বইয়ের নামঃ তোমাকে
লেখকের নামঃ হুমায়ুন আহমেদ
প্রকাশিতঃ ১৫ ই জুন ১৯৯৫
প্রকাশকঃ অন্যন্যা
ভাষাঃ বাংলা
পাতার সংখ্যাঃ ৬৪ টি
মুদ্রিত মুল্যঃ ১৫০ টাকা
ক্যাটাগরীঃ রোমান্টিক উপন্যাস
লেখক পরিচিতঃ
———————-
১৯৪৮ সালের ১৩ ই নভেম্বর হুমায়ুন আহমেদ জন্মগ্রহণ করেন । তার জন্মস্থান ময়মনসিংহ বিভাগের নেএকোনা জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রসায়ন বিভাগে স্নাতকোওর ডিগ্রি অর্জন করার পাশাপাশি পলিমার রসায়ন নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন। তার লেখা প্রথম উপন্যাস হলো “নন্দিত নরকে” । যার মাধ্যমে পাঠক মহলে তিনি বিশাল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এছাড়াও উপন্যাস সমগ্র, হিমু সমগ্র, মিসির আলি সমগ্র, সাইন্সফিকশন, গল্প,ভৌতিক,ভ্রমণ, শুভ্র, শিল্পসাহিত্য সহ আত্নজীবনী ও স্মৃতিকাথা লেখে দেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি বিখ্যাত লেখক হিসাবে মর্যাদা পান । তিনি ২০১২ সালের ১৯ সে জুলাই মৃত্যু বরন করেন ।
বইয়ের ধরনঃ
——————
বাংলাদেশের কিংবদন্তি লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর একটি অসাধারণ উপন্যাস “তোমাকে”। মুলত উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট সাধারণ একটি পরিবারকে ঘিরে। এই উপন্যাসটিতে মায়ের উপস্থিতে বাবার মেয়েদের প্রতি ভালোবাসা এবং দায়িত্ব যেমন ফুটে উঠেছে ঠিক তেমনি বয়ঃসন্ধি কালে কিশোরীর যে মানুষিকতা, বিপরীত লিঙের প্রতি আর্কষন এর বিষয়টি খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করা হয়েছে । “তোমাকে ” উপন্যাসটিতে পরক্রিয়া এবং তা নিয়ে সমাজের নানা মানুষের নানা রকম কৌতুহল আর দৃষ্টিভঙ্গির দিকটিও তুলে ধরা হয়েছে । মা হারা সন্তানের বেড়ে ওঠা, নানা ধরনের পরিস্থিতির সামনে পড়া, সমাজের নানা প্রশ্ন, বাবার ভালোবাসা এই সব কিছু এই উপন্যাসটি লিখা হয়েছে ।
বইয়ের সারসংক্ষেপঃ
—————————-
গল্পের কথক হলো বিলু । নিলু আর বিলু জমজ বোন আর তাদের ছোট বোন সেতারা । তবে নিলু আর বিলুর তাদের বাবার দেওয়া একটা কাব্যিক নামও আছে আর তা হলো কান্না আর রাএি । যদিও এই নাম তাদের মায়ের একদম পছন্দ ছিলো না । নিলু আর বিলু জমজ হওয়ায় তাদের বাবা অনেক গর্ব করত । নিলু আর বিলু যে জমজ এটা ছিলো বিলুর বাবার কাছে অনেক কিছু । আশে পাশের মানুষ গুলোও তাদের সাথে নানা রকম মজা করত । দেখা হলেই তাদের জিজ্ঞেস করতো যে, “তোমাদের মধ্যে কে নিলু আর কে বিলু তারাতাড়ি বল। ” বিলুর বাবা আর আশেপাশের মানুষের এই মজা করার বিষয়টা বিলুর মায়ের পছন্দ ছিলো না । নিলু আর বিলুকে যেন সবাই আলাদা করতে পারে তার জন্য বিলুর মা নানা চেষ্টা করেন কিন্তু অনেক কিছু করার পরেও নিলু আর বিলুকে দেখতে একই রকম লাগত।
নিলু আর বিলু কে নিয়ে কেউ মজা করলে বিলুর মায়ের সহ্য হতো না তবে বাড়িতে যে ম্যানেজার বাবু ভাড় থাকতো তিনি কিছু বললে বিলুর মা কিছু মনে করতেন না। তোমাকে গল্পের প্রথম দিকে দেখা যায় বিলুর মা রেনু ম্যানেজার এর সাথে পালিয়ে যেতে । মায়ের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে সমাজের মানুষের কটুক্তি সহ নানা কথা শুনতে হয় তাদের । বারবার তাদের মাকে নিয়ে প্রশ্নটা ছিলো তাদের কাছে কষ্ট আর মানসিক চাপের বিষয় । নিলু আর বিলু সময়ের সাথে সাথে মেনে নেই যে তাদের মা আর ফিরবে না কিন্তু ছোট্ট মেয়ে সেতারা তা মানতে পারে না । সে অপেক্ষায় থাকে কবে তার মা ফিরবে । মা চলে যাওয়ার সাথে সাথে যেন সেই সংসারের শান্তিও চলে যায় । সব কিছু হয়ে উঠে বিষাদময় ।
সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুর-ই পরিবর্তন হতে থাকে । আস্তে আস্তে নিলু আর বিলু মায়ের অভাব অনুভব করতে থাকে কারণ এমন অনেক বিষয়-ই থাকে যা বাবাকে বলা যায় না । কিন্তু বিলুর বাবা বিয়েতে রাজি হন না । তিনি মনে করেন সতমা আসলে নিলু,বিলু,সেতারা কে কষ্ট দিতে পারে ৷ আস্তে আস্তে তিনি বাড়ি থেকে রেনুর সকল স্মৃতি গুলো মুছে ফেলতে থাকেন । সময় যেতে থাকে বিলু, নিলু, সেতারা বড় হতে থাকে ৷ নিলু কোনো কিছু নিয়েই খুব একটা সিরিয়াস ছিলো না । সে কারণে -অকারনেই হাসতো। হুট করেই সে রকিব নামক এক ভদ্রলোক এর প্রেমে পড়ে যায় । অন্যদিকে বিলু ছিলো পড়শুনায় ভালো একজন মেয়ে । তবে বিলুর মা চলে যাওয়ার পড়ে তাকে নানা রকম কঠিন পরিস্থিতি তে পড়তে হয় । মানুষের কথা আর প্রশ্ন শুনতে শুনতে সে ক্লান্ত৷ তাদের বাবা তাদের জন্য গানের টিচার রাখলেও নিলু আর বিলুর দ্বারা গান শেখা হয় না কিন্তু সেতারা গান শিখে ফেলে । নিলু আর বিলুর মধ্যে প্রথম দিকে ভালো সম্পর্ক থাকলেও পড়ে তা শেষ হয়ে যায় । একটা সময় পরে তারা একে অন্যর থেকে দূরে থাকতেই বেশি পছন্দ করা শুরু করে । সেতারা নিলুর সাথে থাকতে পছন্দ করত । বিলু ছিলো নিলুর বিপরীত।
একই রকম দেখতে হলেও তাদের আচারনে ছিলো অনেক পাথর্ক্য। এসএসসি পরীক্ষায় বিলু ভালো রেজাল্ট করলেও নিলুর রেজাল্ট তেমন ভালো হয় না । বিলু চলে যায় শহরে । সেখানে কলেজে পড়াকালীন অবস্থায় নিলু আর বিলুর সম্পর্ক আবার আগের মতো হয়ে উঠে । সেতারাও বিলুর মতো গম্ভীর ছিলো তবে তার বিলুর সাথে খুব একটা সখ্যতা ছিলো না । বিলু শহরে যাওয়ার পরে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে । নিলু বিলু সেতারা মাকে ছাড়ায় বড় হয়ে উঠে । তাদের জীবন নিয়েই এই গল্পটা । তবে কি হবে যদি আবার তাদের মা ফিরে আসে? তারা কি আবার আগের মতো করে মাকে নিজের করে নিতে পারবে? বিলুর বাবা কি পারবে তার ভালোবাসার মানুষটাকে ক্ষমা করে দিতে? কখনো কি ফিরে আসবে তাদের মা?
পাঠ প্রতিক্রিয়া————————
প্রতিটি পরিবারে মা যে কত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে তা এই গল্প পড়ে বুঝা যায় । যে পরিবারে মা নামক মানুষটা থাকে না সেই পরিবারের কোনো কিছুই ঠিক থাকে না । যখন রেনু ম্যানেজার এর সাথে পালিয়ে যায় তখন বিলুর পরিবারটা যেন নিমেষেই তচনচ হয়ে যায় ৷বিলুর মা চলে যাওয়ার পড়ে সমাজের মানুষের হাজার রকমের কথা আর প্রশ্ন করার বিষয়টা ছিল কষ্টদায়ক আর বিরক্তিকর । আমাদের সমাজের মানুষেরা ভালোর থেকে খারাপ জিনিস গুলোর প্রতি বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে । বিলুর মা চলে যাওয়ার পড়ে তাদের অনেক খারাপ সময় পার করতে হয়৷ সমাজের মানুষের আচরণ গুলো সত্যিই খারাপ লাগার মতো ছিলো । এই গল্পটাতে অদ্ভুত রকমের খারাপ লাগা ছিলো যা আপনার মনেও আঘাত হানবে । বিলু মাকে হারিয়েছে ঠিকই কিন্তু তার সাথে অনেক মানুষকে পেয়েছে যারা পর কম আপন বেশি ছিলো । কখনো ভালোবাসা কখনো শাসন দিয়ে তাদের আগলে রেখেছে সেই মানুষগুলো ।
গল্পের একদিকে যেমন নতুন সম্পর্ক গড় উঠছিলো ঠিক তেমনি তার বিপরীতে পুরোনো কিছু সম্পর্ক ভাঙছিলো । তোমাকে উপন্যাসটিতে বিলুর মা চলে যাবার পরে তাদের বাবাই তাদেরকে বড় করে আর সাথে ছিলো কিছু পর মানুষ যাদের আপন জনের মতোই বলা যায় । কিন্তু এত কিছুর মাঝেও সত্যি তো এটাই যে মায়ের অভাব আর অন্য কিছু দিয়ে পুরণ করা যায় না । গল্পটাতে শিক্ষনীয় কিছু বিষয় রয়েছে যা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে কি আপনার জন্য ভালো আর কি খারাপ । এই গল্পের কোনো কোনো বিষয় যেমন আপনাকে আনন্দ দিবে ঠিক তেমনি কিছু কিছু বিষয় আপনাকে কষ্ট দিবে। তবে সব মিলিয়ে গল্পটা সুন্দর ছিলো ।
সমালোচনাঃ—————–
গল্পের শুরুতে জমজ বোনের কাহিনি দেখে আগ্রহ নিয়ে বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম ৷ প্রথম দিকের কাহিনি এবং তার বর্ননা সত্যিই খুব সুন্দর ছিলো । কিন্তু শেষের দিকে হুট করে সমাপ্ত ককে দেওয়ার জন্য আমি সত্যিই আশাহত ৷ গল্পের কিছু কাহিনি অসমাপ্তই রয়ে গেছে । আমার মনে হয় গল্পটাকে আরেকটু বড় করা উচিত ছিলো৷ মাঝখানের কিছু বিষয় অস্পষ্ট রয়ে গেছে যদি সেই বিষয় গুলোও বর্ননা করা হতো তবে গল্পটা সত্যিই অনেক সুন্দর হতো ।
চরিত্র_বিশ্লেষণঃ———————
★বিলুঃ
বিলু হলো গল্পের মুল চরিত্র । চুপচাপ শান্তস্বভাব এর মেয়ে । কিছুটা গম্ভীর তবে বেশি না ৷ বিলু আশেপাশের পরিবেশ আর অন্যদের বোঝার চেষ্টা সবসময় করে এসেছে তবে কোনো এক কারণে ছোট থেকেই সে সবার থেকে আলাদা । না তার কোনো ভালো বন্ধু আছে আর না আছে কারো সাথে খুব ভালো সম্পর্ক । তার বন্ধু বলতে আছে শুধু নীলুই ৷ সেখানে সবাই নিলুকে পছন্দ করে সেখানে বিলু ছিল অপছন্দের একটা মানুষ সবার কাছে । স্কুলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে কেউ তাকে পছন্দ করতো না । তবে ভালো ছাএী হওয়ায় সে শিক্ষক /শিক্ষিকা দের কাছে পছন্দের ছিলো । গল্পের প্রতিটি কঠিন পরিস্থিতিতেই সে নিজেকে সামলে নিয়েছে ।
★নিলুঃ
বিলুর থেকে ১১ মিনিটের বড় নিলু । ২ জন জমজ হলেও তাদের মধ্যে স্বভাবের অনেক পাথর্ক্য ছিল । নিলু সবসময় হাসতো । সিরিয়াস বিষয় গুলোও তার কাছে মজার ছিলো । পড়াশুনার দিকে তার খুব একটা আগ্রহ ছিলো না। নিলু একটু আবেগপ্রবণ ছিলো।
★সেতারাঃ
সেতারা নীলু আর বিলুর থেকে ছোট হলেও তার মধ্যে আলাদা একটা গম্ভীর ভাব ছিলো। সে ছিলো অনেকটা বিলুর মতো । ছোট বেলাতেই মা কে হারানোর ফলে সে সময়ের সাথে সাথে আরও গম্ভীর হয়ে উঠে । তার গানের গলা ছিলো খুব ভালো । তবে কম বয়সে মা কে হারানোটা সে সহ্য করতে পারে না । সবসময় এই অপেক্ষাতেই থাকে যে হয়তোবা একদিন তার মা ফিরে আসবে ।
★বিলুর বাবাঃ
বিলুর বাবা সহজ সরল একজন মানুষ । পেশায় তিনি ব্যাবসায়ী । তবে পরিস্থিতি সহজ মানুষ গুলোকেও কঠিন আর জটিল করে তুলে । তার সাথেও ঠিক এমনটাই হয়েছে । সে মানুষ আগে রাগতো না , সে মানুষটাই ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে রাগী হয়ে গেছে । সব সময় নিজের কষ্টকে লুকিয়ে রাখলেও শেষ পযন্ত তিনি কষ্টই পেয়ে গেছেন । তবে প্রতিবারের মতোই তা প্রকাশ করেন নি । নিজের বউ অন্যর সাথে পালিয়ে যাওয়ায় সমাজের মানুষের থেকে যেমন হাজার রকম কথা শুনতে হয়েছে ঠিক তেমনি নিজের সন্তান গুলোকেও মানুষ করতে হয়েছে । ভালোবাসার মানুষটাকে এত ভালোবাসার পরেও প্রতিদানে তিনি শুধু কষ্টই পেয়েছেন ।
★বিলুর মাঃ
প্রথম থেকেই বিলুর মায়ের ইচ্ছা ছিলো তার একটা ছেলে হবে। মেয়ে যেন তার চোখের বিষ । অথচ তিনি নিজেও একজন মেয়ে । তার একটা ভুল পদক্ষেপ এর জন্য একটা সংসার শেষ হয়ে যায় । শেষ হয়ে যায় একটা সংসারের সুখ, শান্তি আর আনন্দ ।
★ম্যানেজার চাচাঃ
এই চরিত্রটা ছিলো জঘন্য তম একটা চরিত্র । সে মানুষ পরক্রিয়া করতে পারে আবার সময়ের সাথে সাথে সরেও যেতে পারে সে কখনো ভালো হতে পারে না ।
★গানের শিক্ষকঃ
আমার কাছে এই চরিত্রটি খুব মজার ছিলো । নিলু বিলু আর সেতারার গানের শিক্ষক তাদের গান তো শিখাতেন কিন্তু তার প্রান যেন খাবারের মধ্যে গিয়েই আটকে থাকতো । প্রতিটি কাজ শেষে তিনি খুব সুন্দর করে খাবারের কথা জিজ্ঞেস করতো । তবে প্রতিদিন তার একইভাবে খাবারের কথা জিজ্ঞেস করার ধরনটা সত্যিই মজাদার ছিলো ।
★স্কুলের ম্যাডামঃ
আমার কাছে এই চরিত্রটা ভালো লাগলেও অনেক সময় এই চরিত্রটির কারণে নিলুকে অনেক লজ্জায় পড়তে হয়েছে ।
★রকিব ভাইঃ
নিলুর প্রেমিক ছিলো রকিব ভাই তবে মাঝে মাঝে নিলুর কথা শুনে মনে হতো যে রকিভ ভাই বিলুকে পছন্দ করে । ভাদ্র স্বভাবের এই চরিত্রটি আমার কাছে ছিল রহস্যময় ৷
★রমজান ভাইঃ
রমজান ছিলো বিলুর বাসার পাহাড়াদার টাইপের একটা মানুষ । তার কাজ ছিলো সবাইকে নানা বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া ৷ তবে এই মানুষটাই সব সময় নিলু, বিলু, সেতারা কে ভালোবেসে গেছে আর তার সাথে আগলেও রেখেছে।
★আকবরের মাঃ
বাসার কাজের লোক ছিলেন আকবরের মা । তার রমজান ভাইয়ের সাথে ঝগড়া সব সময় লেগেই থাকতো তবে মানুষ হিসাবে তিনি অনেক ভালো ছিলেন।
★বড় মামাঃ
আমার কাছে বড় মামাকে সব সময় স্বার্থবাদী মনে হয়েছে । যখন তার কোনো প্রয়োজন পড়তো তখনই তার দেখা পাওয়া যেত । আত্নীয়দের সাথে তার সম্পর্ক রাখার কারণ-ই হলো যাতে বিপদে পড়লে সাহায্য চাইতে পারে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছাড়া তিনি বিলুদের সাথে দেখা বা যোগাযোগ করতেন না।
★নাজমুল হুদাঃ
নাজমুল হুদা ছিলো বিলুর প্রতিবেশি । তার সন্তানেরা দেশের বাহিরে থাকতো । তিনি সব সময় নিলু বিলুকে খুব ভালো বাসতেন আর তারা জমজ হওয়ায় তাদের নিয়ে মজাও করতেন। নিলু বিলুকে কখনো শাসন আবার কখনো ভালোবাসা দিয়ে তিনি সব সময় আগলে রেখেছেন।
শিক্ষনীয়_বিষয়————————
১. আমাদের সমাজে বর্তমানে সংসার গুলোতে শান্তি কম অশান্তি বেশি । অনেক নারী পুরুষ কেই দেখা যায় যারা পরক্রিয়ায় জরিয়ে পড়ে । নিজের আবেগ আর অনুভূতি ধরে রাখতে না পেরে তারা অন্যর হাত ধরে পালিয়ে তো যায় । তবে পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে অনেক গুলো মানুষের জীবনও নষ্ট করে যায় । আমরা মানুষ পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীর থেকে আমরা আলাদা। আমরা জানি যে কোনটা আমদের জন্য ঠিক আর কোনটা ভুল ৷ তার পড়েও আমরা কেন ভুল কাজ টাই করবো? আমাদের উচিত সঠিক পথে চলা নিজের আবেগ অনুভূতিকে যতটা সম্ভব নিজের আয়ত্তে রাখা৷ আমাদের সাথে আরও অনেকের জীবন জরিয়ে আছে এটা আমাদের মনে রাখতে হবে । আজ আপনি যার জন্য সব কিছু ছেড়ে তার সাথে চলে যাচ্ছেন সেই মানুষটাই যখন ২ দিন পরে নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে তখন আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি কত বড় ভুল করেছেন । জীবনের প্রতিটি ভুল শুধরানো যায় না। তাই প্রতিটি সিদ্ধান্ত-ই ভেবে চিন্তা করে নিন ।
২. আমাদের আশেপাশের মানুষ গুলোর সাথে অনেক সময় অনেক খারাপ কিছু ঘটে । তখন আমাদের উচিত তাদের পাশে দাড়ানো তাদের সাহায্য করা । কিন্তু আমরা করি তার উল্টো ৷ আমরা তো তাদের পাশে দাঁড়ায়-ই না বরং তাদের নানা ধরনের প্রশ্ন করে আর কথা শুনানোর মাধ্যমে তাদেরকে আরো বেশি কষ্ট দিয়ে থাকি । কারো রেজাল্ট খারাপ হলে, ডিভোর্স হয়ে গেলে, স্বামী সন্তান কিংবা বউ পালিয়ে গেলে বার বার তাকে এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করবেন না । এতে সে মানসিক ভাবে কষ্ট পাবে । আপনি নিজের কৌতুহল কে দমন করতে শিখুন । কৌতুহল বসত এমন কোনো প্রশ্ন কাউকে করবেন না যা দ্বারা মানুষটি কষ্ট পেতে পারে । কেউ জীবনে সাফল্য অর্জন করলে মানুষ যখন তার সাফল্য নিয়ে কথা বলে তখন সে যতটা খুশি হয় তার থেকেও মানুষ বেশি কষ্ট পায় যখন মানুষের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলা হয় । সবশেষে আমাদের সবার উচিত ভালো বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করা আর খারাপ বিষয় গুলো এড়িয়ে চলা । নিজে সমালোচনা করুন নিজের সম্পর্কে অন্যর সম্পর্কে না।
পছন্দের কিছু লাইন—————————-
১. অনেক সময় আমরা যা করতে চাই তা করতে পারি না । কেন করতে পারি না তাও জানি না । কিন্তু পারে তা নিয়ে কষ্ট পায় ।
২.কান্নার মতো গভীর তো কিছু নেই । একজনের দুঃখ অন্য জনকে স্পর্শ করে না । কিন্তু একজনের চোখের পানি অন্যজনকে স্পর্শ করে ৷
৩.মানুষ যখন হাসে তখন তার সঙ্গে সমস্ত পৃথিবী হাসে । কিন্তু সে যখন কাদে তখন তার সঙ্গে আর কেউ কাদে না । কাদতে হয় একা একা ।
৪.পৃথিবীতে এত কষ্ট কেন থাকে? কেন এত দুঃখ চারিদিকে?
৫.মানুষের মন খুব বিচিত্র জিনিস । একবার কোনো কিছুতে মন বসে গেলে তা আর ফেরানো যায় না ।
৬.রাগের মাথায় অনেকে অনেক কিছু বলে, সে সব মনের মধ্যে পুষে রাখা ঠিক না ।
উপসংহারঃ
গল্পের প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে কাহিনী পযন্ত সব কিছুই ছিলো মন কারার মতো যদিও গল্পের শেষটা অনেক তারাতাড়ি করা হয়েছে তবুও আপনারা চাইলে এই গল্পটা পড়তে পারেন। এই গল্পটির কথক বিলু হলেও গল্পে বিলুর থেকে নিলুকে বেশি প্রধান্য দেওয়া হয়েছে। এই গল্পের অনেক গুলো বিষয় খুব সুন্দর করে বর্নণা করা হয়েছে যা আপনার ভালো লাগবে । গল্পটা অন্যান্য গল্প থেকে আলাদা । আশা করি এই গল্পটি আপনাদেরও ভালো লাগবে ।
রেটিংঃ ৩.৫/৫
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?