অনেক আঁধার পেরিয়ে : মুহাম্মদ জাভেদ কায়সার – পাঠক অনুভূতি | Onek Adhar Periye : Muhammad Javed Kaysar Books

  • বই: অনেক আঁধার পেরিয়ে
  • লেখক: মুহাম্মদ জাভেদ কায়সার
  • মূল্য: ২৭৫ টাকা
  • প্রকাশনী:সমর্পণ প্রকাশন
  • Review Credit 💕 Khandokar Sanudullah Sanid

“মুমিনদের কি সময় হয়নি- আল্লাহর স্মরণে ও যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তার কারণে হৃদয় বিগলিত হবার?”

[সূরা হাদীদ, ৫৭:১৬]

আচ্ছা একটা ব্যাপার বলুন তো, আমরা কি সুখী?

দেশের এক প্রান্তে এক লোক বিশাল এক ডুপ্লেক্স বাড়িতে এসি চালিয়ে বসেও যেমন চিন্তার পাহাড় নিয়ে অশান্তিতে থাকে, চিন্তা করতে থাকে কিভাবে সামনের মাসে আরেকটা বাড়ি করা যায় ঠিক এমনইভাবে দেশের আরেক প্রান্তে হয়ত কোন দিনমজুর গাছের ছায়ায় বাতাসে বসে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শুকুরিয়া করছে যে তাকে আল্লাহ যে অবস্থানে রেখেছে তাতে সে সুখী।

অথচ দেখুন ত আমরা কেবল মনে করি সুখ আছে এই টাকার মধ্যে। দিনভর আমরা এই টাকার পেছনে ছুটে বেড়াই সামান্য শান্তির খোঁজে।

আজকে হাসপাতালের বেডে বা আইসিইউ তে যিনি রয়েছেন তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন তো তিনি কেমন আছে? হয়ত সে মুচকি হাসি দিবে কিন্তু চেহারায় ফুটে উঠবে সুস্থতা লাভের আকুতি।

একটু ভেবে বলুন তো আমরা মুসলিম হিসেবে কি উপার্জন করেছি আখিরাতের জন্য?

আজ বা কাল অথবা পাঁচ বছর পর আপনি আমি মারা গেলে কি নিয়ে কবরে যাব সেই হিসাব কি আছে? অথচ দেখুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মাত্র ২০ টাকার হিসাব মেলাতে না পারলেই তুলকালাম বাধিয়ে দেই কর্মচারীদের সাথে। একবারও মনে করে দেখিনা একদিন নিঁখুতভাবে আমাদের কৃতকর্মেরও হিসাব নেওয়া হবে যেখানে চুল পরিমাণ ছাড় আমরা পাবোনা।

আমরা অনেকেই গোপনে অনেক পাপ করে যাচ্ছি বছরের পর বছর কিন্তু একটিবার ভেবে দেখুন ত যিনি আপনার এই পাপ বছরের পর বছর গোপন রেখে যাচ্ছেন তিনি কি পারেননা আপনার এই পাপ প্রকাশ করে দিতে?

তাহলে কেন করেন না? কারণ তিনি চান তার বান্দা তার নিকট ফিরে আসুক,তওবা করুক। ঐ ব্যক্তির পাপ কিয়ামত পর্যন্ত গোপন রাখার ক্ষমতা তার রয়েছে।

আমরা প্রতিদিন স্যোশাল মিডিয়ায় শত শত পোস্টে লাইক কমেন্ট করে থাকি যেগুলোর কিছু ভালো আবার কিছু খারাপ। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনি এই সামান্য লাইক,কমেন্টের মাধ্যমেও সওয়াব অর্জন করতে পারবেন।

উপরে যা লিখেছি সেগুলো জেনেছি বা উপলব্ধি করেছি মুহাম্মদ জাভেদ কায়সারের ‘অনেক আঁধার পেরিয়ে’ বইটা থেকে। এধরনের বইগুলো মূলত একটা রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করে। মাঝে মাঝে মনকে হালকা করে। পড়ার পর মনেহয় হয়ত একটা বড় চিন্তা মাথা থেকে নেমে গেলো। বইটার শুরুর গল্পেই লেখক তার জীবনের একটা কঠিন সময়কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন যেটা পড়লে অন্তত এটুকু বলতে পারি আপনিও অল্প সময়ে বিশাল এক বাস্তবতার সম্মুখীন হতে বাধ্য। নিজের কল্পনায় গল্পের সেই সদ্য বাবাহারা বালকটিকে খুঁজে পাবেন।

লেখক প্রতিটা গল্পেই একেকটা বার্তা দেবার চেষ্টা করেছেন যেখানে আমাদের বাস্তব গল্পের সাথে স্থান পেয়েছে আজ হতে হাজার বছর পূর্বের নবীদের অবস্থা।

কখনো এসেছে আমাদের প্রিয়নবীর বলা কোন হাদিস,কখনো এসেছে সাহাবীদের আত্মত্যাগ, কখনো এসেছে সেসময়ের সমাজব্যবস্থা,কখনো এসেছে মানুষের সাথে মানুষের সৎ ব্যবহারের নির্দেশ।

আমাদের সমাজে অনেক পরিবার একাধিক কন্যাসন্তান মেনে নিতে পারেনা। একটা পুত্রসন্তানের জন্য শশুর বাড়ি থেকে নানান কথা শুনতে হয়। বইতে কন্যাসন্তান নিয়ে খুব সুন্দর তিনটি হাদিস রয়েছে যেটা আমার জানা ছিলোনা তবে জানার পর মুগ্ধ হয়েছি।

গল্পের ছলে হাদিস আর সেইসাথে আমাদের বর্তমান অবস্থার এই চিত্রগুলো যেমন মুগ্ধ করেছে তেমনি মুগ্ধ করেছে লেখক পরিচিতি। লেখক পরিচিতিতে কেন মুগ্ধ হয়েছি সেটা জানার জন্য নিজেরাই পড়ে দেখতে পারেন এটা।

আল্লাহ লেখককে তার কাজের উত্তম প্রতিদান দান করুক।

সবশেষে বলব, “পাপে জর্জরিত এ অন্তর কলুষিত হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। তাই এই কলুষিত অন্তরে ছোয়া লাগুক পবিত্রতার, অনেক আঁধার পেরিয়ে পথহারা মানুষগুলো দেখা পাক এক নতুন আলোর যে আলোতে মিশে আছে পবিত্রতা, যার বাতাসে পাওয়া যাবে প্রশান্তির ছোয়া।”

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?