বসন্ত
লেখক : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
উৎসর্গ : কাজী নজরুল ইসলাম
ধরন : গীতিনাট্য
পৃষ্ঠা : ১৮
প্রকাশকাল : ১৯২২
মূল্য :৫০/-রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মধ্যে বয়সের অনেক পার্থক্য থাকলেও রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে স্নেহ করতেন। তার প্রতিভাকে মূল্যায়ন করতেন।
কাজী নজরুল যখন সেন্ট্রাল জেলে, বিশ্বকবি তাকে সমর্থন জানিয়ে এই বইটি উৎসর্গ করেন।পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়কে নিজের স্বাক্ষর সহ এক কপি বই দিয়ে সেটি সেন্ট্রাল জেলে নজরুলের কাছে পৌছে দিতে বলেন।
বইটিতে তিনি নজরুলকে” শ্রীমান কবি নজরুল ইসলাম স্নেহভাজনেষু “বলে সম্বোধন করেন।রবীন্দ্রনাথ তখন নোবেল পেয়ে ক্যারিয়ারের শীর্ষে অবস্থান করছেন। আর নজরুল মাত্র কয়েক বছর হল কাব্য চর্চা শুরু করেছেন। বিদ্রোহী সহ কয়েকটি কবিতা মাত্র জনসম্মুখে প্রকাশ হয়। তার মধ্যে আবার শাষক গোষ্ঠির বিরোধিতা করে জেলে আছেন।
এমন একজন মানুষ কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি বলাতে অনেকই তা সহ্য করতে পারছিলেন না। তারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে বলে:
” আপনি একজন পাগলকে কবি বলছেন।”
জবাবে রবীন্দ্রনাথ তাদের বলেন:
” এমন তারুণ্য আমার থাকলে হত বটে। সে শুধু কবি নন, মহাকবি”।বইটি পেয়ে নজরুল ও মহাখুশি হয়েছিলেন।
তিনি লিখলেন:
” সে সুন্দর বহ্নি দগ্ধ বুকে তাই
দিয়েছিলেন বসন্তের পুষ্পিত মালিকা”
পরবর্তীতে নজরুল ও রবীন্দ্রনাথকে তার “সঞ্চিতা” কাব্যটি উৎসর্গ করেন।বই_আলোচনা:
নাটকটিতে মুলত বসন্ত ঋতুর আগমনে পৃথিবী যে নতুন সাজে সাজে, পৃথিবীর ধন ভন্ডার পুনরায় ভরপুর হয় এবং শীতের শেষে বসন্তের আগমন প্রকৃতির জীর্ন অবস্থা থেকে সজিবতা বয়ে আনে সেটিই তুলে ধরা হয়েছে।
শুরুতেই দেখানো হয়:
একজন রাজা তার রাজ্য কোষাগার খালি দেখে রাজ্য ছেড়ে পালান। কারন প্রজা আর মন্ত্রীদের খরচ চালাবার তার সাধ্য নেই।
পথিমধ্যে তার সাথে একজন কবির দেখা হয়।
কবি তাকে আশ্বস্ত করে বলেন আপনি চিন্তা করবেন না। যখন বসন্তের আগমন হবে তখন আপনার রাজকোষ আবার ভরে উঠবে। আপনার কোন চিন্তা করতে হবেনা।ঠিক তখনই বসন্তের আগমন হয়। চারদিকে নতুন এক উদ্দীপনা দেখা দেয়। ফুলের বাগানে নতুন ফুল ফোটে। আম্র কানন তার ভান্ডারকে উম্মুক্ত করে দেয়। জরাজীর্ন প্রকৃতি নতুন রূপে সেজে উঠে।প্রকৃতি তার ধন ভান্ডারের দ্বার খুলে দেয়।
এভাবে বসন্ত তার সমস্ত কিছু বিলিয়ে দিয়ে বিদায় নেয়। কবি তখন রাজাকে বলেন, বলেছিলাম না, আপনার কোন দু:খ থাকবে না। এইতো বসন্ত আপনাকে সব দিয়ে গেল।নিজের_অনুভুতি:
বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, যেহেতু এটি নজরুলকে উৎসর্গ করা হয়েছে, তাই হয়তবা রবীন্দ্রনাথ নজরুলকেই বাংলা সাহিত্যের বসন্ত হিসেবে কল্পনা করেছেন।
আর নজরুলের ঋতুরাজ বসন্ত হবার যোগ্যতা ও কোন অংশে কম ছিল কি? ৭৭ বছর জীবনে কাব্য চর্চার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ২০/২১ বছর। আর এটুকু সময়ে বাংলা সাহিত্যকে করেছেন সমৃদ্ধ। নিয়ে গেছেন নতুন মাত্রাতে। দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ি গান, কবিতা, সাহিত্য রসদ।
যা অন্য কোন কবি পারেনি।
রবীন্দ্রনাথ আগ থেকেই হয়তবা সেটা ধরতে পেরেছিলেন।
পুরো বইটি পড়তে যদিও স্বল্প সময় লাগবে তথাপি এতে রয়েছে উচ্চ সাহিত্য রস। বসন্তের আগমন ও প্রস্থানের চিত্রগুলো গানে গানে তুলে ধরা হয়েছে, যা পড়ে ভাল লাগবে বলে আশাকরি। গানগুলো পাঠকের মনে আনন্দের সঞ্চার করবে।বইটির_কিছু_গান:
১. যদি তারে নাই চিনি গো সেকি আমায় নেবে চিনে।
এ গানটির সুর অনুসারে শচীন দেব বর্মন হিন্দি “অভিমান” সিনেমার “তের মেরে মিলন কি ইয়ে সায়নার” সুর করেছেন।
২. তোমার বাস কোথা যে পথিক দেশে কি বিদেশে।জোনাইদ হোসেন
ঢাকা
বসন্ত – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Leave a comment