উপন্যাস : বাদশাহ নামদার
লেখক : হুমায়ূন আহমেদ
রেটিং : ১০/৯
রিভিউ : আরাফাত মজুমদার
বাদশাহ নামদার বইটির প্রধান চরিত্র মুঘল সম্রাট হুমায়ূন মির্জা – এটা নাম দেখেই বুঝা যায়। তবে হুমায়ূন মীর্জা ছাড়া আরো কতগুলো চরিত্র আছে যেগুলোকে সরাসরি পার্শ্বচরিত্র বলে চালিয়ে দেয়া যায় না। এগুলোর মধ্যে সেনাপতি বৈরাম খানের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য। লেখক হুমায়ূন তাঁর লেখনী দ্বারা বৈরাম খান কে বীরের মর্যাদা দান করেছেন, যেটা দেন নি মহান সম্রাট আকবর।
ইতিহাস সাধারণত সুখপাঠ্য হয় না। ইতিহাসবেত্তাগণ ইতিহাসকে এতটাই কাঠামোর মধ্যে নিয়ে যান যে— তা আমাদের কাছে বিরক্তিকর হয়ে যায়। ফলে আমরাও রাজা বাদশাহদের নাম, বড়জোর ঘটনার সাথে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বে মমতাজ বেগমদের নাম পর্যন্ত জানতে পারি এবং মনে রাখি। বাকিটুকু না জানার কারণ আমাদের আগ্রহ মরে যাওয়া। আর এই আগ্রহের হত্যাকারী স্বয়ং ইতিহ্সবেত্তাগণ। ইতিহাসকে যে গল্পের ছলে উপস্থাপন করে প্রাণবন্ত করা যায় তা আমাদের ঐতিহাসিকদের কাছে অজানা এবং তারা এভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ। অথচ এই কাজটিই করে দেখিয়েছেন লেখক হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর লেখার মধ্য দিয়েই সাধারণ পাঠক চিনতে পেরেছে অতীত ইতিহাসের অংশ কামরান মির্জা, ইস্কান্দার মির্জা, হিন্দাল মির্জা, সম্রাট আকবরের মা হামিদা বানু, বোন গুলবদন— এমন আরো অনেককে। সহজবোধ্য বর্ণনার জন্য পাঠক সহজে ভুলে যাবে না হামিদা বানুর সাথে সম্রাট হুমায়ূনের বিয়ের কাহিনী, ভাইদের প্রতি হুমায়ূন ভগ্নির অসীম মমতা।
এই গ্রন্থে রাজরাজড়াদের ভোগবিলাস, অন্দরমহল ও দরবার জীবন যেভাবে ফুটে ওঠেছে, তেমনি বাদশা হুমায়ূনের জীবনের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠেছে রাজক্ষমতা হাতে পাওয়ার আগে যুবরাজদের দুরন্তপনা ও একঘুয়ে অবস্থার চিত্র। হঠাৎ বাবার রাজ কোষাগার লুণ্ঠন করে রক্তে রাজরক্ত প্রবাহের ইঙ্গিত কালে হুমায়ূনরা যেভাবে দিয়ে এসেছে, তেমনি বাবার কথা মনে পড়তেই সমূহ শাস্তির সম্ভাবনা নিয়ে আবার বাবা আকবরের দরবারে হাজির হয়ে জানান দিলেন পিতৃস্নেহের কাছে সব শাস্তি নস্যি। পিতৃস্নেহের কাছে সব শাস্তি নস্যি হলে নিশ্চয়ই যাবতীয় অপরাধ বাবা এবং সম্রাট হিশেবে ক্ষমার যোগ্য-ই হয়। সেটা করে সম্রাট আকবর দেখিয়েছেন রাজপুরুষরা শুধু রাজপুরুষ-ই নন ; তারা পিতাও বটে।
রাজক্ষমতা হাতে আসলে সবাই নতুন রাজ্য হস্তগত করতে যুদ্ধবিগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত থাকে— এমন একটা বদ্ধমূল ধারণা কমবেশি সবার মনেই থাকে। রাজকীয় প্রয়োজনে যুদ্ধবিগ্রহ করা এবং শত্রু প্রতিহত করা ছাড়াও রাজরাজড়াদের মানুষ হিশেবে কিছু সহজাত গুণ থাকে যা সাধারণ মানুষ জানতে পারে না। মুঘল বাদশাহদের এমন কিছু গুণ লেখক হুমায়ূন আহমেদ কলমের কালিতে তুলে ধরেছেন, যা রাজরাজড়াদের সম্রাট-জীবন ছাড়াও ব্যক্তি জীবনের কিছু স্পষ্ট ছবি ফুটে ওঠেছে।
