্ডার অ্যানালাইসিসেও পেলাম তবে ভিন্নভাবে আরও ভয়ঙ্করভাবে। লেখক তার নিষ্ঠুরতার সব্বোর্চটুকু ঢেলে দিয়েছেন শ্রাবণ চরিত্রে। ‘মার্ডার অ্যানালাইসিস’ এর আক্ষরিক অর্থ মৃত্যু বিশ্লেষণ হলেও বইটিতে – ‘বাবা নামক বটগাছটির হঠাৎ চলে যাওয়ায় পরিবারের আমূল চিত্র পাল্টে যাওয়ার গল্প, নির্মম সত্য মেনে নিতে না পারা এক অসহায় মায়ের গল্প, নিজের ভালোবাসাকে টিকিয়ে রাখতে অপমান, অবহেলা সহ্য করা এক পাগলাটে প্রেমিকের গল্প, সবচেয়ে আদরে থাকার পরিবর্তে সবচেয়ে অবহেলিত থাকা কিশোরী মেয়ে নুপুরের গল্প, অতিরিক্ত বিশ্বাস করে ঠকে গিয়ে পরবর্তীতে ছলনাময়ী হয়ে ওঠা নারীর গল্প, কোনো অপরাধ না করেও ভয়ঙ্করভাবে খুন হয়ে যাওয়া কিছু অসহায় মানুষের গল্প এবং নিজের অস্তিত্ব, নিজের মানুষকে নিজের কাছে রাখতে চেয়ে একের পর এক নির্মমতার পরিচয় দেয়া একজন ছোটোখালার গল্প।’
চরিত্র বিশ্লেষণ : ‘মার্ডার অ্যানালাইসিস’ বইটির প্রধান চরিত্র মূলত শ্রাবণ ও তার ছোটোখালা। এছাড়াও পুষ্প, নুপুর, শ্রাবণের বাবা, মা, রিফাত, নিলীমা, সোহেল, তৃষা, কাজের খালা সহ আরও অনেকে রয়েছে। প্রতিটি চরিত্রই তার নিজের জায়গায় অনন্য। আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র ছিল নিলীমা। এই চরিত্রটি আমি কোনোরকম ভয়, ঘৃণা বা মন খারাপ ছাড়াই পড়েছি। তবে নিলীমার শেষ পরিণতিও খুব করুণ ছিল। বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র যেমন দুজন – শ্রাবণ আর ছোটোখালা তেমনি শেষও হয়েছে দুজনকে নিয়েই কিন্তু আসলেই কি দুজন ছিল? নাকি তার আগেই সমাপ্তি এসেছিল কারো জীবনে? জানতে হলে পড়তে হবে বইটি।
কাহিনী সংক্ষেপ: ‘মার্ডার অ্যানালাইসিস’ বলেই যে শুধু খুন থাকবে তা কিন্তু না। বইটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার হলেও এতে রয়েছে – একাকীত্ব, প্রিয়জনদের হারানোর কষ্ট, সামাজিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যার কবলে পরে সন্তানদের করুন পরিণতি, হিংসার ভয়াবহ ফলাফল সবকিছু দিয়েই লেখক বইটি সাজিয়েছেন। বইয়ের শুরুই হয় বীভৎস খুনের বর্ণনা ক্রোধ আর টুইস্ট দিয়ে যা শেষ পর্যন্ত পড়ার আগ্রহকে বাড়িয়ে দেয়। একজন লেখকের দক্ষতা এখানেই হয়তো।
💕বাবা, মা আর শ্রাবণ যেনো পরিপূর্ণ একটি ঘর। শ্রাবণের বাবা ছিলেন ন্যায় ও সত্যাের পথে থাকা একজন প্রতিবাদী মানুষ। আমাদের সমাজ প্রতিবাদী মানুষদের সরিয়ে দিতে সর্বদা তৎপর থাকে। তাই বেলা ফুরাবার আগেই হঠাৎ করে ঝরে যাওয়া পাতার মতোই ঝরে গেল শ্রাবণের বাবা। একজন সদস্যের হঠাৎ মৃত্যু যেকোনো পরিবারের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে সক্ষম। ঠিক তেমনি পরিবর্তন হলো শ্রাবন আর তার মায়ের জীবন। স্বামীর হঠাৎ মৃত্যু মেনে নিতে পারেন নি তিনি হয়ে গেলেন একদম অসহায়, ঠিক যতটা অসহায় হলে নিজের মৃত্যুর নিশ্চিত জেনেও গোঙানি ছাড়া কোনো শব্দ করতে পারেননি।
