বইঃ মখমলী ভালোবাসা।
লেখিকাঃ রুকাইয়া মাবরুরা।
রাইয়ান প্রকাশন।
প্রিয় বোন আমার! একটু মনে রাখবেন — আপনার স্বামী যখন কোন ঝামেলা বা পেরেশানীর শিকার হবেন, তখন তিনি কিছুটা একা একা থাকতে চাইবেন। সমস্যার ব্যাপারে কথা বলতে সংকোচ করবেন। এসময় কেউ যদি সহায়তার উদ্দেশ্য নিয়েও এইসব ব্যাপারে আলাপ করতে পীড়াপীড়ি করে, তাহলেও তিনি ভেতর থেকে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে যেতে থাকেন।
বোন আমার, আমি বুঝতে পেরেছি — পুরুষের এই চুপচাপ আর নিঃসঙ্গতা অবলম্বন আপনার মনে হতাশার আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আপনি ভাবতে থাকেন — “হায়! আমি কি তার সমস্যা শোনার উপযুক্ত হতে পারলাম না!আমি কি এতই অবিশ্বাসের পাত্র হয়ে গেলাম যে আমার সাথে কথাই ছেড়ে দিয়েছে?”
এদিকে এসব ভেবে আপনি যতই ‘খোঁচাখুঁচি’ করেন স্বামী হুঁ/হ্যাঁ জবাবেই সীমাবদ্ধ থাকে। ফলশ্রুতিতে এগুলো যেন আপনার মনোকষ্ট আরো বাড়িয়ে দেয়। অথচ আপনার এসব পীড়াপীড়ি আর মনোকষ্ট আপনার স্বামীকে আরও বেশি ক্লান্ত-শ্রান্ত করে ছাড়ছে – যা আপনি বুঝতেও পারছেন না।
এজন্য প্রিয় বোন একটা কথা মনে রাখবেন, “স্বামীকে এই আচরণে অপারগ মনে করে একটু সুযোগ দিবেন। তার জন্য সাচ্ছন্দ্যময়ী পরিবেশ তৈরী করে দিতে চেষ্টা করবেন।যাতে তিনি এই দুশ্চিন্তা আর পেরেশানী থেকে দ্রুত নিস্তার পেয়ে যান।
আপনি এই ভেবে একটু মানিয়ে নিবেন, এসব নিঃসঙ্গতা আর বালখিল্যতা ওর পৌরুষী স্বভাবদোষ। তাকে বুঝতে দিন যে আপনি তার অপেক্ষায় আছেন। তাকে উপলব্ধি করান, কখন সে পেরেশানী মুক্ত হয়ে আপনাকে নিয়ে আবার প্রেমসমুদ্রে বিলাসে মত্ত হবে – আপনি শুধু এই অপেক্ষাই আছেন!
একটা নারী দাম্পত্য জীবনে যে জিনিসটার সবচে বেশি ভয় করে – তা হল একজন অকর্মক স্বামী। যৌবনের তাড়নায় যে বিয়ের ভার ঘাড়ে চাপিয়েছে, অথচ নিজেই এখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। স্ত্রীর কী প্রয়োজন, সংসারে কী চলছে – এদিকে তার খেয়ালই নেই।
এসব স্বামীদের ভাবখানা এমন, যেন সংসারটা ফুটবলের মাঠ। মনে চাইলে খেললাম, না চাইলে এদিক-ওদিক একটা-দুটো ফাউল কিক মেরে দিলাম। গুনাহমুক্তির জন্য বিয়ে করে যদি বান্দার হক নষ্ট হয়, তাইলে আপনি তো আরো বড় গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়লেন!
আপনি রাসূলের হাদীসটি মনে করুন – “সুতরাং স্বামী তার স্ত্রীর হকের ব্যপারে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে।”
আর এই সংসারিক দায়িত্ব যথাযথ পালন করাটাই হচ্ছে দাম্পত্যজীবনে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর সবচে বড় আকাঙ্ক্ষার বস্তু।
অনেক স্বামীকে আমরা এমনও দেখেছি যে, স্ত্রীর সাথে কথা বলতে গিয়ে তার ভাবখানা এমন, যেন তুমি আমার ক্রীতদাসী; আমি আদেশ দিলেই তুমি তা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য!
কিছু অঞ্চলে এমনও দেখেছি, যারা স্ত্রীর কথা মুখে আনলেই বলবে— “আল্লাহ তাকে পবিত্র করুন।” ভাবভঙ্গি এমন – মনে হয় যেন আল্লাহ তাআ’লা তাদেরকে অপবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন!
