পাপ মার্জনার যত পথ : হাফেজ মাশরাফি বিন সিরাজুল ইসলাম

আল্লাহর পথে, আল্লাহর কাছে ফিরে আসুন হোক না আপনি হাজার বার গুনাহ করেছেন। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেন, قل يا عبادي الذين أشرفوا على أنفسهم لا تقنطوا من رحمة الله বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন। হে রব! আমার সকল গুনাহ! যদি আমি অতীতে গান-বাজনা শ্রবণ করে থাকি? অতীতে যদি আমি মদ্য পানকারী হয়ে থাকি? অতীতে যদি যেনাকারী হয়ে থাকি? তবুও?

নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ কি এমনটি বলেননি, হে আমার বান্দা! যে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। যে আমার দিকে একহাত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে দুই হাত এগিয়ে যাই। যে আমার নিকট আসতে থাকে হেঁটে হেঁটে, আমি তার দিকে যাই দ্রুত হেঁটে। সুতরাং বিষণ্ন হবেন না।আল্লাহর দিকে আপনার অগ্রসর যদি মন্থর হয় তবুও আপনি ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম, যে এখনো যাত্রাই শুরু করেনি। না, কখনো বিষণ্ন হবেন না।

আল্লাহর দিকে আপনার ফেরার গতি যদি মন্থর হয় তবুও আপনি ঐ ব্যক্তির থেকে উত্তম, যে আল্লাহর দিকে ধাবমান হয়নি, যেন সে পক্ষাঘাত গ্রন্থ। অতএব আর দেরি না করে ফিরে আসুন সে-পথে, যে-পথে আপনার আমার জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যে পথ জান্নাতের পথ।বইটি প্রকাশে আমাকে একান্তভাবে সহযোগিতা করেছেন বড় ভাই নাজমুল আহসান। আরও যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।

আল্লাহ তাদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমীন!আমার চেষ্টা-প্রচেষ্টার প্রতিদান দয়াময় আল্লাহর নিকট খালেছ অন্তরে একান্তভাবে ইহকাল ও পরকালে কামনা করি। সেই সঙ্গে মুদ্রণত্রুটির জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। পরবর্তী সংস্করণে সুধী পাঠকের সুপরামর্শ প্রাপ্তির আশাবাদ ব্যক্ত করছি।আল্লাহ আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জীবন গড়ার তাওফীক দিন। আমীন! ইয়া রাব্বাল আলামীন। রবের রহমত প্রত্যাশী হাফেজ মাশরাফি বিন সিরাজুল ইসলাম।

লেখক বলেন

মহান আল্লাহ সকল ঈমানদারকে তাওবা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন,

وتوبوا إلى الله جميعا أية المؤمنون لعلكم تفلحون

তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।আল্লাহ বান্দাদের দু’ শ্রেণীতে ভাগ করেছেন : তাওবাকারী ও জালেম।এখানে তৃতীয় কোনো শ্রেণী নেই।

আল্লাহ বলেন,

ومن لم يتب فأوليك هم الظالمون

অর্থ : যারা তাওবা না করে তারাই জালেম।এ যুগের মানুষ আল্লাহর দ্বীন থেকে সরে গেছে দূর থেকে বহু দূরে। পাপ ও ফেতনা-ফাসাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সারাবিশ্বের এমন কেউ নেই, যার আমল কিছু না কিছু পাপের ফলে দূষিত না হয়েছে আল্লাহ যাকে রক্ষা করেছেন তিনি ছাড়া।

আল্লাহ তাঁর আলোককে অবশ্যই পরিপূর্ণ করবেন। তাই দেখা যাচ্ছে, অনেকেই গাফলতি এবং ঘুমের ঘোর কাটিয়ে জেগে উঠেছে। আল্লাহর প্রতি কর্তব্যে তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি অনুভব করছে, ত্রুটি ও পাপে অনুতপ্ত হচ্ছে। তারা তাওবা করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।আরেক শ্রেণীর লোক দুর্ভাগ্য এবং সংকীর্ণ জীবনের কারণে অতিষ্ট। তারা আঁধার থেকে আলোর পথে বেরিয়ে আসার জন্য উদগ্রীব। কিন্তু এ মিছিলের এক শ্রেণীর পথে রয়েছে বড় প্রতিবন্ধকতা যাকে তারা তাওবা’র ক্ষেত্রে বাধা মনে করছে। এ সকল বাধার কিছুটা মানসিক আর কিছুটা বাস্তবভিত্তিক।তাই এই বইটিতে আমরা আমলের মাধ্যমে পাপকে দূরীভূত করে, জান্নাতের পথকে সুগম করার চেষ্টা করেছি। আলহামদু লিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কবুল করুন, আমীন।

