ইহুদিবাদের মুখ ও মুখোশ এমন এক গ্রন্থ যার দর্পণে হিজবুশ শয়তানের চেহারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা যাবে। তাদের মানবতাবিরোধী প্রকল্পসমূহ, বিশেষকরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের চিত্র বইটিতে রয়েছে। এই গ্রন্থ ইহুদি ষড়যন্ত্রের উদ্ঘাটক, খ্রিষ্টীয় বিভ্রান্তির নির্ণায়ক এবং উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় দেউলিয়াত্বের বিকৃত অবয়বের উন্মোচক। এটা যেন ঠিক কোনো গ্রন্থ নয়, ইহুদি ষড়যন্ত্রের বিরদ্ধে দুনিয়া কাঁপানো এক বিস্ফোরণ।
সহস্রাব্দের কিয়ামত : একটি পর্যালোচনা
‘তৃতীয় সহস্রাব্দের কিয়ামত’ এমনই এক গ্ৰন্থ, যা মুসলিম বিশ্বের চেতনার গভীরে অবিরত ঝাঁকুনি দিয়েই চলেছে। আর শত্রুর দিকে তীর্যক দৃষ্টি তুলে বলছে, ‘তোমরা কী করছো, কী করতে চাও, আর কতটুকুই বা করতে পারবে, তা আমাদের জানা আছে।’ বিপুল তত্ত্ব ও তথ্যের আধার এই বইটি শুধু পাঠকের জ্ঞানপিপাসা নিবারণের লক্ষ্যে রচিত হয়নি। বর্ণনার চমক ও ভাষার লালিত্য থাকলেও এটি নিছক একটি আকর্ষণীয় পাঠসামগ্রী হিসেবে প্রকাশিত হয়নি।
উদ্দেশ্য হলো মুসলিম মিল্লাতের মাথার উপর ডানা ঝাপটানো শকুনিদের চিনিয়ে দেওয়া; তারা কী চায়, কেন চায়, কীভাবে চায়, তা বানান করে বুঝিয়ে দেওয়া এবং তাদের সমবেত অংশগ্রহণে যে প্রলয়ের সূত্রপাত হতে যাচ্ছে, তার একটি জীবন্ত ছবি এঁকে দেওয়া। সাধারণ পাঠকদের জন্য বইটির বিষয়বস্তু নতুন বটে। এছাড়া তাদের কাছে অধ্যায়গুলো ভিন্ন অথচ মজাদার স্বাদের মনে হবে। এর একটা ভালো দিক হলো, অভিনব বিষয় অনেকসময় পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে, চেতনায় ঢেউ তোলে।
বইটি পড়ার সময় মনোযোগী পাঠকেরা সেই ঢেউই উপলব্ধি করবেন। এক ঢেউ থেকে আরেক ঢেউয়ের চূড়ায় তিনি সাঁতার কাটবেন। শেষে বিভিন্ন তথ্য, তত্ত্ব ও ঘটনাবলি আলো হয়ে জ্বলে উঠবে এবং আগাম বার্তাগুলো সহজ কাহিনির মতো আপনাকে বুঝিয়ে দেবে বিদ্যমান দুনিয়ার চালচিত্র। গ্রন্থটি হয়ে উঠবে আয়না, সেখানে আপনি দেখবেন জায়নবাদীদের নানান তৎপরতা, ষড়যন্ত্র, বিভিন্ন আকিদার অবয়ব, তাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও দৌড়ঝাঁপের ইতিবৃত্ত।
তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
এমন আলোচ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রন্থ অবশ্য চোখে পড়ে। কিন্তু কোথাও কোথাও ভাষা ও বিষয়ের প্যাঁচে পাঠক ক্লান্ত হয়ে পড়েন, বুদ্ধিবৃত্তিক জটিলতার কারণে পাঠকের কাছে মূল মর্ম অধরা থেকে যায়। গোটা বিষয়টি দুয়ে দুয়ে চারের মতো বোধগম্য হয়ে ওঠে না। কিন্তু এই বইটি আপনাকে সর্বশেষ হিসাবও বুঝিয়ে দেবে।
লেখক ডক্টর আবদুল আজিজ বিন মোস্তফা কামিল সৌদি আরবের কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ কলেজের ইসলামি সংস্কৃতির অধ্যাপক। তিনি আল আজহারের ইসলামিক স্টাডিজ কলেজ থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বইটি রচনা করেন ১৯৯৯ সালের জুলাই মোতাবেক ১৪২০ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে।
গ্রন্থকারের উপলব্ধি হলো, ইহুদি খ্রিষ্টান এবং মুসলমানদের মধ্যে নিকট অতীতের প্রতিটি সংঘাতে ধর্মীয় চেতনার প্রবল প্রভাব লক্ষ করা গেছে।
বিশেষ করে ১৯৬৭ সাল মোতাবেক ১৩৮৭ হিজরি আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিজয় ইহুদি ও খ্রিষ্টবিশ্বে ধর্মীয় ভাবাবেগের তীব্র তরঙ্গ বইয়ে দেয়। তেমনিভাবে মুসলমানেরাও ধর্মনিরপেক্ষ স্লোগান ও নাস্তিক্যপনার কুহকের প্রতি অনাগ্রহী হয়। মুসলিম বিশ্বে ইসলামের প্রতি প্রত্যাবর্তনের প্রেরণা বলিষ্ঠ হতে থাকে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল ও আমেরিকায় ইহুদি ও প্রোটেস্টান্ট খ্রিষ্টানদের বহু আন্দোলন, সংগঠন এবং নানামুখী প্রকল্প দাঁড়িয়ে যায়। অতঃপর তৃতীয় সহস্রাব্দ যতই নিকটবর্তী হচ্ছিল, ধর্মীয় উচ্ছ্বাসের জোয়ারে চারদিক ততই তলিয়ে যাচ্ছিল।