প্রিয় ভাই! নারীসত্বা একটি স্ফটিক। খুব স্বচ্ছ-সাদা। অতিকোমল। আপনি যখন তাকে ঘরের আসবাবের মত ব্যবহার করতে থাকেন, যখন তার কোনো মতামত দেওয়ার অধিকার থাকে না, ভাল কিছু দেখলেও উল্লাসিত হতে পারে না, তখন যন্ত্রণায় তার হৃদয়টা কুঁকড়ে ওঠে। বুকের ভেতরে আপনার জন্য লালন করে রাখা কাঁচের মতো নিঃষ্কলুষ ভালোবাসাটা বিকট আওয়াজে ভেঙ্গে চুরচুর হয়ে যায়। আর আপনার নিষ্ঠুর কানে তো সে আওয়াজ কখনোই পৌঁছবে না!
অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – আপনার নবী। আপনি যাকে ভালোবাসার দাবী করেন, যার উম্মত হতে পেরে গর্ব করেন, যিনি ছিলেন পৃথিবীর সবচে’ জ্ঞানমানব, ছিলেন মহাপ্রতাপের অধিকারী। কেমন আচরণ ছিল তাঁর নিজ স্ত্রীদের সাথে? তিনি পরামর্শ করতেন। সুন্দর মনে হলে সেটা সাদরে গ্রহণও করতেন!
এজন্য প্রতিটি স্বামীর কাছে স্ত্রীর আকাঙ্খা থাকে – পরিবারের কিছু অধিকার তাকেও দেওয়া হোক। এ ঘরে একটু মূল্যায়ন তারও থাকুক। কেউ তার ভালোবাসার দাবী, অধিকারটুকু কেড়ে না নিক।
প্রিয় বোন, মনে করুন – আপনার স্বামী কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। আর সাথে আপনিও আছেন। কিন্তু সে গায়ে যে জামাটা পরেছে, তা একেবারে বেখাপ্পা, আপনার কাছে মোটেও ভালো লাগছে না। এখন আপনি যদি সরাসরি বলে ফেলেন, “এটা পাল্টাও, মোটেও ভাল্লাগছে না।” তাহলে কথাটা ভালো হলেও স্বামীর আঁতে লাগতে পারে। পুরুষ তো! ওদের অমন একটু লাগেই।
তাকে পছন্দের জামাটা ধরিয়ে দিয়ে বলুন, “পাখি এই জামাটা তোমার গায়ে সুন্দর মানাবে”, অথবা বলুন “শোনো না – এই জামাটায় তুমি আরাম বোধ করবে; আমি ঠিক বলেছি না বলো?”
বোন আমার – এই দুই পদ্ধতির পার্থক্যটা কিন্তু স্পষ্ট। নিশ্চিত আপনি আমার সাথে একমত হবেন – দ্বিতীয় পদ্ধতিটি স্বামীর হৃদয়ে প্রেম আর ভালোবাসার আলোড়ন তুলে ছাড়বে। অথচ এতে তার পৌরুষের দেয়ালে সমান্য আঁচড়ও লাগবে না।
আমার চে’ আপনিই কিন্তু স্বামীর ব্যাপারে সবচে’ বেশি অবগত— কীসে তার মন খুশি হয় আর কীসে তার কষ্ট হয়। তাকে সবচেয়ে আপনিই ভাল জানবেন।
আর তাই এই বইয়ের হাতেগোনা কয়েকটি টিপস অনুসরণ করলেই স্বামীকে উপদেশ বা পরামর্শ দেওয়ার অভিনব সব পদ্ধতি আপনি নিজেই আবিষ্কার করতে পারবেন।
প্রিয় ভাই – মেয়েরা সাধারণত ছন্দময় কথার পাগল হয়ে থাকে। এসবে তারা আসক্ত হয়ে যায়। আর তাই – আপনি সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ফেলুন। সুযোগ পেলেই দু-পাঁচটা প্রশংসার বাণী শুনিয়ে দিবেন। তাকে বুঝিয়ে দিন, আপনার কাছে তার মূল্য অনেক বেশি। আপনার চোখে সেই দুনিয়ার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নারী।
এই ধরুন— বললেন, “তুমি আমার হৃদয়ের শাহজাদী, তুমি আমার হৃদয়ের অধিপতি/ তোমার ভালোবাসার একটি পলক যখন আমার হৃদয়ে আছড়ে পড়ে মনে হয় তা দিয়ে পৃথিবীই পূর্ণ করে দিতে পারব/ আমার দেহটা যেখানেই চলুক – হৃদয়টা বাঁধা থাকে তোমার আঙিনায়।”
এগুলো নিশ্চয় স্ত্রীর কোমল হৃদয়ে প্রেমের ফুল ফোঁটাবেই।তার কর্ণকুহরে ভালোবাসার মধু ঢেলে যাবেই। তাই আর দেরি কেন? আভি নেহি তো কাভি নেহি!
