দহনধ্বনি : হাবিবুল্লাহ রাসেল – Nobodhoni By Habibullah Rasel

  • বইয়ের নাম : দহনধ্বনি 
  • লেখকের নাম : হাবিবুল্লাহ রাসেল  
  • বইয়ের ধরণ : উপন্যাস
  • প্রকাশন : আপন প্রকাশ
  • প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
  • প্রচ্ছদ : মোস্তাফিজ কারিগর
  • মুদ্রিত মূল্য : ১৫০৳
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৮০
  • Review Credit 💕 Mursalin Manon

“দহনধ্বনি: জীবনের করুণ সেই সুর”

সোহাগদলেই আমার বাড়ি। বাড়িতে গেলে দক্ষিণ-পূর্ব সোহাগদল দীঘিরপাড় পেয়াদাবাড়ি জামে মসজিদে আমি সচরাচর নামাজ আদায় করে থাকি। দীঘিরপাড় কিন্তু কোন সে দীঘি? নাম কি সেই দীঘির? ইতিহাসটাও বা কি? কোথায় গেলো সেই দীঘি? এসব নানান প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। সেই কৌতুহল থেকেই আমি আমার দাদির কাছে প্রশ্ন করি। তার কাছ থেকে জানতে পারি আমাদের বাড়ির সামনে যে রাস্তা ওটাই ছিলো দীঘির একটি পাড়। দীঘির নামটা তারকাছ থেকে আর জানতে পারিনি। “অনেক আগের কথা তো কি কইরা কই?” দাদি বললেন। তবে নাম না বলতে পারলেও দাদির কাছ থেকে দীঘির আরও কিছু গল্প শুনলাম। জানলাম নেক বিবির গল্প। আরও কত কি! হঠাৎ করে দীঘি নিয়ে ফেইসবুকের একটা গ্রুপের একটা পোস্ট আমার সামনে আসে। জানতে পারি এই দীঘির নাম “দস্তরখান দীঘি“। পোস্টের নিচে রেফারেন্স হিসেবে হাবিবুল্লাহ রাসেল-এর “দহনধ্বনি” নামক উপন্যাসটির নাম লেখা। এই লেখক আমাদের ফজিলা রহমান মহিলা কলেজেরই শিক্ষক। আরও জানতে পারলাম তিনি আমার কাজিনের সরাসরি শিক্ষক।
হতদরিদ্র তৈয়ব মাঝি এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। বাবার সাথে বাছারী নৌকাতেই কেটেছে তৈয়বের শৈশব। মাঝি হয়ে ওঠার হাতেখড়িটা সেখান থেকেই। বাছারী নৌকা ছিলো স্বরূপকাঠির ঐতিহ্য। বাছারী তো ভালো বলতে গেলে নৌকারই এখন কোনো কদর নেই। চার-চারটি ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী রাহেলাকে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারেই তার দিন কাটে। বড় মেয়ে আকলিমাকে বিয়ে দিয়েছে পাশের গ্রামে। সেখানে সে ও ভালো নেই। ছেলে আনোয়ার একটা দোকান করে দেবে দেবে করেও টাকার অভাবে তাও আর হচ্ছে না। এই অভাবের কারণে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকেও ধরে রাখতে পারেনি। আজ এ বয়সে এসেও শেফালীকে মনে পড়ে তৈয়বের। গ্রামে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও আর আধুনিক হয়ে ওঠা হয় না তৈয়বের মত মাঝিদের। কমে যায় তাদের কদর। তৈয়বের বন্ধু তছলিমও তেমনি একজন মাঝি। 
পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারি জিনিস নাকি বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ। এত দুঃখ-কষ্টের সেই অবর্ণনীয় শোকও বহন করতে হয় তৈয়বকে। শহর থেকে এক সাংবাদিক আসে বেড়াতে। তৈয়বকে ভাড়া করে সে। তাকে নৌকায় করে নানান জায়গায় ঘুরে বেড়ায় তৈয়ব। নানান মানুষের সাথে দেখা হয়। উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের অজস্র ইতিহাস। সাংবাদিক কি পেরেছিলো তৈয়বের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে? নাকি ভালো দিনের অপেক্ষায় আজও নদীর ঘাটে ঠায় দাঁড়িয়ে তৈয়ব মাঝি? 
সন্ধ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে স্বরূপকাঠি থানা আর ছারছিনা দরবার শরীফ এবং পশ্চিম পাড়ে ইন্দুরহাট ও মিয়ারহাট বন্দর। ইন্দুরহাট-মিয়ারহাটকে ভাগ করছে উত্তর-দক্ষিণে বয়ে যাওয়া ছোট একটি খাল। মিয়ারহাটে তিনটি খালের মিলিতস্থলে দাঁড়িয়ে দেখা যায় তিনটি ইউনিয়ন। সন্ধ্যা-কচা-কালিগঙ্গা এই তিন নদীর মোহনা। আরও এমন অনেক জায়গার বর্ণনা আছে এ উপন্যাসে। এর প্রায় বেশিরভাগ স্থানগুলোই আমার দেখা। এগুলো সবই যেন আমার নিজের। তারপরেও উপন্যাস পড়তে পড়তে আমি যেনো বাস্তবে এ স্থানগুলোতে চলে গেছি বারবার। লোকমান পাগলা ও আঁখি পাগলির মাধ্যমে লেখক সমাজের আরেকটি দুরবস্থাকেই ইঙ্গিত করেছেন। উপন্যাসের প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতে পুঁথি, লোকগান, জারিগানগুলো ছিলো অনবদ্য। 
মুঘল সম্রাট আকবরের শিক্ষক ছিলেন এই দস্তর খান। ভাগ্যের ফেরে তিনি আসেন আমাদের এই সোহাগদলে। খনন করেন একটি দীঘি। তার নামানুসারে এ দীঘির নাম রাখা হয় “দস্তরখান দীঘি”। এ উপন্যাসের অনেকটা অংশ জুড়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প। পাক সেনাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে শর্ষিনার ততকালীন পীর সাহেবের ভূমিকা, আটঘর কুড়িয়ানার গণহত্যা, স্বরূপকাঠি বাজারে লুটপাত ও নির্মম হত্যাযজ্ঞ, বরছাকাঠির কাছারিউলার গণহত্যা, মাদ্রা পল্লীমঙ্গল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অগ্নিকান্ডের কাহিনীগুলো পড়তে পড়তে কখনো কখনো শিউরে উঠেছি। জালাল কাজীর কন্যা বরু বানুর ইতিহাস আর দস্তরখান খান দীঘির ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এ উপন্যাস অনেক আগেই সামাজিকতাকে ছাড়িয়ে পরিণত হয়েছে ঐতিহাসিক এক উপন্যাসে বলে আমি মনে করি।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?