Post ID 1114502
বইঃ পড়তে ভালোবাসি
লেখকঃ ড. রাগিব সারজানি
অনুবাদকঃ শামীম আহমাদ
সম্পাদনাঃ আলী হাসান উসামা
প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল হাসান
মূল্যঃ ৬০ টাকা (গায়ের দাম)
শেলফ থেকে একটা বই নামালেন। নামটা দেখলেন, মলাট ওল্টালেন, হুটহাট করে পাতার পর পাতা উলটে গেলেন। কিছুক্ষণ “টাইম পাস” করার পর ঠুস করে ফেলেও দিলেন। তারপর একখানা ছবি তুলে ফেসবুকে ক্যাপশন দিয়ে দিলেন, “রিডিং…………”।
সত্যিই? এটাই কি বই পড়া? আর যে যাইই বলুন না কেন, ডক্টর রাগিব সারজানি আপনার সাথে একমত হবেন না। পড়া এমন কোন কাজ নয় যা হুটহাট শুরু করা যায় আর ঠুসঠাস শেষ করে ফেলা যায়। পড়া হচ্ছে একটা আর্ট, একটা চমৎকার শিল্প। পড়তে জানতে হয়, পড়াকে ভালোবাসতে হয়। কেন পড়তে হবে, কি পড়তে হবে, কিভাবে পড়তে হবে, কিভাবে পড়াকে ভালোবাসা যাবে – এই সবকিছু নিয়েই বিখ্যাত ঐতিহাসিক ডক্টর রাগিব সারজানি সাজিয়েছেন ছোট্ট অথচ অসাধারণ কিছু কথামালায় ভরপুর “পড়তে ভালোবাসি” বইটি।
লেখক পরিচিতিঃ
ডক্টর রাগিব সারজানি। মিসরের মানুষ, জন্মেছেন ১৯৬৪ তে। একজন ‘আলিম, বিদগ্ধ ইতিহাসবিদ। একজন ডাক্তার হয়েও ইতিহাসের ওপর তাঁর দখল ঈর্ষণীয়। ১৯৮৮ তে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর কুর’আন হিফজ করেছেন। ইতিহাস ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে তাঁর ৫৬টি বই প্রকাশ হয়েছে এ পর্যন্ত। জানামতে, বাংলায় তাঁর তিনটি ইতিহাস গ্রন্থ এখন পর্যন্ত অনুদিত হয়ে এসেছে। তাতারীদের ইতিহাস, স্পেনের ইতিহাস, তিউনিসিয়ার ইতিহাস তিনটি বইই ইতিহাস প্রেমীদের কাছে বহুল সমাদৃত।
বই পরিচিতিঃ
“পড়তে ভালোবাসি” বই পড়ার জন্য চমৎকার এক গাইডলাইন। সূচির দিকে একবার নজর বুলালেই বইয়ের ভেতর লুকানো রত্ন সম্পর্কে পাঠক একটা আন্দাজ পেয়ে যাবেন।
অনুবাদকের “পড়া নিয়ে কিছুকথা”র পর থেকে ডক্টরের কলমের আঁচড় শুরু। প্রথম থেকেই পাঠককে যুগপৎ মুগ্ধতা ও চেতনায় ধাক্কা দেওয়া লেখনী উপহার দিয়ে গেছেন ডক্টর। “জীবনের জন্য পড়া” শিরোনামে এই অধ্যায়ে বলে গেছেন এমন মৌলিক কিছু কথা, যা প্রতিটি মুসলিমের জন্য হতে পারে জীবন পথের পাথেয়। পড়াটাকে যে কোন শখ হিসেবেও নেয়া যেতে পারে না, সেটা প্রথমবারের মত অনুভব করেছি এই অধ্যায়টুকু পড়ার পর। খাওয়া, ঘুমানোর মতই পড়াও যে আমাদের, বিশেষ করে একজন মুসলিমের জীবনে অনিবার্য, সেটা যেন শাইখ চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিলেন। “সিরাত থেকে প্রথম শিক্ষা” ও “সিরাত থেকে দ্বিতীয় শিক্ষা” এই দুই শিরোনামে শাইখ এমন কিছু অসাধারণ সত্য আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন, যা এক বাক্যে প্রকাশ করতে ভাষা দুর্বল হয়ে পড়ে। একজন মুসলিমের জীবনে “পড়া” নামক কাজটির মূল্য, প্রয়োজনীয়তা যে কোন লেভেলের সেটা বোধহয় এর চেয়ে সহজ সরল আর দ্ব্যর্থহীন ভঙ্গিতে বলা সম্ভব নয়। “দুটো সমস্যা ও সমাধান” শিরোনামে শাইখ আলোচনা করেছেন পড়তে অনভ্যস্ততা আর লক্ষ্যহীন পড়া এই দুটো সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। এর মাধ্যমেই সমাপ্তি ঘটেছে বইয়ের প্রথমাংশের।
বইয়ের পরবর্তী অংশে শায়খ সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন অসাধারণ দশটি পদ্ধতির, যেগুলো আমাদেরকে ইনশাআল্লাহ শেখাবে কিভাবে পড়াকে ভালোবাসতে হয়। “পড়াকে ভালোবাসতে শেখার পদ্ধতি” এই শিরোনামে শাইখ সারজানি দশটি উপশিরোনামের অধীনে বাতলে দিয়েছেন পড়ার সাথে গাঁটছড়া বাঁধার কিছু দাওয়াই। এই দশটি পদ্ধতির মধ্যে লক্ষ্যের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা, পারিবারিক পাঠাগার গড়া আর পড়ার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা এই তিনটি পদ্ধতি ভালো লেগেছে সবচেয়ে বেশি। মাত্র তেরো পৃষ্ঠাব্যাপী সংক্ষিপ্ত এই দাওয়াইকে সঠিকভাবে গিলতে পারলে আশা করা যায় পড়ার সাথে যে কারো প্রেম হয়ে যাবে!
