গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদেরকথা
বাংলাদেশ ‘র’
আগ্রাসী গুপ্তচর বৃদ্ধির স্বরূপ সন্ধান। লেখকঃ আবু রূশদ
বাংলাদেশ ‘র’ এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে , গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম গোপন ব্যাপার বলে পরিগণিত হলেও আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রায় সবদেশেই এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা , সমালোচনা হয়ে থাকে । যে দেশের গুপ্তচর সংস্থাকে কেন্দ্র করে এ পুস্তক লেখা হয়েছে সে দেশ অর্থাৎ আমাদের প্রতিবেশী ভারতেও এ সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় অজস্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে ।
তবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে , বর্তমান বিশ্বে আমাদের বাংলাদেশই সম্ভবতঃ একমাত্র দেশ যেখানে বিদেশী কোন গুপ্তচর সংস্থা কর্তৃক এদেশের বুকে পরিকল্পিত উপায়ে পরিচালিত তৎপরতা সম্পর্কে কোন কিছু বলা বা লেখা হলে তাৎক্ষণিকভাবে এ দেশেরই অভ্যন্তর থেকে ঐ বিদেশী সংস্থার পক্ষে সাফাই গেয়ে কথা বলার লোকের মোটেই অভাব হয় না ।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘ র ‘ – এর প্রসঙ্গে এ কথা নির্মম সত্য বই আর কিছু নয় । সম্ভবতঃ এ কারণেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতাকে ঘিরে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক গবেষক , সাংবাদিক মুখ খুলতে নারাজ । তবে স্বনামখ্যাত নির্ভীক লেখক ও গবেষক আবু রূদ এর ব্যতিক্রম । তিনি অতি স্বচ্ছন্দে এ সীমারেখা অতিক্রম করেছেন এবং তথাকথিত অজানা আশঙ্কাকে জয় করেছেন ।
আর তাই এ কথা আজ নির্দ্বিধায় বলা চলে যে , গুপ্তচরবৃত্তি সম্পর্কীয় গবেষণায় তিনি এদেশের বুকে এক নতুন মাত্রার সংযোজন ঘটিয়েছেন । যেহেতু আমি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান গোয়েন্দা সংগঠন ‘ ডিজিএফআই ‘ অর্থাৎ প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি সেহেতু এদেশের বুকে ‘ র ‘ – এর অপতৎপরতা সম্পর্কে আমার অল্প বিস্তর ধারণা রয়েছে । অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন এ দেশে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে টিকিয়ে রাখতে হলে বৈরী গুপ্তচর সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে এদেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিককে অবশ্যই অবহিত ও সচেতন থাকতে হবে ।
সবচেয়ে বড় কথা মহান মুক্তিযুদ্ধে ‘ র ’ আমাদের সহায়তা করেছে বলে তাদের পরবর্তী সকল কার্যক্রমকে বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূল বলে মনে করার কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে না । বরং একটি আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন জাতি হিসেবে আমাদের নিরাপত্তার জন্য আমাদেরকেই ভাবতে হবে , আর তাই স্থায়ীভাবে কাউকে আমাদের শত্রু বা মিত্র বলে জ্ঞান করার কোন অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না ।
আজ যে আমাদের পরম মিত্র , পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে কাল সে ঘোরতর শত্রু বলে পরিগণিত হতে পারে- আধুনিক বিশ্বে এ ধরনের নজীর খুব বিরল নয় । তাই আমরা দেখতে পাই , একসময় যে গণচীন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির বিরুদ্ধে মরনপণ সংগ্রামে লিপ্ত ভিয়েতকং গেরিলাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ ও কূটনৈতিক ছত্রছায়াসহ সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করেছিল , পরবর্তীকালে সময়ের তাগিদে সে ভিয়েতনামকেই তার বৃহৎ প্রতিবেশী গণচীনের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়েছিল ।
‘ গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা : বাংলাদেশে ‘ র ‘ – আগ্রাসী গুপ্তচরবৃত্তির স্বরূপ সন্ধান ’ বইটির প্রতিটি পাতায় রয়েছে তথ্য উপাত্তের সাড়ম্বর উপস্থাপনা । স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার তৎপরতা সম্পর্কে লেখকের বিশদ বিবরণ তার অনুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি ও কঠোর পরিশ্রমের সাক্ষ্য বহন করে । আশা করি বাংলাদেশের গোপন রাজনীতির ইতিহাসে এ বইটি অনেক না – বলা কথার প্রকাশ ঘটাবে ।
ধন্যবাদান্তে চট্টগ্রাম
২০ জানুয়ারী ২০০১
মেজর জেনারেল ( অব . ) এম , এ , মতিন , বীর প্রতীক , পিএসসি