আল্লাহ তাবারকা ওয়া তায়ালার হাজার শোকর , এক সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই শতকের ক্ষণজন্মা ইসলামী চিন্তানায়ক সাইয়েদ কুতুব শহীদ – এর বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন ‘ – এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হলো । ৫ বছরের চাইতে কিছুটা কম সময়ের ভেতর আল্লাহ তায়ালা যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ( সর্বমোট ২২ খন্ডে সমাপ্ত ) এই তাফসীরের অনুবাদ
প্রকাশনার কাজ শেষ করার যে তাওফীক আমাদের দান করেছেন তার জন্যে আমরা একান্ত বিনয়ের সাথে আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা জানাই । ( প্রথম প্রকাশনা অনুষ্ঠান ৬ জানুয়ারী ৯৫ ও সমাপনী অনুষ্ঠান ১২ ই মে ২০00 ) ‘ ফী যিলালিল কোরআন ‘ ও তার প্রণেতা সাইয়েদ কুতুব শহীদ – এর পরিচয় আজকের ইসলামী বিশ্বে নতুন করে দেয়ার অবকাশ নেই ।
আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারি যে , ইসলাম প্রতিষ্ঠার মহান সংগ্রামে শহীদ কুতুবের নাম যেমনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছে , তেমনি তাঁর রচিত তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন ও অনন্তকাল ধরে কোরআন অনুধাবনের ক্ষেত্রে একটি ‘ মাইলফলক ‘ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে । পৃথিবীর ২৫ কোটির বেশী লোক যে ভাষায় কথা বলে , যে ভাষার স্থান বিশ্ব ভাষার দরবারে পঞ্চম , সে ভাষায় কোরআনের এই সেরা তাফসীর গ্রন্থটির অনুবাদ বহু আগেই প্রকাশ হওয়া উচিত ছিলো । বিগত দু ‘ – তিন দশকে অনেক উৎসাহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই দুরূহ কাজের একাধিক উদ্যোগও গ্রহণ করেছিলেন , কিন্তু নানা কারণে কোনো উদ্যোগই বাস্তবায়িত হতে পারেনি । আল্লাহ তায়ালা আমাদের মতো কতিপয় গুনাহগার বান্দাকে যে তাঁর এ মহান খেদমতের জন্যে নির্বাচিত করেছেন সে জন্যে তাঁর দরবারে আবারও গভীর কৃতজ্ঞতা আদায় করি ।
‘ ফী যিলালিল কোরআন ‘ – এর কঠিন অনুবাদ , জটিল সম্পাদনা সর্বোপরি ব্যয়বহুল প্রকাশনা নিসন্দেহে আমাদের জন্যে ছিলো একটি সাহসী পদক্ষেপ , বলতে গেলে এর সবটুকুই ছিলো একটি আবেগ তাড়িত সিদ্ধান্ত । কিন্তু কোনো দ্বীনি ‘ জোশের পেছনে যে কিছু দুনিয়াবী ‘ হুশ’ও প্রয়োজন , তা আমরা প্রথম দিকে টেরই করতে পারিনি । টের যখন পেলাম তখন আমাদের পথ চলা প্রায় শেষ হয়ে গেছে । আল্লাহ তায়ালার হাজার শোকর , যাত্রার শুরুতে তিনি যদি এর বাণিজ্যিক ঝুঁকির কথাটি আমাকে ভুলিয়ে না রাখতেন তাহলে এই তাফসীরের বাংলা অনুবাদ প্রকাশনার এই উদ্যোগটি কোনোদিনই সফল হতে পারতো না । তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন ‘ বাংলাদেশের সর্বশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীমহল ও ওলামায়ে কেরাম তথা কোরআনের পাঠকদের মাঝে যে পরিমাণ সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে , তা দেখে আমরা সত্যিই আনন্দে অভিভূত হয়ে গেছি ।