বাদশাহ হুমায়ূন একজন পড়ুয়া ব্যক্তি ছিলেন। লেখক হুমায়ূন বাদশাহ হুমায়ূনকে “বাদশাহ” হিশেবে চিত্রিত করার পাশাপাশি ব্যক্তি হুমায়ূন তথা একজন বই পড়ুয়া, স্বপ্নে বিশ্বাসী, দুষ্প্রাপ্য বই সংগ্রহকারী হিশেবে চিত্রিত করেছেন। নিয়মিত দামি মদের আসর এবং আফিমে আসক্তি আবার তাঁর ভোগ বিলাসিতার চিত্র ফুটিয়ে তুলে। তবে স্বপ্নের ব্যাখ্যার বিষয়ে পুত্র হুমায়ূনের চেয়ে পিতা বাবর এককাঠি সরেস ছিলেন। তিনি প্রায় সব কাজেই স্বপ্নের ব্যাখ্যার প্রয়োগ করে ঘটনার সাথে স্বপ্নের সাদৃশ্যতা মিলানোর চেষ্টা করতেন। লেখকের এসব বর্ণনা মুঘল সম্রাটদের চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে ধারণা প্রদাণ করে।
“কাব্য ও সঙ্গীতে যার আসক্তি আছে তার হৃদয় কোমল। এমন ব্যক্তি দ্বারা অপরাধ সংগঠিত হয় না, বরং তারা সাধারণত ক্ষমাপরায়ণ”— এ রকম একটি কথা প্রচলিত আছে। বাদশাহ বাবর ও হুমায়ূন উভয়েই ছিলেন কবি এবং সঙ্গীত প্রেমী। আসহারি নাম্নী এক তুর্কি গায়িকার সুরে মুগ্ধ হয়ে বাদশাহ বাবর গায়িকার সমপরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা প্রদানের ফরমান জারি করেন। বাদশাহ বাবরের কোমল হৃদয়ের পরিচয় পাওয়া যায় পিতা হিশেবে নিজের জীবনের বিনিময়ে পুত্র হুমায়ূনের জীবন প্রার্থনা করার মধ্য দিয়ে। আবার কবি ও সঙ্গীত প্রেমী বাদশাহ হুমায়ূন তার ভাই মির্জা কামরানকে ক্ষমা করে দিয়ে কোমল হৃদয়ের পরিচয় দিয়েছেন ; যদিও মির্জা কামরান হুমায়ূন নিজ ভাই হুমায়ূনকে হত্যার পরিকল্পনার মত জঘন্য পরিকল্পনা করেছিল।সর্বোপরি লেখক সচেতনভাবে সম্রাটদের সংস্কৃতিমনা পরিচয় করানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি তাঁদের মহানুভবতা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন।
বাহাদুর শাহ এবং রানি কর্ণাবতীর মত চরিত্রগুলো ইতিহাসে মোটামুটি পরিচিত হলেও হরিশংকর আচার্যের মত বিচিত্র চরিত্রগুলো হুমায়ূন আহমেদ সাধারণ পাঠককে চিনিয়েছেন গল্পের ছলে। এছাড়াও বিপদে সাহায্য করেছেন— এমন সময় একজনকে কথা দিয়েছেন বলে বাদশাহ হুমায়ূন এক ব্যক্তিকে অর্ধ বেলার বাদশাহ বানিয়েছিলেন। অর্ধ বেলার রাজার মর্যাদা দেওয়া— বাদশা হুমায়ূনের কথা দিয়ে কথা রাখার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে ইতিহাসে জ্বলজ্বল করছে। অবশ্য হুমায়ূনের ইতিহাসে এমন উদাহরণ প্রচুর।
