নাম: দ্য গিভার
লেখক: লোইস লোওরি
অনুবাদক: ফাহাদ আল আব্দুল্লাহ
জনরা: সায়েন্স ফিকশন
প্রচ্ছদ: লর্ড জুলিয়ান
প্রকাশনী: ঐশ্বর্য প্রকাশ
প্রথম প্রকাশ: জুন ২০২২
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৬০
মুদ্রিত মূল্য: ৩২০/-
𝖂𝖊 𝖌𝖆𝖎𝖓𝖊𝖉 𝖈𝖔𝖓𝖙𝖗𝖔𝖑 𝖔𝖋 𝖒𝖆𝖓𝖞 𝖙𝖍𝖎𝖓𝖌𝖘. 𝕭𝖚𝖙 𝖜𝖊 𝖍𝖆𝖉 𝖙𝖔 𝖑𝖊𝖙 𝖌𝖔 𝖔𝖋 𝖔𝖙𝖍𝖊𝖗𝖘.
—𝔏𝔬𝔦𝔰 𝔏𝔬𝔴𝔯𝔶
আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই আমাদের। কিছু পেয়ে গেলে নতুন কিছুর প্রতি ঝুঁকে পড়ি। পাওয়া যতই মূল্যবান হোক না কেন কাঙ্ক্ষিত নাহলে মূল্য থাকে না।
সর্বকালের চাওয়া এক উন্নত সভ্যতার…
কিন্তু এই ❝উন্নত❞- শব্দের অর্থ সবার কাছে কিন্তু একই নয়। কী হবে যদি এই উন্নত সভ্যতার মূল্য দিতে, বিসর্জন দিতে হয় অস্তিত্বের?
● আখ্যান —
সাজানো-গোছানো, পরিপাটি এক কম্যুনিটিতে থাকে জোনাস আর তার পরিবার। আশেপাশে ছড়িয়ে রয়েছে এমন আরও কম্যুনিটি। প্রতিটি কম্যুনিটির রয়েছে আলাদা ক্যালচার, প্রতিটি সদস্য বাচ্চা থেকে বুড়ো মেনে চলে। ধরাবাঁধা নিয়মে বাঁধা পড়ে যখন হঠাৎ চোখের সামনের জিনিস কিছুখনের জন্য বদলে যায়। এই বদলে যাওয়া ঠিক ঠাহর করতে পারে না জোনাস। তবে এতকিছু ভাবে না কারণ বারো বছর হতে চলেছে তার, বিশাল পরিবর্তন অপেক্ষা করছে জীবনে!
প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে কম্যুনিটিতে জমকালোভাবে আয়োজন করা হয় এক বিশেষ অনুষ্ঠানের। নিঃসন্তান দম্পতি পায় সন্তান আর বিভিন্ন বয়সী বাচ্চারা পায় অ্যাসাইনমেন্ট। শেষ অ্যাসাইনমেন্ট পায় বারো বছর বয়সে। তো এনিয়ে উদ্দীপনার শেষ নেয় জোনাসের। কিন্তু হঠাৎ বদলে যায় সব… উন্নত সমাজ, যত্নশীল পরিবার, বেদনাহীন জীবনের পিছের রহস্য ধীরে ধীরে আসতে থাকে জোনাসের সামনে। চরম সত্য বলে এতদিন যা মেনে এসেছে আসলে সবই মিথ্যে, প্রতারণা, অন্যায়। মরিচীকার দুনিয়া থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায় জোনাস। পারবে কী পালিয়ে যেতে? আদোও কি আছে এই মরিচীকার শেষ?
