Noboni PDF By Humayun Ahmed – নবনী পিডিএফ লেখক : হুমায়ূন আহমেদ | উপন্যাস রিভিউ

  • বইয়ের নাম : নবনী
  • লেখক : হুমায়ূন আহমেদ pdf download free
  • ধরণ : প্রেমোপন্যাস 
  • প্রকাশনী : সময় প্রকাশনী বই পিডিএফ
  • প্রথম প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩
  • সর্বশেষ প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০২০
  • প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : ধ্রুব এষ
  • পৃষ্ঠা : ১২৭
  • মলাট মূল্য : ২০০৳
  • ব্যক্তিগত রেটিং : ৮/১০

‘নবনী’, হুমায়ূন আহমেদের এমন একটি প্রেমোপন্যাস, যার প্রথম অংশ পড়ার সময় আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না এর শেষে কী হতে চলেছে! যারা রোমান্টিক উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন, তাদের কাছে বইটি বেশ ভালো লাগবে। নবনী নামের এক তরুণীর জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কাহিনিটি যেকোনো পাঠককে অন্য এক জগতে হারিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম! বইটিতে একদিকে যেমন ফুটে উঠেছে গভীর প্রেমানুভূতি, তেমনি অপরদিকে বেদনার তিক্ততার পাশাপাশি আমাদের সমাজের বাস্তবতাও লেখক তুলে ধরেছেন সুনিপুণভাবে।

Noboni PDF By Humayun Ahmed - নবনী পিডিএফ লেখক : হুমায়ূন আহমেদ | উপন্যাস রিভিউ

‘Noboni’, a love novel by Humayun Ahmed, the first part of which you can not even imagine what is going to happen at the end! For those who love to read romantic novels, this book is a must have. In the name of Noboni – PDF Download Noboni Novel Available ⤵️ Noboni PDF By Humayun Ahmed – নবনী পিডিএফ ডাউনলোড করুন সম্পূর্ণ ফ্রিতে লেখক : হুমায়ূন আহমেদ বই pdf| উপন্যাস রিভিউ
  ❝ নবনী ❞
গল্পের শুরুতেই ঘুম ভাঙার পর নবনী জানতে পারে আজ রাতে তার বিয়ে! হঠাৎ করে বিয়ের কথা শুনে যে কারোরই হকচকিয়ে ওঠার কথা। কিন্তু নবনী স্তম্ভিত হয় না কেননা তার জীবনে এমন এক অতীত রয়েছে, যার কারণে কোনো পাত্রপক্ষই তার সাথে তাদের ছেলের বিয়ে দিতে রাজি হন না। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে নবনীর বড় মামা তার জন্য এক পাত্রপক্ষকে রাজি করাতে সক্ষম হন। পাত্রের নাম নোমান। নোমান অত্যন্ত সহজ-সরল। সে তার বন্ধু সফিকের অফিসে ছোটখাটো একটা চাকরি করে। নোমানের সরলতা ও নবনীর প্রতি তার যত্ন ও ভালোবাসা দেখেই নবনী ধীরে ধীরে তাকে পছন্দ করতে শুরু করে। 
 গল্পটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে এগোতে থাকে তাদের প্রেম ও ভালোবাসার মেলবন্ধনে। দুজনের মাঝে ফুটে ওঠে সীমাহীন প্রেম। ভালোবাসা যে কতটা সুন্দর হতে পারে তা তাদের মাঝে প্রতীয়মান হয়। নবনীর জ্বর দেখার বাহানা করে তার প্রতি নোমানের কাছে আসার প্রচেষ্টা, ট্রেনে করে নবনীকে তার বাড়িতে পাঠানোর সময় নোমান ও নবনীর আবেগময় মুহূর্ত, বাড়ি থেকে ফেরার পর নোমানের কাছে নবনীকে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে জনৈক ব্যক্তির সাথে নবনীকে দেখে নোমানের খারাপ লাগা ও নবনীর প্রতি নোমানের রক্ষণশীল মনোভাব যেন বিশুদ্ধতম ভালোবাসারই প্রতিচ্ছবি।
 নবনী অনেকবারই নোমানকে তার ভয়াবহ অতীতের কথা বলতে চেয়েছে। বলতে চেয়েছে আনিস স্যারের কথা। কিন্তু শেষ অবধি আর বলে উঠতে পারেনি। নোমানও আগ বাড়িয়ে তাকে এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করেনি কখনো। অতঃপর তাদের জীবন চলতে থাকে সাধারণভাবেই। ভাবছেন এখানেই শেষ! না, তারপর হঠাৎ-ই নোমানের বন্ধু সফিক ও তার স্ত্রী অহনার জন্য তাদের জীবনের মোড় পাল্টে যায়, গল্পটি চলতে থাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত এক পরিসমাপ্তির দিকে। ‘নবনী’ উপন্যাসটির সমাপ্তি অত্যন্ত পীড়াদায়ক, যার জন্য কোনো পাঠক কখনোই প্রস্তুত থাকবে না। শেষটা যে এমন হবে তা আসলেই কল্পনা করা কঠিন!
