গ্রন্থঃ কপালকুণ্ডলা
লেখকঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রিভিউঃ মুঈনুল ইসলাম
কপালকুণ্ডলা লেখকঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
“তুমি অধম — তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?”
“পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?”
প্রথম লাইনটা শোনেনি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, আর দ্বিতীয় লাইনটাকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ রোমান্টিক ডায়লগের স্বীকৃতি দেয়া হয়। দুটো লাইনই বঙ্কিমচন্দ্র রচিত দ্বিতীয় ও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সার্থক উপন্যাস ‘কপাকুন্ডলা’র অংশ। মানব প্রেম, সমাজিকতা, কুসংস্কার, রোমান্টিকতা, ইতিহাস ও অতিপ্রাকৃত উপাদানের মিশেলে বেড়ে ওঠা কিছুটা রাজনৈতিক এই উপন্যাসটি রচিত ও প্রকাশিত হয় ১৯৬৬ সালে।
তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে নবকুমারের সমুদ্র দেখতে যাওয়ার মধ্য দিয়ে গল্পের শুরু, জনবিচ্ছিন্ন এক মোহনায় আহারের প্রস্তুতিপর্বে কাঠ সংগ্রহের জন্য বনে যায় নবকুমার, কিন্তু এ সময় জোয়ার চলে আসায় তাকে রেখেই যাত্রীরা নৌকা ছেড়ে চলে যায়। সেখানে বাঘ্রচর্ম পরিহিত এক ভয়ালদর্শন কাপালিক কে গলিত লাশের উপর, শবসাধনারত দেখতে পায় সে। ধ্যান শেষে কাপালিক তাকে কুটিরে নিয়ে যায়। পরদিন গোধুলীলগ্নে কাপালিকের পালিতকন্যা স্নিগ্ধ, জ্যোতির্ময়, মোহিনীমূর্তি, সমাজ-বিচ্ছিন্ন কপালকুণ্ডলার সাথে নবকুমারের আকস্মিক সাক্ষাৎ ঘটে। ‘পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?’ কপালকুণ্ডলা জিজ্ঞেস করে তাকে…। কাপালিক চায় নবকুমারকে ভৈরবীর কাছে বলি দিতে। কিন্তু কাপালিকের আশ্রিতা কপালকুণ্ডলার সহায়তায় নবকুমার পালিয়ে আসে। কপালকুণ্ডলা কে দেয় দ্বিতীয় স্ত্রীর মর্যাদা। এখানে শুরু হয় কাহিনীর নতুন ধারা এবং ত্রিভুজ প্রেমের সূচনা।
কপালকুণ্ডলা বইটি পিডিএফ ডাউনলোড করুন ⤵️
পদ্মাবতী নবকুমারের প্রথম স্ত্রী, ঘটনাচক্রে ধর্মান্তরিত হয়ে আগ্রা চলে গিয়ে লুৎফ্-উন্নিসা/ মতিবিবি নাম ধারণ করে দিল্লিশ্বরের অনুগ্রহে বিপুল ধন-সম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তির মালিক হলেও ভালবাসার শূন্যতা অনুভব করায় পুনরায় অন্তত নবকুমারের দাসী হয়ে বাকি জীবন পার করার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে ছলা-কলায় পারঙ্গম এবং কূটনীতি বিশেষজ্ঞ লুৎফ্-উন্নিসা। কিন্তু নবাকুমার কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে কপালকুণ্ডলা ও নবকুমারের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানোর সংকল্পে কাপালিকের সঙ্গে হাত মেলায় সে।
বলিষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী ও সহজ-সরল নবকুমারের বিশ্বাসের স্বল্পতা ও কাপালিকের উস্কানি এবং নিষ্কলুষ কিন্তু প্রচন্ড আত্মাভিমানী কপালকুন্ডলার অত্যাধিক অভিমানে শেষ পর্যন্ত দুজনের সলিল সমাধিস্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে গল্পের শেষ হয়।
Kopalkundola pdf download link ⤵️
আধুনিক বাংলা উপন্যাসের জনক বঙ্কিমের অন্যান্য রচনার ন্যায় এখানেও যথারীতি রয়েছে কিঞ্চিত মুসলিম বিদ্বেষ, ইতিহাসের সাথে নিজস্ব কাল্পনিকতার মিশ্রণ, পাশাপাশি গল্পের লেখনীটাকে কিছুটা দুর্বলও বলা চলে, সেই সাথে ভাষার কাঠিন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেও উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা উপন্যাসের তালিকায় ‘কপালকুণ্ডলা’ এক অভিনব শিল্পকর্ম। বিশেষত তৎকালীন গোরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কপালকুন্ডলা চরিত্রের মধ্য দিয়ে নারীর স্বাধীনচেতা ও সাহসী মনোভাব ফুটিয়ে তোলার বিষয়টি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
তেইশ, তিন, বাইশ
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?