দ্বিতীয় সহস্রাব্দের সমাপ্তি
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের সমাপ্তি ও তৃতীয় সহস্রাব্দের আগমনের সাথে জড়িয়ে আছে বহু ভবিষ্যদ্বাণী। তারা এই সময়টিকে জাতিগত ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এক মোড় হিসেবে অভিহিত করে থাকে। তাদের মতে, চলতি সহস্রাব্দই বিশ্বজুড়ে ইহুদি একাধিপত্য ও পবিত্র সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময়। অপরদিকে খ্রিষ্টানদের কাছে এই সময়টি হলো দুনিয়ার নাজাত দানকারী ঈসা মসীহ আলাইহিস সালামের অবতরণ এবং খ্রিষ্টবাদের বিশ্বরাজত্ব প্রতিষ্ঠার সুসময়। আবার মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক দ্বীনি অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের সচেতন মহলে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জোরালো যুক্তিগুলো উচ্চারিত হচ্ছে। মুসলিমদের ইউরোপ-আমেরিকার প্রতি অনীহা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইহুদি মহলে তৃতীয় সহস্রাব্দকে স্বাগত জানাবার বিরাট আয়োজন, এই সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীর ধারা এবং বিস্ময়কর সব স্বপ্নের বুননে এক উন্মাতাল রূপ, ধূমায়িত উত্তাপ আর আত্মহারা আবেগের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। দেখা গিয়েছিল সব। অভূতপূর্ব কর্মকাণ্ড। ইহুদি-খ্রিষ্টান কিংবা মুসলমান, নিজের ধর্মগ্রন্থের বক্তব্যের কারণে ফিলিস্তিন, সি রিয়া, ইরাক, মিশর এবং জাজিরাতুল আরবের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আছে। তাদের সবার মতে, দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ঘটনাবলি শেষ জামানায় এই ভূখণ্ডে সংঘটিত হবে।
ইরাক হচ্ছে সায়্যিদুনা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের জন্মস্থান, সিরিয়া ঈসা মসীহ আলাইহিস সালামের জন্মস্থান এবং মিশর হযরত মুসা আলাইহিস সালামের প্রেরিত হবার স্থান। তার দাওয়াত ও সাধনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল সভ্যতার এই পীঠভূমি। আর জাজিরাতুল আরব শেষনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মস্থান ও সাধনার রাজধানী। এই সব এলাকা ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক দিক দিয়ে বুনিয়াদি এলাকা। চিরকালই এই অঞ্চল মানুষের আকিদা ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের দিক দিয়ে কেন্দ্রের মর্যাদা ধরে রেখেছে। মক্কার জমিন থেকে মানবিকতার মহান সূচনা আর সিরিয়ায় তার সমাপ্তি ঘটবে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহুর বক্তব্য হলো, কুরআন-হাদিস ও আম্বিয়ায়ে কেরাম বর্ণিত বক্তব্য থেকে জানা যায়, দুনিয়ার সৃষ্টি ও ব্যবস্থাপনার সূচনা মক্কাভূমি থেকেই হয়েছে। জীবন্ত উপলব্ধি ও সাধারণ জ্ঞান থেকে তার সমর্থন মেলে। মক্কা হচ্ছে সৃষ্টিজগতের নাভিস্থল। এখানেই বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত উদ্ভাসিত হয়েছে, যার আলোয় পৃথিবী থেকে আঁধার পালিয়েছে, প্রাচ্য-প্রতিচ্য আলোকিত হয়েছে।
এই ভূমির দিকে মুখ করে মুসলমানেরা সালাত আদায় করে, হজ করতে আসে এবং ভক্তি সহকারে কাবাঘর তওয়াফ করে। কাবাঘর ইহকাল ও পরকালের বহু কল্যাণের ধারক। হেজাজ সেই ভূমি, যেটাকে ইসলামের প্রথম মানচিত্র হিসেবে আল্লাহ নির্বাচিত করেছিলেন। আর সিরিয়ায় হবে শেষ সন্মিলন, ময়দানে মাহশর। শরিয়তের দলিলসমূহ তারই জানান দেয়।