💕শ্রাবণ নিজের বড় বোনের ছেলে হওয়া সত্ত্বেও ছোটোখালা নিজের ছেলের মতো দেখেছেন, যখন যা প্রয়োজন, অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো পূরণ করেছেন। কিন্তু কেন এতো কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা? নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন শেষ পর্যন্ত। আচ্ছা ছোটোখালার সকল চেষ্টা কি সফল হয়েছিল? নাকি তার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছল সব।
💕শীতের মাঝে হঠাৎ বৃষ্টির মতো পুষ্প এসেছিল শ্রাবণের জীবনে। চলছিল দুজনের খুনশুটির ভালোবাসা কিন্তু ভালোথাকা সেটা হয়তো শ্রাবণের জন্য না। তাইতো হঠাৎ আসা বৃষ্টির মতোই হঠাৎ করে পুষ্প হারিয়ে যায় তৃতীয় ব্যাক্তির ভীড়ে। অন্যকারো করা ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছিলো শ্রাবণকে। আচ্ছা শ্রাবণ কি পেরেছিল তার ভালোবাসা দিয়ে পুষ্পকে ফিরিয়ে আনতে? বসন্ত কি এসেছিল শ্রাবণের জীবনে? নাকি তার আগেই শীতের রুক্ষতায় হারিয়ে গেছে তার জীবনের রং।
🍁 পুষ্পের পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছুটা বদলে যায় শ্রাবণের জীবনও। বাবার মৃত্যু, পুষ্পের অবহেলা, মায়ের অসহায়ত্ব সব মিলিয়ে শ্রাবণ তখন সাগরে ভাসা খড়কুটোর মতো। সে চেয়েছিল সকল যন্ত্রনা ও কষ্টকে ভুলে থাকতে। এই যন্ত্রনা ভুলে যেতে কি ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শ্রাবণ? আদৌও কি এড়িয়ে যেতে পেরেছিল সকল কষ্ট? এ অংশটুকু পড়তে গিয়ে আমার হাত কাঁপছিল। চোখ টা ভিজে উঠছিল বারবার। প্রিয় মানুষগুলোই কেনো বিশ্বাসঘাতকতা করে? পেছন থেকে আঘাতটা কেনো প্রিয়জনরাই করে?
🍁 বাবার বীভৎস মৃত্যু, মায়ের অসহায়ত্ব, প্রেমিকার প্রতারণা ও অনিচ্ছাকৃত খুন সবমিলিয়ে পুরোপুরি বদলে যায় শ্রাবণ। চুপচাপ ও শান্তশিষ্ট থাকা শ্রাবণ তখন হয়ে যায় ভয়ানক, নির্মম, প্রতিহিংসা ও ক্রোধে জর্জরিত এক মানুষ। যে কি না অবলীলায় কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলতে পারে যেকোনো মানুষকে। নিজের হতাশা, ক্ষোভ, রাগ ও অভিমান ভুলে থাকার এক অভিনব পদ্ধতি খুজে পায় যেনো। তারপর চলতে থাকে একের পর এক নিসংস্র খুন…..!
শ্রাবণ কি শেষ পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পেরেছিল এই অবস্থা থেকে? শ্রাবণের শেষ শিকার কে ছিল?
