মায়ের মতো নয় স্ত্রীর মতো ব্যাবহার করুন – স্যারেন্ডার্ড ওয়াইফ বই থেকে

“বুদ্ধিমান পুরুষের সঙ্গী হিসেবে হাবাগোবা নারী অহরহই দেখা যায়। কিন্তু বুদ্ধিমতী নারীর সঙ্গী হিসেবে হাবাগোবা পুরুষ কখনোই তেমন একটা দেখবেন না।” ~ এরিকা ইয়ং

আপনি যদি নিজেকেই পরিবারের একমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য ভাবেন, তাহলে একটু চিন্তা করে দেখুন: আপনার স্বামী তার কর্মস্থলে বিভিন্ন রকমের মানুষের সঙ্গে মিশছেন, কথা বলছেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দামদর করছেন, সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, সবকিছু দেখাশোনা করছেন। তাহলে নিশ্চয়ই ঘরেও এমনটা করার দক্ষতা তার আছে। কিন্তু করেন না কেন? স্বামীকে যদি স্বামী মনে না হয়ে অতিরিক্ত আরেকটা সন্তানের মতো মনে হয়, তার কারণ আমরাই তাদেরকে ছোট নাবালক শিশুর মতো ভাবছি, যে নিজে নিজে কিছুই করতে পারে না। এমন একটা পরিস্থিতি আমাদের সবার জন্যই বিরক্তিকর।

যখনই আমি আমার স্বামীর ভুল ধরার চেষ্টা করি, সমালোচনা করি বা দেখিয়ে দিই যে, তাকে কী করতে হবে, আর কী করা উচিত নয়, তখন আসলে আমি নিজেকে স্ত্রীর বদলে তার মায়ের আসনে বসিয়ে ফেলি। যার মানে হলো আমি তখন আর তার প্রেমিকা নই, সে আমাকে তার প্রেমিকা হিসেবে দেখতে পায় না। স্বামীকে অসহায় শিশু হিসেবে দেখলে আমার যৌনাকাঙ্ক্ষা একেবারেই দমে যায়। নিজেকে তার মা হিসেবে দেখা মানে দাম্পত্যের অন্তরঙ্গতাকেই মেরে ফেলা। হয়তো-বা এ কথা স্বামী কখনোই মুখে স্বীকার করবেন না; কিন্তু তার কাছেও একই অনুভূতি হয়।

আপনার স্বামী হয়তো কখনও আপনাকে বলবেন না যে, আপনার এসব আচরণ তার পুরুষত্বকে আহত করে। বলবেন না, “তুমি আমার সঙ্গে যেমন ব্যবহার করো, আমি যখন টিনেজার ছিলাম ঠিক এরকম ব্যবহার আমার মা আমার সঙ্গে করতেন।” অথবা “তোমার গলার স্বর একদম আমার মায়ের মতো লাগছে।” আপনার স্বামী হয়তো কখনোই এটা বলবেন না; কিন্তু তিনি মনে মনে আপনার প্রতি খুবই বিরক্ত হবেন। আপনাকে কখনোই বলবেন না যে, “তোমার দিকে তাকিয়ে এখন আর যৌন আকর্ষণ হয় না, যেমনটা হয় না মায়ের দিকে তাকালে।”

এর বদলে শুরু হয় এক শীতল যুদ্ধ।

যখন তাকে বুঝিয়ে দেন তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম, তখন তিনি তার নাবালক জীবনে ফিরে যান। কিছু না কিছু মাত্রায় হাল ছেড়ে দিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে যান। কারণ তিনি তো কিছুতেই আপনার প্রত্যাশার পারদ পূরণ করতে পারছেন না। অবচেতন মনে হয়ত আপনার সাথে একমতও হয়ে যাবেন। একেবারেই ছেড়ে দিবেন কোনো কাজ করা।

তার কী দোষ?

অসম্মানিত বোধ করলে পুরুষরা নিজেদের গুটিয়ে নেয়। আমি আত্মসমর্পণ করার আগে আমাদের যখন ঝগড়া হতো, আমার স্বামী তখন অনেক বেশি সময় টিভি দেখে কাটাত। আপনাদের বেলায়ও এমনটা হতে পারে। আপনাদের স্বামীরা হয়তো তখন বেশি বেশি করে খেলা দেখেন, অফিস থেকে ফিরতে অনেক দেরি করেন, অথবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারেন। বাসায় আপনার কাছে থাকার চেয়ে এসব এখন তার কাছে বেশি আবেদনময়। নিজের চিন্তা স্বামীকে জানিয়ে দেওয়ার একটা তৃপ্তি আছে বটে। কিন্তু সেই তৃপ্তির মূল্য বড় চড়া: আপনি নিজেকে তার থেকে আলাদা করে ফেলেছেন এবং বানিয়ে নিয়েছেন নিজস্ব একাকীত্বের একটি বুদবুদ।

যখন স্বামীকে সম্মান করতে শুরু করবেন, তখন থেকেই দেখবেন আপনার স্বামী আপনার কাছে বেশি বেশি থাকতে শুরু করেছেন। আপনার সঙ্গে বেশি বেশি কথা বলতে চাইছেন, আপনি তার আবেগ-অনুভূতিগুলো ভাগ করে নেওয়ার মানুষ হয়ে উঠেছেন এবং মনে প্রাণে তিনি আপনাকে প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসছেন। আর এ সবকিছুই তাকে (এবং আপনাকে) মনে করিয়ে দেবে আপনি মোটেই ভুল করেননি, আপনি একজন কর্মঠ, বুদ্ধিমান এবং ভালো মনের মানুষকে বিয়ে করেছেন।

***

বই : স্যারেন্ডার্ড ওয়াইফ
লেখক : লরা ডয়েল
প্রকাশিতব্য…

Leave a Reply 0

Your email address will not be published. Required fields are marked *