 ‘নবনী’ উপন্যাসটি হুমায়ূন আহমেদের লেখা অন্যতম রোমান্টিক উপন্যাসগুলোর একটি। এটি পড়ে আমি নিজেকে যেন উপন্যাসের মাঝে অনুভব করতে পেরেছি। শুরুতে আনিস স্যারের প্রতি টান জন্মালেও একসময় তার প্রতি-ই আপনার মায়া ও খারাপ লাগা উভয়ই কাজ করবে! কি অদ্ভুত, তাই না! গল্পটির প্রেক্ষাপট সাধারণ হলেও তা উপস্থাপনের ভঙ্গি ছিল অসাধারণ। কত সুন্দরভাবে নবনী ও নোমান তাদের সংসার গুছিয়েছিল! সাধারণ জীবনও তারা কত সুন্দরভাবে সাজিয়েছিল! তবে উপন্যাসের শেষে হুমায়ূন আহমেদ বাস্তবতার তিক্ততা ও কঠোর রূপ তুলে ধরেন। পাশাপাশি নবনীর শেষ পরিণতি জানার এক অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা তিনি পাঠকদের হৃদয়ে গ্রোথিত করে দেন। উপন্যাসটি আমার অনেক ভালো লেগেছে। তবে পরিসমাপ্তিটুকু পড়ে আমি বেশ কিছুদিন হতভম্ব ছিলাম! একদিকে যেমন প্রচণ্ড খারাপ লাগা কাজ করছিল অন্যদিকে এমন পরিণতি দেখে তা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছিল! 
 কী ছিল নবনীর সেই অতীতে? কে ছিলেন এই আনিস স্যার? আর উপন্যাসটির সমাপ্তিতেই বা এমন মর্মান্তিক কী ঘটেছিল? জানতে হলে পড়তে হবে হুমায়ূন আহমেদের এই অসাধারণ উপন্যাসটি।
 সবশেষে যারা রোমান্টিক উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন, তাদের সবাইকে অবশ্যই ‘নবনী’ উপন্যাসটি পড়তে বলব। আশা করি বইটি আপনাদের ভালো লাগবে। সামান্যতম সময়ের জন্যও বিরক্তি অনুভূত হবে না।
~ উপন্যাসটির পছন্দের কিছু উক্তি:
❝ পৃথিবীতে দু’ধরনের মানুষ খুন হয়। প্রবল ঘৃণার মানুষ এবং প্রচণ্ড ভালোবাসার মানুষ। ❞ 
❝ মানুষের চরিত্রের একটা অংশ উদ্ভিদের মতো। উদ্ভিদ যেমন মাটিতে শিকড় ছেড়ে দেয়, মানুষও তাই করে। কিছুদিন কোথাও থাকো মানে সেখানে শিকড় বসিয়ে দেয়া। মাটি যদি চেনা হয় আর নরম হয় তাহলেতো কথাই নেই।❞
❝ ভালোবাসার দাবি আছে। সেই দাবি খুব কঠিন দাবি। ❞
❝ হতাশা, গ্লানি, দুঃখ ও বঞ্চনার পৃথিবীকে এত সুন্দর করে বানানোর কি প্রয়োজন ছিল কে জানে? ❞
 (সমাপ্ত)
Review Credit 💕
নাম: মো. মাহিন রানা
শ্রেনি: দ্বাদশ
প্রতিষ্ঠান: নটর ডেম কলেজ, ঢাকা
বিষয়: বই রিভিউ
তানভীর ফুয়াদ রুমি লিখেছেন….হুমায়ূন আহমেদ এখনও আমার কাছে আন্ডাররেটেড। এবং সবচেয়ে বেশি অবিচার যদি কোনো লেখকের সাথে হয়ে থাকে- সেটা হুমায়ূন আহমেদ।