🍁 শেষ অংশটুকু একই সাথে টুইস্ট, থ্রিল আর করুণ পরিনতিতে ভরপুর। আপনার মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মতো কিছু ঘটনার সাক্ষী। আরও একবার চোখ ভিজে উঠেছিল আমার। এ পর্যায়ে এসে লেখকের উপর খুব রাগ হয়েছে। একজন মানুষ কি সারাজীবনে একটুও সুখে থাকতে পারে না? কি এমন ক্ষতি হতো যদি শ্রাবণের জীবনটা এমন এলোমেলো না হতো। একটু কি সুখ পাওয়ার যোগ্যতা ছিল না শ্রাবণের?
পাঠ- প্রতিক্রিয়া: আমি বরাবরই থ্রিলার ও রহস্য জনরার বই পড়তে বেশী পছন্দ করি। ‘মার্ডার অ্যানালাইসিস’ বইটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার হওয়ায় এক বসায় পড়া শেষ করেছি। লেখকও আমাকে নিরাশ করেন নি। সিরিয়াল কিলিং আর টুইস্ট দুটোই ছিল দুর্দান্ত। জীবনের কিছু অপ্রিয় সত্যকে লেখক তার বইয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। কিছু চরিত্রকে করেছেন অনেক বেশী ভয়ংকর, দিয়েছেন অসহায়ত্ব, কষ্টের শেষ বিন্দুটুকু ঢেলে দিয়েছেন কিছু চরিত্রে। কিছু জায়গায় এসে মনে হয়েছে এই চরিত্রটা একটু বেশীই কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু পরে মনে হয়েছে আমাদের জীবনটাই এমন কষ্টে ভরপুর।
বইয়ের কিছু অংশে এসে নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছি, কিছু অংশে আনমনেই হেসেছি, কখনো হয়েছে তীব্র রাগ বা কখনো হতাশার দীর্ঘশ্বাস। পাঠকের মনে এই তীব্র অনুভূতির প্রকাশই একজন লেককের সফলতা।
শেষটুকু পড়ে আপনি নির্বাক হলেও হতে পারেন। চোখ থেকে জল না পড়লেও লেখক আপনাকে এটা ভাবতে বাধ্য করবে যে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি সবার জীবনে আসে না। কিছু মানুষ সারাজীবনেও সুখ নামক ফিনিক্স পাখির দেখা পায় না? আচ্ছা সত্যগুলো এতো অপ্রিয় হয় কেনো?
উপলব্ধি : বইটি পড়ে শুধু আনন্দ বা ভালোলাগাই তৈরী হয়নি সাথে হয়েছে কিছু ব্যাক্তিগত উপলব্ধিও-
* জীবনে প্রত্যাশা যত কম থাকবে ততই ভালো থাকা যাবে।আশা অনুযায়ী ফলাফল না পেলেই মানুষ বদলে যেতে শুরু করে।
* চোখের সামনে যা ঘটতে দেখা যায় তা সবসময় সত্য নাও হতে পারে। হয়তো পেছনে লুকিয়ে রয়েছে কোনো অজানা সত্য।
* প্রতিহিংসা ও অহংকার বদলে দিতে পারে যেকোনো সম্পর্কের সমীকরণ।
* অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা মানুষগুলোকে চুপ করিয়ে দিতে সমাজ সর্বদা তৎপর।
* অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। সেটা হোক বিশ্বাস, ভালোবাসা কিংবা ঘৃণা। অতিরিক্ত বিশ্বাসের ফলে আমরা হেরে যাই প্রতিনিয়ত কিছু মুখোশধারী মানুষের কাছে।
* প্রতিটি মানুষই কারো না কারো কাছে নির্লজ্জ। আমরা নিজেদের খোলা বইয়ের মতো রাখতে পছন্দ করি যদিও অপর পক্ষের মানুষটি আমাদের নাও ভালোবাসে।
