বইঃ ছদ্মবেশ
লেখকঃ সাদাত হোসাইন
প্রকাশকঃ অন্যধারা প্রকাশনী
প্রকাশকালঃ জুলাই, ২০১৯
ঘরানাঃ মার্ডার মিস্ট্রি
প্রচ্ছদঃ সনদ কুমার বিশ্বাস
পৃষ্ঠাঃ ১৪৪
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৫৫ টাকা
পোস্ট :০১
লতিফুর রহমান, তিনি একজন রিটায়ার্ড কলেজের বাংলার অধ্যাপক। ছিল না প্রাইভেট টিউশন, বাড়তি রোজগার ছিল না, তারপর আজীবন লালায়িত স্বপ্নটা পুরোপুরি ধরা না দিলেও তিনতলার অবয়বটি দাঁড়িয়ে আছে, তা এখনো অবিশ্বাস্য লাগে তার কাছে। সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে নদীর ধারে পলাশবাড়ির শহরের উপকন্ঠে দাঁড়িয়ে আছে তার তিনতলা বাড়িটি। বাড়ির নাম ‘অপেক্ষা’।
ইচ্ছে ছিল অর্ধসমাপ্ত বাড়িটি তিনি নিচতলা কোনমতে ভাড়া দিয়ে ভাড়ার টাকায় বাকি কাজ শেষ করবেন। কিন্তু আচানক একদিন এক ভাড়াটিয়াকে বাড়ি দেখাতে গিয়েই ঘটনাটি ঘটে।
লতিফুর রহমান বাথরুমের দরজাটা খুললেন। তারপর চিৎকার করতে গিয়েও থেমে গেলেন। তার চারপাশের জগতটা থেমে গেছে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে যেন। তীব্র আতংকে তিনি দেখতে পেলেন বাথরুমের মেঝেতে কাত হয়ে পড়ে আছে একটা পচা গলা একটা বিভৎস লাশ। আর ভনভন করা মাছি।
ঘটনা মোড় নিলো আরো সংকটাপন্ন রুপে যখন জানা গেল লাশটি চুন্নু চেয়ারম্যানের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আপন ভাগ্নে লিখনের।
নদীর পাশে একটুকরো উপজেলা সেখানেও রয়েছে ক্ষমতা দখলের লড়াই। সামনেই নির্বাচন। সে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা ও চুন্নু মিয়ার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। একদিকে তাদের অন্তরকোন্দল খুনের তদন্তকে আরো বিষিয়ে তুলছে, অন্যদিকে মাঠে নেমেছে এস. আই. রেজাউল হক। তার নজর তিনতলা বাড়ির নিরিহ অধ্যাপক লুতফর রহমানের দিকে। কিন্তু ধীরে ধীরে কেসে জড়িয়ে গেলেন লুতফর রহমানের অসুস্থ স্ত্রী, কাজের মেয়ে ডালিয়া, চায়ের দোকানদার মোবাশ্বের, ব্যাংক ম্যানেজার রফিকুল, নামকরা মুচি হারাধনসহ অনেকেই। তবে সন্দেহের তালিকা থেকে চুন্নু মিয়া ও গোলাম মাওলাও বাদ নেই। এস. আই রেজার চোখে যেন কেউ বাদ নেই। রাতের আধারে ঘটে যাওয়া সময়ের ব্যবধানে মানুষের ছদ্মবেশ যেন সবকিছু ক্রমশ আরো ঘোলা করে দেয়।
রহস্যের সমাধানে আপনাকে স্বাগতম। আপনি তৈরি তো?
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
বর্তমান সময়ের লেখকদের মাঝে যদি কাউকে খুব পরিচিত মুখ বলে গণ্য করা হয় তাহলে তিনি হলেন লেখক সাদাত হোসাইন। তিনি তার লেখা মানবজনম, অন্দরমহল, নিঃসঙ্গ নক্ষত্র, আরশিনগর উপন্যাসের জন্য পাঠক হৃদয় দখল করে নিলেও তার কবিতার বই ‘কাজল চোখের মেয়ে’ ও ‘একদিন আমি নিখোঁজ হবো’ তাকে দিয়েছে স্বতন্ত্র যাত্রা। তবে তিনি মার্ডার মিস্ট্রি নিয়ে হাজির হবেন এই আশা ছিল বহুদিনের। কারণ আমি থ্রিলারের একনিষ্ঠ ভক্ত। সেই ঘরানার বই হিসেবে ‘ছদ্মবেশ’ ছিল একটি চমৎকার শুরু।
পুরোপুরিভাবে বন্ধ বাড়িতে আচমকা লাশ উদঘাটনের মাধ্যমে লেখক সাদাত হোসাইন পাঠকের দৃষ্টি সজাগভাবে কেন্দ্রিভূত করে নিয়েছেন উপন্যাসের গভীরে। রহস্যের চাদরে মোড়া মার্ডার মিস্ট্রি ছদ্মবেশের গভীরে কখন যে ডুবে গিয়েছিলাম টেরই পাইনি।
একটির পর একটি রহস্যের জট পাকালেও লেখক জীবনমুখী গল্প লিখেছেন বলে বাস্তবতার ছাপ এখানে বিদ্যমান। রাজনৈতিক কোন্দল এনে দিয়েছে জীবননগরের স্বাদ। অধ্যাপক লতিফুর রহমানের চরিত্রে যেমন ভীতিগ্রস্ত মানুষের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে তেমনি এস. আই রেজার চরিত্র শেষবেলায় আমার বেশি ভালো লেগেছে। প্রথমে মানুষটি আসলেই কেমন তা বুঝে উঠতে সময় লেগেছে।
না চাইতেও তার লেখায় লেখকের নিজস্ব ছাপ বা মৌলিক স্টাইল কম পেয়েছি। তাছাড়া টাইপিং মিস্টেক ও বানান ভুল দুই একটা চোখে পড়েছে। ‘র’ এর স্থলে ‘ড়’ এর ব্যবহারে আরো সতর্কতা জরুরি। অন্যান্য লেখনীর তুলনায় তার এ উপন্যাসে স্বতঃস্ফূর্ত ভাষার ব্যবহার লক্ষণীয়। চমতকারভাবে শেষ করেছেন থ্রিলারটি। পাঠক হিসেবে আমি বলবো বইটির সার্থকতা এখানেই। ছদ্মবেশের আড়ালে ছদ্মবেশ বাস্তবতার নিরীক্ষে জটিল সমাধান হলেও নামকরণেও বইটি যথাযথ। বইটির আনুষঙ্গিক দিকসহ সনদ কুমার বিশ্বাসের করা প্রচ্ছদটি আমার কাছে বেশ লেগেছে।
ব্যক্তিগত রেটিং ৪/৫
প্রিয় লাইনঃ
”জীবন কখনো প্রিয়তম মানুষদের মধ্যেও অদ্ভুত অভিমানের দেয়াল তুলে দেয়। ভালোবেসে কাছে এসে সেই দেয়াল ভাঙা হয় না বলেই তা ক্রমশই মহাপ্রাচীর হয়ে উঠতে থাকে। একসময় হয়ে ওঠে অলঙ্ঘনীয়।”
ঠান্ডা শীতল বৃষ্টিময় আবহাওয়ার দিনে হাতে তুলে আর দেরী কেন?
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?