বই জান্নাত-জাহান্নাম : লেখক ড. উমার সুলায়মান আল আশকার | Jannat Jahannam By Dr. Umar Sulaiman Al Ashkar

  • বই : জান্নাত-জাহান্নাম
  • লেখক : ড. উমার সুলায়মান আল আশকার
  • প্রকাশনী : রুহামা পাবলিকেশন
  • বিষয় : পরকাল ও জান্নাত-জাহান্নাম
  • পৃষ্ঠা : 384, কভার : হার্ড কভার
দুনিয়ার জীবন শেষে আখিরাতের প্রতিটি ধাপ পেরিয়ে কর্মফল অনুযায়ী নির্ধারিত চূড়ান্ত দুটি ঠিকানার নাম জান্নাত ও জাহান্নাম। জান্নাত অতুল নিয়ামতের আধার, যেখানে নেই কোনো কষ্ট-ক্লেশ বা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তাতে রয়েছে কেবলই সুখ-শান্তি আর আনন্দ-বিলাসের মনোরম সব ব্যবস্থা। পক্ষান্তরে জাহান্নাম ভীষণ শাস্তি ও ভয়ংকর এক স্থান, যেখানে আরামের লেশমাত্রও নেই। তাতে রয়েছে কেবলই আক্ষেপ-আর্তনাদ আর অসহনীয় কষ্ট-যন্ত্রণা।
সম্পূর্ণ বিপরীত অনন্তকালের এ দুটি স্থান আল্লাহ তাআলা প্রস্তুত করে রেখেছেন তাঁর বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী বান্দাদের জন্য। জান্নাত আল্লাহর আনুগত্যশীল মুমিন বান্দাদের চিরস্থায়ী আবাস; আর জাহান্নাম কাফির-মুশরিকদের চিরস্থায়ী ঠিকানা। আর মুমিনদের মাঝে যারা আল্লাহর নাফরমানির দরুন জাহান্নামে যাবে, তারাও একটা সময় মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। 
বস্তুত আখিরাতের সর্বশেষ এ দুটি ঠিকানা জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান ও উপলব্ধি যত স্বচ্ছ হবে, ততই আমরা দুনিয়ার ধোঁকা ও প্রবঞ্চনা থেকে সতর্ক হয়ে আসল গন্তব্যে পৌঁছার পাথেয় লাভে মনোযোগী হতে পারব। জাহান্নামের ভীষণ শাস্তির কথা জানা থাকলে গুনাহের পথে কদম বাড়াতে অন্তরে ভীতির সঞ্চার হবে। তদ্রূপ কুরআন-হাদিসে বর্ণিত জান্নাতের অতুল নিয়ামত ও সুখ-শান্তির কথা জানা থাকলে তা লাভের আশায় দুনিয়াতে নেক আমলে মশগুল থাকার প্রতি অন্তরে বেশ আগ্রহ জাগবে।
———-
সকল প্রশংসা মহান ও পবিত্র সত্তার, যিনি সৃজন করেছেন জান্নাত ও জাহান্নাম, সৃষ্টি করেছেন উভয়টির জন্য উপযুক্ত অধিবাসী এবং জান্নাতকে বানিয়েছেন তাঁর বন্ধুদের বসবাসের আবাস আর জাহান্নামকে বানিয়েছেন তাঁর শত্রুদের নিকৃষ্ট ঠিকানা। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসুল, সৃষ্টির সেরা জীব মুহাম্মাদ মুস্তফা -এর প্রতি, যিনি আগমন করেছেন জান্নাত ও জান্নাতের সুখকর নিয়ামতরাজির প্রতি আহ্বান করতে এবং জাহান্নাম ও জাহান্নামের শাস্তির ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন ও সতর্ক করতে।
রহমত বর্ষিত হোক প্রিয় রাসুল -এর পরিবার-পরিজন, সাহাবি ও তাঁদের অনুসারীদের প্রতি, যাঁরা জীবনের প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে, রাসুলের প্রতিটি পদক্ষেপ বাস্তবায়নে তাঁকে সাহায্য করেছেন। যাঁদের রাত কেটেছে সালাতে রত থেকে, তাওবা ও ইসতিগফার করে, কুরআন তিলাওয়াতে এবং রবের দরবারে প্রার্থনায় রত থেকে; আর দিন কেটেছে রবের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায় সিয়াম পালনে। কারণ, তাঁরা জানতেন, কষ্ট ও পরিশ্রম ছাড়া জাহান্নাম থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না এবং জান্নাতের নিয়ামতও ভোগ করা সম্ভব হবে না।
‘পরকাল’ সিরিজের তৃতীয় পর্ব জান্নাত-জাহান্নাম বই। যেখানে জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তৃতীয় পর্বকে আমরা দুটি অধ্যায়ে বিভক্ত করেছি। প্রথম অধ্যায়ে দশটি পরিচ্ছেদে জাহান্নামের আলোচনা করা হয়েছে। এর পূর্বে একটি ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে।

ভূমিকায় রয়েছে জাহান্নামের পরিচিতি পর্ব।

প্রথম পরিচ্ছেদে ‘জান্নাত ও জাহান্নাম’ আল্লাহর মাখলুক বা সৃষ্ট হওয়ার পক্ষে দলিল-প্রমাণ সহকারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর আকিদা তুলে ধরা হয়েছে এবং যারা এর ভিন্ন মত লালন করে, তাদের মতকে খণ্ডন করা হয়েছে।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে জাহান্নামে নিযুক্ত প্রহরীদের নিয়ে আলোচনা পেশ করা হয়েছে। তাদের অবকাঠামো ও সংখ্যার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
