গ্রীষ্মের বিকেলে ঝরে পড়া কৃষ্ণচূড়া ১০ম পর্ব ©মারুফ হুসাইন

গ্রীষ্মের বিকেলে ঝরে পড়া কৃষ্ণচূড়া
১০ম পর্ব
©মারুফ হুসাইন
story grismer bikele ghorepora krisnochura by Maruf hossin part 10 গ্রীষ্মের বিকেলে ঝরে পড়া কৃষ্ণচূড়া ১০ম পর্ব ©মারুফ হুসাইন love story Bangla boipaw

শরিফুল ফিরে যায়নি। মেয়েটা এতো রাতে আসবে তাই চলে যাওয়াটা উচিৎ হবে না, তার জন্য বসে রইল৷ 
দশটা বেজে গেছে৷ শরিফুল পিছনেই প্রাইভেটকারটা এসে থামল৷ নূহা গাড়ি থেকে নেমে শহিদকে চলে যেতে বলল।
শরিফুক বিল মিটিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। নূহার পাশে দাঁড়িয়ে তালে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘এতো রাতে আসাটা খুব জরুরী ছিল?’
নূহার কপাল ভাঁজ হয়ে আসে৷ ঠোঁট কামড়ে ধরে চিন্তা করতে থাকে। কয়েক মুহূর্ত ভেবে বলে, ‘হ্যাঁ, খুব জরুরী ছিল। জরুরী না হলে কী আর আসতাম!’
‘এতো রাতে আপনার বাসায় কিছু বলবে না?’
‘এই আপনার বয়স কত?’ শরিফুলের প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই নূহা বলে ওঠে৷
হুট করে নূহার এমন প্রশ্নে শরিফুল বিব্রত হয়। এমন প্রশ্নের মানে খুঁজে পায় না।
‘বয়স বলা লাগবে না৷ আপনি আমার থেকে না হলেও তো দশ বছরের বড়।’ সে শরিফুলের উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলে ফেলে। 
‘আরো বেশিও হতে পারে।’
‘তাহলে আমাকে আপনি করে কেন বলেন? তুমি করে বলবেন!’
‘ছোট হলেই যে তুমি করে বলতে হবে, এমন কোনো কোনো কথা নেই৷’
‘এছাড়া আপনি করে বললে কেমন পর পর লাগে।’
‘আমি আপন কেউ?’ প্রশ্নটা করেই শরিফুল ঠোঁট কামড়ে ধরে৷ এটা জিজ্ঞাসা করা উচিৎ হয়নি। এই জিজ্ঞাসা পিচ্চিটাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়ে গেছে৷ কিন্তু সে না চাইতেও হয়তো মেয়েটাকে তার ভালো লাগতে শুরু করেছে। যা তার কাছে একদমই অনুচিত বলে মনে হচ্ছে৷ 
‘উমম’ চিন্তায় পড়ে যাওয়ার ভাব করে নূহা বলে, ‘হতেও পারেন। আবার নাও হতে পারেন’, বলেই সে শরিফুলের দিকে তাকায়। কথা ঘুরানোর জন্য বলে, ‘এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব? রিকশা ডাকছেন না কেন?’
‘কোথায় যাব?’
‘আপনি রিকশা ডাকুন! তারপর দেখি কোথায় যাওয়া যায়।’
শরিফুল রিকশা ডাক দেয়৷ মেয়েটাকে তার প্রশ্রয় দিতে ইচ্ছা করছে না। আবার এড়িয়েও যেতে পারছে না। নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার এক অদ্ভুত ক্ষমতা রাখে মেয়েটা। কিন্তু এই অদ্ভুত ক্ষমতাটা কী, তা শরিফুল বুঝতে পারে না৷ নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য সে বিশেষ কিছু করে না৷ তবুও শরিফুল আকৃষ্ট হয়। এড়িয়ে যেতে চেয়েও সে মেয়েটাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। তার প্রতি মুগ্ধ হয়। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে, মেয়েটা ও নিজের মন, দুইটার একটাকেও প্রশ্রয় দেয় যাবে না। রিকশায় উঠেই রিকশাওয়ালাকে নূহার বাসার দিকে যেতে বলবে। প্রথমে ভেবেছিল, এখান থেকেই চলে যেতে বলবে। কিন্তু এতো রাতে মেয়েটাকে একলা ছেড়ে দেওয়াটা উচিৎ হবে না বলে বাসা অবধি পৌছে দেয়ার কথা ভাবে। 
‘কী হলো, কী ভাবছেন? আপনি রিকশায় উঠছেন না কেন?’ নূহা রিকশায় উঠে শরিফুলকে উদ্দেশ্য করে বলে।
শরিফুলের ভাবান্তর হয়, ‘কিছু  ভাবছি না!’ বলে উঠে বসে।
‘ধানমন্ডি চলেন!’ শরিফুল রিকশাওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বলে। 
‘ধানমন্ডি কেন?’ নূহা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করে। 
‘আপনার বাসা!’