* নিজের অনুভুতি প্রকাশ করে দেয়াই উত্তম। কেননা দীর্ঘদীনের জমানো রাগের বহিঃপ্রকাশ অনেক বেশী ধ্বংসাত্মক হয়।
সবশেষে যেটা বুঝতে পেরেছি কাউকে নিজের কাছে আটকে রাখতে চাইলেই তাকে পাওয়া যায় না এজন্য কিছুটা ভাগ্যও প্রয়োজন।
সমালোচনা: প্রথম মুদ্রণ হিসেবে কিছুটা ভুল ত্রুটি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কয়েকটি বানান ছাড়া তেমন কোনো ভুল আমার চোখে পড়েনি। আশা করছি পরবর্তী মুদ্রণের সাথে এই ভুলগুলো লেখক সংশোধন করে নিবে।
প্রিয় উক্তি : অসংখ্য প্রিয় উক্তি রয়েছে তারমধ্যে-
* দীর্ঘদিনের জমানো রাগ, ক্ষোভ কিংবা অভিযোগের হঠাৎ বহিঃপ্রকাশ অনেক বেশি মারাত্মক হয়।
* “আমি যাকে খুব সহজ, সরল এবং একা ভেবে কাছের করে নিয়েছিলাম সেই আমাকে একসময় সবচেয়ে কঠিন মানুষ হয়ে দেখিয়েছে।”
* “আপনি, আমি, আমরা যতই ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন হই না কেন দিনশেষে প্রতিটি মানুষই কারো না কারো কাছে বেহায়া, নির্লজ্জ।”
* বাবার লাশ কাঁধে নেওয়ার পর বুঝলাম; নিস্তব্ধ, একা হয়ে যাওয়া মানুষগুলো ঠিক কতটা ভারী হয়।
* আমরা তাদের উপরই সবচেয়ে বেশি কঠিন নিয়ম চালু করি যারা আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে
* প্রিয়জন থেকে ধীরে ধীরে প্রয়োজনে পরিণত হওয়ার বিষয়টা প্রতিটি মানুষের জন্য বেশী যন্ত্রণাদায়ক।
* আমি যে বিষয়গুলোকে সবচেয়ে বেশী এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম সে সেগুলোই আমার জীবনে সবচেয়ে বেশী এসেছে।
* পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই নিজের মনে করি কিন্তু আসলেই সেসব জিনিস কখোনোই আমাদের ছিলনা এবং থাকেও না।
* পরিবারের বাইরে আমি যাকেই আপন ভেবেছি তার কাছ থেকেই ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় কোপ খেয়েছি,কখনো শরীরে, কখনো স্বপ্নে কখনো আশায় কিংবা কখনো ভালোবাসায়।
ব্যাক্তিগত রেটিং : ১০/১০
শেষকথন: “শেষ হয়েও যেন হইলোনা শেষ” এই কথাটিই মনে পড়ছে বারবার। বইটি পড়া শেষ কিন্তু কষ্ট, দীর্ঘশ্বাস, জীবনের প্রতি তীব্র অভিমানের রেশটুকু এখনো রয়ে গেছে। হয়তো সারাজীবন রয়ে যাবে। বইটি আমাদের সবার একবার হলেও পড়া উচিত। হয়তো আমরাও না জেনে ভুল কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছি তা পরবর্তীতে রুপ নিবে কোনো ভয়ানক ফলাফলে। আমাদের একটু পরিবর্তনে হয়তো বদলে যেতে পারে কোনো শ্রাবণ কিংবা ছোটোখালার জীবন। আশা করছি সুইসাইড নোটের মতো ‘মার্ডার অ্যানালাইসিস’ ও তুমুল পাঠকপ্রিয় হবে।
শেষ করছি প্রিয় লাইন দিয়ে-
আমাদের সাজানো হলো না আর
শুকনো পাতা কিংবা জোড়া ফুলের সংসার,
আমাদের দেখা হলো না আর
আরেকটি চাঁদনি রাত – অজস্র তারার।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?