হুমায়ূন যুবরাজ থাকাকালীন সময়ে একবার পিতা আকবরের রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুণ্ঠন করেছিল। তারপর হুমায়ূন আলাদা থাকত এবং প্রচুর পরিমানে আফিম সেবন করত। কিছুদিন পর যখন পিতার কথা খুব মনে পড়তে থাকল তখন সে পিতার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসছিল। পিতা বাবর সন্দেহ করলেন শত্রুদল কি-না। আয়নার আলো ফেলে দেখলেন পুত্র হুমায়ূন আসছে। তখন তিনি মন্তব্য করেছিলেন- “সম্রাটের কোন স্ত্রী থাকে না, সম্রাটের কোন পুত্র থাকে না। সম্রাটের থাকে তরবারি।” তিনি সত্যই বলেছিলেন। তাঁর পুত্র হুমায়ূন-ভ্রাতা মির্জা কামরান কবিতা লিখলেন-
রাজ্য হলো এমন এক রূপবতী তরুণী
যার ঠোঁচে চুমু খেতে হলে
সুতীক্ষ্ণ তরবারির প্রয়োজন হয়।
হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে গেলে তাঁর সম্পর্কে কোন ভূমিকা লেখার প্রয়োজন নাই— একথা বলাই বাহুল্য। তবুও নিজের দিক থেকে বলব, লেখকের এই বইয়ের মত করে আর কোন বই আমাকে টানতে পারে নি। এমনও হতে পারে যে এর কারণ আমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বুদ্ধির আড়ষ্ঠতা প্রজ্ঞার অপর্যাপ্ততা। সে যাই হোক, তাঁর এই বইটিকে আমি আমার পঠিত “লেখকের-সেরা-বই” ক্যাটাগরিতে রাখব।
[ইতিহাস আশ্রিত এই বইটির এত বেশি শাখা প্রশাখা যে সবগুলো বিষয়কে বিশ্লেষণ করে পাঠ প্রতিক্রিয়া জানানো নিশ্চিতভাবে অসম্ভব। রুমি খাঁ, পারস্য সম্রাটসহ বেশ কয়েকটি চরিত্র আমি সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেছি এবং বৈরাম খাঁ’র বিষয়ে একটির বেশি বাক্য খরচ করি নি। কারণ বৈরাম খাঁ’র আসন এত উচ্চে যে তাঁর বিষয়ে বলা- আমার সাধ্যের অতীত।]
Badsah Namdar Overview In English
“Badsah Namdar” is a novel written in the Bengali language by the famous Bangladeshi author Humayun Ahmed. The book was first published in 1997 by Annyaprokash, and it has been a popular novel among Bengali readers since then.The story of “Badsah Namdar” revolves around the life of a fictional character named Badshah Mia. The novel depicts the struggles of Badshah Mia, a poor and illiterate man who becomes a millionaire through his sheer determination and hard work. The book explores themes such as poverty, inequality, social class, and the pursuit of success.Humayun Ahmed is considered one of the most popular and influential writers of Bangladesh. He is known for his insightful portrayals of Bangladeshi society and his ability to engage readers with his compelling storytelling. Many of his books have been adapted into films and television dramas.Overall, “Badsah Namdar” is a highly regarded novel in Bengali literature, and it may be worth reading if you are interested in Bangladeshi culture and society.
Click Here To Download Badsah Namdar PDF
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?