দ্বীপরাষ্ট্র মার্টিন লেখক : স্বপ্নীল শাকিল | পাঠক অনুভূতি!

বইয়ের নাম: দ্বীপরাষ্ট্র মার্টিন
লেখক: স্বপ্নীল শাকিল

‘ঘুণপোকা’ এই কাঠখেকো পতঙ্গটির নাম শুনলে আমাদের চোখের সামনে সবার আগে যেটা ভেসে ওঠে, তা হলো একটা ধ্বংসচিত্র। ঘুণপোকারা কাঠ গর্ত করে এবং তা খেয়ে বেঁচে থাকে। তাই মানুষের কাছে এরা হয়ে উঠেছে ধ্বংসের প্রতীক। আজ আমাদের চারপাশে ঘুণপোকা মানুষের অভাব নেই। রাজনীতির দিকে তাকান, রাজনীতি এখন মুনাফা ও বানিজ্যের হাতিয়ার। আগে জনস্বার্থে রাজনীতিতে এসে সম্পদ খোয়াতেন আনন্দেরচিত্রে। এখন অন্যের সম্পদ কেড়ে নিয়ে সম্পদ বানানোর সবচেয়ে পথ হচ্ছে রাজনীতি। এখন রাজনীতি হলো স্বজনপ্রীতি, আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হত্যা, বোমাবাজি, সন্ত্রাস ইত্যাদির সমার্থক। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেও চলছে ঘুণপোকার দৌরাত্ম্য। শিক্ষকরা এখন ভোগবাদী, পুঁজিবাদী চিন্তার ধারক-বাহক। শিক্ষকরা মনে করেন, ক্লাসরুমে শিক্ষা দেওয়া মানেই হলো আর্থিকভাবে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। তাই তারা ক্লাসরুমে সময় দেওয়ার পরিবর্তে প্রাইভেট পড়ানো ও কোচিং ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। চিকিৎসা আমাদের মৌলিক অধিকার, অথচ চিকিৎসার নামে চলছে রমরমা বানিজ্য। সকালে যে ডাক্তার রোগী দেখছেন ৫০০ টাকা ফি নিয়ে, বিকেলেই তিনি হয়ে উঠছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং রোগী প্রতি ফি নিচ্ছেন দেড় হাজার। আমাদের সংস্কৃতিতেও বাসা বেঁধেছে ঘুণপোকা। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের বাংলা ভাষার অবমাননা চলছে দেদার। কর্মক্ষেত্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উচ্চ আদালত এবং উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সর্বক্ষেত্রেই বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলা চলছে। আমাদের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আমরা ইংরেজিতে বা ইংরেজি মিশ্রিত বাংলায় কথা বলতে আমরা স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। বাংলা-ইংরেজির সংমিশ্রণে এমন এক ভাষা তৈরি করছি, যার মাধ্যমে করে চলেছি বাংলাকে অপমান। তারমানে ভাষার প্রতি আমাদের যে প্রেম ছিলো, যে ভাষার জন্য বাঙালি রক্ত দিয়েছিল, তাতেও আজ ঘুণ গেছে। অর্থাৎ আমাদের দেহ-মন, বিবেক, সংসার, সমাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা, রাজনীতি, সংস্কৃতি এমনকি রাষ্ট্রে ঘুণপোকা বাসা বেঁধেছে। কখনও সশব্দে আর কখনও নিঃশব্দে খেয়ে যাচ্ছে।

 

বইয়ের পছন্দের কথাগুলো 📖🖍️

১. আমাদের জীবন জটিল নয়, আমরাই জীবনকে জটিল করে ফেলি জটিলভাবে ফেলে। কিন্তু, জীবন সহজ।

২. জন্ম নেওয়ার পর থেকেই আমাদের মানবজীবনের যুদ্ধ শুরু হয়, বড় হওয়ার যুদ্ধ, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর যুদ্ধ, চূরান্ত পর্যায়ে পৌছানোর যুদ্ধ।

৩. অভিযোগ যখন তাড়া করে বেড়ায় তখন তাকে প্রশ্রয় না দিয়ে নিজেকে নিজের আয়না হয়ে সমঝোতায় ফেরাও। একা একা পথের চারপাশটা দেখো, শেখো, দেখবে অভিযোগ উধাও। কারণ, অভিযোগ তার হয় যে একা চলতে পারে না। যে একা পথ চলতে পারে তার সময় নেই অভিযোগের বাক্স খুলে বসার।

৪. বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের অন্তর্বত্নী যে নেতিবাচক চিন্তা ও অনুভূতি আমাদের যন্ত্রণা বা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তার নাম সন্দেহ। এ সন্দেহ নামক ঘুণপোকা যার মনের ঘরে আশ্রয় নেয়, তাকে একবারে মানসিক যন্ত্রণার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং নিঃশেষ করে ফেলে।

৫. প্রতিবার ব্যর্থতা তোমাকে যা কিছু শিক্ষা দেয়, তা যেন তোমাকে সাফল্যের পথেই এগিয়ে নিয়ে যায়!

৬. দুঃসময়ে কেউ পাশে নেই বলে, দুঃখ করবে না। তোমারও সুদিন আসবে, প্রয়োজন শুধু অপেক্ষার!

৭. মানুষ স্বর্ণকেও সন্দেহ করে, সুতরাং সবাই আপনাকে ভালো ভাববে এই আশা কখনোই করবেন না।

৮. তুমি যা পেয়েছ, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো। যা কিছু অতিরিক্ত চাইবে, তাই তোমার অসুখের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

৯. একটি সফলতা থেকে তুমি যা শিখবে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শিখতে পারবে একটি ব্যর্থতা থেকে। সুতরাং ব্যর্থ হওয়া মানেই হেরে যাওয়া নয়।

১০. অতীতের কোনোকিছুর জন্য দুঃখ না করে, পেছনে না তাকিয়ে সময়ের সাথে ঘুরে দাঁড়ানোর নামই জীবন।

১১. এই পৃথিবীতে কোনোকিছুই অসম্ভব নয়। কেবল আমরা চেষ্টা না করার কারণে অসম্ভব বলে মনে হয়।

 

বইটির মধ্যে লেখক পাঠকের এবং সমাজের মানুষগুলোর মস্তিষ্কের উন্নতি এবং শিষ্টাচার নিয়ে নিখুঁত ভাবে তুলে ধরেছেন, বইটি নতুন এক চিন্তার জন্ম দিবে পাঠকের মস্তিষ্কে। আর নিজেকে জানার যাত্রায় করে যাবে আহবান।

Leave a Reply 0

Your email address will not be published. Required fields are marked *