- বই : জমজম (ইতিহাস, ফাজায়েল, মাসায়েল, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা)
- লেখক : যুবাইর আহমাদ তানঈম
- প্রচ্ছদ : Abdullah Maruf Rusaafi
- রিভিউ : তানভীর জামিল
- পৃষ্ঠাসংখ্যা : ১২৮
- প্রকাশনী : বইপ্রকাশ
- প্রচ্ছদমূল্য : ১৬৭ টাকা
ধু ধু বালিয়ারি প্রান্তর। কোথাও কোনো প্রাণের চিহ্ন নেই। এমন বিজন প্রান্তরে ইবরাহীম আ. স্ত্রী হাজেরা আ. ও শিশুপুত্র ইসমাইল আ.কে রেখে যাচ্ছেন। এটাই যে খোদার নির্দেশ। অমান্য করার জো নেই তাই। উপত্যকার শেষ প্রান্তে– যেখান থেকে তাদের আর দেখা যায় না– পৌঁছে ইবরাহীম আ. হাত তুলে দোয়া করলেন, “হে আমার পালনকর্তা! আমি আমার কিছু বংশধরকে ফল-ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট বসবাস করালাম, হে আমার প্রতিপালক! যেন তারা নামাজ কায়েম করে সুতরাং কিছু লোকের অন্তরকে আপনি তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং ফলমূল দ্বারা তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে দিন; যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।”
ইবরাহিম আ. এর দিয়ে যাওয়া যতসামান্য খেজুর ও পানি শেষ হয়ে গেল এক সময়। হাজেরা আ. পুত্র ইসমাইলকে দুধ পান করাতে সক্ষম হলেন না। ক্ষুধায়-তৃষ্ণায় ছটফট করছে শিশুপুত্র ইসমাইল। কান্না থামছে না কিছুতেই। এক মা তার পুত্রের হাহাকার-কান্না সহ্য করতে পারেন না। পানির খোঁজে ছুটলেন হাজেরা আ.। পানির তালাশে চড়লেন সাফা পর্বতে । সাফা থেকে মারওয়ায়। এভাবে সাতবার এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ছুটে চলেছেন। যেন পানি নয় প্রাণের সন্ধানে আছেন তিনি। সবদিক থেকে নিরাশ হয়ে পুত্রের জীবন চেয়ে আল্লাহর দোয়া করলেন। বিফলে যায়নি তার দোয়া। জীবরাইল আ. এলেন শিশু ইসমাইলের নিকটে। জিবরাঈলের পায়ের আঘাতে বালু ফুঁড়ে বেরুতে লাগলো স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা। হাজেরা আ. দৌঁড়ে গিয়ে চারপাশে বাঁধ দিলেন। হাঁ, এটাই সেই বিখ্যাত জমজম কূপ। এখান থেকেই জমজমের সূচনা।
তারপর পেরিয়ে গেছে হাজারো বছর। জানেন, এতো বছর ধরে জমজমের সংরক্ষণ হয়ে আসছে কীভাবে? সূচনা থেকে নিয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই হাজারো বছরের ইতিহাস লেখক গল্পের মতো করে বলে গিয়েছেন জমজম বইয়ে।
পানিকে কেন্দ্র করেই বেঁচে থাকে প্রাণ। তাই জমজমকে ঘিরে গড়ে উঠলো একটা বসতি। ধীরে ধীরে তা একটি নগরে পরিণতি পেলো। জমজমের সংরক্ষণ-দায়িত্ব ইসমাইল আ.ও তাঁর বংশধরের হাত হয়ে বনু জুরহুমের হাতে পৌঁছে। তারপর একসময় জমজম কূপ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলো। বহু বছর পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদা আবদুল মুত্তালিবের হাতে পূনরায় তা প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। জমজমের ইতিহাসের সঙ্গে মক্কা নগরীর ইতিহাস এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ব পুরুষদের কিছু ঘটনা সংক্ষিপ্তাকারে উঠে এসেছে এই বইয়ে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়েছি বইটি। বই নয় যেন অমৃত সুধা পান করছি।
