Muhammad – Osman Shojib | মুহাম্মদ – ওসমান সজীব

পৃথিবীর যাবতীয় যা কিছু আছে মোটা দাগে সেগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ভালো ও মন্দ। সুখ-দুখ। ধৈর্যশীল-ধৈর্যহীন। লোভী-নির্লোভী। রাজনীতি-অরাজনীতি। যুদ্ধ-শান্তি। মোটকথা আপনি যেভাবেই ভাগ করুন, ঘুরেফিরে দুইটাই ভাগ হবে দিনশেষে। তেমনি দুইয়ের মাঝে দোদুল্যমান এক রূপক উপন্যাসিকা “মুহাম্মদ।” যার অন্তর্নিহিত লেখনি একদিকে যেমন ভাববে, অন্যদিকে লেখকের চিন্তাধারার গভীরতা পরিমাপ করা যায়।

এক নজরে মুহাম্মদ বই

   ◾মুহাম্মদ
   ◾লেখকঃ ওসমান সজীব
   ◾প্রকাশনীঃ চিলেকোঠা পাবলিকেশন
   ◾প্রচ্ছদ – পথিক রায়হান
   ◾সম্পাদনা – এডিটরস টেবিল
   ◾মূদ্রিত মূল্যঃ ২৯০৳
   ◾প্রকাশ কাল – ডিসেম্বর, ২০২২
   ◾পৃষ্টাসংখ্যা – ৭৭

◼️ মূল ভাব –

“উইকল্যান্ড” পৃথিবীর সবচে’ দুর্বলদের বাসস্থান। না ভালো কোনো খাবারের উৎস আছে, না আছে সম্পদ। ভুখা, রুগ্ন, আধপেটা হয়ে একদম মানুষ বাস করে। এরা এমনি দুর্বল যে, এদের পদতলে কখনও পিপড়া পড়লেও মরে কিনা সন্দেহ। কোনো মতে দিন গুজরান করে উইকল্যান্ডবাসী। ভরসা বলতে তাদের আছে এক “মুহাম্মদ।” এমন একজন নেতা, যার উপড় চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। ঝাঁপ দেয়া যায় নিশ্চিত মৃত্যুমুখে।
অপরদিকে উইকল্যান্ডের প্রতিবেশী, বর্তমান পৃথিবীর সবচে’ শক্তিশালী সাম্রাজ্য “কারাস।” রাজ্যের সিংহাসনে আধীন পৃথিবী সবচে’ শক্তিশালী সম্রাট “লেবলন।” যার কাছে নিজের রাজ্যের পরিসীমা বড় করা আর অন্যদের উপড় কর্তৃত্ব ফলানোই একমাত্র কাজ। পৃথিবী সবচে’ বড় সৈন্য দলের মালিক তিনি। এক কিংবা দুই হাজার নয়। নয় এক কিংবা দুই লাখ। রয়েছে পঞ্চাশ লাখ সৈন্য!
লাশের পাহাড় আর রক্তনদীর মধ্য দিয়েই তিনি হয়েছেন সবচে’ বড় সাম্রাজ্যের মালিক। পূর্বপুরুষদের মধ্যে তিনিই সবচে’ সফল সম্রাট, রাজ্যবিজয় আর কর্তৃত্বের বিচারে। তিনি কোনো রাজ্য আক্রমণ করা কিংবা করার আগেই অন্য রাজ্য মাথা পেতে মেনে সম্রাট লেবলনকে। নাম শুনলেই কেপে উঠে। যুদ্ধ তো অনেক পরের বিষয়।
সম্রাট লেবলন মনস্থির করলেন, ছোট্ট আর দুর্বল উইকল্যান্ড-ই বা বাদ যাবে কেন। এটাও জুড়ে দেই না কেন কারাসের সাথে। উইকল্যান্ডবাসীও পেলো সুখ ও শান্তির ছায়া। ঘুচে যাবে তাদের ক্ষুদা। দূর্বল থেকে তারাও হয়ে যাবে সবল। কিন্তু বাধ সারলো মুহাম্মদ…! 
বিনা যুদ্ধে উইকল্যান্ডকে সে ছাড়বে না। প্রয়োজনে একাই যুদ্ধ করবে নিজের দেশ, পবিত্রভূমির জন্য। 
এমন যুদ্ধের কল্পনা করছে মুহাম্মদ, যা কেবল তুলনা করা যায় হাতি ও পিপড়ার সাথে। সবচে’ বড় ও শক্তিশালী রাজ্যের বিপক্ষে সবচে’ দুর্বল ও ছোট একটা দল। ফলাফল সহজেই অনুমেয়। 
আসলেই কি মুহাম্মদ পাগল হয়ে গেছে? না হলে কে চিন্তা করে এমন যুদ্ধের। যাদের একটা তলোয়ার পর্যন্ত নেই।
তাহলে মুহাম্মদের মূল শক্তিটা কোথায়? ভাবলেন সম্রাট লেবলন।

