Post ID 111409
বই: ভালোবাসা পেতে হলে
লেখক: মাসুদা সুলতানা রুমি
প্রকাশক: বদ্বীপ প্রকাশন
পৃষ্ঠা: ৩১
ভূমিকা:
আমরা প্রতিটি মানুষ প্রকৃতপক্ষে স্নেহ, মায়া মমতা দরদ ভালোবাসায় টইটম্বুর এক একটা ডিব্বা। কথা হলো এই ভালোবাসা, মহব্বত কারো দৃশ্যমান আর কারো জীবনভর অদৃশ্যই থেকে যায়। পৃথিবীতে মানবজীবন ও পরিবেশ উভয়টাই টিকে আছে এক মহনীয় মমতায়, নিবিড় ভালোবাসায়~ এক আত্মীক মায়ার বন্ধনে। পৃথিবীর যে কোনো সম্পর্কের মূল ভিত্তিই হলো ভালোবাসা, দয়া মায়া, স্নেহ। এসব না থাকলে জীবন হয়ে উঠতো মরুময় প্রান্তরের মতো অসহ্য, অসহনীয়।
কিন্তু সব মানুষের জীবনে কি কাঙ্খিত ভালোবাসা পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে? সবাই কি তার কাছের ও চারপাশের মানুষগুলোকে সমানভাবে ভালোবাসতে পারে? যদি তাই হয় তাহলে আমাদের জীবনে এতো টানাপোড়ন কিসের? এত হাহাকারই বা কেন? এমন সব ছোট ছোট প্রশ্ন ও উত্তর দিয়ে সাজানো ছোট এ বইটি, লেখিকা এখানে খুব সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যন্ত সহজ ও প্রাঞ্জল বর্ণনায় আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন কি করে জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভালোবাসা অর্জন করতে হয়।
#বইটি সম্পর্কে কিছু কথা
পরিবার মানুষের জীবনের সবচেয়ে ছোট ইউনিট কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশান্তির জায়গা। পরিবারের মানুষ গুলোকে নিয়ে পারস্পারিক ভালোবাসা, সুখ শান্তি ও শৃংখলা বজায় রেখে জীবন যাপনের জন্যে প্রয়োজন ত্যাগ (Sacrifice) এবং সমঝোতা (Compromise)। পারিবারিক ও ব্যক্তি জীবনে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অনুশাসন মেনে চলার পরও শুধুমাত্র এ দুটো গুণের অভাবে শত শত পরিবার ও দাম্পত্য জীবন ভেঙ্গে যাচ্ছে। মানব চরিত্রের এ দুটি গুণের অভাবে কি কি ক্ষতি হচ্ছে আমাদের পরিবার ও সমাজে তার বিশদ বর্ণনা দিয়ে লেখিকা বইটি তৈরি করেছেন অত্যন্ত যত্নসহকারে।
কিভাবে ভালোবাসা পাওয়া যাবে, ভালোবাসার তদবির, শুধু Sacrifice~এর অভাবেই ভেঙ্গে গেলো সংসার, মেয়েদের পছন্দের মূল্য, এই দেশের এক জামিলা, সম্পদের জন্যে চরম অন্যায় করা, বোনদের সব সম্পত্তি এক ভাইকে দিয়ে দেয়া, শাশুড়ি পুত্রবধুর মধ্যে ভালোবাসার অভাব, আল্লাহর বিধান পালনের ক্ষেত্রে কোনো Sacrifice বা Compromise নেই ~~~~~~ এরকম ১৫ টি বিষয় দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা অসংগতি ও সমস্যা তুলে ধরে আলোচনা করা হয়েছে এবং এ থেকে উত্তোরণের উপায় আলোকপাত করা হয়েছে। লেখায় ভাষার সরল ও প্রাঞ্জল বর্ণনা সহজেই যে কোনো পাঠকের বোধগম্য হবে বলে আমার বিশ্বাস। ৩১ পৃষ্ঠার ছোট বই কিন্তু এর শিক্ষা ও ব্যাপ্তী অনেক গভীর।
লেখিকা উপমহাদেশের প্রায় প্রতিটি পরিবার ও সমাজের বাস্তব চিত্র দারুণ ভাবে তার লেখনিতে তুলে ধরেছেন। বইটি শুধু নারী কিংবা পুরুষ এর জন্যে নয়, আবার এটা শুধু মুসলিম কিংবা খ্রিষ্টানদের জন্যেও নয়, সকল মানুষের জন্যেই এতে কিছু না কিছু প্রাপ্তির জায়গা রয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। তাই বইটি হতে পারে কারো জন্যে টনিক আবার কারো জন্যে এন্টিবায়োটিক।
শেষ কথা: দুনিয়ার এই সফর শেষ করে ফিরে যেতে হবে আমাদের সবাইকে মহান মালিকের দরবারে, পরীক্ষা দিতে হবে সবাইকে। আর এ সুদীর্ঘ সফরে ভালোবাসা~মহব্বত ই তো একমাত্র মূলধন আমাদের। আর মানুষের ভালোবাসা পেতে হলেও আল্লাহকে ভালোবাসতে হয় সবার আগে। স্নেহ, মায়া মমতা ভালোবাসা এসব ছাড়া মানব জীবন মরুময় প্রান্তরের মতো অসহ্য অসহনীয় হয়ে উঠতো।
তাই জীবনে সুখ শান্তি ও শৃংখলা বজায় রাখতে হলে আমাদেরকে মানবীয় গুণাবলী তথা ভালোবাসার চাষাবাদ করতে হবে, চর্চা ও অনুশীলন করতে হবে, আমাদের প্রত্যেককে ভূমিকা পালন করতে একজন যত্নশীল দক্ষ কৃষকের মতো, তাহলে ই আমরা সুন্দর সুস্থ একটি পৃথিবী পাবো।
যাদের অধ্যয়ন কিংবা পড়ার অভ্যাস নেই, তারা মাসুদা সুলতানা রুমির এই বইটি দিয়ে শুরু করতে পারেন, বিশ্বাস করুন বঞ্চিত হবেন না এক চিলতেও। আমার পড়ার হাতেখড়িও হয়েছে মাসুদা সুলতানা রুমী’র বই দিয়েই। ছোট এই বইটি আপনার চিন্তার জগতে ঝড় তুলবে, আপনাকে নতুন করে ভাবতে শেখাবে। আপনার অন্তর সাড়া না দিয়ে যাবে কোথায়?
বাংলাদেশের মহিলা লেখকদের মধ্যে ক’জনা এত দরদ দিয়ে লিখতে পারে, আমার সঠিক জানা নেই। তবে আমার মতে তার মতো খুব বেশি কেউ নেই।
তার লেখার মধ্যে যত বই আছে, এইটা তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখা। এই বইটি আমাদের শেখায় কিভাবে নিজেকে, পরিবার~পরিজন, আত্মীয়~স্বজন, পাড়া~প্রতিবেশি, বন্ধু~বান্ধবী, দীনি ভাই বোন, দেশ~ কে ভালোবাসতে হয়, শ্রদ্ধা করতে হয়, স্নেহ করতে হয়।
পরিশেষে প্রার্থনা, হে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আপনি আমাদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা বাড়িয়ে দিন, আমাদের জ্ঞান অর্জনের পথকে সহজ করে দিন, আমাদেরকে সালেহ, মুত্তাকি ও মুকাররাবিনদের সাথিত্ব দান করুন, আমাদের সকল প্রচেষ্টাকে কবুল করে নিন।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?