আসমান
লতিফুল ইসলাম শিবলী
নালন্দা
“তোস্রষ্টার কাছে পৌঁছানোর হাজারো পথ আছে,
তার মাঝে আমি প্রেমকে বেছে নিলাম” – রুমি
নব্বইয়ের দশক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ওমার রিজওয়ান।প্রেমিকা লামিয়া ও বন্ধু রুশোর সাথে সময়টা চলে যাচ্ছিল ভালোই। ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের দশম শ্রেণির ওমার ও ধানমণ্ডি গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির লামিয়ার পরিচয় হয়েছিল বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। ওমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার এক বছর পর লামিয়া ভর্তি হয়েছিল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। ক্যাম্পাসে নামকরা জুটি ছিল তারা। কিন্তু ওমারকে অবাক করে দিয়ে লামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডার এনায়েতের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে। এই কষ্টকে মেনে নিতে পারেনি ওমার। আত্মহত্যা করতে চেয়ছিল। কিন্তু ভাগ্যের লিখন ছিল তাকে বহুদূর যেতে হবে।
মানসিক কষ্ট কাটাতে মায়ের পরামর্শে ওমার শরনাপন্ন হয় ধানমন্ডি আট নম্বর রোডের জামে মসজিদের বৃদ্ধ পেশ ইমাম মাওলানা ইসহাক আব্দুর রহমানের। ইমামের বাস্তবিক ও যুক্তিযুক্ত নসিহতের প্রভাবে ওমার আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। নিয়মিত নামাজ পড়া এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে প্রশান্তি খুঁজে পায় সে। এই মসজিদেই একসময় চিল্লায় আসে তাবলীগ জামাতের আনোয়ার। আনোয়ারের সান্নিধ্যে ওমার পাকিস্তান যায় তাবলীগ জামাতে। পাকিস্তানে ওমার জীবনের আরেকটি ঘটনা ঘটে যা তার জীবনের মোড় পাল্টিয়ে দেয়। আফগানিস্তানের খালিদ ইবনে হিশামের বক্তব্যে উৎসাহী হয়ে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে জেহাদ করতে আফগানিস্তান চলে যায় সে। কী হয় তার পরিণতি? সে কি পেরেছিল তার উদ্দেশ্য পূরণে সফল হতে? যে গল্প জীবনের চেয়েও বড়, তা জানতে পাঠককে বসতে হবে বইটি নিয়ে।
লতিফুল ইসলাম শিবলীর বই আগে পড়া হয়নি, এটাই প্রথম। আর এক বই দিয়েই লেখক আমাকে মুগ্ধ করেছেন। নান্দনিক প্লটের উপস্থাপন এবং চরিত্রায়ন দারুণ ছিল। লেখক সঙ্গীতের সাথে সম্পৃক্ত তাই বইটিতেও তার ছাপ লক্ষ করা গিয়েছে। এছাড়া যুদ্ধের বিভিন্ন অস্ত্রের বর্ননা, আফগানিস্তান-পাকিস্তানের ভৌগলিক-রাজনৈতিক অবস্থানকে তুলে ধরেছেন সাবলীলভাবে। গল্পের পাশাপাশি ওই অঞ্চলের রাজনৈতিক সংঘাতের ইতিহাসও উঠে এসেছে লেখককের কলমে। ওমার চরিত্রকে দারুণ লেগেছে। সে যেন খাদের কিনারা হতে ফিরে আসা দৃঢ় মনোবলের প্রতীক।
#আসমান -লতিফুল ইসলাম শিবলী নালন্দা