বইঃ জননীদের জীবনকথা pdf download মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ | Jononider Jibonkotha By Muhammad Mamunur Rashid

মাতৃহীন পৃথিবী অবশ্যই অশ্রুময় । আমরা যারা পরে পৃথিবীতে এসেছি , তারা তো জন্মপূর্ব থেকে এবং জন্ম থেকে ওই অশ্রুময়তার বিষণ্ণ চাদর দ্বারা আমাদের সত্তাগুলোকে আবৃত করে আছি । আর আমরা একথাও জানি যে , আমাদের অশ্রুময়তার অবসান এখানে ঘটবে না । আমরা আমাদের কৈশোর যৌবন প্রৌঢ়ত্ব বৃদ্ধত্ব একে একে পার হয়ে যাবো কিন্তু মাতৃমিলনের শুভক্ষণ কখনো পাবো না । – | একজন মানুষের সামনে আর কোন্ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা থাকে— মৃত্যু ছাড়া ? অথচ সবচেয়ে বেশী স্পষ্ট এই কথাটা আমাদের মনে থাকে না । 

Image
মৃত্যুর পরেও রয়েছে ভয়াবহ সব ঘটনা । সমাধির প্রশ্নোত্তর পর্ব , মহাপ্রলয় , মহাপুনরুত্থান , মহাবিচারপর্ব , হিসাব , মীযান , পুলসিরাত , চিরস্থায়ী জীবনের স্থান নির্ধারণ । ওই সময় পাপিষ্ঠদের পাশে তাদের জন্য ক্ষমা ও অনুগ্রহের আর্তি নিয়ে যিনি দণ্ডায়মান হবেন , তিনিই যে আমাদের আপনতম ও প্রিয়তম— এই কথাটা কি বিশ্বাসবান ও বিশ্বাসবতীদেরকে মনে রাখতে হবে না ? ও আমাদের সকল খ্যাতি ও কৃতি , অর্জন ও উপার্জন ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে প্রবৃত্তিপিষ্টতার কারণে , পৃথিবীপ্রসক্তির কারণে এবং শয়তানের প্ররোচনাপ্রভাবিত হবার কারণে । 
আমরা বিশ্বাস ও ভালোবাসার দাবি পূর্ণ করতে পারছি না । এখনো বুঝতে পারছি না তাঁকে , যিনি বলেছেন , ততোক্ষণ পর্যন্ত তোমরা বিশ্বাসী হতে পারবে না , যতোক্ষণ না আমি তোমাদের কাছে তোমাদের জীবন – সম্পদ এবং সকল প্রিয়বস্তু অপেক্ষা অধিক প্রিয় না হই । মহাবাণীতে নির্দেশ করা হয়েছে বলো , ‘ তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমাকে অনুসরণ করো , আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন । আল্লাহ্ অত্যন্ত ক্ষমাশীল , পরম দয়ালু । ‘ সুতরাং ভালোবাসার বিষয়টিই প্রধান বিষয় । 
মানুষ যাকে ভালোবাসে , তাকেই বিশ্বাস করে । নির্ভর করে তারই উপর । চাওয়া , পাওয়ার লক্ষ্যও থাকে তারই প্রতি ভালোবাসা ছাড়া অনুসরণপ্রবৃত্তিও প্রত্যক্ষ করা যায় না । যেতে পারে না । একটি কবিতায় বলা হয়েছে যে জন যাহার প্রেমে নিমজ্জিত হয় সে জন তাহার বাধ্য হইবে নিশ্চয় ।

