Title | মরে যায় নক্ষত্রেরা |
Author | জাবেদ রাসিন |
Publisher | ঈহা প্রকাশ |
Quality | হার্ডকভার |
ISBN | 9789849454120 |
Edition | 1st Published, 2021 |
Number of Pages | 144 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
সাতটি শীতের পরে,মরে যায় নক্ষত্রেরা,শুধু থাকে হিমপ্রবাহ,ফেলে দেয়া নাকফুল,মাঝরাতে কুকুরের ডাক,বারান্দায় নিঃসঙ্গ বসে থাকা।অনেকগুলো স্বপ্ন ঝরে গেলেমরে যায় হৃদয়,তুমুল তুষারপাতেমরে যায় নক্ষত্রেরা,সাতটি শীতের পরে।
পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের বেদনার কারণগুলো আলাদা। শুধু অনুভূতিগুলো এক। মনের কোণে মেঘ নিয়ে মুখে ধরে রাখে হাসির রোদ্দুর। তবুও কি তা চাপা থাকে? নক্ষত্রের মরে যাওয়ার মত বিষণ্নতায় ছেয়ে যায় ভেতরের শূণ্য চরাচর।
ডাকবাংলোটা জঙলা জায়গায় ঘেরা। সারা বছরে মেহমানের আনাগোনা খুব একটা থাকে না। কেয়ারটেকার মনামিয়া আর লাইলিই দেখাশোনা করে সব। মেহমান না আসলেই বরং তাদের বেশি সুবিধা। মনামিয়া গাঁজা খেয়ে মনের সুখে পড়ে থাকে। আর বাকি সময় লাইলি তো আছেই। উপরি পাওনা হিসেবে গেদুর বাপের গাছ চুরির টাকার ভাগ পায়।
শাহরিয়ার আর মাহিয়া ছেলেমেয়েদের নিয়ে এবার বেড়াতে এসেছে। শিহাব আর মিমও বেশ খুশি। কিন্তু আসা অবধি মাহিয়ার ভেতর একটা চাপা অস্বস্তি কাজ করছে। এত এত গাছ চারদিকে কিন্তু কোনো প্রাণের স্পন্দন নেই। একটা পাখিও ডাকে না। কেমন যেন গুমোট হয়ে থাকে এলাকাটা। দাম্পত্যজীবনের ঝামেলা মেটাতে এখানে আসা। কিন্তু আসা অবধি শাহরিয়ার পড়ে আছে ফোনে। সবমিলিয়ে একেবারে দমে যায় মাহিয়া।
আনিকাকে সত্যি সত্যি ভালোবেসেছিল জাহিদ। তাতে কোনো মিথ্যে ছিল না। কিন্তু আনিকা? সে কি করে পারল তার সাথে এমনটা করতে? এভাবে এই যন্ত্রণা সে আর কতকাল পুষে রাখবে? সিগারেট আর ল্যাপটপই এই নির্জন ডাকবাংলোয় তার নিত্যসঙ্গী। তার অপমান অবহেলা আদৌ সে ভুলতে পারবে কিনা জানা নেই।
এখানে আসার পর মিমের সাথে বেশ ভাব হয়ে গেছে লেখক চাচ্চুর। নিজের ভেতরের অব্যক্ত বেদনাগুলোর কথা বাচ্চা মেয়েটাকে বলতে পেরে জাহিদের নিজেরও বেশ হালকা লাগছে। বিনিময়ে মেয়েটাও শুনিয়েছে তার মায়ের কষ্টের কথা।
মনামিয়া আজকাল শান্তি পায় না। তার কেবল মনে হয় তাকে সে দেখে। কেন এমনটা হয়? গাঁজার ঘোরে? নাকি সত্যি সত্যি? কিন্তু কি করে সম্ভব? ব্যাপারটা লাইলিকে বললে লাইলি তাকে অভয় দেয়। কিন্তু মনা মিয়ার মন মানে না। পুরোনো পাপ কি তাকে ছাড়বে? বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এক অশরীরী অস্তিত্ব। কি হবে এবার?
জাবেদ রাসিনের বইগুলো নিয়ে আলোচনা শুনলেও আগে কখনও পড়া হয়নি। এবারই প্রথম। আর প্রথম হিসেবে অভিজ্ঞতাটা খারাপ ছিল না। গা ছম ছম, কি হয় কি হয়! একটা ব্যাপার। কোনোরকম ভয়ানক কোনো দৃশ্যের মুখোমুখি না করে শুধুমাত্র আবহের উপর ভিত্তি করে এগিয়ে গেছে পুরো গল্প।
চরিত্রের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। প্রতিটি চরিত্রই বেশ গুছিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। পারিবারিক টানাপোড়ন, সম্পর্কে ব্যর্থতা, লোভ, ষড়যন্ত্র আর অপার্থিব এক ভয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কাহিনী।
সাধারণত অতিপ্রাকৃত গল্পে অনেক ধরনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। নানা অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। কিন্তু সাদামাটা একটা গল্পে সেইরকম একটা অনুভূতির অবতারণা করা সোজা কথা নয়।
চরিত্রগুলোর মধ্যে মনা মিয়ার চরিত্রটা বেশ ইন্টারেস্টিং। লেখক জাহিদ গল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে। মিম চরিত্রটি বাচ্চা হলেও তাকে ছাড়া পুরো গল্পটাই অসম্পূর্ণ।
একই ধরনের কাহিনীর চর্বিতচর্বণ একঘেয়েমি তৈরি করে। সেদিক থেকে গল্পটি স্বতন্ত্র। বর্ণনা ভঙ্গিও বেশ সাবলীল। পড়ে বিরক্তি আসার অবকাশ নেই। বইটিতে বিশেষভাবে ভালো লাগা তৈরি করেছে কবিতাটি।
ঈহা প্রকাশ পরিবেশনার ব্যাপারে বেশ যত্নশীল। প্রচ্ছদ, কাগজের মান সুন্দর। মুদ্রণ প্রমাদ খুব একটা চোখে পড়েনি।
অতিপ্রাকৃতপ্রেমিরা বইটি পড়ে হতাশ হবেন না আশা করি।
© Mostanoor Sarker Moon
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?