মেয়ে মানুষ ভালোবাসা, সৌন্দর্য আর অনুভূতিকে পরম যত্নে আগলে রাখে। সৃষ্টিগুনেই রোমান্টিক হয়ে থাকে নারীরা। নিবিড়চিত্তে তার ভালোবাসা শোনার মত
একটা শ্রবণেন্দ্রিয় এরা সবসময় খুঁজে বেড়ায়।
নারীরা হৃদয়ের উত্তাপ অনুধাবন করার মত একটা হৃদয় পেতে চায়— যেটা ভালোবাসার দেয়াল তুলে তার সামগ্রিক অনুভূতিকে ঘিরে রাখবে। চায় একটা মজবুত পেশীধর হাতে মাথা রাখতে, যা শত বিপদেও অলঙ্ঘণীয় ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
নারীমন সবসময় চায় — কেউ যেন তার অব্যক্ত কথা বলার আগে বুঝে নিক। প্রয়োজনগুলো বলার আগেই শুনে নিক। নারীরা এমন একটা প্রশস্ত বক্ষ কামনা করে, যেটা হবে তার অভয়ারন্য, নিরাপদ আলয়। কেবল নিজের পৌরুষ আর মুরুব্বিয়ানা চর্চা করা কোনো পুরুষকে তারা বড্ড ভয় পায়।
আলহামদুলিল্লাহ, দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনা পেরিয়ে প্রি অর্ডার শুরু হয়েছে। অটোগ্রাফ সহ অর্ডার দিতে মখমলী ভালোবাসা অথবা রাইয়ান প্রকাশন এর পেজে নক দিন।
বই থেকে এক অংশ:
“ভালোবাসার চরিত্র হতে হয় বিশাল আকাশের মত — সীমাহীন, শ্রাবণের জলধারার মত — মহা উদার। ভালোবাসা যদি পণ্যে পরিণত হয় তাহলে অর্থের অভাবে তা কখনো অবিক্রিতই থেকে যায়।”
পুনশ্চঃ
প্রিয় বোন আমার, আপনার স্বামী আপনাকে ভালোবাসে না? স্ত্রী হিসেবে আপনাকে গন্য করে না? কিংবা প্রিয় ভাই, আপনার স্ত্রীর মন আপনি জয় করতে পারছেন না? স্ত্রীর থেকে ভালোবাসা পাচ্ছেন না? সংসার জীবনে আপনার বিতৃষ্ণা এসে গেছে? দম বন্ধ হয়ে আসছে একঘেয়ে জীবনে?
এসব প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে মনে করুন এই বইটি আপনার জন্যেই। এ বইটি দাম্পত্য জীবনের সাথে জড়িত। সহজ ভাষায় কিছু পথ, পদ্ধতি এবং কিছু সমাধান এখানে দেওয়া হয়েছে। আমার মুখের কথায় তো আর আপনার মনে ভালোবাসা জাগবে না, তবে আমি এতটুক বলতে পারি — আপনার সুখের পথের অন্তঃরায় একটা “কিন্তু” নামক প্রশ্নের যে কাটা রয়েছে, সেটা দূর হয়ে যাবে। লুপ্ত হতে হতে আপনার ভেতরের যে ভালোবাসা হারিয়ে যেতে চলেছে, তা পুনরায় জাগ্রত হবে। জীবনকে নতুন করে বুঝতে পারবেন। সঙ্গীর সাথে চলার এক ভিন্ন পথ আবিষ্কার করে আপনি নিজেই অভিভূত হবেন।
জীবনের বাঁকে যদি এক ফোটা সূকুন আনতে চান,
অশান্তির দাবদাহে পোড়া অন্তরে যদি ভালোবাসার বর্ষা ঝরাতে চান,
যদি কোনো এক মন কেমনের ক্ষণে সঙ্গির মান ভাঙিয়ে আপনাদের চোখে অভিমানী হাসির ফোয়ারা ছোটাতে চান —
তবে আর দেরি না করে পড়ে ফেলুন মখমলী ভালোবাসা।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?