হুমায়ূনভক্ত হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ এর হিমুতো অনেকে পড়েছে, হিমুর মতো হতে চেয়েছে, হলুদ হিমু কালো র‍্যাব কি পড়েছেন? কিংবা আঙুল কাটা জগলু? উপন্যাসটার যে একটা রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে, এই ব্যাপারটা কি টের পেয়েছেন? রিমান্ডের বিরুদ্ধে, সাদা পোশাকে তুলে নেয়ার বিরুদ্ধে, গুমের বিরুদ্ধে, ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে যে তিনি লিখেছেন- এটা কি খেয়াল করেছেন পড়ার সময়? হুমায়ূন আহমেদ কে কিন্তু দুই কি তিনবার এসব কারণে আইনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। 
নবনী পড়েছেন অনেক মেয়ে, প্রেমের উপন্যাস হিসেবে খুবই সমাদৃত। প্রিয়তমেষু কে নিয়ে কিন্তু কথা হয় না৷ অথচ প্রিয়তমেষুর মতো আরেকটা উপন্যাস আপনি পাবেন না খুব সহজে। প্রিয়তমেষু প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। সেইসময় বসে হুমায়ূন আহমেদ লিখে গিয়েছেন নিজের ঘরে ধর্ষণ হওয়া গৃহবধূর গল্প। তার পাশে দাঁড়ানো এক সাধারণ নারীর গল্প। দুজনের আইনি লড়াইয়ের গল্প। আইনের ফাঁকফোকরের গল্প। এবং ঠিক শেষ দুই লাইনে লেখক যে ধাক্কাটা দেন- গল্পটা যেভাবে ঘুরে গিয়ে মাথা ঝনঝন করে ওঠে- শুধু ‘প্রিয়তমেষু’র জন্যই হুমায়ূন আহমেদ কে মনে রাখা উচিত।
তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ পড়ে কজন বিশ্লেষণ করেছে? অথচ শুরুর উপন্যাসেই হুমায়ূন আহমেদ নিজের দর্শন জানান দিয়েছেন খুব শক্তভাবে। নন্দিত নরকের মতো আরেকটা প্লট কি এসেছে? এরকম শক্তিশালী প্লটে দুর্দান্ত এক্সিকিউশন ও জীবনের পরতে পরতে বিশ্লেষণ করে উপন্যাস লিখে ফেলেছিল একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবক, এটা নিয়ে কথা কি হয় এখন খুব একটা? 
হুমায়ূন আহমেদ এর প্রায় সকল উপন্যাসে কিছু চরিত্র থাকে কমন এলিমেন্ট হিসেবে। কাজের লোক, মসজিদের মুয়াজ্জিন/ইমাম। এই চরিত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত ছিল। যে যে বই এই চরিত্রগুলো এসেছে, তাদের বিশ্লেষণ করলেই একটা মোটামুটি গবেষণা পর্যায়ের কাজ হয়। কেউ কি করেছেন? বা করবেন? হুমায়ূন আহমেদ এর উপন্যাসে ইমাম/মুয়াজ্জিনদের উপস্থিতি- এ ধরনের? 
হুমায়ূন আহমেদ এর সাইফাইগুলো পড়ে দেখেছেন কি? ভারী ভারী থিওরি না এনে অদ্ভুত কিছু উপন্যাস লিখে গিয়েছেন উনি। 
ওনার পোকার মতো আরেকটা ডিস্টার্বিং এবং উইয়ার্ড ফিকশন আছে সাহিত্যে? বা ছিল সেই ১৯৯৩ তে?
