Muslim Mindset Book Specification
Title | মুসলিম মাইন্ডসেট (বাংলা) |
Author | জাকিয়া খলিল |
Publisher | বিবরণ প্রকাশন |
Quality | Hardcover |
Rating | ⭐⭐⭐⭐⭐ |
Edition | 1st Printed, 2016 |
Number of Pages | 64 |
Country | বাংলাদেশ |
ISBN | 9789843521224 |
‘মুসলিম মাইন্ডসেট – (ইতিবাচক মনস্তত্ব অর্জনের ব্যবহারিক অনুশীলন) লেখিকা জাকিয়া খলিল রচিত জনপ্রিয় ইসলামী বই “মুসলিম মাইন্ডসেট” বইটিতে লেখিকা জাকিয়া খলিল চমৎকার কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, মন মানুষের সবচেয়ে দামী এবং রহস্যময় জিনিস। মনের সাথে সম্পর্ক মননের, আবার মননের সাথে সম্পর্ক মনস্তত্বের। তিনটা একই মনে হলেও আলাদা বৈচিত্র আছে এই তিনটির বাস্তব আর প্রায়োগিক ক্ষেত্রে।
মানুষের মন ফুরফুরে থাকা নির্ভর করে মনন সুন্দর আর সুশ্রী হওয়ার উপর। আর মননের নির্মলতার দ্বার উম্মোচন করে পরিশুদ্ধ মনস্তত্ব। পরিশুদ্ধ মনস্তত্ব বা মানসিকতা পুরো মানবজীবনকেই সুসজ্জিত করে।
কথা হলো, পুরো জীবনকেই সুসজ্জিত, সুন্দর, প্রশংসনীয় করার মতো মনস্তত্ত্ব অর্জন কীভাবে করা যায়? কোন উপায়, কোন পথ, কোন সেতু সুশ্রী এবং সুন্দর মনস্তত্ব অর্জনের মঞ্জিলে পৌঁছে দিতে পারবে একজন তরুণ মুসলিম যুবক/যুবতীকে? সে পথ, সে সেতুর সন্ধান আপনি এই বইয়ে পাবেন।
একবিংশ শতাব্দীর শিল্পবিপ্লব, জ্ঞান-বিজ্ঞান আর সমৃদ্ধির এই বিস্ময়কর যুগে একজন তরুণ মুসলিম/মুসলিমা কীভাবে তার স্বকীয়তা বজায় রেখে উন্নতি,সাফল্য এবং স্বার্থকতার শিখরে আসীন হতে পারবে- এই দিকনির্দেশনা হন্য হয়ে খুঁজছেন নিয়তই সহস্র তরুণ-তরুণী। আপনার সমস্ত জিজ্ঞাসা, কৌতুহল এবং তৃষ্ণার জবাব এই বইয়ে রয়েছে।
The Muslim Mindset : Practical Lessons in Achieving a Positive Mental Attitude
___________________________________________________
মুসলিম মাইন্ডসেট কি?
