Chorki অরিজিনাল ফিল্ম— ❛দাগ❜
দাগ থেকে দারুণ কিছু হওয়ার বিজ্ঞাপনে আমরা অভ্যস্ত হলেও, জীবনের দাগে অভ্যস্ত হয়তো আমরা এখনও হতে পারেনি। কেন হতে পারিনি; সেই তালিকা করতে গেলে তা লম্বা বই খাটো হবে না। বাদ দিয়ে দিলাম সেই সকল কারণ, যে কারণে এক পুরুষ একজন নারীকে সহজে ধোঁকা দিতে পারে, যে সমাজে এক বাবা তার চাকরির দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে সন্তান হারা হয়ে স্ত্রীর কাছে দায়িত্বহীনতার তকমা পেতে পারে। আমাদের সমাজটা এমনই; যেখানে পারিবারিক দিকটা কখনোই গুরুত্বের সাথে দেখা হয় না। এই ফিল্মের মূল ম্যাসেজ বেশ কয়েকটি থাকলেও—আমাকে সবচেয়ে বেশি ভাবিয়েছি এই একটি বিষয়।
এই নিয়ে আলোকপাত করে যদিও লাভ নেই; তবুও একটু করতে ইচ্ছা হয়। আর সবসময় নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। যদিও এই সমাজে ব্যক্তি স্বাধীনতার মূল্য নিতান্ত সামান্য। কারণটা দায়িত্ব আর জীবিকা নির্বাহতে আবদ্ধ।
জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে যে দায়িত্ব আমরা কাঁধে চাপিয়ে নিই; ঠিক তখনই আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতার অনেকটা অংশ বিসর্জন দিয়ে দিই। চেয়েও পারি না, বিপদে-আপদে, সময়ে-অসময়ে পরিবারের কাছে ছুটে যেতে। পরিবার তা বুঝতে চেয়েও বোঝে না। যখন হুট করে বিপদ নেমে আসে কোনো পরিবারে, তখন সবাই তাকেই খোঁজে—যে পরিবার পরিচালনা করে। যখন সেই মানুষটা দায়িত্বহীনতা আর অপারগতার কোনো কারণে তার পরিবারের মানুষের কোনো ক্ষতি হয়; তখন যত দোষ ঠিক তারই ঘাড়ে চাপানো হয়। মুহূর্তেই রক্ষক বনে যায় ভক্ষকে। আর এমনটাই হয়ে আসছে আমাদের সমাজে। যা প্রতিনিয়ত ঘটছে। কেউ কারণটা আর জানতে চায় না, দোষ দিতে চায় না যে এই সিস্টেমের প্রচলন করেছে। অভিযোগ করতে পারে না, কেন একজন ব্যক্তিকে বিপদের সময়ে তার কাজ থেকে ছুটি দেওয়া হয় না। বিপদ বলে-কয়ে আসে না; তাহলে ছুটিও কেন বলে-কয়ে আরও সপ্তাহ বা মাসখানেক আগে থেকে নিয়ে রাখার আবেদন করে রাখতে হবে? যেখানে মৃত্যুর হাত-পা নেই; সেখানে এত ফর্মালিটিস মেইনটেইন করে জীবনে কি আসলেই চলা যায়? জীবনে বাঁচাতে যে যুদ্ধে সামিল হওয়া, সেই যুদ্ধের কারণে যদি নিজ পরিবারের মানুষ নিহত হয়—তবে সেই যুদ্ধের গুরুত্বটা সে-ই সৈনিকের কাছে কতটুকু যৌক্তিক মনে হবে?
অনেকের কাছে বিষয়টি সামান্য মনে হতে পারে। তবে পরিবার পরিচালনা করা একজন মানুষের জন্য এমন সিচুয়েশন বাঁচা-মরার লড়াই থেকে কম কিছু নয়। প্রত্যেক ক্রিয়ার যেমন বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে ঠিক তেমনই দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরও বেশ কিছু জায়গায় দায়বদ্ধতা রয়েছে। যাহোক, সূক্ষ্ম বিষয় যদিও তবে এই নিয়ে আফটার-বিফোর বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সেই ফ্যামিলি ম্যানকে।
তবে অপবাদের বাকি থাকে যখন পাবলিক্যালি সেই আগুনে ঘি ঢালা হয়। এই গল্পে ওসি আলমগীরের সাথে ঠিক তেমনটাই ঘটেছে। দায়িত্ব পালনের নিক্তিতে তিনি কোন পাশে বাটখারা হয়ে বসে আছেন তা টের পাবেন ফিল্মটি দেখলে। শুধু এ-ই নয়; এখানে প্রতিটি চরিত্রের পেছনে বেশ শক্তিশালী ব্যাকগ্রাউন্ড লুকিয়ে আছে। তবে গল্পে সেটা খুব সামান্যই দেখানো হয়েছে। একজন জারজ বাচ্চার বাবা-মা হওয়ার দৌড়ে সবাই কেন প্রতিযোগী হতে চায়, কেন একজন মা তার সদ্যজাত বাচ্চাকে চেয়েও নিজের কাছে রাখতে পারে না—এর প্রত্যকটি বিষয় গল্পে বেশ ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
এই একই জিনিস যদি কলকাতার শিবপ্রসাদ মুখার্জী আর নন্দিতা রায় তৈরি করত; তাহলে হয়তো বেশ হইচই পড়ে যেত। এমন কনটেন্ট এই দেশে আরও হওয়া উচিত; উচিত আরও অনেক কিছু নিয়ে কথা বলা—যা মুখোমুখি বলতে না পারলেও; দেখিয়ে হলেও উচিত প্রকাশ করা।
আমার কাছে এই দাগ, দায়িত্ব পালনে এক সন্তান হারা বাবার মনে কেটে যাওয়া দাগ। এই দাগ, একজন মায়ের সন্তানকে কাছে পেয়েও ত্যাগ করে সমাজকে জিতিয়ে দেওয়ার দাগ। এই দাগ, এক অবুঝ শিশুর পুনর্জন্ম হওয়ার দাগ।
All Credit Goes To – Peal Roy Partha
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?