হুমায়ূন আহমেদ এর অতিপ্রাকৃত গল্পগুলো পড়েছেন? বা সাধারণ ছোটগল্পগুলো? এই উৎকৃষ্ট গল্পগুলো আন্ডাররেটেড থেকে গিয়েছে। 
তার ভাষার যে ব্যবহার, যেভাবে তিনি ঔপনিবেশিক বাংলা থেকে বেরিয়ে মধ্যবিত্তের প্রকৃত চলিত ভাষায় লিখলেন এবং মধ্যবিত্তরা সেটা গোগ্রাসে গিললোও, সেই কারণটা আমি অল্প কয়েকজনের লেখাতে পেয়েছি। 
আন্ডাররেটেড থেকে গিয়েছে হুমায়ূন আহমেদ এর অসংখ্য অসংখ্য কাজ। আমরা তাকে চিনেছি এবং অন্যদের চিনিয়েছি খুবই সংকীর্ণভাবে। তাকে চিনিয়েছি কেবল হিমু রুপা মিসির আলি বাকের ভাই শুভ্র দিয়ে। সেসব উপন্যাসের উক্তি দিয়ে। হিমুর পাগলামি দিয়ে, রুপার প্রেম দিয়ে।
অথচ হুমায়ূন আহমেদ এর উপন্যাসে গভীর রাজনৈতিক ভাবনা ছিল, তার ভাষার ব্যবহারে আত্মপরিচয়ে পরিচিত হতে বাংলাদেশি বাঙালি যুবকের এক অহমিকা ছিল। হুমায়ূন আহমেদ হিমু লিখে ছেলেদের না কি মাথা খারাপ করেছে, মেয়েদের পছন্দের রুচি নষ্ট করেছে, অথচ তার তেতুল বনে জোছনাও ছিল, তার ছিল আগুনের পরশমনি, শ্যামল ছায়া, তার ছিল শুভ্র, শুভ্র গেছে বনে। 
আমরা এসব নিয়ে কথা বলিনা, বলি না। হুমায়ূন আহমেদ কে আমরা মোটামুটি জনপ্রিয়/পাঠকপ্রিয় ট্যাগে কিংবা কলকাতা থেকে ঢাকামুখী করেছে, এই বয়ানে আটকে রাখি। অথচ তিনি যে শক্তিশালী লেখক ছিলেন, সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন, প্রবল রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন, দূরদর্শী ছিলেন, সাহসী ছিলেন যে কারণে তাকে আদলতে যেতে হয়- সেসব আড়ালে চাপা থাকে।
১৩ নভেম্বরে হিমু/বাকের ভাই হওয়ার পাশাপাশি এগুলো নিয়েও কাজ হোক। হিমু-মিসির আলির বইয়ের পাশাপাশি উঠে আসুক মাতাল হাওয়া, অপেক্ষা, মধ্যাহ্ন, প্রিয়তমেষুর মতো বইগুলো, তার ছোটগল্পগুলো, তার সাইফাই-অতিপ্রাকৃত জন্রার লেখাগুলো। 
হুমায়ূন আহমেদ এইটুকু ডিজার্ভ করেন তার পাঠকদের কাছে।
বইয়ের নামঃ নবনী
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ 
ধরনঃ প্রেমের উপন্যাস
নবনী উপন্যাসের শুরুটা ছিল নবনীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে অদ্ভুতভাবে তার বিয়ের সংবাদটা দেওয়ার মধ্য দিয়ে। 
নবনীর বড় মামা, বলা যায় তিনি নবনীর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি নবনীর বিয়ে ঠিক করেছেন। পাত্রের নাম নোমান।
উপন্যাসের শুরুতেই নবনীর বিয়ে হয় এবং বিয়ের পরেরদিন নবনী বরের সাথে ঢাকায় যায় সংসার বাঁধার আশায়। যেই মানুষটার সাথে নবনীর বিয়ে হয়েছিল তাকে নবনী ধীরে ধীরে পছন্দ করতে শুরু করে। 
কিন্তু নবনীর অতীত ছিল অসম্ভব যন্ত্রণার। 
নবনী অনেকবার নোমানকে তার ভয়াবহ অতীতের কথা বলতে চেয়েও পারেনি।
নোমান আর নবনীর ছোট্ট ছিমছাম সংসারে একজন নতুন অতিথির আগমনী বার্তা এসেছিল। নবনী নোমানকে এই সুসংবাদটি দেওয়ার আগেই তাদের জীবনের মোড় পাল্টে যায়। 
