ইফতেখার সিফাত হাফিজাহুল্লার মূল্যায়ন
বাংলাভাষী তরুণদের মাঝে ড্যানিয়েল হ্যাকিকাতজু ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। তিনি মুসলিম সমাজে পশ্চিমা মতবাদগুলোর প্রভাব হ্রাসকরণে কাজ করে যাচ্ছেন। নিয়মিত লেখনী, ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি ও ডিবেটে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পশ্চিমা মতবাদগুলোর ভিত্তিতে আঘাত করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি আলাসনা নামে একটি একাডেমিও পরিচালনা করে আসছেন।
ড্যানিয়েল হাকিকাতজুর সম্মানিত আহলিয়া হলেন বোন উম্মে খালিদ। স্বামীর মতো তিনিও মুসলিম তরুণীদের ফেমিনিজমের ছোবল থেকে রক্ষা করার জন্য এক্টিভিটি অব্যাহত রেখেছেন। স্বামীর মতো বর্তমানে তিনিও একজন মেধাবী ও স্বচ্ছ চিন্তার মানুষ । আলাসনা ইন্সটিটিউটে তিনি হোম স্কুলিং, ওয়াইফ স্কুলিং ইত্যাদি বিষয়ে কোর্স পরিচালনা করছেন।
অবাক করা বিষয় হলো, এই মানুষটিই একসময় কট্টর নারীবাদী ছিলেন। বিবাহ, পরিবার, সংসার, সন্তান ইত্যাদি জীবনঘনিষ্ঠ ও প্রাকৃতিক বিষয়কে প্রচণ্ড ঘৃণা করতেন। নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাধীনতা, সমতা ইত্যাদি স্লোগান ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী। নিজেকে ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের একজন লিডার হিসেবে দেখার স্বপ্নে তিনি বিভোর ছিলেন।
কিন্তু হুট করে তার এই স্বপ্ন ভেঙে যায়। র্যাডিক্যাল ফেমিনিস্ট থেকে রক্ষণশীল মুসলিম রমণীতে পরিণত হন। উম্মে খালিদের নারীবাদী চিন্তা থেকে ফিরে আসার জার্নিটা খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক এবং হৃদয়গ্রাহী। কুরআনের একটি মাত্র আয়াতের তাদাব্বুর তার পুরো চিন্তাজগৎকে পালটে দেয়। সত্যি বলতে, কুরআনের নির্দিষ্ট একটি আয়াতের যে মর্ম আল্লাহ তাআলা তার সামনে উদ্ভাসিত করে দিয়েছেন, তা সাধারণভাবে কল্পনা করা যায় না। আল্লাহ তাআলা তাকে হেদায়েত দেবেন, এজন্যই বিশেষভাবে আয়াতের উক্ত মর্ম তার সামনে উদ্ভাসিত করে দেন।
উম্মে খালিদ নিজের পরিবর্তনের সফর নিয়ে কয়েক পর্বের একটি সিরিজ লিখেছিলেন কিছুদিন আগে। সেটির আরবি অনুবাদ করেন কাউসার ফারাবি নামে মরক্কোর এক বোন। আরবি অনুবাদটিকে সম্পাদনা ও সংযোজনের মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ করে তোলেন আরেক মুফাক্কিরাহ বোন তাসনিম রাজেহ। তিনি নিজেও একজন লেখক। আরবি ভাষায় চমৎকার ও গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। পাশাপাশি নারী-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক বর্ণাঢ্য ওয়ার্কশপও তিনি আয়োজন করে থাকেন। বোন তাসনিম রাজেহের মাধ্যমেই আমি সিরিজটির সন্ধান পাই। তারপর সিজদাহ পাবলিকেশনের হাতে তুলে দিই বাংলাভাষী পাঠকদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি নিয়ে আসার জন্য।
সত্যি বলতে ছোট কলেবরের এই বইটি আধুনিক মুসলিম তরুণীদের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। সেকুলার এই শিক্ষাব্যবস্থা তাদের চিন্তাজগৎকে যেসব বিষাক্ত চিন্তার মাধ্যমে গ্রাস করে নিচ্ছে, সেখানে বিরামচিহ্ন টানার মতো ক্ষমতা উম্মে খালিদের ফিরে আসার এই গল্পে রয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ উম্মে খালিদ নিজে বিষাক্ত এসব চিন্তার ডালপালায় চড়ে এসেছেন। এরপর তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী উপস্থাপনা ও হৃদয়গ্রাহী ভাষায় নিজের ফিরে আসার গল্প তুলে ধরেছেন এই সিরিজে। স্কুল-কলেজের প্রতিটি বোনের জন্য এই বইটি মূল্যবান এক উপহার হবে ইনশাআল্লাহ।
আরবি থেকে বাংলায় রূপান্তরের কাজটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে আঞ্জাম দিয়েছেন শ্রদ্ধেয় মাওলানা Nazmul Haque Sakib হাফিজাহুল্লাহ। উপস্থাপনা ও ভাষার হৃদয়গ্রাহিতা তিনি সফলভাবেই বজায় রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা বইটির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের খেদমত কবুল করুন। বইটিকে মুসলিম তরুণীদের দীনে ফেরার মাধ্যম বানান। আমিন।