
আপনি এভাবে চলুন, যেন আপনার কথা বার্তায় ইচ্ছেকৃত তো নয়ই বরং অনিচ্ছাকৃত ভাবেও কাউকে কষ্ট দেওয়া না হয়। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহও ‘ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ে যেন আপনি কষ্ট না পান’—সেটা খেয়াল রাখবেন।
কাউকে জিজ্ঞাসা করবেন না যে বিবাহিত কিনা? হতে পারে মানুষটা বিয়ের চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত, কোন কারণে বিয়ে হচ্ছেনা, হয়ত কোন দুনিয়াবী কমতি থেকে গেছে। সে নিজেই অস্বস্তিতে থাকে, আর আপনার প্রশ্ন সেটা নিয়েই। অনেক কষ্ট পাবেন তিনি।
একইভাবে বিবাহিত কাউকে প্রশ্ন করা উচিৎ নয় যে—’আপনার কয় সন্তান?’ হতে পারে সন্তান হয়নি, বা ডাক্তার বলে দিয়েছে কখনও হবে না, কিংবা হয়েও মারা গেছে।
কিংবা এক সন্তান আছে—এমন কাউকে বার বার জিজ্ঞাসা করা, এক সন্তান নিলে হবে ইয়াং ম্যান, আরো সন্তানের ফিকির করা লাগবে না? উম্মাহ বাড়াতে হবেনা? হতে পারে আল্লাহ দিচ্ছেন না সন্তান, হতে পারে যে স্বামী/ স্ত্রী সেক্যুলার মাইন্ডেড, তাই একজনের আগ্রহ থাকলেও আরেকজনের নেই।
মানে আমাদের জীবনের একেকজনের গল্প তো একেক রকম। আমরা তো জানিনা পেছনের গল্পটা।
আমাদের অহেতুক কৌতুহল অনেকেরই মনোকষ্টের কারণ হয়। একান্ত জানার প্রয়োজন হলে আমি টেকনিক্যালি এভাবে বলি—’ভাইয়ের পরিবারে কে কে আছেন?’ তখন তো তিনি নিজে থেকেই বলে দেন, কষ্টও থাকে না।
হতে পারে কোনো এক কারণে বাসায় মিষ্টি বা খাবার পাঠাবো, বাসার সদস্য সম্পর্কে আইডিয়া পাওয়া জরুরী। মানে আমাদের কথাবার্তাগুলো চাইলেই আমরা সুন্দর করতে পারি। একটু সাবধানতা অবলম্বন করতেই পারি।
একইভাবে কাউকে বলবেন না যে—’কী করছেন?’ হতে পারে সে বেকার, চাকরির চেষ্টা করতে করতে বার বার ব্যর্থ। সব জায়গায় ভাইভাতে বাদ পড়ছে; সে কিছুই করতে পারছে না।
এবার ঢাকা সফরে এমন হলো। এক বাসায় যাওয়া, বন্ধু বলতে চাইলেন—’ওয়াইফাই আছে কিনা? বেশ কিছুক্ষণ থাকব, বাসার মালিক কে আস্ক করি, পাসওয়ার্ড নিই।’ বললাম—’দরকার নেই, হতে পারে তিনি ওয়াইফাই নিতে সমর্থ না। যদিও তিনি মধ্যবিত্ত কিন্তু তার সংসারের হালত আমি/আমরা জানিনা। হতে পারে যা উপার্জন হয় সংসারে খরচ করে মাসে ৫০০ টাকা অবশিষ্ট থাকে না যে ওয়াফাই বিল দিবে।’
র্যাদার আমরা এক কাজ করি, ওয়াফাই সার্চ অপশন চালু করি, যদি দেখি উনার নামের সাথে বা পরিবারের কারোর নামের সাথে (নামগুলো জানি পরিচিত হওয়ায়) কোন ওয়াফাই অপশন আছে, তাহলে না-হয় পাসওয়ার্ড চাওয়া যাবে। ওভাবে দেখলাম আসল না, পরে শিউর হলাম ওয়াইফাই নাই।
মূলত একেক মানুষের একেক নফস; অনেকে একটুতেই তো কষ্ট পায়। আমার কাছে যা নিছক কথা—তা কারোর কষ্টের কারণ হতে পারে, কান্নার এবং মন খারাপের কারণ হতে পারে।
হয়ত এভাবে আমরা ভাবি না, তবে যথাসম্ভব ভাবা উচিৎ। যথাসম্ভব মেপে কথা বলা উচিৎ। আমরা শান্ত শিষ্ট, অধিক কথা না বলা স্বভাবের হলেই তো নাজাত পেয়ে যাই।
লিখেছেন—শাহ মুহাম্মদ তন্ময়
সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান