বইঃ The Cradle Will Fall
লেখকঃ Mary Higgins Clark
প্রথম প্রকাশঃ ১৯৮০
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৩১৪
ভাষাঃ ইংরেজী
জনরাঃ অপরাধমূলক রোমাঞ্চকর উপন্যাস
লেখিকা Mary Higgins Clark এর জন্ম ২৪ ডিসেম্বর ১৯২৭ সালে, জাতিতে আমেরিকান। তিনি মূলত রহস্য রোমাঞ্চ ঘরানার লেখিকা। ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
শুধুমাত্র আমেরিকাতেই তার বই বিক্রি হয়েছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন কপি। তাকে বলা হয় “The Queen of Suspense” । ৩৭ টি বেস্ট সেলার উপন্যাসের স্রষ্টা এই লেখিকা সহ-লেখিকা হিসেবে কন্যা Carrol Higgins Clark এর সাথে লিখেছেন আরো পাঁচটি বই। তার বই থেকে কিছু ফিচার ফিল্ম ও টেলিফিল্ম নির্মিত হয়েছে।
১৯৮০ সালে প্রকাশিত “The Cradle Will Fall” বইটি পড়তে গিয়ে দেখলাম, বইটি হাত থেকে নামানো যাচ্ছে না। অসাধারন বলে হাত থেকে নামানো যাচ্ছে না বিষয়টা তা নয়। এ জনরার বই যারা টুকটাক পড়েন কিংবা মুভি দেখেন তাদের কাছে গতানুগতিকই মনে হবে বইটির কাহিনী। মজার ব্যাপার হলো লেখিকা শুরুতেই খুনির সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, সুতরাং একজন পাঠক পুরো উপন্যাস জুড়ে বাকি একটি প্রশ্নের পেছনে ধাওয়া করে বেড়াবেন। প্রশ্নটি হল ‘কেন’ । আর এই কেন র উত্তরের আশায় বইটি শেষ হওয়া অবধি হাতে রয়ে যাবে।
বিখ্যাত গাইনোকোলজিস্ট Dr. Edger Highley, যার কারনে অনেক দম্পতি দেখেছেন সন্তানের মুখ। রীতিমতো জাতীয় বীরের পর্যায়ে চলে গেছেন এই ডাক্তার, তিনি গল্পের শুরুতেই তার অন্যতম সফল প্রজেক্ট, ছয়মাসের অন্তঃসত্ত্বা মিসেস Vangie Lewis কে পটাশিয়াম সায়ানাইড প্রয়োগে হত্যা করেন। হত্যার কারনটিই হলো সেই ‘কেন’ যার জন্য প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার একটি আস্ত উপন্যাস ফেঁদে ফেলা হয়েছে।
কাউন্টি প্রসিকিউটর Kathe DeMaio রয়েছে উপন্যাসের মূল চরিত্রে। কর্মক্ষেত্রে অসাধারন মেধার পরিচয় দেয়া এই আঠাশ বছরের তরুণী একজন সাবেক বিচারকের স্ত্রী যিনি বিয়ের একবছরের মাথায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, ক্যাথির পারিবারিক বন্ধু এবং কাউন্টির মেডিকেল অফিসার Dr. Richard Carroll এর ছিল Kathe র প্রতি আবছা দূর্বলতা, Kathe র ঔদাসীন্যে তাকে পুরো উপন্যাস জুড়ে কখনো দেখা যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে দোদুল্যমান আবার কখনো Kathe কে পাওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কোন ধরনের ১৮+ দৃশ্য ব্যতিত দুজনের যে রসায়ন রুপায়িত হয়েছে উপন্যাসে তাতে কাহিনীকারের মুনসিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়।
লেখিকার গল্পের গাঁথুনি বেশ শক্ত। কোন জায়গায় কতটুকু বর্ণনা দিলে পাঠক নিতে পারবে,কাহিনী ঝুলে যাবে না, তিনি বিষয়টা ভালোই বোঝেন। রহস্যের জট পাকানো থেকে জট ছাড়ানোর এই পুরো সফরে পাঠকের জন্য এখানে ওখানে রেখে দিয়েছেন কিছু রহস্য, কিছু যোগসূত্র যা চিন্তার খোরাক জোগায়। শুরু থেকে শেষ অবধি লেখিকা বেশ দক্ষতার সাথে যৌক্তিক উপায়ে কাহিনী শুনিয়ে গেছেন পাঠকদের, কিন্তু গল্প নিতান্তই সরলরৈখিক। যেখানে খুনী কে তা আগে থেকেই জানিয়ে দেয়া হয় সেখানে কাহিনী এতো জটিল হওয়ার অবকাশ থাকে না। শুধু “থ্রিল” বাড়ানোর খাতিরে আরো কিছু অপরাধ সংঘটনের ব্যবস্থা করে পৃষ্ঠা বাড়ানো, এটুকুই যা গুছিয়ে দেখানো হয়েছে।
সহজ সরল বর্ণনায় লেখা বইটি এক নিঃশ্বাসে শেষ করার পর উপলব্ধি হয়, শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষ তার মেধার প্রয়োগ কিভাবে কাজে লাগাতে পারছে, তাতেই নিহিত মানবকল্যাণ। যুগে যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতি মেধাবীদের হাতে তুলে দিয়েছে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ।
কিন্তু, সেই প্রদীপ হস্তগত করার আগে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার বিবেকের শক্ত হাতে।
কারন, দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।
উপন্যাসটি অবলম্বনে এবং একই শিরোনামে একটি টেলিফিল্ম নির্মিত হয়েছিল ২০০৪ সালে।
Leave a comment