যার জন্য দায়ী ছিল নোমানের বন্ধু-পত্নী অহনা। নোমানের বন্ধু শফিক উপন্যাসের আরেকটি বিশেষ চরিত্র।
নবনী উপন্যাসের সমাপ্তি অত্যন্ত পীড়াদায়ক। উপন্যাসের শেষে এসে নবনী জানতে পারে তার জীবনের অজানা সত্যের কথা। 
নবনী নিজের অজান্তে অনেক বছর আগে কাউকে হারিয়েছিল। আর সেই হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা আর নতুন কাউকে বাঁচাবার তাগিদ একইসাথে অনুভব করে সে।
উপন্যাসের শেষাংশ পড়ার জন্যই বারবার নবনী উপন্যাসটা পড়েছি আমি।

বইঃ নবনী রিভিউ ৩

লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশনঃ সময় প্রকাশন
প্রথম প্রকাশনঃ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩
মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০টাকা
“চাদটা মনে হয় আকাশ থেকে নেমে আসছে। কি তীব্র তার আলো? চাদের আলোয় কাকটার একটা দীর্ঘ ছায়া পড়েছে।
 রক্তে আমার শাড়ি ভিজে যাচ্ছে। অনেকের পায়ের শব্দ। নোমান কি আসছে? সে যদি আসে তাহলে তাকে একটা কথা বলে যেতে চায়। কথা গুলো বলার মতো শক্তি আমার থাকবে ত? আমি বলব এই দেখ আমি মরে যাচ্ছি। যে মানুষ মারা যাচ্ছে তার উপর কোনে ধরনের রাগ রাখা উচিত না। আমি অনেক কাল আগে একটা মানুষ কে যেইভাবে ভালোবেসেছিলাম ঠিক সেই ভাবে তোমাকে ভালোবাসি। ভালোবাসার দাবি আছে, সেই দাবি খুব কঠিন দাবি। ভালোবাসার সেই দাবি নিয়ে তোমার কাছে হাত জোড় করছি।”
আলোচনাঃ 
আচ্ছা হুমায়ূন আহমেদ কি প্রেমহীন কোনে উপন্যাস লিখেছেন? তার প্রতিটা বইয়ের মধ্যেই ত রয়েছে প্রেম, ভালোবাসা। তাহলে এই বইটার কভারে মোটা কালি দিয়ে কোন লিখেছেন ‘হুমায়ূন আহমেদের প্রেমের উপন্যাস’? এই লেখাটা পড়েই বইটার প্রতি কৌতূহল জাগলো আর পড়া শুরু করলাম।
কাহিনী সংক্ষেপেঃ
উপন্যাসের মূল চরিএ নবনী সে একটা গল্পের বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিল, যখন উঠল তখন সে একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হল। মা তাকে হাত ধরে খাট থেকে নামালেন যেন একটা বাচ্চা মেয়ে বাবাও তার সাথে মধুর আচরন করলেন। তার পরিবারের সবার মুখে একটা আনন্দরে রপশ বয়ে যাচ্ছে। ঘরে কেমন জানি উৎসব উৎসব ভাব। হঠাৎ করে সে কিছুই বুঝতে পারে না যে কিসের এত আনন্দ কিসের এত উৎসব। এর মধ্যে ছোটবোন ইরা এসে জানায় আজ রাতে নবনীর বিয়ে।
কিন্তু বিয়ের কথা শুনে নবনীর মধ্যে কোনে ভাবান্তর দেখা যায় না কারন এই রকম অনেকবার তার বিয়ে ঠিক হয়ে আবার ভেঙে গেছে। কারন তার রয়েছে একটা ভয়ংকর অতীত যার কারনে বিয়ে ঠিক হলেও সম্পূর্ণ হয় না। এই জন্য তার পরিবারও আজকে নবনীর বিয়েতে কাউকে না জানিয়ে ঘরে পরিবার নিয়েই বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করতে চায়। সবার মধ্যে উৎকন্ঠা আজকে নবনীর বিয়ে হবে ত? 