  • পাপ মার্জনার যত পথ
  • লেখক : হাফেজ মাশরাফি বিন সিরাজুল ইসলাম
  • প্রকাশনী : দারুল কারার পাবলিকেশন্স
  • বিষয় : আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
  • পৃষ্ঠা : 56, কভার : পেপার ব্যাক

নেকী ও পাপ কী?

আরবিতে البر শব্দের শাব্দিক অর্থ নেক, পুণ্য ও সৎ কাজ বা সৎ আমল, যা আল্লাহর সান্নিধ্য ও ভালোবাসার উপযুক্ত করে যার শেষ ও চূড়ান্ত পুরষ্কার জান্নাত। الاثم অন্যদিকে এ শব্দের শাব্দিক অর্থ পাপ, বদী, খারাপ ও অসৎ কাজ। প্রত্যেক এমন কাজ যাতে আল্লাহর রাগ, অসন্তোষ ও ক্রোধ রয়েছে এবং শেষাবধি মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়।নেকী ও পাপের সংজ্ঞা বর্ণনায় হাদীসে এসেছেعن وابضة بن معبد ، رضي الله عنه يقول : سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن البر والإثم، فقال : يا وابصه، جنت تسألني عن البر والإثم، فقلت: إي والذي بعثك بالحق، إنه لذي جئت أسألك عنه، قال : فالير ما انشرح له صدرك، والإثم ما حالك في صدرك، وإن أفتاك عنه الناس.ওয়াবিসা বিন মা’বাদ বলেন, আমি রাসূল () কে পাপ ও পুণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, হে ওয়াবিসা! তুমি আমাকে পাপ ও পুণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ! আমি এ বিষয়ে আপনার কাছে জানতে চাই।

তিনি বললেন, সৎ বা পুণ্য কাজ হচ্ছে: যখন তোমাকে কোনো কাজ সম্পর্কে কেউ জিজ্ঞাসা করে বসে আর তাতে তোমার অন্তর প্রশস্থ হয় তা হচ্ছে পুণ্য এবং তোমার মনে যদি সন্দেহের উদ্রেক করে তাই হচ্ছে পাপ।

”আরেক বর্ণনায় এসেছে عن النواس بن سمعان الأنصاري رضي الله عنه قال سألت رسول الله – صلى الله عليه وسلم- عن البر والإثم فقال « البر حسن الخلق والإثم ما حاك في صدرك وكرهت أن يطلع عليه الناس.

নাওওয়াস বিন সাম’আন আনসারী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে পুণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, সৎ, পুণ্য বা নেকীর কাজ হচ্ছে উত্তম চরিত্র। আর পাপ হচ্ছে, যা তোমার অন্তরে সন্দেহের জন্ম দেয় এবং তোমার যে কাজ মানুষের জেনে যাওয়াকে অপছন্দ করো।

মানুষ হিসাবে আমাদের কাজ হচ্ছে সৎ আমল করা এবং পাপ হতে বেঁচে থাকা। তারপরও চলতে ফিরতে আমরা নানাবিধ পাপ কাজ করে বসি। এর কারণে আমরা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়ে যাই। কিন্তু মেহেরবান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের পাপসমূহ ক্ষমা করতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তিনি নানা প্রকার অসিলা আমাদের জন্য বাতলিয়ে দিয়েছেন। যেন আমরা পাপসমূহ মার্জনা করে নিয়ে তাঁর প্রিয়ভাজন বান্দায় পরিণত হই এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। ইনশাআল্লাহ সেসব আমলের কয়েকটি সংক্ষেপে আলোচনা করব।

Leave a Reply 0

Your email address will not be published. Required fields are marked *