বইয়ের নামঃ নূরজাহান
লেখকঃ ইমদাদুল হক মিলন
প্রকাশিতঃ জানুয়ারি ২০১৫
প্রকাশকঃ আনন্দ পাবলিশার্স (ভারত)
সাইজঃ ১১ এমবি
ভাষাঃ বাংলা (Bangla/Bengali)
পাতা সংখ্যাঃ ১১৭৬
বইয়ের ধরণঃ উপন্যাস
ফরম্যাটঃ পিডিএফ (PDF
নূরজাহান বইটি আমার পড়া সব চেয়ে বড় একটি বই.. বই টি ২০১৮ সালে হাসপাতালে ডাক্তারের কাছ থেকে পাওয়া উপহার.. এত দিন বইটি অনেক বার পড়তে শুরু করেও শেষ করা হয়নি
অবশেষে পুরো নভেম্বর মাস জুড়ে শেষ করলাম বইটি..
কাহিনী সংক্ষেপ-
বাংলাদেশে যখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠে মৌলবাদ, সোনার বাংলার গ্রাম গুলো যখন আচ্ছন্ন অশিক্ষিত কাঠমোল্লারা, রাষ্ট্রব্যাবস্থা ও আইনের তোয়াক্কা না করে একের পর এক ফতোয়া দিতে থাকে তারা। ফতোয়াবাজ নরপশুদের হিংস্র নখরে যখন ছিন্নবিন্ন হয় গ্রামপ্রান্তের অবলা নারী, নূরজাহান সেই নারী,,সেই সমাজের প্রতিভু।।
মৌলভীবাজার ছাতকছরা গ্রামে জন্মেছিল নূরজাহান। প্রথম বিয়ের পর স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ঠিক সেই সময় রূপবতি নূরজাহানের রূপে মুগ্ধ হয়ে গ্রামের প্রভাবশালী মসজিদের মাওলানা মান্নান তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় কিন্তু নূরজাহানের বাবা মধ্যবয়সী মান্নান মাওলার সঙ্গে নূরজাহানের কে বিয়ে না দিয়ে মোতালেব নামের এক যুবকের কাছে বিয়ে দেয়.. মান্নান মাওলা তখন ক্ষিপ্ত হয়ে ফতোয়া জাড়ি করে নূরজাহানের দ্বিতীয় বিয়ে বৈধ নয়. অবৈধ বিয়ের অপরাধে মধ্যযুগীয় আরব দেশের কায়দায় বুক অব্দি গর্তে পোঁতা হয় নূরজাহান কে,,তার পর একশ একটি পাথর চুড়ে মারা হয়.. তার স্বামীকেও দেওয়া হয় একি শাস্তি.. বাবাকে করা হয় বেত্রাঘাত। এই অপমান সইতে না পেরে সেই রাতেই আত্বহত্যা করে নূরজাহান। নূরজাহানের এই আত্বহত্যা ছিলো মৌলবাদের প্রতি বিশাল এক প্রতিবাদ। নূরজাহানের আত্বহত্যা ছিলো ফতোয়াবাজ দের প্রতি সোচ্চার হওয়া প্রথম প্রতিবাদ,সমাজব্যাবস্তার গায়ে ছড়িয়ে দেওয়া প্রতিবাদের রঙ।।
তাই নূরজাহান ঐতিহাসিক না হয়েও ঐতিহাসিক চরিত্র..
মূলত স্বাধীনতার পরবর্তী একটি বাংলাদেশি পল্লী এলাকার বিস্তৃত জীবনচারন উঠে এসেছে এই বইটিতে।। কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকা নূরজাহান, তার পরিবার, গ্রাম ও আশেপাশের প্রকৃতি কে উপজীব্য করে গড়ে উঠেছে এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট।। যেই গল্পে আছে এক কিশোরীর চঞ্চলতা, তার তৈরি হওয়া অনুভূতি গুলো,আছে দারিদ্রতার গল্প,,আছে বঞ্চনার গল্প,আছে বিপ্লবী চরিত্রের ঝংকার।।
ব্যাক্তি গত অভিব্যক্তি – সত্যি বলতে এর আগে ইমদাদুল হক মিলনের কোন বই আমায় সন্তুষ্ট করতে পারেনি কিন্তু নিঃসন্দেহে বই টি ছিলো ইমদাদুল হক মিলনের সেরা একটি বই.. বইটি পড়ার সময় নূরজাহানের চঞ্চলতা, নূরজাহানের বাবার সরলতা,মায়ের মমতা,,আমায় খুব অভিভূত করে.. একটি সুন্দর গ্রামবাংলার চিত্র ফুটে উঠে চোখের সামনেই যেন আমি-ই বিরাজ করছি সেই সময়টায়..
আমাদের সমাজের বড় সমস্যা গুলোর মধ্যে বাল্যবিবাহ,, বাল্যবিধবা,, যৌতুক সহ ফতোয়াবাজ হচ্ছে অন্যতম .. আর সেই সমস্যা গুলো ও গ্রামবাংলার চিত্র গুলোই ফুটে উঠে বইটি তে… সমাজের এইরকম অনেক নূরজাহান ই আছে যারা আমাদের দেখার বাইরে থাকে..
কোথাও কোথাও মনে হচ্ছিলো খুব বেশি লম্বা হয়ে গেলো বইটি যতটা করা উচিত ছিলোনা কিন্তু বইটি পুরো একটা বাংলাদেশকেই যেন প্রকাশ করছিলো তাই অনেক বেশি ভালো লাগে.. ভাষার সহজবোধ্য উপস্থাপনার জন্য আরো সুখময় হয়ে উঠে উপন্যস টি।