খিলাফতের রাশিদার পরে খলিফা হন আমিরুল মুমিনিন মুআবিয়া ইবনু আবি সুফিয়ান রা.। তিনি কাতিবে ওহি, নবিজির শ্যালক ও উমাইয়া খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতা। একপর্যায়ে তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্ধ দেখা দেয় নবিজির নাতি হাসান ইবনু আলি রা.-এর। কিন্তু রাসুল সা.-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী হাসান মুআবিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেন। এতে উম্মাহ বিরাট এক বিপদ থেকে মুক্তি পায়। আর মুআবিয়া হন মুসলিমবিশ্বের একক খলিফা।
মুআবিয়া রা. তাঁর জীবদ্দশায়ই ছেলে ইয়াজিদকে খলিফা মনোনীত করেন। মুআবিআর ইনতিকালের পর ইয়াজিদ খলিফার পদ টিকিয়ে রাখতে এবং সবার বায়আত নিশ্চিত করতে বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডের জন্ম দেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে বেধনাবিধুর ঘটনা হচ্ছে কারাবালার ঘটনা। সেখানে হুসাইন রা.-সহ তাঁর পরিবার তথা আহলে বায়তের সদস্যদের অত্যন্ত নির্মমভাবে শহিদ করে ইয়াজিদের সেনাপতি ইবনু জিয়াদের বাহিনী।
এ তিনটি বইয়ে মুআবিয়া রা., হাসান ও হুসাইন রা.-এর পুরো জীবনী আলোচনা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপরিচালনা, তাঁদের মধ্যে সংঘাত ইত্যাদির বিস্তারিত আলোচনা স্থান পেয়েছে। কারবালার প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করা হয়েছে, বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কারবালা নিয়ে মুখরোচক নানা কাহিনিরও আলোচনা করা হয়েছে। শিয়াদের বাড়াবাড়ি আর কুসংস্কার সম্পর্কেও উম্মাহকে সচেতন করা হয়েছে।
এ তিন মহান সাহাবিকে নিয়ে আমাদের জানাশোনা খুবই কম। যতটুকু জানি, তা-ও কতটা বিশুদ্ধ সূত্রে, তা এক বিরাট প্রশ্ন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি রচিত গ্রন্থগুলো পড়লে আপনি তাঁদের সম্পর্কে সত্য-সুন্দর ধারণা পাবেন। পাতায় পাতায় পাবেন তাঁদের ওপর আরোপিত মিথ্যা সব অপবাদের উপযুক্ত জবাব। দূর হবে তাঁদের ব্যাপারে শোনা সংশয়জাগানিয়া সব মিথ্যা। তাই আসুন, তাঁদের সম্পর্কে বিশুদ্ধে সূত্রে বর্ণিত ইতিহাস জানি, তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। তাঁদের জীবনী উম্মাহর জন্য জীবন্ত শিক্ষা।
কারবালা প্যাকেজের তিনটি বই অতিরিক্ত ৫%-সহ ৩০% ছাড়ে পাচ্ছেন মাত্র ১,১৬০ টাকায়। অগ্রিম পেমেন্টে ফ্রি ডেলিভারি পাবেন। ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধাও আছে। প্রয়োজনে আমাদের ইনবক্সে আপনার নাম, ঠিকানা আর মোবাইল নম্বর দিয়ে মেসেজ করুন।
আলি রাযি. এবং মুআবিয়া রাযি. এর মধ্যকার ইখতেলাফ ছিল, উসমান রাযি. এর হ/ত্যাকা/রীর কে/সা/স গ্রহণকে কেন্দ্র করে। অন্যথায় মুআবিয়া রাযি. এটা স্বীকার করতেন যে, আলি রাযি. তাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ এবং খেলাফতের অধিক হকদার। তিনি খেলাফত নিয়ে ইখতেলাফও করেননি এবং আলি রা. জীবিত থাকতে খেলাফত দাবি করেন নি।
ইয়াহইয়া বিন সুলাইমান জুফি হাসান সনদে বর্ণনা করেন যে,
عَنْ أَبِي مُسْلِمٍ الْخَوْلَانِيِّ أَنَّهُ قَالَ لِمُعَاوِيَةَ أَنْتَ تُنَازِعُ عَلِيًّا فِي الْخِلَافَةِ أَوْ أَنْتَ مِثْلُهُ قَالَ لَا وَإِنِّي لَأَعْلَمُ أَنَّهُ أَفْضَلُ مِنِّي وَأَحَقُّ بِالْأَمْرِ وَلَكِنْ أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنَّ عُثْمَانَ قُتِلَ مَظْلُومًا وَأَنا بن عَمِّهِ وَوَلِيُّهُ أَطْلُبُ بِدَمِهِ فَأْتُوا عَلِيًّا فَقُولُوا لَهُ يَدْفَعُ لَنَا قَتَلَةَ عُثْمَانَ فَأَتَوْهُ فَكَلَّمُوهُ فَقَالَ يَدْخُلُ فِي الْبَيْعَةِ وَيُحَاكِمُهُمْ إِلَيَّ فَامْتَنَعَ مُعَاوِيَةُ
আবু মুসলিম খাওলানি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি মুআবিয়া রা.-এর নিকট এসে বলেন, আপনি আলি রা.-এর খেলাফত নিয়ে ঝগড়া করেন! আপনি কি তাঁর মতো?