বইয়ের শেষাংশ আগের অংশগুলো থেকে আসা জ্ঞানমুগ্ধতার ধারা বজায় রেখেছে নিষ্ঠার সাথে। “কী পড়ব” এই শিরোনামের অধীনে অধ্যায়টিতে শাইখ বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেছেন। পড়াশোনার দশটি মৌলিক বিষয়ের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত অথচ সারগর্ভ আলোচনা উপস্থাপন করেছেন দশটি উপশিরোনামে। লিস্টের প্রথমেই উল্লেখ করেছেন আল্লাহর কিতাবের কথা। তারপর পর্যায়ক্রমে এসেছে হাদীস, ফিকহ, নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের বিশেষ জ্ঞান অর্জন করার কথা। অনিবার্যভাবে এসেছে ইতিহাস পাঠের কথা, আজকের দিনে সবচেয়ে অবহেলিত বিষয়ের একটি। বিশ্বের সমকালীন ঘটনা, বিভিন্ন মতবাদ, ইসলামের ব্যাপারে অপপ্রচার ও তার প্রতিরোধ, শিশুবিষয়ক ও চিত্তবনোদনমূলক লেখা পাঠের ব্যাপারেও সুন্দর আলোচনা করেছেন শাইখ।
কেন পড়বেনঃ
খুব সম্ভব অতিকায় কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়বে না এই বইটি কেন পড়ব সেটা বোঝাতে। বরং কেন এই বইটি পড়বেন না সে ব্যাপারেই আমি আপনার কাছে কৈফিয়ত চাইতে পারি। মাত্র ৫৬ পৃষ্ঠার ভেতর এত এত মণিমুক্তার সন্ধান তাও আবার একজন এক্সপার্টের কাছ থেকে, আপনি আর কোথায় পাবেন বলুন তো? আমি প্রতিটি পাঠককে, প্রতিটি মুসলিম ভাই বোনকে অনুরোধ করব অন্তত বইয়ের প্রথম পাঠটুকু পড়ার। এরপরে খুব সম্ভবত বোঝার বাকি থাকবে না কেন এই বইটি পড়তে হবে, পড়তেই হবে।
বইয়ের ব্যাপারে দুটো কথা বলি। মাকতাবাতুল হাসানকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। মানসম্পন্ন বই উপহার দিয়ে যাবার জন্য আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান পাবেন, সেই আশাই রাখি। অনুবাদক ও সম্পাদক ভাই দুজনেরই যত্নের ছাপ বইয়ে স্পষ্ট। ছোটখাটো দু’একটা বানান ভুল অবশ্য চোখে পড়েছে, যেটা ছাড় দেওয়াই যায়। অঙ্গসজ্জা, প্রচ্ছদ, কাগজের মান, ফন্ট, হেডিং, সাবহেডিং কোনটা নিয়েই অভিযোগ করার মত কিছু চোখে পড়েনি, আলহামদুলিল্লাহ। জাস্ট সূচিপত্রের উপস্থাপনটা আরেকটু সুন্দর হতে পারতো বলে মনে হয় আমার। আল্লাহ এই বইয়ের লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক, প্রকাশক ও আরো যেসব মানুষ বইটির সাথে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে জড়িয়ে আছেন, তাদের সবাইকে জাযায়ে খাইর দান করুন আর আমাদের অন্তরে জ্ঞানের প্রতি, জ্ঞান আহরণের বাহন পড়ার প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা, আগ্রহ আর টান সৃষ্টি করে দিন – মহান রাব্বের দরবারে এই আরজিটুকুই থাকলো। পড়ুন, পড়াকে ভালোবাসুন।
বইটি পেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন ।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?