রাতে সবার ভাবনা চিন্তা পেছনে ফেলে অবশেষে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়। চুপচাপ বিয়েটা হওয়ার কথা হলোও মহা ধুমধামে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়। নবনীর সদ্য বিবাহিত স্বামী নোমানকে বাসররাতেই তার পছন্দ হয়ে যায়। নবনী ঠিক করে তার ভয়ংকর অতীত আজ রাতেি তার স্বামী নোমানকে জানাবে কিন্তু রাতে জানাতে পারে না এবং পরেরদিন সকালেই তারা ট্রেনে ঢাকা চলে যায়।
ঢাকায় ছোট একটা ঘর। ঘরে প্রানী মাএ তিনজন, নবনী তার স্বামী নোমান আর একটা ময়না পাখি। নোমান তার বন্ধুর অফিসে একটা ছোট চাকরি করে আর নবনী সারাদিন বাসায় থাকে। নোমানের মুখে সব সময় বন্ধু রফিক সাহেব ও তার স্ত্রী অহনাকে নিয়ে যত কথা। নবনীর ছোট সংসার খুব ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে নোমানের বন্ধুর স্ত্রী নোমানকে নবনীর ভয়ংকর অতীত বলে দেয় এটা শুনে এটা শুনে কি নোমান নবনীকে রেখে চলে যায়? কি এমন অতীত যার কারনে নোমান নবনীকে রেখে চলে যায়? বইটা পড়ুন সব উওর পেয়ে যাবেন। 
মতামতঃ
বইটা পড়ে গভির বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে গেছি কোথায় যেন হাহাকার। হুমায়ূন আহমেদ দিয়েছেন কতগুলো বাস্তব চরিএ। বুঝিয়েছেন সত্যিকারের ভালোবাসায় আনন্দের চেয়ে বিষাদ বেশি। রফিক সাহেবের জন্য খারাপ লেগেছে সে তার স্ত্রীর সাথে অতীতে কিছু করেছে যার কারনে স্ত্রীর কাছে ঘৃনার পাএ হয়েছেন। অহনা আর নোমানের সম্পর্কটা রহস্য রয়ে গেছে। নবনীর মামার চরিত্র টা ভালো লেগেছে। আর একটা মূল্যবান চরিত্রের কথা আমি ইচ্ছে করে খোলাসা করি নাই কারন এইটা বলে দিলে যারা বইটা পড়েন নাই তারা বইটা পড়ার আকর্ষনবোধ করবেন না। সবশেষে বলতে পারি অসাধারণ একটা বই। হুমায়ূন আহমেদ নবনীর শেষের পরিনতি রহস্য রেখে দিয়েছেন।
বইঃ নবনী
রিভিউঃ রুদ্র ফারাবী 
কভারটা দেখে রীতিমত অবাক হলাম! হুমায়ূন আহমেদের প্রেমের উপন্যাস ‘নবনী’!! এমন লাগলো যেন মফস্বলের কোনো নাম না জানা লেখকের প্রথম উপন্যাস।এবং বিক্রয়ের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করা।কোন লেখকের প্রথম বইয়ের বিজ্ঞাপন এমন হওয়াটা স্বাভাবিক। হুমায়ূন আহমেদ তো প্রেমহীন কোনো উপন্যাস লেখেননি! লেখার প্রতি তার চিরকালের প্রেম!মোটাদাগে প্রেমের উপন্যাস বলার কারন কি?