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী চিন্তাবিদরা এই তাফসীরটির ব্যাপারে যে মূল্যবান অভিমত প্রকাশ করেছেন , তার প্রতিটি বাক্যই উল্লেখ করার মতো । বিশেষ করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মোফাসসেরে কোরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী , | মনীষী বুদ্ধিজীবী জাতীয় অধ্যাপক মরহুম সৈয়দ আলী আহসান , ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ – এর চেয়ারম্যান , সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান , বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতীব আমার শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ মাওলানা ওবায়দুল হক – এ দেশবরেণ্য চিন্তাবিদদের সবাই আমাদের উদ্বোধনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাযির হয়েছেন । অনেকেই আবার ব্যক্তিগতভাবে আমাদের বাংলাদেশ অফিসে এসে আমাদের এই প্রকল্পের জন্যে দোয়া করে গেছেন । আমি তাদের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ ।
সম্মানিত পাঠক – পাঠিকাদের কাছে আমাদের একান্ত অনুরোধ , এই মহান গ্রন্থের কোথাও যদি কখনো কোনো ভুল – ভ্রান্তি আপনাদের নযরে পড়ে তাহলে কোরআনের স্বার্থেই তা মেহেরবানী করে আমাদের জানাবেন । সর্বজন শ্রদ্ধেয় ওলামায়ে কেরামের কাছেও আমাদের বিনীত নিবেদন , এই কেতাব আপনার আমার কারোর নয় হেদায়াতের এ মহান উৎসটির একমাত্র মালিক হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা তাই একে যথাসম্ভব নির্ভুল করার প্রচেষ্টায় আপনি আপনার মূল্যবান পরামর্শ দিলে আমরা আনন্দের সাথেই তা গ্রহণ করবো এবং সেই আলোকে আগামী সংস্করণগুলোকে আরো সুন্দর , আরো নিখুঁত করার প্রয়াস পাবো ।
৯৫ সালের জানুয়ারী মাস থেকে ২০০৩ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত এই ৯ টি বছর যারা | সর্বাবস্থায় আমাদের সাথিত্য দিয়েছেন গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে লক্ষ মানুষের প্রিয় ‘ তাফসীর ফী | যিলালিল কোরআন’কে নতুন সাজে সাজানোর সুখবরটুকু আমরা তাদের দিতে চাই । আসলে এ কাজটি আমাদের নয় বছর আগেই করা উচিৎ ছিলো , আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই অনিচ্ছাকৃত বিলম্বের জন্যে ক্ষমা করুন । ‘ তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন ‘ – এর গায়ে এখন থেকে আমরা যে নতুন সাজ পরাতে চাই , তাহচ্ছে গোটা তাফসীর জুড়ে এর সূচীপত্র জুড়ে দেয়া । গত নয় বছরে বহুবার আমরা একথাটি অনুভব করেছি , যে এই মহান তাফসীরটি থেকে আরো বেশী উপকার পাবার জন্যে এই তাফসীরে একটা পূর্ণাংগ সূচীপত্র থাকা একান্ত প্রয়োজন ।
এখন থেকে কোন বিষয় কোন খন্ডের কোথায় পাওয়া যাবে এটা জানার জন্যে একজন সন্ধিৎসু পাঠককে সারা তাফসীরের আট হাজার পৃষ্ঠা চষে বেড়াতে হবেনা । এখন প্রতিটি খন্ডের সূচীপত্র দেখে পাঠক সহজেই নিজের প্রয়োজনীয় অংশ বেছে নিতে পারবেন । দ্বিতীয় দিকটি ছিলো এই তাফসীরে ব্যবহৃত মূল কোরআনের অংশকে নতুন করে বিন্যাস সাধন করা । এই পুনর্বিন্যাসের ফলে তাফসীরের পৃষ্ঠা সংখ্যা কমে আসায় স্বাভাবিকভাবেই এর দামও কমে আসবে । যারা আমাদের কালের শ্রেষ্ঠ এই তাফসীরটিকে আরো সুন্দর দেখতে চান তাদের আমরা আর মাত্র কয়েকটি মাস সময় ধৈর্য্য ধরার আবেদন জানাবো । আল্লাহর তায়ালার ওপর ভরসা করে আমরা এ মাস থেকেই এই পুর্নবিন্যাস প্রক্রিয়া শুরু করেছি ।
আপনার হাতে এখন যে কপিটি আছে তা আমাদের এ নতুন প্রক্রিয়ারই অংশ । বিদায়ের আগে ঊর্ধাকাশের দিকে শুনাহর হাত বাড়িয়ে বলি ‘ রাব্বানা লা তুয়াআখেযনা ইন নাসীনা আও আখতা’না ‘ – ‘ হে আমাদের মালিক , যদি আমরা কোথাও কিছু ভুলে গিয়ে থাকি কিংবা কোথাও যদি আমরা কোনো ত্রুটি – বিচ্যুতি করে বসি – তুমি তার কোনোটার জন্যেই আমাদের পাকড়াও করো না ।
তুমি আমাদের শাস্তি দিয়ো না ।
আমীন ! ছুম্মা আমীন !!
খাদিজা আখতার রেজায়ী লন্ডন
জানুয়ারী ২০০৩
Download From Google Drive
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?