◼️ ফ্ল্যাপ থেকে –

পন্ডিত ভয়ে ভয়ে সম্রাটকে একটা গল্প বলে।
“আপনার বাবা রাতে ছদ্মবেশে বের হত।চারদিকে কেবল শুনতে পেত মুহাম্মদের জয়গান। যারা প্রশংসা করত তাদের হত্যা করত। ফরমান রাজি করেছিল মুহাম্মদের নাম কেউ উচ্চারণ করলেই মৃত্যুদণ্ড। ফিসফাস করে মুহাম্মদের জয়গান কেউ করছে এই সন্দেহও তাদের হত্যা করেছে। বীভৎস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। মানুষ মুহাম্মদের নাম উচ্চারণ করতে ভুলে গেল। তখন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল।ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসতে লাগল। পুরো রাজ্যে ছেয়ে গেল সেই পাখি দিয়ে। সেই পাখির নাম কেউ বলতে পারল না। আগে কেউ দেখেওনি!
কোথা থেকে এই পাখিরা এলো?কেউ কেউ বলল এই পাখি স্বর্গীয় পাখি।
মুহাম্মদের নাম উচ্চারণ করায় সম্রাট নিরীহ মানুষদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে,তার প্রতিশোধ নিতে এই স্বর্গই পাখিরা এসেছে। মানুষ যখন মুহাম্মদের প্রশংসা করেছিল তখন আপনার বাবার পাগল হওয়া বাকি ছিল। স্বর্গীয় পাখি এসে পাগল বানিয়ে দিয়ে গেছে। সেই স্বর্গীয় পাখিরা কেবল একটা শব্দই উচ্চারণ করত। উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে কেবল ডাকত মুহাম্মদ… মুহাম্মদ…। 
আপনার বাবা পাখি হত্যা করার নির্দেশ দিল। রাজ ফরমান জারি করল। পাখি হত্যা করতে পারলে রাজকোষাগার থেকে মোটা অংকের অর্থ পাবে। সবাই পাখি নিধনে লেগে গেল।অবস্থা হলো আরো খারাপ। এত এত পাখি আসতে লাগল যে প্রজারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল পাখি হত্যা করতে করতে। রাজকোষাগার শূন্য হওয়ার অবস্থা হয়। পাখিদের মুহাম্মদ ডাকাটা বন্ধ করতে পারল না। আপনার বাবা আত্মাহত্যা করল।আত্মহত্যার জন্য মুহাম্মদই দায়ী। মুহাম্মদকে হত্যা করবেন না?বাবার হত্যার প্রতিশোধ নেবেন না?”

◼️ নামকরণ –

বইয়ের নাম শুনেই প্রথমে মনে আসে, মুহাম্মদ নামের ব্যক্তিটি কি ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহান বিশ্বনেতা হয়রত মুহাম্মদ (সাঃ) নাকি ভিন্ন কেউ?
না, এক ব্যাক্তি নন। বইটি যেমন ফিকশন, ঠিক তেমনি চরিত্রটিও ফিকশনাল। গুলিয়ে ফেলার কোনো ভয় নেই।

◼️ বইটির জনরা –

যদিও বইটিকে বলা হচ্ছে বিশ্ব রাজনৈতিক। তবে পড়ার পর এর জনরা নিয়ে আমার কিছু কথা আছে। কারণ বইটি একক রাজনৈতিক মুড়ানো কোনো বই নয়।
বইটিকে অনায়াসে মোটিভেশনালও বলা যায়। কিভাবে বিপদ ও কঠিক মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করতে হয়, তার একটা শিক্ষা বইটি দেয়।
বইটিকে ওয়ার ক্যাটাগরিতেও অনেকাংশে ফেলা যায়। কারণ বইটির প্রথম থেকে শেষ অবধি যুদ্ধ, যুদ্ধের প্রস্তুতি, যু্দ্ধের ফলে ঠিক কি হতে পারে তাও বিস্তারিত বলা হয়েছে।
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকেও বইটাকে দেখা যায়। ঈমানী শক্তি বৃদ্ধিতে বইটা যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি হাজারো কঠিন পরিস্হিতিতে বিশ্বাস রাখার শিক্ষা এতে রয়েছে।
বইটাকে নির্ধিদ্বায় ফ্যান্টাসি ঘরানায়ও ফেলা যায়। কিছু কিছু এলিমেন্ট এমন এসেছে যা কেবল ফ্যান্টাসিতেই সম্ভব।
(যদিও “ইস্টার এগ” পবিত্র কোরআন থেকে নেয়া বলে আমার বিশ্বাস। তবে উপন্যাসিকা রূপক হওয়ায় আমি ফ্যান্টাসি বলে গণ্য করলাম।)