যে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন মানুষের মস্তিষ্কে শুরু হয়। উত্তম কিছুর জন্য আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করতে হলে আগে আমাদের মন-মানসিকতাকে পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আমাদের জীবনের সব প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট উপহার এবং সেগুলো অর্জনের জন্য যথেষ্ট সক্ষমতা আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। আমাদের চেষ্টা ও যোগ্যতার মধ্য দিয়েই তিনি আমাদের সফলতা দিয়ে থাকেন এবং কোনো কিছু অর্জনে আমাদের চেষ্টাকে অবলোকন করে থাকেন। এটাই মনস্তত্ত্ব। একটা নির্দিষ্ট সময় জুড়ে আপনার বিশ্বাসের প্রতিফলনই হলো মনস্তত্ত্ব।
আমরা নিশ্চিত হতে চাই যে, আমরা ইতিবাচক মনস্তত্ত্বই লাভ করছি। বিখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ ড. ক্যারল ডুয়েকের মতে, “আমাদের এই বিশ্বাস থাকতে হবে যে জীবনের পরিবর্তনে এবং উন্নয়নে আমাদের সক্ষমতা কোন স্থির প্রক্রিয়া নয়, বরং গতিশীল। আমরা যদি চাই তাহলে প্রচেষ্টা, প্রশিক্ষণ এবং সাধনার মাধ্যমে জীবনের যে কোনো মুহূর্তে পরিবর্তন সাধন করতে পারি।” যদি আমরা সংগ্রাম অব্যাহত রাখি, আমরা আমাদের মানসিকতা পরিশুদ্ধ করতে পারবো; আমরা জানতে পারবো যে এখানেই জগতের শেষ নয়। আমরা ক্রমাগত অনুশীলন, ধারাবাহিকতা এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে আরও ভালো কিছু হয়ে উঠতে পারি। আমরা কতটা স্মার্ট তার উপর সাফল্য নির্ভর করে না, বরং সাফল্য নির্ভর করে প্রত্যেকটা দিন নিয়মিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারছি কি না তার উপর।
নেতিবাচক মনস্তত্ত্ব এসবের ঠিক বিপরীত। ড. ডুয়েক এটাকে ‘স্থির মনস্তত্ত্ব’ বলে অভিহিত করেছেন। এই ধরনের মানসিকতার লোকেরা বিশ্বাস করে যে, তাদের খোদাপ্রদত্ত সক্ষমতা পরিবর্তনযোগ্য নয় এবং এই সক্ষমতার কোন রকম উন্নয়ন করা যাবে না। তারা প্রায়শই ব্যর্থতাকে ভয় পায়, নিজেদের অদক্ষতাকে ভয় পায়, তাই তারা নতুন প্রচেষ্টা, চিন্তাভাবনা এবং দক্ষতা বাড়ানোর চ্যালেঞ্জকে এড়িয়ে যায়। আমরা যদি মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাদের জীবনী এবং আমাদের খোদাভীরু পূর্বসূরীদের জীবনী অধ্যয়ন করি, তাহলে আমরা বুঝতে পারব যে, তারা যদি সব রকম প্রতিবন্ধকতাকে এড়িয়ে যেতেন, সকল ষ্ট-ক্লেশকে ভয় পেয়ে চুপ করে থাকতেন, একটি সম্পূর্ণ নতুন জীবন পদ্ধতিকে গ্রহণ করে নেয়ার চ্যালেঞ্জ না নিতেন, তাইলে ইসলাম ধর্ম এতদূর পর্যন্ত পৌঁছাতো না। তারা ঝুঁকি নিয়েছিলেন, এমনকি তাদের আশেপাশের লোকজন তাদেরকে উন্মাদ, মেধাহীন বলে নিন্দাও করতো। নেতিবাচক মানসিকতা’ সমস্যাগুলোর উপর বেশী আলোকপাত করে থাকে এবং প্রায় সব রকম পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য খারাপ ফলাফলই প্রত্যাশা করে।’নেতিবাচক মানসিকতা’ আমাদের নৈরাশ্যবাদী করে দেয়, অন্যের প্রতি অবিশ্বাসী করে তোলে এবং প্রচেষ্টার অপমৃত্যু ঘটায়।