তৃতীয় পরিচ্ছেদে জাহান্নামের সবিস্তার বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। জাহান্নামের অবস্থান, প্রশস্ততা ও পরিধি, গভীরতা, প্রবেশপথ, জ্বালানি, উত্তাপ, কথোপকথনের ধরন, আচার-ব্যবহার এবং দুনিয়াবাসীর ওপর এর প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
চতুর্থ পরিচ্ছেদে জাহান্নামের চিরস্থায়ী হওয়ার বিষয়ে দলিল-প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে এবং যারা জাহান্নামকে ধ্বংসশীল ও ক্ষণস্থায়ী হিসেবে বিশ্বাস করে, তাদের মতের খণ্ডন করা হয়েছে।
পঞ্চম পরিচ্ছেদে জাহান্নামিদের সম্পর্কে বিবরণ দেওয়া হয়েছে। জাহান্নামের অধিবাসীরা দুধরনের। এক শ্রেণি অনন্তকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। কাফির-মুশরিকরাই এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। আরেক শ্রেণি কিছুকাল জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে। যারা দুনিয়াতে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে নাফরমানি করেছে, তারা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এই পরিচ্ছেদে আমরা দুটো শ্রেণি নিয়েই সবিস্তারে আলোকপাত করেছি। আরও উল্লেখ করেছি তাদের জাহান্নামি হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ ও অপরাধগুলো।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে আলোচনা করেছি অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামি হওয়ার বিষয়ে। তা ছাড়া এখানে অধিকাংশ মানুষ বিপথগামী হওয়া এবং স্বল্প সংখ্যকের মুক্তি পাওয়ার প্রমাণ ও গোপন রহস্য সম্পর্কেও আলোচনা করেছি। বিশেষভাবে এখানে আমি তুলে ধরেছি, মহিলাদের অধিকাংশই জাহান্নামি হওয়ার কারণ ।
সপ্তম পরিচ্ছেদে জাহান্নামিদের দৈহিক কাঠামো ও বিশালাকৃতির বর্ণনা দিয়েছি।
অষ্টম পরিচ্ছেদে বিশেষভাবে জাহান্নামিদের খাবার ও পানীয় নিয়ে রাসুলুল্লাহ -এর বর্ণিত হাদিস তুলে ধরেছি।
নবম পরিচ্ছেদ খানিকটা দীর্ঘ। কারণ, এখানে জাহান্নামিদের শাস্তিবিষয়ক হাদিস উল্লেখ করেছি। এই আলোচনার ভাঁজে ভাঁজে আমি জাহান্নামের নানান রকম শাস্তির একটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। মানুষের আমল ও পাপের ভিন্নতার কারণে জাহান্নামে তাদের শাস্তিরও ভিন্নতা রয়েছে। মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলা হতভাগা জাহান্নামিদের জন্য বিভিন্ন ধরনের শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। যেমন : গলে যাওয়া, চেহারা কালো হয়ে যাওয়া, চামড়া ঝলসে যাওয়া, নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসা, হৃদয়কে অগ্নি গ্রাস করা ইত্যাদি। এ ছাড়াও জাহান্নামিদের বন্দী করে শিকল পরিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া, হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা-সহ যাবতীয় বিষয়গুলোর স্পষ্ট বর্ণনা তুলে ধরেছি।
দশম পরিচ্ছেদে সেসব পথ ও পদ্ধতিগুলোর বিবরণ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো অবলম্বন করে আল্লাহর বান্দারা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে জান্নাতের আলোচনা করেছি। এই অধ্যায়কে সাতটি পরিচ্ছেদে সাজিয়েছি । শুরুতেই একটি ভূমিকা দেওয়া আছে। যেখানে জান্নাতের পরিচিতি পর্ব উল্লেখ রয়েছে।
প্রথম পরিচ্ছেদে জান্নাতে প্রবেশসংক্রান্ত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। মুমিনদের জান্নাতে প্রবেশের মনোরম দৃশ্য, তাদের জন্য রাসুল -এর শাফাআত এবং পূত-পবিত্র করার পর মুমিনদের আল্লাহ তাআলা যেভাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, সেসব আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরও আলোচনা করেছি, সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী মুমিন সম্পর্কে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশকারী সত্তর হাজার মুমিন সম্পর্কে। যেসব দরিদ্র মুহাজিরগণ ধনী মুহাজিরদের আগেই জান্নাত লাভে ধন্য হবে, তাদের আলোচনাও বাদ পড়েনি। মুমিনদের মধ্যে যারা অবাধ্যতার কারণে ক্ষণকালের জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তারা পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু রব্বুল আলামিনের অশেষ কৃপায় এবং সুপারিশকারীদের সুপারিশের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে।
