Eklobber Aungul By Shomiron Das | একলব্যের আঙুল – লেখক সমীরণ দাস

★ পাঠ প্রতিক্রিয়া ★
———————-
☞ উপন্যাস : একলব্যের আঙুল
☞ লেখক : শ্রদ্ধেয় সমীরণ দাস
☞ প্রকাশক : প্ল্যাটফর্ম
☞ মূল্য : ২৭৫/- টাকা (প্রথম প্রকাশ)
———————————-
✪ “একলব্য” মহাভারতের একটি বহু বিতর্কীত চরিত্র। বিভিন্ন বইতে আমরা একলব্যকে বিভিন্ন ভাবে পেয়েছি। তারমধ্যে কোনটি সঠিক কোনটি বেঠিক তার বিচারের ভার এই অধম পাঠকের নয়। এটি একটি “Mythological character” “একলব্যকে” নিয়ে লেখা উপন্যাস এবং এই উপন্যাসটি পড়ে আমার কেমন লেগেছে সেই ভালো লাগাটাই আমি পাঠক বন্ধুদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি।

✪ “একলব্য” নিষাদরাজ হিরণ্যধনুর পুত্র। একজন ধনুর্ধর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কিছুটা নিজের ইচ্ছেয় , কিছুটা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে তাঁর পিতার ইচ্ছেয়।

➤ উপন্যাসের প্রথমে আমরা দেখতে পাই একলব্যকে ধনুর্বিদ্যা শিক্ষা দিচ্ছেন তাঁর নিজের পিতা হিরণ্যধনু। হিরণ্যধনু নিজে ছিলেন তৎকালীন মগধরাজ জরাসন্ধের সেনাধ্যক্ষ।স্বভাবতই পিতার ইচ্ছে একলব্য তাঁর থেকেও বড় ধনুর্ধর হয়ে উঠুক।

➤ ঠিক এইখানে এসেই উপন্যাসের গতি প্রকৃতি সব বদলে গেছে।

➤ এইখানে এসে আমরা দেখতে পেয়েছি দ্বাপর যুগেও রাজনীতির কুফল। যে রাজনীতির ফলে একটি যুবককে হারাতে হয় তাঁর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ।

➤ এই উপন্যাসের অন্তস্থলে আছে অনেক পাওয়া , না-পাওয়ার গুপ্ত বেদনা। আছে একজন গুরুর “গুরু” না হয়ে ওঠার কাহিনী।

➤ আছে একজন প্রকৃত মানুষ “একলব্য” কেন তৎকালীন সমাজে খারাপ বলে পরিচিত রাজাদের সাথে সখ্যতা রেখেছিলেন !

➤ রাজনীতির যূপকাষ্ঠে যদি একলব্যের আঙুল বলি না দিতে হ’ত তাহ’লে হয়তো আজকে মহাভারত অন্যরকম ভাবে লেখা হ’ত।

➤ উপন্যাসের শুরুতেই শ্রদ্ধেয় লেখক শ্রীকৃষ্ণের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন “একলব্যং হি সাঙ্গুষ্ঠম অশক্তা দেবদানবাঃ।” অর্থাৎ আঙ্গুলসহ একলব্যকে পরাজিত করা দেব দানবের পক্ষেও সম্ভব ছিল না।

➤ মহাভারতে একলব্যকে আমরা খুব বেশী পাইনি , কিন্তু শ্রদ্ধেয় লেখক যেভাবে একলব্যের মতো একটি বিস্মৃতপ্রায় চরিত্রকে তুলে ধরে তৎকালীন সমাজের বিভিন্ন দিকগুলোর প্রতি আমাদের দৃষ্টি দিতে বাধ্য করেছেন তাতে আমার মনে হয়েছে “দ্বাপরযুগ” আর “কলিযুগ” এই দুই যুগের রাজনৈতিক নোংরামির মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই।

➤ এই উপন্যাসে আমরা পাই বিভিন্ন দিব্যাস্ত্রের নাম এবং বিভিন্নপ্রকার শরসন্ধানের পদ্ধতিগত পার্থক্য।

➤ এছাড়াও পাই তৎকালীন সমাজে উঁচু নিচু জাতিভেদগত পার্থক্য এবং সেই পার্থক্য থেকে জন্ম নেওয়া উষ্মা।

★ সবমিলিয়ে উপন্যাসটি প্রশংসার দাবী রাখে।

★ মাননীয় লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ অনেক অজানা তথ্য আমাদের সামনে তুলে ধরবার জন্য। মাননীয় লেখকের কাছে একজন পাঠক হিসেবে এইধরনের আরও উপন্যাস লেখার দাবী জানাচ্ছি।