নেতিবাচক মানসিকতার লোকেরা প্রায়শই চাপের মধ্যে থাকে, উদ্বিগ্ন এবং গভীর বিষণ্নতায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। তারা সাধারণত একাকী থাকে, ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগে এবং পৃথিবীকে বসবাসের জন্য একটি অন্ধকার এবং বিরক্তিকর জায়গা হিসেবেই দেখে। তারা অন্যকে সাধারণত নিজের উপর নেতিবাচক ভাবেই ভেবে থাকে। তারা প্রায়শই অকৃতজ্ঞ এবং ধৈর্যহীন হয়, তাদের নিজস্ব সক্ষমতা এবং আল্লাহর দেয়া নেয়ামতকে অবমূল্যায়ন ও অভিযোগ করে। তারা সবসময় তাদের সাথে খারাপ কিছুই ঘটবে এমন প্রত্যাশার মাঝেই দিনাতিপাত করে থাকে। এবং সাধারণত নেতিবাচক কিছুই ঘটে থাকে তাদের জীবনে, যেটা তাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করে দেয়। এই ধরনের নেতিবাচক মানসিকতা আমাদের পরিহার করতে হবে এবং ইতিবাচক মানসিকতা অথবা মুসলিম মানসিকতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। যে মানসিকতা মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণ এবং আমাদের খোদাভীরু পূর্বসূরিদের জীবনকে অভূতপূর্ব পরিবর্তনের দিকে নিয়ে গিয়েছিলো, সে ধরনের ইতিবাচক মানসিকতা, বিশ্বাস এবং দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করা অবশ্যই সম্ভব। প্রত্যাশা, আশাবাদ, সুন্দর চিন্তাভাবনা, সর্বাবস্থায় সর্বোত্তম কিছু অনুসন্ধান করা, কৃতজ্ঞ হওয়া, কঠিন সময়ে ধৈর্যশীল থাকা এবং আল্লাহর উপর আস্থা রাখা প্রভৃতি ইসলামী নীতিমালার মূলেই নিহিত রয়েছে “মুসলিম মানসিকতা”। এই ধরনের মানসিকতা হলো একটি লেন্স যার মাধ্যমে বিশ্বাসীরা নেতিবাচকতাকে ছেঁকে ফেলে দেয় এবং জীবনকে উন্নতি, উপশম এবং গ্রহণযোগ্যতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর সে সচেতন থাকে যে, আল্লাহ তাকে একটি পরিপূর্ণ এবং অর্থপূর্ণ জীবন যাপন করার সক্ষমতা দিয়েছেন। অতএব, বিশ্বাসীরা অনুধাবন করে যে আল্লাহ তাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে স্বাধীন তবে নিয়ন্ত্রিত ইচ্ছা প্রদান করেছেন, যাতে করে সে নিজের ইচ্ছেমতো জীবনটাকে গঠন করতে পারে। এইভাবে নেতিবাচকতাকে ধূলিসাৎ করা যায়। পরিস্থিতি যতই অন্ধকারাচ্ছন্ন বা ঘোলাটে মনে হোক না কেন, আশাবাদী থাকা মুমিনের পৃথিবীকে বিস্তৃত করে দেয় এবং এটা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং তাঁর পরিকল্পণার উপর নিরঙ্কুশ আস্থা রাখা থেকে অঙ্কুরিত হয়। আর এটাই হলো মুসলিম মনস্তত্ত্ব।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী (আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন) ছিলেন অসাধারণ মানসিকতার অধিকারী ব্যক্তিদের অন্যতম সেরা উদাহরণ। ডক্টর ডুয়েকের মতে, “বক্সিং বিশেষজ্ঞরা বক্সারদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিমাপের জন্য শারীরিক গঠনের উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন যেটাকে বলা হয়ে থাকে টেলস অব টেপ”। এর মধ্যে যোদ্ধার মুষ্টি, বুকের প্রশস্ততা এবং ওজনের পরিমাপ অন্তর্ভুক্ত, মোহাম্মদ আলী এইসব পরিমাপে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তার মাঝে মুষ্টিযোদ্ধা হবার মত কোনো গুণাগুণই ছিলোনা। অসাধারণ গতি থাকলেও একজন দুর্দান্ত যোদ্ধার মতো শারীরিক সক্ষমতা তার ছিলো না। তার প্রচণ্ড শারীরিক শক্তি ছিল না এবং তার গতানুগতিক কোন কৌশলও ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, তিনি অস্বাভাবিক মুষ্টিযুদ্ধ করতেন। তারপর ড. ডুয়েক লিখেছিলেন, “কিন্তু দ্রুততা ছাড়াও আলীর মূল শক্তি ছিলো তার মনের শক্তি, তার মনের তেজ।” একজন বিখ্যাত বক্সিং ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী সম্পর্কে