বলছিলাম Tasnuva F Shoma আপুর লিখা প্রথম উপন্যাস “হানিমুন” এর কথা

বলছিলাম Tasnuva F Shoma আপুর লিখা প্রথম উপন্যাস “হানিমুন” এর কথা।

‘হানিমুন’ মানে আমরা জানি তথাকথিত মধুচন্দ্রিমা বা ‘নবদম্পতির একসঙ্গে বাড়ি ছেড়ে দূরে কোথাও সময় কাটানো’।
জন রায়ান নামক এক ব্রিটিশ যুবক ও নিকিতা রায়ান জাপানি যুবতীর হানিমুন ও বিলাসবহুল এক প্রমোদতরীত জাহাজকে ঘিরে হানিমুন উপন্যাসটির নাম ও প্রচ্ছদ অঙ্ক করা।

“স্বপ্নের ভ্রমণ রুপান্তরিত হতে যাচ্ছে
এক ত্রাসের রাজ্যে ”

🍂বই সারসংক্ষেপ______________
সত্য ঘটনা অবলম্বনে ‘হানিমুন’ উপন্যাসটি প্রকাশিত। উপন্যাসে মূল চরিত্র দুটি । জন রায়ান ২৬ বছরের এক ব্রিটিশ যুবক ও নিকিতা রায়ান ২৫ বছরের এক জাপানি বংশোদ্ভূত যুবতী। তারা দু’জন একসাথে একই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার অন্তিমকালীন সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে করার। বিয়ের পর হানিমুনের জন্য জন ও নিকিতা পাড়ি জমায় সুদূর জাপানে। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে বিলাসবহুল এক প্রমোদতরী’তে শুরু হয় তাদের হানিমুন যাত্রা। কিন্ত, প্রথম থেকে তাদের হানিমুন যতটা হাসিখুশি ও রোমাঞ্চকর হওয়ার কখা ছিলো তার কোনটাই আশানুরূপ ছিলো না। নানারকম অদ্ভুত ও অপ্রত্যাশিত সব অনুভূতিতে ছেয়ে ছিলো নিকিতা রায়ানের মনে। কারণ, নিকিতা ছিলো এক্সট্রা কনশাস সিক্সথ সেন্সার।
নিকিতা ও জনের সাথে বিলাসবহুল জাহাজটিতে ছিলো প্রায় চার হাজারেরও বেশি মানুষ। অনেক সুযোগ-সুবিধা, আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা থাকার সত্ত্বেও জন-নিকিতা সিদ্ধান্ত নেয় নির্ধারিত সময়ের আগে জাহাজটিকে ছাড়ার।
কিন্তু, হায়! তাদের নিয়তিতে ছিলো অন্যকিছু লেখা। আটকে পড়ে যায় সেই বিলাসবহুল জাহাজটি’তে। আধুনিক যুগের সেই বিলাসবহুল জাহাজ পরিভ্রমণে আগেরকার দিনের মতো বিদ্রোহ, গুম, হত্যা, খাদ্যাভাব না থাকলেও প্রর্দুভাব ঘটে এক ভয়াবহ মহামারির। আস্তে আস্তে স্বপ্নের জাহাজটি পরিণত হয় দুঃস্বপ্নের বন্দীশালায়! অপূর্ণতা, অসন্তুষ্টি, অসহায়ত্বের মধ্যে দিয়ে চলমান থাকে ‘ডিয়ের প্রিন্সেস’ নামক বিলাসবহুল জাহাটির যাত্রা!
বাস্তবতা গল্প, জীবনের গল্প, মানবিক অনুভুতির গল্প, হাসি – কান্না, প্রেম আর বিরহ সংমিশ্রণে পরিপূরর্ণ উপন্যাসটি।

