Title | চন্দ্রভুক |
Author | মুনীরা কায়ছান |
Publisher | উপকথা প্রকাশন |
Quality | হার্ডকভার |
Edition | 1st Published, 2021 |
Number of Pages | 128 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
চমৎকার একটি বইয়ের সাথে কাটলো আনন্দঘন কিছু সময়।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে বইটি একজন তরুণ নব্য লেখকের লেখা। আর এটি তার দ্বিতীয় উপন্যাস। প্রথম উপন্যাসটি আমার পড়া হয়নি। লেখকের লেখনশৈলী সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানতাম না। ইতিপূর্বে প্রচার বা প্রচারণায় পাগলপারা হয়ে কিছু বই কিনে খুব ফ্যাসাদে পড়েছি। তাই রিভিউ পড়ে ভালোভাবে নিশ্চিত হয়েই বই কিনি এখন। এতে কেউ যদি আমাকে নাকউঁচু বলে গালি দেন, আমি সেই অপবাদ অস্বীকার করব না।
এই লেখকের লেখা সম্পর্কে খুব বেশি কিছু শুনিনি। যা শুনেছি তা আর দশটা বইয়ের ক্ষেত্রেও শুনে থাকি। কিন্তু একেবারে ধুম তুলে ফেলার মতো কোনো প্রচারণা তাকে নিয়ে হয়নি। কেন হয়নি তা বলতে গেলে অনেক দুঃখের ইতিহাস শোনাতে হয়। সম্ভবত এটাই আমাদের সাহিত্যের বর্তমান দুর্দশার কারণ। যেসব লেখার মাধ্যমে নবীন একজন লেখক সাহিত্যাংগনে খুব জোরালো পদক্ষেপে গৃহপ্রবেশ করেন, সেই লেখাগুলো কেন যেন আমাদের বেশিরভাগ পাঠকের নজরে আসে না। নজরে আসে এমন কিছু লেখা, যেগুলোকে সাহিত্য উপাধি দিতেও কষ্ট লাগে।
যাহোক, ধান ভানতে শিবের গীত গাইতে বসলাম। কাজের কথায় চলে আসি।
বইটির নাম চন্দ্রভূক। লেখক মুনীরা কায়ছান। প্রকাশনী উপকথা। ফকির তানভীর ভাইকে আমি শুভেচ্ছা আর অভিবাদন জানাই, যে এমন একজন লেখকের বই তিনি প্রকাশ করেছেন।
বইটি মূলত ইতিহাসনির্ভর। সেই ইতিহাসকে ভিত্তি করে বইয়ের কাহিনি এগিয়েছে আরও পরবর্তী চারশত বছরে।
চারশত বছর পূর্বে রাজা প্রতাপাদিত্যের শাসনামলে স্বাধীন বাংলায় নিভৃতচারী এক মূর্তি নির্মাতা জগবন্ধুর গল্প এটি। তার তৈরি করা মূর্তিগুলো প্রাণ পেত অপূর্ব নির্মাণশৈলী আর প্রগাঢ় মমতাময় মনোযোগে। গ্রামে নানারকম রটনা ঘুরেফিরে বেড়ায় তাকে নিয়ে। লোকেরা বলে, জগবন্ধু নাকি মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে। জগবন্ধু নিজেও তা বিশ্বাস করে। তার প্রতিষ্ঠিত মূর্তিগুলো তার সাথে কথা বলে। মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা না হলে সে বুঝতে পারে, কাজ ভালো হয়নি। পর্তুগীজ দস্যুও তাকে দিয়ে মেয়ের জন্য পুতুল বানিয়ে নেয়। কিন্তু নিয়তির দুর্ভেদ্য কোনো ইশারায় সেই কুখ্যাত পর্তুগীজ দস্যুরই এক অলঙ্ঘনীয় অভিশাপের শিকার হয় জগবন্ধু। সেই অভিশাপে কুষ্ঠ হয় তার। জগবন্ধুর গড়া এক বারবনিতার মূর্তিকে ঘিরেই শুরু হয় সেই অভিশাপের পথ পরিক্রমা।
গল্পের দ্বিতীয় ভাগ শুরু হয় সম্পূর্ণ নতুন এক পটভূমিকায়। কিন্তু সেই পটভূমিকায় নানারকম ঘটন অঘটনে উঠে আসে চারশত বছর আগে তৈরি হওয়া জগবন্ধুর সেই মূর্তি আর সেই দুর্ভেদ্য অভিশাপের পুনরাবৃত্তি।
বইটি পড়তে গিয়ে কিছু কিছু জায়গায় আমি বাকরুদ্ধ হয়েছি। ভাষার এত নিটোল গাঁথুনি, উপমার এত যথার্থ ব্যবহার সত্যি বলছি দীর্ঘদিন আমার নজরে আসেনি।
যেহেতু লেখিকা এখনও নবীন, তাই বলা চলে ইতিহাস নিয়ে এটি তার প্রায় প্রথমদিকের একটা প্রচেষ্টা। ইতিহাসনির্ভর গল্পগুলোর সূতার টানগুলো হতে হয় একেবারে নিখুঁত। প্রতিটা ছেঁড়ে যাওয়া সূতা যাতে অব্যর্থ লক্ষ্যে ফিরে আসে। সেদিক দিয়ে লেখিকা প্রায় সফলই বলা চলে। কিছু জায়গায় টুকটাক প্রশ্ন জেগেছে মনে। লেখিকাকে সামনে পেলে ভাবছি উত্তরগুলো জেনে নিব। এই যেমন, সুখেনের গল্পটাকে লেখিকা কেন সামনে বাড়ালো না! এই চরিত্রটি সৃষ্টির তবে উদ্দেশ্য কী?
বইটির মলাটমূল্য মনে নেই, যেহেতু হাতের কাছে নেই এই মুহূর্তে। তবে মাত্র ১৩১ পৃষ্ঠার বইটি তেমন দামি বই নয়। কিন্তু বিষয়বস্তু আর ভাবনার গভীরতায় বইটি অনায়াসেই আগামি অনেকগুলো বছর নির্বিঘ্নে টিকে থাকার যোগ্যতা অর্জন করে নিয়েছে।
লেখিকার প্রতি আমার সস্নেহ অভিবাদন। লেখালেখি হোক শুধুমাত্র সাহিত্যকে ভালোবাসে। বাংলা সাহিত্যকে অনেক কিছু দেওয়ার আছে তোমার। চন্দ্রভুক বইটি অরিজিনাল কপি ক্রয় করুন
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?