‘এই না মামা, ধানমন্ডি যাবা না!’ তাড়াহুড়ো করে বলেই নূহা যোগ করে, ‘তোমাকে যা বলেছি, তাই হবে। আগামি দুই ঘন্টার জন্য তোমার রিকশা আমার, আমি যেভাবে বলব সেভাবেই চলবে। এখন যাও রাস্তা যেদিকে যায় সেদিকেই পা বাড়াও!’
শরিফুল কী বলবে খুঁজে পায় না, ‘এতো রাত অবধি বাইরে থাকবেন, আপনাকে কিছু বলবে না?’
‘উম্ম, বললে বলবে। আপনার সাথে ঘুরে একটু বকা খেলেই বা কী!’ হেয়ালি করে বলেই সে যোগ করে, ‘না, আজ বাবা বাসায় আসবেন না। তাই বকা খাওয়ার ভয়ও নেই।’
‘আমার সাথে এভাবে ঘুরতে আপনার ভয় লাগে না?’
‘আপনি বাঘ না ভাল্লুক?’
‘মানুষ। বাঘ-ভাল্লুকের চেয়েও ভয়ংকর প্রাণী।’
‘তা হতে পারে৷ কিন্তু আমার ভয় করছে না।’ বলে শরিফুলের দিকে তাকায়। মোলায়েম স্বরে বলে, ‘বরং সাহস পাচ্ছি৷ ভরসা পাচ্ছি৷ মনে হচ্ছে, আপনি পাশে থাকলে আমার আর কোনো কিছুর ভয় নেই।’
শরিফুল আর কোনো উত্তর খুঁজে পায় না৷ মেয়েটা তাকে এভাবে ভরসা কর‍তে শুরু করেছে, ভাবতেই তার ভয় হয়৷ সে আর কারো ভরসা হতে চায় না। 
শরিফুল মোবাইল বের করে ঘড়ি দেখে, সাড়ে দশটা বাজে। রিকশা চলছে৷ রাতের শহর শরিফুলের চেনা৷ কোনো গন্তব্য ছাড়া প্রায় একা একা হেঁটে বেড়ায়। কিন্তু রিকশায় ঘুরে বেড়ানো হয় না অনেক দিন হলো৷ শেষ মুনার সাথে রিকশায় করে রাতের শহরে ঘুরে বেড়িয়েছিল। আজ বহু বছর পর, গন্তব্য ছাড়া কোনো মেয়ের সাথে রিকশায় করে ঘুরছে৷ আগেও একদিন নূহার সাথে রিকশায় চড়েছিল। তবে সেদিন কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া গন্তব্য ছিল, টিএসসি। সেদিন তার ভিতরে কোনো অনুভূতির দেখা পায়নি। একজন চেয়েছিল বলে তার সাথে গিয়েছে। কিন্তু আজ তার ভিতরে সংঘাত চলছে৷ একাধিক সংঘাত।
নূহার সাথে ঘুরতে তার মন্দ লাগছে না৷ কিন্তু এই মেয়েটাকে সে প্রশ্রয় দিতে চায় না৷ সে নিজের সাথে কাউকে জড়াতে চায় না। রিকশায় পাশাপাশি বসে তার স্পর্শ হলেই আবার মুনার কথা মনে পড়ছে তার৷ তখন ভিতরটা হাহাকার করে ওঠছে৷ মনে হচ্ছে, এমন না হলেও তো পারত। 
‘আপনি কী ভাবছেন এতো?’ নূহার বাহুর মৃদু ধাক্কায় শরিফুলের ভাবান্তর হয়। 
‘না, কিছু ভাবছি না।’
‘জানি ভাবছেন। না চাইলে বলতে হবে না।’
শরিফুল কোনো উত্তর দেয় না৷ রিকশা এগিয়ে চলছে। রিকশার পিঠে বসে আছে জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াতে চাওয়া এক যুবক। আর স্বপ্ন বুনতে থাকা এক কিশোরী৷ যাদের আপাদত কোনো গন্তব্য নেই। তারা কোথায় যেতে চাচ্ছে, কী করতে চাচ্ছে, জানে না।  রিকশা এগিয়ে চলছে। রিকশার পিঠে বসে থাকা যুগলের মুখে কোনো কথা নেই৷ নূহা ধীরে ধীরে হাত এগিয়ে দেয়। শরিফুলের হাতে হাত রাখতে ইচ্ছে করছে৷ কিন্তু সে সাহস করে উঠতে পারছে না৷ হাতে হাত রাখবে কিনা দ্বিধায় ভুগতে থাকে৷ সাহস জমিয়ে একটু একটু করে হাত বাড়াতে থাকে।
চলবে……
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?