বলেন যে, “মোহাম্মদ আলী ছিলেন একজন প্যারাডক্স বা ব্যতিক্রম। বক্সিং মাঠে তার শারীরিক পারফরম্যান্স একদমই যথাযথ ছিলো না কিন্তু তার মস্তিষ্ক নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারতো।” তিনি মুখে এক বিস্তৃত হাসি নিয়ে লড়াই করে গেলেন এবং দেখিয়ে দিয়ে গেলেন, সব বিজয় মস্তিষ্কের খেল; মুষ্টির জোরে নয়। সুন্দর মনস্তত্ত্ব দিয়ে জনমভর সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করা একজন যোদ্ধার প্রকৃষ্ট উদাহরণ মুহাম্মদ আলী।
মুসলিম মনস্তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যই হলো ইতিবাচক মানসিকতা। এটি এমন একটি জগত যেখানে মুমিনগণ সমস্ত বাঁধা, বিপত্তিকে অতিক্রম করে ইতিবাচক ফলাফল লাভের প্রত্যাশা লালন করে; ঠিক যেমন একজন স্বাভাবিক বক্সার না হয়েও মোহাম্মদ আলী করেছেন। মুসলিম মনস্তত্ত্ব মানুষের সম্পর্ক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও স্বীয় বিশ্বাসের উপর স্থির থাকার জন্য আশাবাদী চেতনাকে জিইয়ে রাখে। এটি এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান যেখানে আমরা ইসলামের লেন্স দিয়েই পুরো বিশ্বটাকে দেখতে পাই। এটি এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি যার মাধ্যমে আমরা নবী মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর সাহাবাগণ এবং আমাদের খোদাভীরু পূর্বসূরিদের অনুকরণ করার মাধ্যমে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে তাদের নির্দেশনাগুলোকে বাস্তবায়ন করে জীবনের সুন্দর ব্যাখ্যা করতে পারি।
আল্লাহর ইবাদত করার ক্ষেত্রে তাদের জীবনকে অনুসরণ করে আমরা অন্তরে শান্তি লাভ করতে পারি এবং জীবনের উদ্দেশ্য সাধন করতে পারি। সুস্থ সুন্দর সম্পর্ক এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারি আর আশাবাদ ও ইতিবাচক জীবন যাপন করতে পারি। মুসলিম মনস্তত্ত্বের মাধ্যমে আমরা ভালটাকে ছেঁকে বের করে আনতে পারি এবং এর উপর গুরুত্বারোপ করতে পারি, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থেকে সুন্দরভাবে জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারি। বিশেষ করে জীবনের কঠিনতম সময়গুলোতে মুসলিম মনস্তত্ত্ব অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে ড. ডুয়েক “মানসিক দৃঢ়তা” বলে লিখেছেন। মুসলিম মনস্তত্ত্ব এমন একটি যোগ্যতা যা আপনাকে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও চলতে শেখাবে, এমনকি নদীর জোয়ার আপনার অনুকূলে না বইলেও তরী বাইতে শেখাবে।
জীবনে সবাই বিচিত্রতার মধ্য দিয়ে যায়। কোন ধর্ম, সংস্কৃতি, মানুষ কিংবা জাতিসত্তা সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। আমাদের সবার খারাপ দিন আসে, আমদের সকলের জীবনেই সঙ্কটময় এবং ধ্বংসাত্মক বেদনার অনুভতিগুলো নেতিবাচক আবেগের প্রতিলন ঘটায়। গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমরা কীভাবে সেসব দূর্যোগ নিয়ন্ত্রণ করি এবং কীভাবে মোকাবেলা করি। অতএব, আমাদের চিন্তার জগতটাই হলো জীবনের সমস্ত সমস্যা, অসুবিধা, কষ্ট এমনকি বীভৎস অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তি লাভের মূল চাবিকাঠি। জীবনের সমস্ত অসুবিধা এবং সংগ্রামকে মোকাবেলা করার কলা-কৌশল, সক্ষমতা এবং উৎস আমাদের মনস্তত্ত্বের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই দেয়া আছে। আমাদের সমস্যাসমূহের সমাধান আমাদের মনস্তত্বের মধ্যেই সুপ্ত আছে। মুসলিম মানসিকতা বা মুসলিম মনন অবলম্বন করার মাধ্যমে একজন মুমিন ব্যক্তি যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে, ধৈর্য ধারণ করতে পারে এবং তার হৃদয়ের গভীরতম অংশে পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে পারে যে, আল্লাহ সর্বদা তার জন্য থাকবেন এবং তার সহায় হবেন। ইহকাল এবং পরকালে সাফল্য অর্জনের চাবিকাঠি হলো আমাদের মানসিকতা।
মুসলমান হিসেবে আমাদের ছোটবেলা থেকেই আল্লাহ সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে এবং তার কাছে সবসময় উত্তম কিছুর প্রার্থনা করতে শেখানো হতো। যেমনটি “রিয়াদ আস-সালিহিন” এ বর্ণিত হয়েছে, নবী (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমি আমার বান্দার কাছে ওমনভাবেই থাকি যেমনভাবে আমার বান্দা আমার কাছে প্রত্যাশা করে। যখন সে আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সাথেই থাকি। সে আমাকে ডাকলে আমি তার ডাকে সাড়া দিই। যদি সে আমাকে কোনো সমাবেশে স্মরণ করে, আমি তার চেয়েও বড় সমাবেশে (ফেরেশতাদের সমাবেশ) তার কথা স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক গজ (দুই হাত) অগ্রসর হই। যদি সে হেঁটে আমার কাছে আসে, আমি দৌঁড়ে তার কাছে যাই।”
আল্লাহর এরূপ সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি মুসলিম মানসিকতারই একটি চিত্র। আল্লাহ তায়ালাকে নিয়ে আমরা যত বেশি সুধারণা রাখবো তত বেশি আমরা অর্জন
২ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৬৭২৫
করতে পারবো। এটাই জীবনের নিয়ম। এটাই বিধান। আল্লাহর কাছে আমাদের প্রত্যাশার জগত বিপুল আশাবাদ দ্বারা বেষ্টিত থাকতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের যে কোন কিছুর প্রয়োজনে রাব্বুল আলামীন দ্রুত সাড়া দিবেন। আমরা কখনও একা নই, কারণ আল্লাহ সর্বদা আমাদের দেখছেন এবং আমাদের যত্ন নিচ্ছেন।
নবী মোহাম্মদ (সা.) এর সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘সেই সত্তার শপথ করে বলছি যিনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই, মানুষ যা প্রার্থনা করে আল্লাহ তাকে দান করতে পারেন এবং সমস্ত মঙ্গলের মালিক আল্লাহ।’ আল্লাহ নিজেই পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “তাহলে বিশ্বজগতের প্রতিপালক সম্পর্কে তোমরা কি ধারণা পোষণ করো?” এসবে একটি সত্যিকার মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ইতিবাচক ভাবনা, মতামত এবং আল্লাহর কাছে ইতিবাচক প্রত্যাশা রাখার গুরুত্ব নিয়ে কয়েকটা বক্তব্য মাত্র। সমস্ত গুণাবলী আল্লাহর, এবং সঠিক মানসিকতার ইসলামী নীতিগুলি অনুসরণ এবং অনুশীলন করার মাধ্যমে আমরা সেসব গুণাবলীর থেকে উপকৃত হতে পারি।
বইয়ের বাকি অংশজুড়ে মুসলিম মনস্তত্ত্ব অর্জনের নির্দেশিকা নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। এই আলোচনার বিভিন্ন উপায় থাকলেও এমন একটি মানসিকতা অর্জনের জন্য সবচেয়ে উপকারী হবে এমনটি দশটি পাঠ আমি সাজিয়েছি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করতে সহজ হবে এমন অনেক বাস্তবিক কলাকৌশল এবং সমাধানও প্রত্যেকটি পাঠে সন্নিবেশিত হয়েছে। এই পুস্তক থেকে আপনি আর কিছু না নিলেও অন্তত এইটুকু গ্রহণ করুন, আপনি আল্লাহকে নিয়ে যেমন চিন্তা করেন তাঁকে তেমনভাবেই পাবেন। আল্লাহর কাছে আপনি হাঁটতে হাঁটতে যান, তিনি দৌঁড়ে আপনার কাছে আসবেন।
