আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল – লেখক নিয়াজ মেহেদী | Awlad Miar Vater Hotel

  •  বইঃ আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল
  • লেখকঃ নিয়াজ মেহেদী
  • প্রচ্ছদঃ ডিলান
  • ঘরনাঃ থ্রিলার
  • প্রকাশকালঃ ২০১৮
  • মূল্যঃ ১৬০
  • পৃষ্ঠাঃ ৯৩
  • প্রকাশনীঃ বাতিঘর
  • ব্যক্তিগত অনুযোগ (রেটিং): ⭐⭐⭐⭐
ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, ❝ন্যাভার জাজ অ্যা বুক বাই ইটস কভার!❞ আমার মতে, এই প্রবাদের সাথে লেখক নিয়াজ মেহেদী ভাইয়ের প্রথম বইয়ের অনেক মিল আছে।
উনার লেখা প্রথম এই মৌলিক বইটার নাম শুনে কারো যদি ভাত খাওয়ার ইচ্ছা জাগে কিংবা মনে হয় এখানে মুসকান জুবেরীর মতো আছে তাহলে ধারণা ভুল!


বইটা মূলত এমন একজন গল্প পাগল ব্যক্তিকে নিয়ে, যিনি বছরের একটা দিন নির্দিষ্ট করে রাখেন শুধুমাত্র গল্প শোনার জন্য। অপরিচিত ব্যক্তিদের গল্প শোনার জন্য একটা আসর বসান তিনি। আর এই গল্প শোনাটা উনার জন্য নেশার মতো, এটাকে উনি রক্তের সাথে মিশিয়ে নিয়েছেন।


বলছিলাম হোটেল ব্যবসায়ী আওলাদ মিয়ার কথা, যিনি যৌবন বয়সে কম্পিউটারের দোকানে কাজ করার পাশাপাশি নীলক্ষেতে বইয়ের গল্পে বুঁদ থাকতেন। আর সেখানে থেকে ঘটনাচক্রে আওলাদ মিয়ার জীবন পালটে যায়, তিনি হয়ে যান গল্প খাদক।


❝আওলাদ মিয়া ভাতের হোটেল❞ বইটাকে শুধু থ্রিলার বললে ভুল হবে, আবার থ্রিলার না বললেও ভুল হবে। বইটায় লেখক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অরিন্দম’কে দিয়ে গল্পের শুরু করেছেন, যে কী না তার বন্ধুকে শেষ বিদায় জানাতে তার গ্রামের বাড়িতে আসে।


অরিন্দম তার বন্ধুর গ্রামের বাড়িতে যখন পৌঁছালো তখন ছিলো রাত এবং মাস ছিলো শীতকাল। কুয়াশা, ঘোর অন্ধকার আর হাড় কাঁপানো শীতে যখন পুরো এলাকা মৃতপ্রায়, তখনই ঘটনাচক্রে অরিন্দম হাজির হয় আওলাদ মিয়ার হোটেলটায়।


শুরুর দিকে ভয়ের অনুভূতি হলেও ধীরে ধীরে হোটেলে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিদের একক গল্পে বইটা এগিয়ে যেতে থাকে এবং গল্প জমতে থাকে।


বইটা বেশ উপভোগ্য ছিলো, তবে বইয়ের একজন কথকের গল্প রংপুরের ভাষায় থাকায় পড়তে গিয়ে দাঁত বেঁকে গেছিলো। ওটা ছাড়া বাকি সবগুলো ভালো ছিলো। মজাদার আর আনন্দঘন ছিলো।
বইয়ের পাতার ওজন, পৃষ্ঠা সংখ্যা, প্রচ্ছদ, বাইন্ডিং, শব্দের আকার, দাম – সহ আভ্যন্তরীণ কাঠামো নিয়ে আমার কখনো কোনো সমস্যা ছিলো না, এটাতেও নেই। যা দিয়েছে, ভালো। সন্তুষ্ট আমি।


পাঠক হিসেবে লেখকের প্রথম বই পড়ে আমি সন্তুষ্ট এবং উনার পরের বইগুলো পড়বো ইন শা আল্লাহ।
তবে পাঠক হওয়ার পাশাপাশি আমি একজন প্রকাশক আর তাই আমার একান্ত ইচ্ছা, লেখকের সাথে বই নিয়ে কাজ করার। আশা করবো, লেখক নিয়াজ মেহেদী ভাইয়ের সুদৃষ্টি হবে নবীন প্রকাশকদের দিকে।
প্রিয় পাঠক, আপনাকে ❝আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল❞ বইটায় স্বাগত জানাচ্ছি। নানান স্বাদ, নানান অনুভূতির একত্রে মিশ্রণ পেয়ে চাইলে এই বইটা আপনার জন্য।


কাহিনী সংক্ষেপঃ রাতদুপুরে পলাশবাড়ি পৌঁছে বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে যায় অরিন্দম। জনবিরল বাজারে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে রাতটা কাটানো যায়। এদিকে তাপমাত্রা পারদের হিসেবে চড় চড় করে নামছে, ঘনীভূত হচ্ছে কুয়াশা, বুকে কাঁপন ধরাচ্ছে রাতচরা পাখি ডাক। উদভ্রান্ত অরিন্দমকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে এক রহস্যময় বেঁটে মানুষ


অনেকগুলো গলি-ঘুপচি পেরিয়ে লোকটা তাকে নিয়ে যায় আওলাদ মিয়ার হোটেলে, যেখানে অরিন্দমের মতো আটকেপড়া আরো পাঁচজন মানুষকে একাট্টা করা হয়েছে। হোটেলের মালিক আওলাদ মিয়ার চাওয়া খুব সামান্য প্রত্যেককে নিজের জীবনের এমন একটা গল্প বলতে হবে যেটা মোটাদাগে অদ্ভুত আর অস্বাভাবিক। গল্পে গল্পে সারা রাত উঠে আসে এমন সব ঘটনা, যেগুলো মানুষ হিসেবে আমাদের অস্তিত্বকেই নাড়িয়ে দেয়।


আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল-এ পাঠককে স্বাগতম!
❝বইয়ের ভালোবাসায় বদলে যাক পৃথিবী,
বই হোক আপনার জীবনের সারথি।❞
Leave a Reply 0

Your email address will not be published. Required fields are marked *