এই পরিচ্ছেদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে শাফাআত (সুপারিশ সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর মতামত এবং বিরুদ্ধবাদীদের মতের খণ্ডন। অবশেষে দুটি আলোচনার মাধ্যমে এই পরিচ্ছেদকে সমাপ্ত করেছি। এক. সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী এবং দুই. কিয়ামতের পূর্বেই জান্নাতে প্রবেশকারীর আলোচনা।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে জান্নাত ও জান্নাতিদের চিরস্থায়ী হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং এই মতের বিরুদ্ধবাদীদের মতের খণ্ডন করেছি।
তৃতীয় পরিচ্ছেদে জান্নাতের গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। আরও
আলোচনা করা হয়েছে জান্নাতের নিয়ামতরাজি, প্রবেশপথ, স্তর, মাটি, ঝরনা,
প্রাসাদ, নুর, সুবাস, গাছগাছালি, নদীনালা, ফলফলাদি এবং বাহন নিয়ে।
চতুর্থ পরিচ্ছেদে আলোচনা করেছি জান্নাতের অধিবাসীদের নিয়ে এবং যেসব আমলের কারণে তারা জান্নাতবাসী হতে পেরেছে সেগুলো নিয়ে। আরও আলোচিত হয়েছে, জান্নাতিরা (গুনাহগার মুমিন) জাহান্নামিদের মুক্ত করে জান্নাতে প্রবেশ করার বিষয়, সবল, ধনী, প্রতাপশালী ও দাপুটেদের চেয়েও জান্নাতে দরিদ্রদের সংখ্যা বেশি হওয়া, জান্নাতে নারীদের চেয়েও পুরুষদের সংখ্যাধিক্য ইত্যাদি। মুমিন ও মুশরিকদের ছোট ছোট সন্তানরা জান্নাতি হওয়ার বিষয়ে তাহকিক তুলে ধরেছি। এই পরিচ্ছেদে জান্নাতের বিভিন্ন শ্রেণির সর্দারদের, আশারায়ে মুবাশশারা এবং তাঁদের নাম উল্লেখ করেছি। এই পরিচ্ছেদের আলোচনা শেষ করেছি যে কথা দিয়ে, তা হলো কেউ আমলের বিনিময়ে জান্নাত অর্জন করতে পারবে না; বরং আমল তো কেবল জান্নাতে যাওয়ার একটি মাধ্যমমাত্র। একমাত্র আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের বদৌলতে জান্নাতে প্রবেশ করা সম্ভব হবে।
পঞ্চম পরিচ্ছেদে জান্নাতিদের এবং জান্নাতে তাদের নিয়ামতরাজির বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামতরাজি এবং দুনিয়ার ভোগবিলাসের চেয়েও সেগুলোর শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। আরও রয়েছে জান্নাতিদের হরেক রকম মুখরোচক খাবার-পানীয়, আরামের বিছানা, সেবক-চাকর, পানপেয়ালা, খাবারের পাত্র, পরিধানের পোশাক-পরিচ্ছদ এবং হৃদয়ের আশা আকাঙ্ক্ষার চমৎকার বর্ণনা দুনিয়াতে যেগুলোর কোনো জুড়ি নেই।
এই পরিচ্ছেদে আমি জান্নাতে মুমিনদের স্ত্রীদের সম্পর্কেও কিঞ্চিত আলোকপাত করেছি; হোক তারা জান্নাতের হুরে ইন কিংবা মুমিনদের দুনিয়ার স্ত্রীগণ।
একই পরিচ্ছেদে আমি আরও তুলে ধরেছি, জান্নাতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সবচেয়ে বড় যেই নিয়ামতটি দেবেন, সেটি হলো তাঁর সন্তুষ্টি, তাঁর পবিত্র চেহারার দিকে তাকানোর সৌভাগ্য এবং তাঁর তাসবিহ পাঠ ও পবিত্রতার ঘোষণা।
সপ্তম ও সর্বশেষ পরিচ্ছেদে জান্নাত ও জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যকার বাদানুবাদ এবং তাদের মাঝে আল্লাহর ফায়সালাসম্পর্কিত আলোচনা তুলে ধরেছি।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদের তাঁর আনুগত্যমূলক আমল করার তাওফিক দান করেন। স্বীয় কৃপায় আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে নাজাতের ব্যবস্থা করে জান্নাতে প্রবেশের যোগ্য করেন। নিশ্চয় তিনি সবকিছু শোনেন, সবার আহ্বানে সাড়া দেন এবং সবার খুবই নিকটে থাকেন । শান্তি বর্ষিত হোক শ্রেষ্ঠ মানব ও শেষ নবি মুহাম্মাদ -এর ওপর।
উমর সুলাইমান আল-আশকার
কুয়েত
১৯ রমাদান ১৪০৬ হিজরি
27/05/১৯৮৬
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?