◼️ উপন্যাসিকার সময়কাল –

বইটি পড়তে গিয়ে বার বার এ প্রশ্নটা মাথায় এসেছে, গল্পটার সময়কালটা কোন সময়ের? 
সত্যি বলতে যা মনে হয়েছে, প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান সময় অবধি। 
আবার অন্য ভাবে বলা যায়, পৃথিবী যতদিন থাকবে, ততদিন পর্যন্ত সনয়কালকে সেট করা যায়। নির্দিষ্ট কোনো ফ্রেমে সময়কালকে বন্ধি করা হয়নি।

◼️ কিছু ব্যাক্তিগত অভিব্যক্তি –

বইটা পড়ার পর মনে হলো, বইটা সব শ্রেণির পাঠকের জন্য লেখা হয়নি। আপনার যদি রোমান্টিক ঘরানা কিংবা মাথা ঘুরানো “টুইস্ট & টার্ন” পছন্দ হয়, তাহলে বইটা আপনার জন্য না। অথবা আপনি যদি একটা ফিকশন একবার পড়েন মজা পাওয়ার জন্য, সত্যি বলতে “মুহাম্মদ” আপনাকে নিরাশ করবে।
বইটি অনেক গভীর তাৎপর্য নিয়ে লেখা। অনেকগুলো লেয়ার মিলিয়ে একটা মাল্টি-লেয়ার বানানো হয়েছে। বইটা আমাকে অনেক্ষণ ভাবিয়েছে। মনে হয়েছে আবার পড়লে আরও কোনো নতুন অ্যাঙ্গেলে ভাববো। কারণ এটাই মাল্টি-লেয়ারের ধরণ।
ন্যায়-অন্যায়, ধর্ম-জাত-বর্ণ, শাসক শ্রেণির শোষনের অন্তর্নিহিত কারণ এসব লেখক এই ছোট্ট উপন্যাসিকায় যথেষ্ট মুন্সিয়ানার ফুটিয়ে তুলেছেন। ভাবুক পাঠকরা নির্ধিদ্বায় পড়তে পারেন বইটি।

◼️ যে সব বিষয় উল্লেখযোগ্য –

একটা বই যেমন সবার জন্য লেখা হয় না, তেমনহ সবার জন্য সমান প্রিয়ও হয় না। কিছু কিছু দিকে লেক থেকেই যায়। জ্ঞাতে কিংবা অজ্ঞাতে।
উপন্যাসিকাটর প্রডাকশন নিয়ে কিছু বলবো না। এক কথায় মন ভালো করে দেয়া বই। ডাস্ট কভারটা সেই। প্রথমবার তো ভাবছিলাম চামড়ার নাকি!! চিলেকোঠা পাবলিকেশনের সর্বোচ্চ মানের আউটপুট।
সম্পাদনা, প্রুফিং আর টাইপিংয়ে আমি সন্তুষ্ট। মসৃণ একটা লেখা। একবারের জন্যও হোচোট খাইনি। অভিনন্দন চিলেকোঠাকে।
বইটির সাদা চোখে প্রথম যেটা ভালো লাগে নি, সেটা হলো লেখার ফন্ট। অন্যান্য প্রকাশনীর তুলনায় যথেষ্ট ফাঁক রয়েছে এক লাইন থেকে আরেক লাইনে। রেগুলার লাইন রাখলে পৃষ্টা সংখ্যা কমিয়ে আনা যেতো। তবে এমন কেন করা হলো আমার ঠিক বোধগম্য হয়নি।
ফিনিশিংয়ে আরও সময় দেয়া দরকার ছিলো বলে আমি মনে করি। তাহলে আরও সুন্দর ভাবে সমাপ্তি টানা যেতো। কিংবা লেখক চাইলে আরও লম্বা করতে পারতেন অনায়াসে। এতে চরিত্রগুলোর সাথে পাঠক আরও সহজে মিশতে পারতো।
চমৎকার এই রিভিউ টি লিখেছেন মোঃ সেজান 💞 ভাই
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?