🍂ব্যক্তিগত মত___________
“হানিমুন” উপন্যাসটি পড়ার যখন সুযোগ পাই সত্যিকার অর্থে আমি ভেবেছিলাম হয়তো কোনো নব দম্পতির হাসিখুশি, রোমাঞ্চকর ও এডভেঞ্চার এসকল দিয়ে উপন্যাসটি উপস্থাপনা করা হবে। সচারাচর হানিমুন বলতে আমরা যা বুঝি তাই।
কিন্তু যখন পড়তে বসি তখন হানিমুন রুপে বাস্তবতার সন্ধি মিলে। ফুটে ওঠে হানিমুন নামক আমোদিত কিছুর পরিবর্তে ভয়াবহ মহামারির নির্মম চিত্র। ‘ডিয়ার প্রিন্সেস’ নামক বিলাসবহুল জাহাজটি কে যখন বিশ্বে প্রথমবারের মতো কোয়ারান্টাইন করা হয়, মহামারির রোগ সনাক্ত করা হয় খবরটি মূহুর্তে ছড়িয়ে পরে পুরো বিশ্বব্যাপী। খুব সংকীর্ণ সময়ে বিস্তার পায় পুরো বিশ্বে। এর থেকে আমরাও বাঁচতে পারিনি। কোয়ারেন্টিন এর মতো বন্দিজীবন আমরাও পার করি। তাও কিছুটা সহজলভ্য। কিন্তু জন,নিকিতা কিংবা জাহাজের চারহাজার লোকের কাছে ছিলো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তখনকার তাদের অবস্থা নিজেকে কল্পনা করলে শিউরে ওঠে শরীর। বইটি যখন পড়ছিলাম অনুভব করেছিলাম জাহাজে আটকে থাকা শত মানুষের মানসিক অবস্থা। জন ও নিকিতার নব দাম্পত্য জীবনের হানিমুনের ভয়াবহ করুন দৃশ্য হৃদয় নাড়ার মতো ছিলো। উপন্যাসটি আমার অসম্ভব ভালোগেছে।

🍂লেখিকা প্রসঙ্গে______
সত্য ঘটনা ঘিরে হানিমুন উপন্যাসটি যথার্থ, নিখুঁত ও খুব পরিপাটিভাবে উপন্যাসের চিত্র তুলে ধরেছেন লেখিকা। বলতে গেলে এবাক্য দারুণ! হয়ে। শব্দচয়ন সুন্দর ছিলো সাথে লেখার ধরনও।
তবে একটি বানান ভুল হয়েছে -‘কোরান’। ‘কোরান’ কোনো শব্দ হয় বলে আমার মনে হয় না। ‘ কুরআন বা কোরআন’।
একজন মুসলিম হয়ে যদি নিজ ধর্মের কিতাবের সঠিক বানান না লিখতে পারি তাহলে কেমন দেখায়। বাকিসব নিখুঁত ছিলো।

🍂 বিশেষ কিছু লাইন_______

🥀বিপদের মধ্যে আবেগকে শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। আবেগকে বাঁধতে না পারলে বিপদের মধ্যে আরও নতুন বিপদ এসে যোগ হয়।

🥀স্বপ্নের ভ্রমণ রুপান্তরিত হতে যাচ্ছে এক ত্রাসের রাজ্যে।

🥀মানুষ জন্ম থেকেই স্বাধীনচেতা। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকারও। কিন্তু মানুষ আসলে কতোটা স্বাধীন? মানুষের জীবন তো এক চক্র মাত্র। জন্ম আর মৃত্যুর মাঝে কিছু পথচলা নিদিষ্ট ও গুটিকয়েক লক্ষ্যকে অর্জনের উদ্দেশ্যেই।

🥀যখন মানুষের জীবনে কোন গুরুগম্ভীর অবস্থার সৃষ্টি হয় বা মানুষ যখন খুব বিপদে পড়ে তখন কোন একটা কিছুকে আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়েধরে বাঁচার চেষ্টা সহজাত প্রবৃত্তি।ধর্ম সেরকমই এক বিশ্বাস যাকে বাঁচার উপায় হিসেবে ধরে রাখা সম্ভব এবং যার উপর ভরসা করে মরে যাওয়াও সম্ভব।

🥀জন আমার স্বামী ছিল যতটা বেশি তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল আমার বন্ধু।

🥀ইসলাম ধর্ম মতে আমি বিশ্বাস করি জনের সাথে আমার আবার দেখা হবে। মৃত্যুর পরের জীবনে জন ও জেসনকে নিয়ে হবে আমার সুখের সংসার। সে পর্যন্ত জনের জন্য অপেক্ষায় থাকবো আমি নিকিতা রায়ান 💝

ছবিঃ Prince Nazmul

Leave a Reply 0

Your email address will not be published. Required fields are marked *