তুই ভেবে কান্না ছুঁই : সালমা সুলতানা | Tui Vebe Kanna Chui By Salma Sultana | বই রিভিউ

Title তুই ভেবে কান্না ছুঁই
Author সালমা সুলতানা
Publisher চলন্তিকা
Quality হার্ডকভার
ISBN 9789849618935
Edition 1st published 2022
Number of Pages 80
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা

তুই ভেবে কান্না ছুঁই : সালমা সুলতানা | Tui Be Kanna Chui By Salma Sultana | বই রিভিউ

গল্প উপন্যাস পড়তে পড়তে মাঝেমাঝেই খুব কবিতার তৃষ্ণা পায়। কখনো বিষণ্ণ বিকেলে কিংবা একাকী চাঁদনী রাতে কবিতা পাঠের ইচ্ছে হয়। ঠিক সে সময় যদি একটা কাব্যগ্রন্থ থাকে তাহলে সেটা হয়ে উঠে আশীর্বাদ স্বরূপ। সম্প্রতি আমিও এমন একটা কবিতার বই পড়েছি…

” তুই ভেবে কান্না ছুঁই ” – নামটা খুবই পছন্দ হয়েছে আমার। এবার কবিতার গল্প করা যাক।

এই বইয়ের জীবন জুড়ে ঘটে যাওয়া যুগলের কথামালা, আবেগ, অনুভূতি তুলে ধরা হয়েছে কবিতায়,ছন্দে আর কবির চমকপ্রদ বর্ণনায়।

কবিতার বর্ণনাগুলো এতটা সুন্দর, এতখানি হৃদয়গ্রাহী——

” নিজেকে হারিয়ে ফেলি চোরাপথে যদি

তুমুল ঢেউয়ে দিশেহারা হয় জীবন- নদী

ছেড়ো না হাত যেন তুমি কোন ক্ষণে

তোমাকেই পাশে চাই জীবনে মরণে”

কবির বর্ণনায় কবিতাগুলো কখনো থমথমে কখনো না পাওয়া না পাওয়ার আক্ষেপ পুরোটা জুড়েই–

” জয়িতাঃ দূরত্বের অপর নামই তো মায়া। ভালোবাসার সম্পর্কে দূরত্বই কাছে টেনে রাখে।

আকাশঃ তবে কেন সব ভালোবাসা হারিয়ে যায় একদিন।

জয়িতাঃ বেঁচে থাকবে বলে।

আকাশঃ জয়িতা! একটা গান শোনাবে আজ?

জয়িতাঃ ‘ আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার, পরাণসখা বন্ধু হে আমার!’ “

কবির বর্ননা কখনো একলা বিকেল কখনো বা উদাস দুপুর কখনো আবার গুমোট বিকেল। সেই কথাই কবি কবিতায় বলেন নিজের মতো করে –

” একলা একা গুমোট বিকেল,একলা পাখি

একলা একা উদাস দুপুর, জলজ আঁখি।

একলা একা ধূসর বিকেল, নিঝুম সাঁঝে

একটা পাখি একলা নীড়ের ব্যথার ভাঁজে! “

এই বইয়ের কবিতা গুলোর নাম কি ভীষণ দারুণ! কখনো সেগুলো – ‘ মেনে নিচ্ছি অভিযোগ’, ‘ আমি এক ভুল বই’,’ দূরত্বের অপর নাম মায়া’, ‘পুবের পহর’, ‘যে থাকে মর্মে গভীর ধ্যানে’ নামে। এই নামকরণ গুলি বুঝি কবির আরো একটি চমৎকার দক্ষতা!

এই যে কবি বলছেন বেশ-

” বন্ধু চল, উড়ি ঘাসফড়িংয়ের সাথে,

চল, চা খাই টং দোকানে, লাঞ্চ ইটালিতে

চল, দিগন্তের শেষে বিকেলের পথে

যেথায় মিশেছে আকাশ সবুজের সাথে।

… যা ভালো লেগেছেঃ

কবিতার মেঠোপথ বেয়ে কবি হয়তো বর্ণনার স্রোতে গা ভাসিয়ে ভেসে গেছন বহুদূর। সে ভাসায় কবিতাগুলো এত এত মন কেড়েছে, কবিতাপ্রেমিরা বইটিকে গোগ্রাসেই গিলে ফেলতে পারেন। কিছু বর্ণনা দেখে মনে হয়েছে আরে এটা তো বেশ জীবন্ত! সত্যি আমার ভাবনার সাথে মিলে গেছে। হয়ত আরো ক’জনার মনের সাথেও মিলে যাবে। কবিতাগুলোর ধারণ করবার একটা রেশ কেমন যেন রয়েই গেলো।