● পর্যালোচনা ও প্রতিক্রিয়া —
❝দ্য গিভার❞- কিশোরদের জন্য লেখা হালকা-ধাঁচের সায়েন্স ফিকশন। সাথে যোগ হয়েছে অল্পবিস্তর মিস্ট্রি আর এডভেঞ্চার। ❝দ্য গিভার❞ সিরিজের প্রথম বই দ্য গিভার এরপর আছে আরও তিনটি বই। বইয়ের কাহিনী ভবিষ্যতের এমন একসময়কার পৃথিবীর যখন অন্যায়-অবিচার-কষ্ট বলে কিছু নেই। সকল কিছুই চলে ছকে বাঁধা নিয়মে। বইয়ের প্রথম ৬০ পেজে কম্যুনিটি নিয়েই লেখা শুধু। তাই কিছুটা একঘেয়েমি লেগেছে। তবে ডিসেম্বরের অনুষ্টানের পর জমে আসল কাহিনী। প্রথমে তো ভয় পেয়ে গেছিলাম যখন জোনাসকে কোনো অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছিল না। কিন্তু টুইস্ট তো বাকি…
বইয়ের প্লট খুব একটা ইউনিক না। সাধারণত সায়েন্স ফিকশন বইয়ের প্লট যেমন হয় উন্নত সমাজব্যবস্থা তারপর বের হয়ে আসে একের পর এক খুঁত তেমনটাই। তবে প্ল্যানিং, অভিযানই আসলে কাহিনীর প্রাণ বলা যায়। রোজমেরির বিষয়টা বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। ❝ছেড়ে দেওয়া❞- র মানে কি আগেই ধরতে পেরেছিলো কিনা এ বিষয়টা ধোঁয়াশা। রিসিভার হওয়ার জন্য ঘোলা চোখ কোনোভাবে দ্বায়ী কিনা এটা ঠিক পরিষ্কার না আর হলে কীভাবে। গিভার আর রিসিভার কীভাবে মেমোরি ট্রান্সফার করছে শুধু তারই কেন পারছে? এসবের জবাব দেওয়া হয়নি নাকি পরবর্তী বইয়ে আছে সন্দিহান। যেহেতু কাহিনী শেষ হয়নি। বলতে গেলে আসল অভিযান তো জাস্ট শুরু। গিভার-রিসিভারের মধ্যে ইন্টারএ্যাকশন, জোনাস-গ্যাব্রিয়েলের অভিযান সেরা অংশ। বইয়ের কিছু শব্দের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে একদম শেষে কিন্তু শব্দগুলো চিহ্নিত করা নেই। করা থাকলে ভালো হতো। আমি নিজেই বিষয়টা ধরতে পেরেছি কিছুদূর যাওয়ার পর। তার আগ পর্যন্ত শব্দগুলোর মানে বুঝতে ভালোই মাথা ঘামাতে হয়েছে।
একটা মজার জিনিস বলি দ্য গিভার প্রথম পাবলিশ হয় ১৯৯৩ সালে তো সে সময়কার অনেক ফিকশন এখন কিন্তু রিয়েলিটি। ভবিষ্যতে হবে বলে ধরে নেওয়া কিছু বিষয় বর্তমানে কিন্তু হয়েও গেছে। সায়েন্স ফিকশনের এইদিকটা ভালো লাগে আমার যখন ভবিষ্যৎ অনুমান মিলে যায়।
● লেখনশৈলী ও বর্ণনা —
লোইস লোওরি লেখেনই মূলত কিশোরদের জন্য, বিষয়টা সহজেই ধরা যায় স্টোরি টেলিং স্টাইল দেখে। সহজ লেখনশৈলী। তবে কিছু বিষয়ে ডিটেলিং এর দরকার ছিল। কাহিনীর ধারাবাহিকতা ভালো গেলেছে বেশি। সেম স্পিডে ঘটেছে একের পর এক ঘটনা। ইতি টেনেছেন আস্তেধীরে।
● অনুবাদ —
অনুবাদ বেশ ঝরঝরে। তবে কিছু শব্দচয়ণ কঠিন লেগেছে। পড়তে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে পড়ার সময় একটা প্রশ্ন মনে খচখচ করছিল, অনুবাদ কি পূর্ণাঙ্গ? কিছু জায়গায় মনে হয়েছে কাটছাঁট হয়েছে। এছাড়া আর কোনো কিন্তু নেই।
● চরিত্রায়ন —
ছোট-বড় বেশ কিছু চরিত্র রয়েছে। মূল চরিত্র দুটি গিভার আর রিসিভার। রিসিভার হলো জোনাস তবে গিভারকে পুরো বইয়ে ❝গিভার❞- বলেই সম্বোধন করা হয়েছে। গিভার চরিত্রটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। জোনাসকে যেভাবে প্রোটেকশন দিয়ে গেছে আর তিলেতিলে তারই অগোচরে ট্রেইন করছে! জোনাসকে প্রথমে একরকম দেখানো হলেও পরে যেভাবে বদলে যায়… বিশেষ করে গ্যাব্রিয়েলের প্রতি টান। জোনাসের বাবা-মা, ছোট বোন লিলি। লিলি চরিত্রটা বেশ মজার। জোনাসের বন্ধু অ্যাশার, ফিয়োনা। রোজমেরি, এই চরিত্র নিয়ে আরও কিছু থাকলে ভালো হতো। হঠাৎ যেভাবে বদলে গেল!