প্রিয়তমজনকে তো ভালোবাসতেই হবে , তার সঙ্গে তিনি যাদেরকে ভালোবাসেন এবং তাঁকে যাঁরা ভালোবাসেন তাঁদেরকেও ভালোবাসতে হবে । ভালোবাসার পূর্ণ ও প্রকৃত রূপ এরকমই । তাই আমাদেরকে পৃথিবী ও পরবর্তী পৃথিবীর কল্যাণ লাভ করতে হলে আমাদের আপনতম ও প্রিয়তম নবীকে যেমন ভালোবাসতে হবে , তেমনি ভালোবাসতে হবে তাঁর প্রেমিক ও প্রেমাস্পদ ( মোহেব ও মাহবুব ) গণকে । এ বিষয়টি নিশ্চয় সুপ্রমাণিত যে , মহানবী স . তাঁর সন্তান – সন্ততিগণ , জীবনসঙ্গিনীগণ এবং সহচরগণকে অত্যধিক ভালোবাসতেন । 
অতএব তাঁদেরকেও ভালোবাসতে হবে । তাঁরা আসত্তা রসুলপ্রেমে চিরনিমজ্জিত । পবিত্র জীবনের অধিকারী ছিলেন তাঁরা । মহানবী স . এর জীবনসঙ্গিনীগণকে তাই বলা হয় পবিত্র সহধর্মিণীগণ ( আওয়াজুম মুত্বহারাহ ) । আর তাঁরা আমাদের কে , সেকথাও আল্লাপাক বলে দিয়েছেন এভাবে- ‘ নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তাঁর পত্নীগণ তাদের মাতা । ‘ এই আয়াতের ব্যাখ্যা ব্যপদেশে বলা হয়েছে , বিশ্বাসবানগণের পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা ও অন্তরঙ্গতার চেয়ে নবীগণের সঙ্গে তাঁদের উম্মতের ঘনিষ্ঠতা অধিকতর সুদৃঢ় । 
এ কারণেই তাঁদের আদেশ তাঁদের বিশ্বাসবান অনুসারীদের জন্য অবশ্যপালনীয় । জন্মদাতা ও জন্মদাত্রী পিতামাতার আদেশ নবীর নির্দেশের পরিপন্থী হলে তা প্রত্যাখ্যান করাও অনিবার্য । হজরত ইবনে আব্বাস ও আতা বলেছেন , রসুল স . এর আদেশের বিপরীত প্রবৃত্তি অবশ্য পরিহরণীয় । মনে রাখতে হবে , তাঁর আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে ইহ পারত্রিক কল্যাণ । প্রত্যাদিষ্ট না হয়ে তিনি কোনো নির্দেশ প্রদান করেন না । আরও বলা হয়েছে , যারা রসুলপ্রেমিক নয় , তারা ইমানদারও নয় । আরও উল্লেখ করা হয়েছে , চিরাচরিত নিয়ম এই যে , সকল নবী – রসুল তাঁদের আপন আপন উম্মতের পিতাসদৃশ , আর তাঁদের সহধর্মিণীগণ তাদের মাতা । মহানবী স . এই শিক্ষা বাস্তবেও দিয়েছেন । 
যেমন এক বর্ণনায় এসেছে , জনৈক মুমিনজননীকে বিবাহ করার পর তিনি তাঁর চাদর ঝেড়ে কিছুসংখ্যক খেজুর বের করলেন এবং উপস্থিত সাহাবীগণকে বললেন , খাও । তোমাদের মায়ের বিবাহের ওলীমা খাও । হজরত আবু উমামা রা . বর্ণনা করেছেন , চার দল লোককে দ্বিতীয়বার পুরস্কার দেওয়া হবে । তাঁদের একটি দল হচ্ছে রসুলুল্লাহ্র স্ত্রীগণ । ইবনে আবী আওয়াফা রা . বর্ণনা করেছেন , রসুলুল্লাহ্ স . বলেছেন , আমি আমার প্রভুপালকের কাছে এই মর্মে দোয়া করেছি যে , আমি আমার উম্মতের যে পরিবারে বিবাহ করি এবং যে আমার পরিবারে বিবাহ করে , তারা যেনো জান্নাতে আমার সাথে বসবাস করে । 