ইতিহাস বলার পর লেখক জমজমের যাবতীয় ফাজাইল বর্ণনা করেছেন। একসাথে ক্ষুধা-পিপাসা নিবারণ করে পবিত্র এই পানি। জমজম পানের সময় যা চাওয়া হয় তা-ই পাওয়া যায়। এতো সব ফজিলত দেখে জমজম পানের জন্য পিপাসিত হয়ে আছি। শুধু ফজিলতই নয়, সাথে সাথে বলে দিয়েছেন, সাহাবায়ে কেরাম ও বড়ো বড়ো ইমামগণ কীভাবে জমজম পান করেছেন। কোন নিয়তে জমজম পান করেছেন ইমাম আবু হানিফা রহ., ইমাম যাহাবি রহ., ইবনে হাজার আসকালানি রহ. সহ আমাদের পূর্বসূরীরা। জমজম পানে তাদের জীবনে কী ফল ফলেছিল তা জানার পর আরেকবার জমজম খেতে চাই আমার পূর্বসূরীদের মতো করে। হতে চাই তাদের মতো।
তৃতীয় অধ্যায়ে জমজম সম্পর্কিত মাসাইল বর্ণনা করেছেন। জমজম দাঁড়িয়ে পান করবেন না বসে? এর সাথে কি অন্য পানি মেশানো যাবে? এ পানি দিয়ে গোসল সারতে পারবেন কিনা? বোতলজাত করে জমজমের পানি বিক্রি করা যাবে কি? এ যাবতীয় সব প্রশ্নের সমাধান মিলবে তৃতীয় অধ্যায়ে।
চতুর্থ অধ্যায়ে এনেছেন জমজমের গুণগত মান,বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ। শেষ অধ্যায়ে জমজম নিয়ে বর্তমান প্রজেক্টগুলো তুলে ধরেছেন এবং সর্বশেষে যুক্ত করেছেন জমজম ফটো গ্যালারী, যেখানে স্থান পেয়েছে জমজমের নতুন পিকচার গুলোর সাথে বহু পুরোনো পিকচার।
বাংলা ভাষায় জমজম নিয়ে সম্ভবত এটাই প্রথম বই, যেখানে জমজমের সবদিক নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। প্রাঞ্জল ভাষায় লেখার কারণে পড়তে একটুও একঘেয়েমি লাগেনি। উল্টো একটু জানার পর আরেকটু জানার জন্য উদগ্রীব ছিলাম। বইটা পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল, একটু একটু করে জমজমকে যেন নতুন করে চিনছি। জমজম যেন আমার সম্মুখে নানা রূপ নিয়ে ধরা দিচ্ছে। এমন চমৎকার একটি বই লেখার জন্য লেখক একটা ধন্যবাদ অবশ্যই পেতে পারেন।
পবিত্র মক্কায় অবস্থিত আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যে জমজম একটি। নবী ইসমাইল আ.-এর মুজেযা হিসেবে এটি প্রকাশ পেলেও এর ফায়েজ ও বরকত শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৃথিবীবাসী ভোগ করে আসছে। আল্লাহ তা’য়ালা এই কূপকে এমন সব অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে প্রকাশ ঘটিয়েছেন, আধুনিক বিজ্ঞান পর্যন্ত হয়রান এ বিষয়ে গবেষণা করে। ওই জমজম সম্পর্কে লিখিত ‘জমজম’ বইটি
আপনি কি জানেন –
১)জমজম কূপ কীভাবে অস্তিত্বে এসেছে?
২) জমজম কূপ কেন গায়েব হয়েছিল?
৩)কে পুনঃখনন করল এবং কীভাবে?
৪)আজ পর্যন্ত জমজম কূপে কী কী সংস্কার করা হয়েছে?
৫) জমজমের পানির ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য কী কী?
৬) কীভাবে এই জমজমের পানি পান করেছিলেন আমাদের নবীজি, সাহাবায়ে কেরাম,তাবেঈন ও আইয়েম্মায়ে কেরাম এবং তারা কী কী নিয়ত করেছিলেন?
৭) জমজম সম্পৃক্ত অলৌকিক ঘটনা আপনার জানা আছে?
৮) জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করবে,না বসে? জমজমের পানি দ্বারা ওজু ও গোসল করা যাবে? এটি বিক্রি করাতে অসুবিধা নেই তো?- এই জাতীয় আরো অনেক মাসআলা আপনার জানা আছে?
৯) আধুনিক বিজ্ঞান জমজম সম্পর্কে কী বলে?
১০) জমজম কয়টা রোগের প্রতিষেধক?
১১) জমজম সম্পৃক্ত প্রকল্প গুলো কী কী?
এরকম আরোও অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন এই বইয়ের মাঝে।
বই : জমজম
লেখক : যুবাইর আহমাদ তানঈম
প্রকাশনায় : বই প্রকাশ Zam Zam PDF Download Link
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?