তিনি বললেন, না। আমি জানি তিনি আমার চেয়ে বেশি হকদার। কিন্তু তুমি কি জানো না উসমান রা.-কে মাজলুম অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। আমি তাঁর চাচাতো ভাই এবং অভিভাবক। আমি কি তাঁর রক্তপান চাইব না? তুমি গিয়ে তাঁকে উসমান রা.-এর হত্যাকারীদের আমার হাতে সোপর্দ করে দেওয়ার কথা বলল। এরপর তিনি আলি রা.-এর নিকট এসে উসমান রা.-এর হত্যাকারীদের সোপর্দ করতে বললেন। কিন্তু আলি রা. সোপর্দ করলেন না।’ (ফাতহুল বারি: ১৩/৮৬)
আলি রা. এবং মুআবিয়া রা.-এর মধ্যখানে ইখতেলাফের মূল কারণ ছিল এটি। খলিফা নির্ধারণ বা অ/পসা/রণ নিয়ে কোনো মতভেদ ছিল না উভয়ের মাঝে। ইবনে হাজম রাহ. এ বিষয়ে বলেন,
وَأما أَمر مُعَاوِيَة رَضِي الله عَنهُ فبخلاف ذَلِك وَلم يقاتله عَليّ رَضِي الله عَنهُ لامتناعه من بيعَته لِأَنَّهُ كَانَ يَسعهُ فِي ذَلِك مَا وسع ابْن عمر وَغَيره لَكِن قَاتله لامتناعه من إِنْفَاذ أوامره فِي جَمِيع أَرض الشَّام وَهُوَ الإِمَام الْوَاجِبَة طَاعَته فعلي الْمُصِيب فِي هَذَا وَلم يُنكر مُعَاوِيَة قطّ فضل عَليّ واستحقاقه الْخلَافَة لَكِن اجْتِهَاده اداه إِلَى أَن رأى تَقْدِيم أَخذ الْقود من قتلة عُثْمَان رَضِي الله عَنهُ على الْبيعَة وَرَأى نَفسه أَحَق بِطَلَب دم عُثْمَان ….. وَأصَاب فِي ذَلِك الْأَثر الَّذِي ذكرنَا وَإِنَّمَا أَخطَأ فِي تَقْدِيمه ذَلِك على الْبيعَة فَقَط فَلهُ أجر الِاجْتِهَاد فِي ذَلِك
অর্থাৎ আলি রা. মুআবিয়া রা.-এর সঙ্গে যুদ্ধ করেন এ কারণে যে, তিনি তাঁর নির্দেশ সিরিয়ায় বাস্তবায়ন করছিলেন না। অথচ তিনি ছিলেন খলিফা। তাঁর আনুগত্য করা মুআবিয়া রা.-এর ওপর ওয়াজিব। মুআবিয়া রা. কখনো আলি রা.-এর শ্রেষ্ঠত্ব এবং তিনি যে খলিফা হওয়ার অধিক হকদার, সেটি অস্বী/কার করেননি। তাঁর ইজতেহাদ ছিল আগে উসমান রা.-এর হ/ত্যা/র বদলা নিতে হবে। তিনি নিজেকে রক্তপ/ণ দাবির অধিক উপযুক্ত মনে করেছেন। তাঁর এ দাবি সঠিক ছিল। কিন্তু ভু/ল করেছেন তিনি বায়আতের আগে হ/ত্যা/র বদলা চেয়েছেন। এ কারণে তিনি ইজতেহাদের সওয়াব পাবেন। (আল ফাসলু ফিল মিলালি ওয়ান নাহলি: ৪/১৬০)
এ কথাটি আমাদের ভাল করে মনে রাখতে হবে। উভয় সাহাবির মাঝে ইজতেহাদি মতানৈক্য ছিল। যার কারণে মুআবিয়া রাযি. ভুল করলেও তিনি একটি সওয়াবের অধিকারী হবেন। আলি রাযি. আহলে বায়ত হওয়ার কারণে মুআবিয়া রাযি. সহ্য না করতে পেরে বিরোধীতা করেছেন, এটি শিয়াদের বানানো মি/থ্যা এবং বা/নোয়াট ইতিহাস।
মুআবিয়া রাযি. ইতিহাসের একটি স্পর্শকা/তর পাঠ। এখানে এসে বহু মানুষের প/দস্খল/ন হয়েছে। বিশেষত শিয়ারা তাঁর ব্যাপারে এত বেশি মি/থ্যা অ/ভিযো/গের স্তু/প বানিয়েছে যে, আপনি সচেতন পাঠক না হলে যে কোন সময় বি/ভ্রান্তি/তে পড়ে যাবেন। এজন্য ইতিহাস পড়ার আগে ইতিহাস থেকে কোন বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হবে? সে মূলনীতি সম্পর্কে বিস্তর জানাশুনা থাকা চাই।