বই:পালামৌ
আজ আমাদের যা ভালোলাগে না একটা সময় সেটা অনেক মূল্যবান হয়ে যায়।দিনশেষে আমরা যে কষ্টটুকুর জন্য মনখারাপ করি একসময় কষ্টগুলো পাহাড় সমান হয়। কৈশোরকালকে আমরা অগ্রাহ্য করি আবার শেষ বয়সের মানুষ সেই কৈশোরকে ফিরে পেতে চাই। তেমনই সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও যখন পালামৌ ভ্রমন করেন তখন তার চোখে পড়া তুচ্ছ বিষয় গুলো শেষ বয়সে এসে স্মৃতিতে নক্ষত্রের মতো জ্বলে উঠে।আর তাই বয়সের সাথে সমানুপাতিক হারে স্মৃতিকাতর হয়ে তিনি লিখেছেন পালামৌ নামক বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ভ্রমণকাহিনী।
পালামৌ ভারতের বিহার রাজ্যে অবস্থিত একটি জেলা। সঞ্জীবচন্দ্র চাকরিসূত্রে পালামৌতে যাত্রা করেন। পালামৌ রচনাকালে শুরুতেই যাত্রাপথে অবলোকন করা কিছু বিষয়ে মনোমুগ্ধকর বিবরণ দিয়েছেন। তার এক পর্যালোচনা এসেছে শিশুর অনুকরণপ্রিয়তা।লেখক বরাকর নদী পার হওয়ার সময় কিছু শিশু এসে তার সামনে হাত পেতে টাকা চায়।তাদের মধ্যে একটা শিশুর বয়স এতোই কম ছিল যে সে টাকা কি সেটাই জানতো না।লেখক তার হাতে পয়সা দিলে শিশুটা তা ফেলে দিয়ে আবার হাত পেতে থাকে।অন্য শিশুরা সেই পয়সা কুড়িয়ে নেয়।
তারপর এক বাঙালি পরিবারের আতিথ্য গ্রহনের গল্প।সেই পরিবারের জীবনের শৈল্পিক বর্ণনা।সামান্য কলা চুরি ঠেকাতে চোরের জন্য কঠোর শাস্তি দেওয়া লোকের ছেলেদের পড়ার জন্য তিনটি সেজ ব্যবহার করে আলো অপচয়ের বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে লেখককে।
গ্রন্থটিতে সরল ও সাবলীলভাবে পালামৌ অঞ্চলের এর মনোমুগ্ধকর বিবরণ দিয়েছেন লেখক।
কোল সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনধারা, সামাজিক রীতিনীতি,বিয়ে ও তাদের সৌন্দর্য বর্ণণা করতে গিয়ে লেখক বিভিন্ন জাতির টিকে থাকা ও বিলুপ্তি পেছনে তার অনুসন্ধান তুলে ধরেছেন।
কোল সম্প্রদায়ে অলসতার কারণে পুরুষেরা নারীদের আগেই বৃদ্ধ হয়ে যায় এবং পরিশ্রমের কারণে নারীরা চিরযৌবনা থাকে। কোলদের বিয়ের রীতিটা একটু ভিন্ন ধরনের যা অনেককেই অবাক করবে আবার বঙ্কিমচন্দ্রের কাঠিন্য ভাষা পড়া পাঠকদের খুব একটা ভালো লাগবে না। কোলদের বিবাহ দিতে গিয়ে টাকা কর্জ করে তাদের জীবনযাত্রার টানাপোড়ন এবং সেই সময়ের মানুষের নির্বুদ্ধিতার চিত্র সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরেন
পালামৌ গ্রন্থটি সাবলীল সাধুরীতিতেই লেখা।
সাধুভাষার অসারতা ইঙ্গিত দিতে লেখক বলেছেন সাধুদের গৃহিণীরা নাকি সাধুভাষা ব্যবহার করেন না। কারন এই ভাষায় গালি চলে না,ঝগড়া চলে না,মনের কথা বলা যায় না।
কোলদের বর্ণ ও শারীরিক গঠন বর্ণণায় লিখেছেন বিখ্যাত এক লাইন,”বন্যেরা বনে সুন্দর; শিশুরা মাতৃক্রোড়ে”।
বইটা অনেক ছোট। ক্ষুদ্র একটা ভ্রমণকাহিনী।ছন্দময় ও প্রাণবন্ত উপস্থাপন খুবই ভালোলেগেছে। হয়তো এইাই ছোট্ট বইটির বিশেষত্ব।পড়ে দেখতে পারেন,মুগ্ধ হবেন আপনারাও।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?