মধ্যবিত্ত-কিঙ্কর আহ্সান


বইঃ মধ্যবিত্ত
লেখকঃ কিঙ্কর আহ্সান।
প্রথম প্রকাশঃ ২০১৭
প্রকাশকঃ বর্ষাদুপুর
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৫০
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৩/৫

লেখক কিঙ্কর আহ্সান বাংলাদেশের তরুন লেখকদের মধ্যে অন্যতম। টুকটাক বই পড়েন যারা তারা বোধ করি তাঁকে চেনেন।

প্রথমত বলি, লেখকের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা যথেষ্ট রয়েছে, হয়তো যথেষ্টর তুলনায় একটু বেশি রয়েছে এবং এই কারনে কি না জানি না পুরো বইটিতে যেমন তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার উপযুক্ত ব্যবহার চোখে পড়ে একইভাবে অপব্যবহারও কম নেই যেটা মাঝে মাঝে চোখে লাগে।

কিন্তু গল্পের গাঁথুনি চমৎকার। একজন পাঠককে ধরে রাখার ক্ষমতা তাঁর আছে এবং সুন্দর করে ধরে রাখতে তিনি জানেন।

গল্প গড়ে উঠেছে অসুস্থ মাকে নিয়ে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কলকাতায় আসা একটি পরিবারকে ঘিরে। বইয়ের নাম ‘মধ্যবিত্ত’ সুতরাং মধ্যবিত্তের স্বরুপ বোঝাতে একটি পরিবার থাকবেই তা বোঝা যায়। এই পরিবারটির বড় ছেলে কথক হিসেবে উপস্থিত থেকে সমগ্র উপন্যাসে “না গরিব না বড়লোক” পরিবারটির অস্তিত্ব সংকটের গল্প বলে গেছে যা বেশ চিত্তাকর্ষক এবং পাঠককে পরিবারটির পরিণতি জানতে শেষ অবধি ধরে রাখে। গল্প বলার ধরনও গোছানো,পরিপাটি যদিও মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল মূল কাহিনী থেকে সরে যাচ্ছেন লেখক। তবুও এইটুকু উপেক্ষা করার মতো।

প্রথমেই বলেছিলাম পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা। লেখক পুরো বইটিতে কথককে নির্লিপ্ত দেখাতে গিয়ে অহেতুক খাবারের বর্ণনা এনেছেন। অমুক জায়গার খাবার,তমুক খাবার, অমুক-তমুকের সাথে খেতে যাওয়া এগুলো কিছুক্ষণ পর পর এসেছে যা সামান্য বিরক্তি উৎপাদন করে।

তবে, লেখকের কিছু উক্তি ছিলো মনে দাগ কাটার মতো। হঠাৎ মনে হয় এগুলো আমারও কথা কিন্তু নেহাতই লেখকসত্তার জাগরনের অভাবহেতু বলতে পারিনি যা লেখক পেরেছেন। খুব ছোট ছোট পর্যবেক্ষণ তবুও কত সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেসবের।
“….আমাদের মায়েরা সেই সাধাসিধেই আছে। কেমন বোকা বোকা আর মায়া মায়া। খালি ভালোবাসতে ইচ্ছা করে।”

“লং লাস্টিং বিষয়টাই মধ্যবিত্তের জন্য সবচেয়ে জরুরী।”

“পোষা এইটুকুন রোদ যেন। কথা শোনে,শরীরে আরাম দেয়।”

“ভুলে গিয়েছিলাম যে মধ্যবিত্তদের জীবন খুব প্রেডিক্টেবল।ম্যাজিকাল কিছু হয়না। এ জীবন শুধু টানাপোড়েন। কোন সুখের গল্প নেই ।সফলতার গল্প নেই।”

উপন্যাসের প্রত্যেক অধ্যায়ের শুরুতে লেখক দুই লাইন করে কবিতা যোগ করেছেন। যেগুলোর অধিকাংশই আমার তেমন একটা ভালো লাগেনি। কেন জানি না মনে হয় ছন্দ মিলিয়ে লেখা দুটো লাইনমাত্র, আর কিছুনা। এছাড়াও লেখক উপন্যাসের নায়িকা বুনো কে নিয়ে তার পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্যটুকু পাঠকের সামনে পরিষ্কার করে তুলে ধরতে পারেননি। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় এই চরিত্রটি নিয়ে লেখকের বড় কোনো পরিকল্পনা ছিল এবং গল্পটি নায়কের সামগ্রিক জীবনীভিত্তিক গল্প হলে বুনো চরিত্রটি আরেকটু বিকশিত হতে পারতো কিন্তু সামগ্রিক জীবন তুলে ধরা হয়নি বলে এই চরিত্র নিয়ে বেশি কাজ করা যায়নি।

আমরা যারা মধ্যবিত্ত তাদের কাছে খুব চেনা গল্প এটি। লেখক নায়ককে বিভিন্ন ধরনের বিপদে ফেলে পাঠকের উপর একধরনের মানসিক চাপের সৃষ্টি করে। তিনি খুব ভালো করে জানেন মধ্যবিত্তের মনস্তত্ত্ব। লেখক হিসেবে কিঙ্কর আহ্সানকে এই কৃতিত্বটুকু দিতেই হয়।

সবমিলিয়ে বইটা খারাপ নয়। অসঙ্গতিগুলো চোখে না পড়লে অসাধারন বই ই বলতে পারতাম।

Leave a Reply 0

Your email address will not be published. Required fields are marked *