প্রতি দশকেই যুদ্ধ, প্রত্যেক ধাপেই ধ্বংসযজ্ঞ
জায়নবাদীরা চেষ্টা করছে, কোনোভাবেই যেন তাদের বৃহৎ ইসরাঈলী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রোপাগান্ডা প্রকাশিত না হয়ে যায়। এজন্য তারা তাদের পরিকল্পনার পরিভাষাগুলোকে ঢেকে রেখেছে রহস্যের আবরণ ও দুর্বোধ্য বক্তব্য দ্বারা। কিন্তু ধর্মীয় উৎস ও রাজনৈতিক প্রকল্পসমূহের গভীরতর অধ্যয়নে তাদের গোপন তত্ত্ব এমনিতেই জাহির হয়ে যায়। সেই সাম্রাজ্য কায়েমের জন্য কেবল বায়তুল মুকাদ্দাস ও সিরিয়া দখলই যথেষ্ট নয়, বরং তার চেয়ে ব্যাপক ও বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে কল্পিত মানচিত্র ইহুদিদের মগজে অঙ্কিত রয়েছে।
তাওরাতের বক্তব্য হলো, ‘প্রভু আব্রাহামের সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলেন যে, তোমার বংশধরদেরকে মিশরের নদী থেকে ফোরাতের জলধারা পর্যন্ত মধ্যবর্তী ভূখণ্ড দান করব।’
সেক্যুলারিজমের কাছে আত্মসমর্পিত আরবরা এই এলাকার উপর নিজেদের অধিকারের পক্ষে যে দাবি উপস্থাপন করে, এর ফাঁক ও ফাঁকি সুস্পষ্ট। তারা বলে, ইহুদিরা সর্বপ্রথম জেরুজালেমের অধিবাসী ছিল। একারণে ঐতিহাসিকভাবে তাদের অধিকার কেবল জেরুজালেমের উপর স্বীকৃত হতে পারে। ধর্মনিরপেক্ষতার স্বভাবগত পক্ষাঘাত উক্ত যুক্তির ভেতরে চোখ মেলে আছে। ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে উৎসারিত কোনো তত্ত্বেই অন্তর্দৃষ্টি বলতে কিছু নেই। এটিও তার ব্যতিক্রম নয়। এই তত্ত্ব অনুযায়ী ইসরায়েল আগামীকালই নিজেদের আবাসভূমি হিসেবে মিশরকে দখল করে নিতে চাইবে। অপরদিকে কিবতি খ্রিষ্টানেরা ‘আমরা আগে থেকেই ছিলাম’ বলে মিশরকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করবে।
ইহুদিদের দাবিটা বেশ মজার। তারা যেহেতু আল্লাহর নির্বাচিত সম্প্রদায় আর জেরুজালেম হলো আল্লাহর প্রতিশ্রুত ভূমি, অতএব এই ভূমি তাদের। কেননা তাদের নির্বাচিত এই ভূখণ্ডের কথা ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। ইহুদি আকিদা হলো, জেরুজালেম প্রভুর বিশেষ দান। আর অন্যসব এলাকার কর্তৃত্ব ইহুদিদের হাতে থাকবে, এটা প্রভুর অভিপ্রায়। ‘ইহুদিরা! খুশি হও, গানে মেতে ওঠো, কেননা আমি আসব এবং তোমাদের সাথে থাকব।
মহাপ্রভু ইহুদিদের দিয়েছেন পবিত্রভূমির উত্তরাধিকার। আর নিজের জন্য জেরুজালেমকে বাছাই করে নিয়েছেন। জেরুজালেম যেহেতু প্রভুর এলাকা, সেই হিসেবে পবিত্রভূমিই হবে ইসরাঈলী সাম্রাজ্যের রাজধানী। এটাই হবে তাদের প্রধান তীর্থস্থান। এই জায়গার কোনো অমর্যাদা করা মানেই প্রভুর ঘরের অমর্যাদা। মুসলিম বিশ্বের পীঠস্থানে ইহুদি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার যে আকিদা রয়েছে সেটা আরো চমকপ্রদ। সেদিকে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হওয়া দরকার।
জানা দরকার ফিলিস্তিন, মিশর, সিরিয়া, ইরাক ও হেজাজ সম্পর্কে কী পরিকল্পনা নিয়ে তারা এগুচ্ছে! ধর্মগ্রন্থের উদ্ধৃতি থেকে ইসরাঈলী মহাসাম্রাজ্যের যে প্রকল্প জায়নবাদীদের মাথায় জেঁকে বসেছে, সেই প্রকল্পটা আসলে কী? এটা আমরা আজ বুঝতে চাচ্ছি। অথচ পঞ্চাশ বছর আগে ইহুদিরা খ্রিষ্টবাদীদের সহযোগিতা নিয়ে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন সাফল্যের সাথে শুরু করে দিয়েছে।
ইহুদিবাদের মুখ ও মুখোশ অরিজিনাল বইটি সংগ্রহ করুন আপনার প্রিয় অনলাইন শপ থেকে।
#ইসলামি ইতিহাস ও ঐতিহ্য #ইহুদিবাদের মুখ ও মুখোশ #ফাতিহ প্রকাশন