৩ সূরা সাফ্ফাত, আয়াত নং-৮৭
_____________________________________
ঈমান বৃদ্ধি করুন
একজন মুমিন ব্যক্তির মুসলিম মনস্তত্ত্ব অর্জনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জীবন পরিবর্তনকারী সিদ্ধান্ত যেটা প্রথমেই নিতে হয় তা হলো, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন। অন্য কথায়, সে ব্যক্তির অবশ্যই ইমান থাকতে হবে। একজন মুসলমানের ইহকাল এবং পরকাল দুটোই ইমানের উপর নির্ভর করে। যে পৃথিবীতে সে বাস করছে এবং মৃত্যুর পর যে দুনিয়ায় সে থাকবে দুইটা জগতই তার ইমানের উপর ভর করে চালিত হবে।
দুই জগতেই আমাদের জীবনের বাস্তবতার উপর ইমানের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। তাই আমরা যদি নিজেদের পরিবারের এবং সমাজের জন্য মঙ্গল প্রত্যাশা করি তাহলে সবার আগে আমাদের ইমানকে বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আর ইমান পাকাপোক্ত করার প্রধানতম উপায়গুলো হলো জ্ঞানার্জনে ব্রতী হওয়া, ইসলামের বিধানসমূহ মান্য করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, বেশি মৃত্যুকে এবং সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করা। আল্লাহর সাথে অনুভবে মিলন এবং বিচ্ছেদে বিরহ ব্যথায় কাতর হওয়ার মাধ্যমে যখন আমরা আমাদের ইমান অর্জন বেশি করতে পারবো তখন নেতিবাচকতা এবং হতাশা থেকে ইতিবাচকতা এবং আশাবাদের সুগম পথে যাত্রার আলোকবর্তিকা দেখতে পাবো।
ইমান কি? আলেমগণ বলেন, “ইমান হল হৃদয়ের এমন এক অনুভূতি যা আপনার অন্তরে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং দৃঢ় আস্থা স্থাপন করে দেয়। তারপর আপনার জিহ্বা সেই বিশ্বাসের স্বীকারোক্তি দিবে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সে বিশ্বাস কার্যে প্রমাণ করবে।” এই পরিচ্ছেদ ইমানের তিনটি বিষয়কেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা আমাদের ইমানকে আরো শক্তিশালী করতে পারি।
ইমান আল্লাহর অস্তিত্বের প্রশ্নে নিশ্চিত করে যে, আল্লাহ পাক একক স্রষ্টা এবং তার কোন অংশীদার নেই। তিনি সর্বদা আমাদের প্রত্যক্ষ করছেন, পথ দেখাচ্ছেন করছেন এবং আমাদের জন্য তার নেয়ামত সমূহ সরবরাহ করছেন। তিনিই জীবন দেন এবং আবার কেড়েও নেন। সবশেষে আমাদের আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে।
ইমানের আরো দিক হলো, আল্লাহর সৃষ্টির উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। যেমন ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস ইমানেরই একটি অংশ। ইমান হলো ফেরেশতাদের ব্যাপারে এটা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করা যে, তারা আল্লাহর একান্ত অনুগত এবং তারা খোদার আদেশের কখনো অবাধ্য হন না। ফেরেশতাগণ নূর থেকে সৃষ্ট এবং তারা কোন আহার করে না, কোনকিছু পানও করে না। তারা পুরুষও না, মহিলাও না এবং আমরা বলতে পারবোনা যে, তারা আমাদের মতো জন্ম নিয়েছে অথবা জন্ম দিয়েছে। ফেরেশতারা সংখ্যায় কত তা আমরা জানি না, একমাত্র আল্লাহই জানেন তাদের সংখ্যা।