আল্লাহ্পাক আমার এই দোয়া কবুল করেছেন । উম্মতজননীগণের পবিত্র মর্যাদাকে কীভাবে মূল্যায়ন করতে হবে , সাহাবীগণের আমল থেকে সে শিক্ষাও আমরা পাই । যেমন— হজরত ইকরামা রা . বর্ণনা করেছেন , একদিন ফজরের নামাজের পর হজরত ইবনে আব্বাস রা.কে বলা হলো , রসুলুল্লাহর অমুক স্ত্রী পরলোকগমন করেছেন । এই সংবাদ শুনে তিনি কিছু নামাজ পাঠ করলেন । জিজ্ঞেস করা হলো , এ সময় আপনি কোন নামাজ পড়লেন ? তিনি জবাব দিলেন , আল্লাহর রসুল কি একথা বলেননি যে , যখন ভীতিকর নিদর্শন দেখবে , তখন নামাজ পড়ে নিয়ো ? তাঁর সহধর্মিণীগণের পরলোকগমন অপেক্ষা অধিক ভীতিকর আর কী হতে পারে ? আর একটি বর্ণনায় এসেছে , অন্য এক উম্মতজননীর জানাযার নামাজ পাঠের পর যখন তাঁকে খাটিয়ায় উঠিয়ে বহন করা হচ্ছিলো , তখন হজরত ইবনে আব্বাস রা . খাটিয়া বহনকারীদের উদ্দেশ্যে বললেন , সাবধান ! ধীরে ধীরে নিয়ে চলো । মনে রেখো , ইনি রসুলুল্লাহর জীবনসঙ্গিনী । আদবের সাথে চলো । বেশী ঝাঁকি যেনো না লাগে । ইনি তোমাদের মা । · 
খোলাফায়ে রাশেদীন এবং সকল সাহাবী তাঁদের অনুগ্রহদৃষ্টি কামনা করতেন । কতোরকমভাবে এবং কতো পরিমাণে যে হাদিয়া উপহার পাঠাতেন , তার কোনো ইয়ত্তা নেই । আমরা তো অনেক দূরের স্থানের দিক থেকে যেমন , তেমনি সময়ের দিক থেকেও । এখন তাঁদের কাছে আমরা সওয়াব রেছানীর হাদিয়াই পাঠাতে পারি কেবল । আর হৃদয়ের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মাধ্যমে তাঁদের স্নেহভাজন ও নৈকট্যভাজন তো হতে পারিই । পেতে পারি মমতাময়ী মায়েদের রূহানী আদর । কারণ , বলা হয়েছে— ‘ যে যাকে ভালোবাসে সে তার সঙ্গে । ‘ আদি ও অন্তের সকল প্রশংসা – প্রশস্তি , স্তব – স্তুতি , মহিমা – গৌরব , উচ্চতা ও পবিত্রতা কেবলই আল্লাহ্ , যিনি আমাদেরকে জীবন দান করেছেন এবং আমাদের মৃত্যু ঘটাবেন । 
যিনি স্বাধিষ্ঠ , স্বতিষ্ঠ , স্বয়ম্ভূ । আমরা তো তাঁরই জন্য এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন আমাদের সকলের । হে আমাদের পরম প্রেমময় মহাপ্রভুপালক আল্লাহ্ ! ‘ জননীদের জীবনকথা ‘ দয়া করে আমাদেরকে দান করলে বলে আমরা অবশ্যই সৌভাগ্যবান ও সৌভাগ্যবতী হলাম । এর জন্য তোমার উদ্দেশ্যে জানাই অজস্র অসংখ্য কৃতজ্ঞতা । আর এই শুভ প্রকাশ মুহূর্তে আমরা কামনা করি কেবল তোমার দয়া ও ক্ষমা এবং দ্বীনের খেদমত করবার যথার্থ সামর্থ্য । 
আমাদেরকে— লেখক – পাঠক – পাঠিকা ও সকল প্রকাশনাকর্মীকে দয়া করে মাফ করে দাও । প্রারম্ভে এবং অবশেষে সকল প্রকার উৎকৃষ্ট দরূদ ও সালাম অনন্তকাল ধরে অবিশ্রান্ত ধারায় বর্ষিত হোক মহাবিশ্বের মহামমতার প্রতিভূ মোহাম্মদ মোস্তাফা স . এর প্রতি এবং তাঁর প্রেমিক ও প্রেমাস্পদগণের প্রতি । আমিন । আল্লাহুম্মা আমিন । ওয়াস্সালাম  
নভেম্বর , ২০১১ সন ইং 
মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ Google Drive PDF Link
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?