সময়ের মূল্যায়নের জন্য আমাদের পূর্বসূরিরা কতো কিছুই না করতেন?

Post ID 1114532

আমরা সুসময়ের মূল্যায়ন, সুস্বাস্থ্যের মূল্যায়ন,অবসরের মূল্যায়ন,বেঁচে থাকার মূল্যায়ন কোনটাই ঠিকমত করতে পারি না।

সময়ের মূল্যায়নের জন্য আমাদের পূর্বসূরি রা কি করতেন সে বিষয়ের কিছু উদাহরন দেখা যাক।
হযরত ছিররী (রহ.) বলেন, আমি হযরত জুরজানী (রহ.) কে ছাতু খেতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
“আপনি এভাবে শুকনো ছাতু খাচ্ছেন!
তিনি বললেন, ‘রুটি চিবিয়ে খাওয়া এবং এভাবে ছাতু খাওয়ার মধ্যে আমি হিসেব করেছি যে, রুটি খেতে সময় বেশি খরচ হয়! 
আর যে অতিরিক্ত সময় খরচ হয়, ওই সময়টাতে একজন মানুষ সত্তরবার سُبْحَانَ الله 
পড়তে পারে। এ’জন্য-ই আমি চল্লিশ বৎসর যাবৎ রুটি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। ছাতু খেয়ে-ই জীবন অতিবাহিত করি, আর যিকিরে মশগুল থাকি!”
অথচ আমরা কি করি?রুটি,পরোটা,মোঘলাই, পোলাও,কোর্মা,রোস্ট ইত্যাদি যত ধরনের খাবারের আইটেম আছে সবই করতে চাই।রুটি না খেলে হবেই না। রুটিই লাগবে।উদাহরনের জন্য শুধু রুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।রুটি কিংবা অন্যান্য খাবার বানানো যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ বিষয়।যেসব খাদ্য তৈরিতে সময় বেশি, পরিশ্রম বেশি ইচ্ছা করলেই কিন্তু সে খাবারের পরিবর্তে আমরা অন্য কিছু খেয়ে নিতে পারি। কিন্তু আমরা সেটা করতে নারাজ।মানুষ যদি সারাদিন রান্না করতে,ঘরের কাজ করতে ব্যস্ত থাকে তাহলে তো তার জন্য ব্যক্তিগত কোন কাজ করার সময় থাকবে না। অথচ আমরা এই সবকিছু কে মনে করি প্রকৃত জীবনযাপন। 
যত সহজে,যত শর্টকার্ট পদ্ধতিতে কাজ শেষ করা যাবে নিজের জন্য তত সময় পাওয়া যাবে।এজন্য অবশ্যই পরিবার পরিজনের সহায়তা থাকতে হবে।নিজের জন্য যদি সময়ই না পাওয়া যায় তাহলে অন্য কিছু করার সুযোগ থাকার তো প্রশ্নই উঠে না।
অনেকেই আছেন কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার পথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিয়ে সময় পার করে দেন।অথচ এই সময়টায় বইয়ের দুটো পাতা অন্তত পড়া যেত।একটু খানি নিজেকে নিয়ে চিন্তা ভাবনার সুযোগ পাওয়া যেত।এই যে নিজের জন্য ভাবা,নিজেকে জানার সুযোগ দেয়া,নিজের জন্য করা মূলত এসব কিছুই আমাদের নিজেদের জন্য থাকবে।
দুনিয়াবি কাজকর্ম দিনশেষে, জীবন শেষে সব শেষ হয়ে গেলেও, শত ব্যস্ততার মাঝে কাজ শর্টকার্ট করে দু দন্ড সময়ে নিজের জন্য যতটুকু করা হয়েছে ততটুকুন ই সাথে যাবে।এই যে নিজের জন্য ভাবতে শেখা এটা স্বার্থপরতা না,বরং এই চিন্তা ভাবনা নিজের জন্য, অন্যের জন্য,সবার জন্য মঙ্গলকর। 
.
.
একটু সময় সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য চলুন দেখি মনসুর ইবনে মোতামির,রবী ইবনে হায়ছাম রঃ কি করতেন।
মনসুর ইবনে মোতামির (রহ.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর এশার নামাযের পর কারো সাথে কথা বলেন নি।
রবী ইবনে হায়ছাম (রহ.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে,দীর্ঘ বিশ বছর তিনি যেসব কথা বলতেন তা একটি কাগজে লিখে রাখতেন এবং রাতে বসে তিনি সারা দিনের স্বীয় কৃত কথা-কাজের হিসেব মিলাতেন যে, কয়টা কথা প্রয়োজনীয় ছিলো আর কয়টা কথা অপ্রয়োজনীয় ছিলো।
আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ এভাবেই নিজেরা নিজেদের সময়ের কড়ায় গন্ডায় হিসেব নিতেন।আর আমরা জীবনের যতটুকু সময় অতিবাহিত করেছি ততটুকু সময়ে তুলনা মূলকভাবে রবের বন্দেগী কতটুকু করেছি?
যত দিন যাচ্ছে পৃথিবীতে আমাদের জন্য বেঁচে থাকার দিনগুলো শেষ হয়ে আসছে। আল্লাহর দেয়া সময়, আল্লাহর দেয়া নিয়ামত আল্লাহর জন্যই ব্যয় করা ন্যায় সঙ্গত।যে কাজ শেষ করতে আধঘন্টা লাগবে সেই কাজের বাহানা দিয়েই আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিয়ে সময় টা নষ্ট করে দেই।অপ্রয়োজনে মানুষের কাজ বাড়িয়ে দেই।
একটা মানুষ হতেই পারে সেই সময়টায় অন্য কোন কাজ করতে পারত।নিজের সময় নষ্টের হিসাবের সাথে অন্যের সময় নষ্টের কারন বনে যাওয়ার হিসেব টাও নিজের এইটুকুন কাধে যুক্ত করে বোঝা বাড়ানো নিশ্চয়ই কোন বুদ্ধিমানের কাজ না।
কিয়ামতের দিন এই সময়ের, সুযোগের,এত এত  নিয়ামতের সুযোগ্য ব্যবহারের হিসাব নিকেশ দিতে পারব?নাকি অন্ততকালের জন্য আফসোস ই করে যেতে হবে আমাদের।
(কোন ত্রুটি থাকলে সংশোধনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই জানাবেন। জাজাকাল্লাহু খাইরান..!!) 
বারাকাল্লাহু ফীকুম..! 
======================================
||মূল্যায়ন||
||লিখা: ইফাত জাহান||
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?