ইমান হলো আল্লাহ প্রদত্ত আসমানি কিতাব এবং সহীফাগুলোর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে দেওয়া সহিফা, দাউদ আলাইহিস সালাম এর উপর অবতীর্ণ যাবুর, মুসা আলাইহিস সালাম-এর উপর অবতীর্ণ তাওরাত, ঈসা আলাইহিস সালাম-এর উপর অবতীর্ণ ইঞ্জিল এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর অবতীর্ণ কুরআনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। মানবজাতিকে সঠিক পথ দেখানোর নিমিত্তে পাঠানো সমস্ত নবী-রাসূলের উপর দৃঢ় বিশ্বাস আনাও আমাদের ঈমানের দাবি। শেষ বিচারদিনের উপরও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে, কারণ এই দিনে আমরা পুনরুত্থিত হবো এবং আমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইমানের সর্বশেষ অংশ এটা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দিয়েছেন। যা এই বইয়ের বিশেষ আকর্ষণ, বিশদ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আবার পূর্ব নির্ধারিত তাকদিরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করাও ইমানের অঙ্গ।
৪ আল ফিকহুল আকবার
______________________
বিচলিতও হবেন না। আল্লাহ সবসময় আছেন এবং তিনি আমাদের কোন ক্ষতি হতে দিবেন না জেনে তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাস করার ফলে এটি সম্ভবপর হয়।
আল্লাহর অস্তিত্ব সবকিছু নিমিষেই ঠিক করে দেয়। যতক্ষণ আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন ততক্ষণ কোনো সমস্যা, অসুবিধা, কষ্টের কোন বিষয়ই আমাদের কাবু করতে পারবে না। আর তিনি চিরকালই আমাদের সাথে থাকবেন। তিনি তো অনন্ত, অসীম, চিরঞ্জীব। এতসব কথাবার্তা আপনাকে কি বলতে চাচ্ছে? বলতে চাচ্ছে, যে কোন অবস্থানে, যে কোন সময়ে মহান আল্লাহর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছুই নেই। আমাদের জীবনে তাঁর অস্তিত্ব এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনই সর্বাগ্রে গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা খোদার উপর ইমান না-ও আনি, তাঁর কিছুই আসে যায় না; যদিও আল্লাহ তার সৃষ্টিকে ভালোবাসেন।
তাই কোন উপায়ে বিশ্বাস স্থাপন করলে এবং ইমান আনলে মহান আল্লাহ আমাদের জীবন এবং গুরুত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত হবেন- তা কিভাবে নিশ্চিত করবো আমাদের? আমাদের ইমান বৃদ্ধি এবং দৃঢ় করতে সহায়ক কিছু নির্দেশনা এই বইয়ে আছে, তাই আমাদের জীবনের কোন বিষয়ে অত্যাধিক চিন্তাগ্রস্ত হতে হবে না এবং আমরা সুন্দরভাবে ও আশান্বিত জীবন যাপন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
__________________________________________________
জ্ঞান অন্বেষণ করুন
আমাদের ইমান বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করার প্রথম ধাপ হল, আমাদের বাধ্যতামূলকভাবে জানতেই হবে যে, আল্লাহ কে এবং তিনি আমাদের কাছে কি চান? আমরা তাঁকে বিশ্বাস করতে চাই এবং তাঁর উপাসনা করতে চাই, ঠিক। কিন্তু আমাদের অনেকেরই তা কীভাবে করা যায় সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব রয়েছে। অতএব, জ্ঞান অন্বেষণ হল আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য এবং আমাদের ইমানকে শক্তিশালী করার জন্য একটি সর্বোত্তম পন্থা। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “পবিত্র জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ।”৫ আবদুর-রহমান ইবনে ইউসুফ তার তাফসীরে এই বক্তব্যের ব্যাখ করেছেন যে, প্রত্যেক মুসলমানকে অবশ্যই ততটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অন্বেষণ করতে হবে, যতটা অর্জন করলে তার জন্য ইবাদতের ক্ষেত্রে ফরজ কাজগুলো সম্পর্কে