● প্রোডাকশন —
প্রোডাকশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ আমার কাছে বইয়ের বাঁধাই। আরামসে পেজ উল্টিয়ে পড়া না গেলে পড়ার মজা অনেকাংশেই কমে যায়। তাই প্রথমেই বলি বাঁধাই নিয়ে, এককথায় স্মুথ সাথে মজবুত। পেজ, হার্ডকভারের মানও যথেষ্ট ভালো। তবে বইয়ের জ্যাকেট আর একটু মোটা হলে ভালো হয়। তাহলে সহজেই ভাঁজ পড়ে না। বই থেকে আলগা করা, খুলে পড়া গেছে। এতে অবশ্য পড়ার সময় কোনো ভাঁজ পড়ার ভয় নেই।
● বানান ও সম্পাদনা —
বানান ভুল, টাইপিং মিস্টেকের পরিমাণ অল্পই বলা চলে। তবে একই শব্দের বানান ভুল হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়, বিশেষ করে এনজিনিয়ার(ইঞ্জিনিয়ার)। আবার কিছু জায়গায় ❝ো❞- এর বদলে ❝ে❞ দেওয়া। কিছু শব্দে অক্ষরের হেরফের আছে।
আপেলেই(আপেলের/৩৩), ঝামেলঅ(ঝামেলা/৩৫), সামরে(সামনে/৪৫), ঢাকা(ডাকা/৫৮), কাই(তাই/৮৮); এমন আরও শব্দ আছে।
একই শব্দের রিপিটেশন –
১৯- সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফিসফিস করেন যে এখন তার মন এখন শান্ত।
৪৪- মাথা(মা) মাথা ঝোঁকান।
৯৬- পরামর্শ পরামর্শ দিতে হবে।
১৩৯- একটা বিষয় আমার কাছে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে।
বিরামচিহ্নেও ভুল আছে টুকিটাকি।
কিছু বাক্যে সম্পাদনার দরকার ছিল বলে মনে হয়েছে। একই শব্দের একাধিক সমার্থক থাকে তবে সব শব্দই আমাদের জানা না। তো এই না জানা শব্দের বদলে সচারাচর আমরা যে শব্দগুলো জানি বা ব্যাবহার করি সেগুলো ব্যবহার করলে ভালো হয়।
বইয়ে হঠাৎই কিছু পেজে লেখার ফ্রন্ট সাইজ ছোট হয়ে গেছে। তো আবার একই পেজে বড়ছোট ফ্রন্ট। পরপর ছোট-বড় ফ্রন্ট চোখে লাগে।
● প্রচ্ছদ ও নামলিপি —
প্রচ্ছদে নামলিপির স্টাইলটা বেশ ভালো লেগেছে, ইউনিক। অনেকাংশ জুড়েই করা। প্রচ্ছদ অথেনটিক, কাহিনীর প্লট ভালোই ফুটেছে। কালার কম্বিনেশনটাও দারুণ।
একসময় যে পরিমাণে সায়েন্স ফিকশন পড়া হতো তা কয়েকবছরের গ্যাপে অনেকটাই কমেছে। এখন ভাবতেও অবাক লাগে তখন বই বলতে শুধু সায়েন্স ফিকশনই কিনতাম। ❝দ্য গিভার❞ পড়ার পর সে ঝোঁক আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এখন সিরিজের বাকি বইগুলোর অপেক্ষা। নিঃসন্দেহে চমৎকার একটা সিরিজ। আশা করি পরবর্তী বইগুলোতে অনুবাদ ও সম্পাদনার প্রতি আরও একটু নজর দেওয়া হবে।
#দ্য গিভার বাংলা অনুবাদ বই