চারটি গুণ (সম্পদ, সৌন্দর্য, বংশ, দীনদারি) দেখে মেয়েদের বিয়ে করার কথা হাদিসে বলা হয়নি। এ অনুবাদ ভুল!

চারটি গুণ (সম্পদ, সৌন্দর্য, বংশ, দীনদারি) দেখে মেয়েদের বিয়ে করার কথা হাদিসে বলা হয়নি। এ অনুবাদ ভুল!

হাদিসটি হচ্ছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لأرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ.

হাদিসটি বুখারি ও মুসলিম উভয়খানেই আছে। এই আরবি ইবারাতের কোথাও এই কথা বলা হয় নাই যে মেয়েদের এই চারটি বিষয় দেখে বিয়ে করো, সম্পদ, বংশমর্যাদা, সৌন্দর্য ও দীন। বরং বলা হয়েছে মেয়েদের বিয়ে করা হয় এই চারটি কারণে, বা একটা ছেলে এই ৪টি বিষয়ে আগ্রহী হয়ে থাকে। কেউ কেউ শুধু সুন্দর স্ত্রী চায়, কেউ কেউ সম্পদশালী স্ত্রী চায়, কেউ কেউ অনেক উঁচু মর্যাদা বা বংশের মেয়ে চায় আর কেউ চায় অনেক দীনদার স্ত্রী। মোট কথা এই চারটি হচ্ছে একজন পুরুষের চাহিদা। এই চারটির কোনোটি কোনো মেয়ের মাঝে থাকলে তখন তাকে বিয়ের জন্য ইচ্ছে প্রকাশ করে থাকে পুরুষরা। এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাসিহা করেছেন এই চারটার মাঝে যেন দীনদারিতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, আর না হয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অথচ কী হাদিসের কী অনুবাদ হলো? সবাই মুখস্ত আউড়ে যায় চারটি গুণ দেখে মেয়েদের বিয়ে করা উচিত হাদিসে আছে। যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন নাই তা উনি বলেছেন বলে মিথ্যাচার করা হয়। বরং উনি বলেছেন দীন বাদ দিয়ে বাকিগুলো নেওয়া মানে নিজের জন্য ধ্বংস ডেকে আনা!

তিনি স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন- তোমরা স্ত্রীদের কেবল তাদের রূপ-সৌন্দর্য দেখেই বিয়ে করো না, কেননা এরূপ সৌন্দর্যই অনেক সময় তাদের ধ্বংসের কারণ হতে পারে। তাদের ধন-মালের লোভে পড়েও বিয়ে করবে না, কেননা এ ধনমাল তাদের বিদ্রোহী ও অনমনীয় বানাতে পারে। বরং তাদের দীনদারীর গুণ দেখেই তবে বিয়ে করবে। বস্তুত একজন দীনদার কৃষ্ণাঙ্গ দাসীও কিন্তু অনেক ভালো।

হাদিস থেকে যে যে গুণে গুণান্বিত মেয়ে বিয়ে করতে বলা হয়েছে—
১। দীনদার
২। অনুগত মেয়ে, অর্থাৎ নম্র-ভদ্র
২। স্বামীকে আনন্দ দেয় অর্থাৎ নির্লিপ্ত নয়, প্রাণবন্ত ও প্রেমময়ী স্ত্রী
৪। অধিক সন্তান দানে সক্ষম ও সন্তানদের উত্তম তবিয়ত দিতে পারে এমন স্ত্রী
৫। পুণ্যবতী মেয়ে যে কিনা পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম সম্পদ
৬। জিকিরে ব্যস্ত জিহ্বাওয়ালা মেয়ে
৭। আখিরাতের কাজে সাহায্য করবে এমন মেয়ে
৮। শোকর আদায় করে এমন অন্তরওয়ালা মেয়ে
৯। অল্পে তুষ্ট মেয়ে
১০। আমানতদার মেয়ে

হাদিসে পুরুষদের বিয়ে করতে আগ্রহী করা হয়েছে, এবং বিয়ে না করে থাকা বা স্ত্রীসংগ ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে কঠোর ভাবে। পুরুষ শাসিত সমাজের এটাই নিয়ম, তারা মেয়েদের জন্য প্রস্তাব দিবে, বিয়ের জন্য তারাই আগাবে। বিয়ের বয়স হলে বিয়ের জন্য মেয়েদের প্রস্তুত করে রাখেন মা বাবা, প্রস্তাব মন মত হলে মেয়ে বিয়ে দিয়ে দেন।

এটা সঠিক, সুন্দর নিয়ম। পুরুষদের মাঝে কথাবার্তা হবে, পুরুষরা তাদের মেয়ে/বোনকে বিয়ে দিবে। তবে এর মানে এই নয় যে মেয়েরা নিজের বিয়ের জন্য আগাতে পারবে না বা বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারবে না। তাতে কোনো নিষেধ নাই। পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে কোনো মেয়ে নিজেই নিজের বিয়ের চেষ্টা করতে পারে বা প্রস্তাব পাঠতে পারে।

বিয়ের জন্য পুরুষদেরকে কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে বলা হয়েছে। কিন্তু কোথাও বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়নাই বা বিধাবা, তালাকপ্রাপ্তা বিয়ে করতে অনুৎসাহিত করা হয় নাই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসালাম কুমারী বিয়ে করার কথা বললেও নিজে বেশি আমল করেছেন বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তাদের বিয়ে করার উপর। কুমারী হওয়া না হওয়া মেয়েদের গুণ না, প্রতিটা মেয়েই কুমারী হয়ে জন্ম নেয়। বিয়ের আগ পর্যন্ত কুমারী থাকে। স্বামী মারা গেলে বা তালাক হলে সে বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা হয়। এটাও কোনো গুণ না। গুণ হচ্ছে এমন ভালো কিছু যা একজন মানুষ রপ্ত করে, শিখে বা অর্জন করে। তালাক বা বিধবা এই লকবটা কেউ রপ্ত করতে চায়না, অর্জন করতে চায়না। এটা গুণ নয়। এটা জীবনের একটা ঘটে যাওয়া ঘটনা।

চক্ষুশীতলকারি বিয়ে করতে বলা হয়েছে, কোথাও বলা হয়নাই সাদা চামড়া, অনেক রূপবতী মেয়ে বিয়ে করো, বরং শুধুমাত্র রূপ দেখে বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন। কারো কাছে যদি চক্ষুশীতল বলতে শুধু শারীরিক সৌন্দর্য হয়ে থাকে তবে এটা তো অন্তরের সমস্যা, সে তো শরীরের খায়েশকে প্রাধান্য দিল তাহলে, পতিতালয়ে বা নাটক সিনেমায় এমন মেয়ে পাওয়া যাবে যার রূপের শেষ নাই। আবার ওদিকে দীনও নাই।
চক্ষুশীতলকারি তো হচ্ছে এমন যে কোনো মেয়ে যে আবেদা, নম্র, ভদ্র, মিষ্টভাষী, অল্পে তুষ্ট, অনুগত, সংসারী, সবরওয়ালা মেয়ে।

হাদিসটিকে ভুলভাল ভাবে ব্যবহার করে এসেছেন অনেকে। অনেক দীনদার অথচ কালো চামড়ার কারণে বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন। হাদিসটি মানা হচ্ছে না, বরং হাদিসের বিরোধিতা করা হচ্ছে।

এই হাদিসকে নিজ স্বার্থে ভুলভাবে কাজে না লাগানোর অনুরোধ।

লেখা : Zainab Al-Gazi