৫ ইবনে মাজাহ
জানার ক্ষেত্রে যথেষ্ট হবে। রিয়াদ আস-সালিহিন-এ, আমরা জ্ঞান অন্বেষণের গুরুত্ব দেখতে পাই, যেমনঃ নবী মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ পাক যার মঙ্গল কামনা করেন তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন।” এই হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে, মানুষ যখন জ্ঞান অন্বেষণ করে, তখন তারা এই ধরনের প্রচেষ্টায় আল্লাহ কর্তৃক পরিচালিত হয়। তারা জ্ঞান অন্বেষণ এবং ইসলামের বুঝ লাভের জন্য আল্লাহ দ্বারা নির্বাচিত হয়।
আমাদের আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত যেন তিনি আমাদেরকে দ্বীনের বুঝ দান করেন এবং দ্বীনের সঠিক বুঝওয়ালাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহর কাছে জ্ঞান ও নির্দেশনা চাওয়াকে আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করা উচিত। আল্লাহ অবশ্যই আমাদের প্রার্থনা পূরণ করবেন এবং আমাদের এমনভাবে নেয়ামত দান করবেন যা সম্ভবপর বলেই ভাবি নি কখনো। যাইহোক, আমরা কোথা থেকে এবং কার কাছ থেকে আমাদের জ্ঞান অন্বেষণ করবো তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আপনার পরিচিত একজন বিশ্বস্ত আলেমের কাছে জ্ঞান আহরণ করুন। আপনার স্থানীয় মসজিদে ইসলামিক আলোচনা থেকে জ্ঞান আহরণ করুন। যদি আপনার কাছাকাছি মসজিদ না থাকে বা অনেক দূরে মসজিদ থেকে থাকে যেখানে যাওয়া আপনার জন্য কষ্টসাধ্য তাহলে মসজিদের ইমাম, ইসলামী পণ্ডিত বা উলামায়ে কেরামদের সাথে কথা বলে অনলাইনে পাঠ গ্রহণের ব্যবস্থা করুন। আমার পরিবার এবং আমি একজন আলেমকে ফোনে কল করতাম এবং তিনি বক্তৃতা শুরু করলে লাউড স্পিকার চালু করে দিতাম। তারপর ধীরে ধীরে আমরা অন্যান্য সম্প্রদায়ের মহিলাদের যোগদান করতে এবং তার বক্তৃতা শুনতে আমন্ত্রণ জানাই
শ্রদ্ধেয় শায়খ ফারাজ রব্বানী পরিচালিত ‘সিকারস হাব’ এর মতো ইসলাম সম্পর্কে মুসলমানদের শেখানোর জন্য আগ্রহী ওয়েবসাইটগুলিতে বিনামূল্যে ক্লাসও রয়েছে। জ্ঞান অন্বেষণের জন্য বোধগম্য এমন ওয়েবসাইট এবং উৎস সম্পর্কে আপনার সম্প্রদায়ের বিশ্বস্ত আলেমদের সাথে আলোচনা করুন।
আমাদের নিজেদের দায় এড়ানোর জন্য কোন অজুহাত দর্শাতে চাওয়ারও কোনো সুযোগ নাই। আমেরিকাতে আমাদের হাতে অনেক রকম উৎস রয়েছে যেগুলো অন্য অনেক দেশে নাও থাকতে পারে। মোদ্দাকথা, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন
৬ সহীহ বুখারী হাদীস নং- ৭১, ৩১১৬
এবং আপনার কাজ আপনি করে যান। আল্লাহ আপনার জন্য জ্ঞান অর্জন, তাঁকে ও তাঁর ধর্মকে জানার দ্বার উম্মোচিত করে দেবেন। আপনি একবার জ্ঞান অন্বেষণের পথে যাত্রা শুরু করলে আপনি জ্ঞানার্জনে আরো তৃষ্ণাতুর হতে থাকবেন, ইনশাআল্লাহ। আপনি কেবল আরও বেশি বেশি শিখতে চাইবেন ইনশাআল্লাহ।
________________________________________________
আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন।
অনুরোধঃ– বই : মুসলিম মাইন্ডসেট এর প্রি অর্ডার চলছে … তাই মুসলিম মাইন্ডসেট বইটি PDF Free Download চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না।
We Respect Every Author Hardwork – boipaw.com™
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?