একবার,দুইবার,তিনবার, সর্বমোট নয়বার পড়লাম।কোন বই পড়লে বিশ্লেষণ! করাটা আমার অভ্যাসের কাছাকাছি। নবনী একটা সত্য উপন্যাস।হিমুর মতো কল্পিত কিছু নেই এতে।হাজারো নারীর এক অপরূপ আখ্যান এতে।জাদুকরী লেখা নিয়ে কিছু বলার নেই।স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাঙলা সাহিত্যে প্রবাদপুরুষ হুমায়ূন আহমেদ।লেখক উপন্যাসটি শুরু করেছেন নাটকীয়তা দিয়ে।কোন মেয়েকে যদি ঘুম থেকে তুলে বলা হয়, খুকি তোমার বিয়ে!তখন খুকির মনের অবস্থা কি হবে সেটা অকল্পনীয়।আমাদের সময়ে কোন খুকিকে এধরনের কথা বললে সে নিশ্চিত অবাক হওয়ার বদলে কান্না করবে।এবং এটা বললেও অবাক হব না ,আমার জন্য অমুক রোমিও অপেক্ষা করছে।অথবা বাঙলা চলচ্চিত্রের ডায়লগ দিয়ে বলতে পারে, বাবা এ বিয়ে আমি করতে পারব না।তখন বাবা বলবেন,আমার মুখের ওপর কথা!
কিন্তু নবনী উপন্যাসে এধরনের কিছু ঘটেনি।উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে বাস্তবতা।নবনী নামের একটি মেয়ের জীবনে যে বিষাদময় ঘটনা ঘটেছে তার একটা ক্ষুদ্র বিশ্লেষণ এই উপন্যাসটি।উপন্যাসটি শুরু হয়েছে এভাবে-দুপুরবেলা মায়ের ডাকে নবনীর ঘুম ভাঙ্গে।ঘুম ভাঙ্গার পর সে জানতে পারে আজ তার বিয়ে। হুট করে কেউ যদি জানে আজ তার বিয়ে তাহলে বিচলিত হওয়ার কথা। কিন্তু নবনী হচ্ছেনা। আসলে তার কোনও রকম অনুভূতিই হচ্ছেনা।
নবনীর বিয়েটা হয় মামার ইচ্ছাতেই।নবনীর পরিবারের জন্য মামা অতিগুরুত্বপূর্ণ একজন।কিছু মানুষ জন্ম নেয় দায়িত্ব পালন করার জন্য।নবনীর মামা সেধরনের মানুষ।এই মানুষটি নবনীদেরকে প্রচন্ডরকমের ভালবাসেন।নবনীরা যেদিন জানতে পারে বিয়ে,সেদিনই নবনীর বিয়ে হয়ে যায়।বিয়ের পরদিন নবনী স্বামীর সাথে ঢাকায় চলে আসে।নবনীর স্বামী নোমান খুবই ভালো, সহজ, সরল একজন মানুষ।এই মানুষটার প্রথম প্রেমই তার স্ত্রী নবনী। স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসা দৃশ্যমান।ঢাকায় এসে নবনীর পরিচয় হয় বিরাট ধনবান সফিক ও তার স্ত্রী অহনার সাথে।উপন্যাসে অহনার চরিত্রটি জটিলতায় পরিপূর্ণ।উপন্যাসটিতে আমরা জানতে পারব আহনার প্রকৃত নাম জাহেদা।এই উপন্যাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো নবনীর ইতিহাসের টিচার। তিনি ছোটবেলায় এতিমখানায় মানুষ হয়েছেন। আলীগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যিনি এম,এ করেন।এই মানুষটিই নবনীর প্রথম ভাললাগা,প্রথম প্রেম।যে কিনা নবনীদের বাড়িতে ভাড়া থাকত।এই মানুষটির মৃত্যুতে নবনী ভেঙে পড়ে।তারপর বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে উপন্যাসটি এগিয়ে চলে।উপন্যাসের প্রধান চরিত্র নবনী।এছাড়াও নবনীর বোন ইরা,ভাই অন্তু অপ্রধান চরিত্র হিসেবে উপন্যাসটিতে ফুটে উঠবে।নবনী হুমায়ূন আহমেদের একটি অতি চমৎকার রোমান্টিক উপন্যাস। আমার দৃষ্টিতে তাঁর লেখা অন্যতম সেরা রোমান্টিক উপন্যাস এটি।পাঠক এটি পড়লে একই সাথে বিষাদ ও প্রেমের জবানিকা টানতে পারবেন বলে বিশ্বাস করি
ছবিয়ালঃ নবনী
(হুমায়ূন আহমেদ এর কিছু বই সাজেস্ট করুন। প্রতিদিন রিভিউ এর সঙ্গে থাকুন)
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?