…ভালো না লাগার দিকঃ

এই বইয়ে কোন প্রকার প্রিফেসিং নেই। যেটা দেখে আমি পুরোপুরি হতাশ। আমি মূলত প্রিফেসিং আর ফ্ল্যাপ দেখে বই পড়া শুরু করি । মোটের উপর একটা ডিটেইলস ভূমিকা সব বইয়েই যেন থাকে।

ওভারঅল যেটা বলবো বইয়ের কবিতাগুলো সত্যি একেকটার থেকে একেকটা খুবই ভালো লেগেছে। প্রচ্ছদটা দেখেই প্রথমে ভালো লেগে যাওয়ার কথা। সূচিপত্রে ছোট বড় ৬৩ টি কবিতা রয়েছ এখানে। কবিতাপ্রেমী পাঠকরা অনায়েসে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন।

ব্যাক্তিগত রেটিংঃ ৮/১০

★ এই বইয়ের ফ্ল্যাপ লিখেছেন লেখক ও নির্মাতা সাদাত হোসাইন। বইটি প্রকাশ করেছেন চলন্তিকা প্রকাশনী। বইটির প্রচ্ছদ শিল্পী মাসুম রহমান।
বইটি পাওয়া যাবে রকমারি, দূরবীন, বই নিন , বুকমার্ক, ধী। এছাড়া প্রকাশনীর পেইজে নক দিয়েও সংগ্রহ করা যাবে

বই ছবি ও রিভিউ লেখকঃ
শাহানা মিতু।

বইয়ের নাম : তুই ভেবে কান্না ছুঁই
লেখক : সালমা সুলতানা
জনরা : কাব্যগ্রন্থ
প্রকাশনী : চলন্তিকা
ধরন : হার্ডকভার
মুদ্রিত মূল্য : ১৮০ টাকা
ফ্ল্যাপ_থেকে—
মানুষ জীবন জুড়েই আশ্চর্য এক নিঃসঙ্গতা বয়ে বেড়ায়। এই নিঃসঙ্গতায় সবচেয়ে বড় যন্ত্রণার নাম আক্ষেপ। যে মানুষটি সকলই পেয়েছে, যার পাওয়া হয়নি কিছুই, কিংবা যে সব পেয়েও হয়ে গেছে নিঃস্ব- তারা সকলেই যেন দিনশেষে কোথাও না কোথাও গিয়ে দাঁড়িয়েছে একই সমতলে। একই বিন্দুতে। যেন বুকের গহীন গোপন কোন কুঠুরি থেকে আলগোছে অগোচরে বেরিয়ে আসতে থাকে হাহাকারের সুদীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস। এই দীর্ঘশ্বাস থেকে মুক্তি কীসে?
এই প্রশ্নের উত্তর মানুষের কাছে নেই। কিংবা মানুষ নিজের অজান্তেই জীবনভর ওই দুঃখবোধ, ওই অপ্রাপ্তির হাহাকার আর নিঃসঙ্গতা উদযাপন করতে চায়। এ যেন ব্যথার মতন সুখ।
সালমা সুলতানার কবিতাও তেমন। এখানে যন্ত্রণায় ভার হয়ে থাকে বুক, থমথমে ব্যথা জমে না পাওয়ার আক্ষেপে, কিন্তু দিন শেষে ওই না পাওয়ার আক্ষেপ কিংবা তেষ্টাতেই যেন মিশে থাকে প্রাপ্তি। যা পাওয়া হয় না, তাই যেমন সবচেয়ে বেশি রয়ে যায় চিরকাল, যা পাওয়া হয়ে যায়, তা-ই যেন হারিয়ে যায়, ধূসর হতে থাকে ক্রমশই, সবচেয়ে বেশি, ঠিক তেমন। এ যেন হৃদয়ের কথকতা কবিতায়, ছন্দে, শব্দে আদল পেয়েছে আমাদের সব অনুভব।
তিনি তাই বলেছেন-
‘সব আছে, তবু কেন তুমি-আমি একা?’
কিংবা-
‘শক্ত মুঠোয় হাত, আঙুলের ফাঁকে আঙুল,
তবু মনে হয়, এই বুঝি ছুটে গেল হাত!
এত বড় চাঁদ, তারপরও কেন এত কালো রাত।’
কিংবা- 
‘কার ঘরেতে জ্বালতে আলো সলতে দিশেহারা,
কার বিষাদের বারিধারায় ডুবছে ধ্রুবতারা।’
এই অনুভব তো চিরন্তন। আমাদের সকলের। সালমা সুলতানা তার কথা ও কলমে সেই সব অনুভব ছুঁয়ে গেছেন আলগোছে, গোপনে।অথচ তা সোচ্চার হয়েছে যন্ত্রণায় একাকীত্বে।
রিভিউয়ারঃ অভিষেক চক্রবর্তী
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?