বইয়ের নাম : টিউশনি
লেখক : কয়েস সামী
রিভিউ ক্রেডিট :
পৃষ্ঠা : ৮০
একটি ভালো বই যেমন ভালো কিছু শিক্ষা দেয়, ঠিক তেমনি ভালো নামও বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলে। ‘টিউশনি’ বইটিও তেমন পাঠককে পড়ার জন্য আগ্রহী করে তোলে। টিউশন নামটির সাথে প্রত্যেক মানুষেরই পরিচয় রয়েছে। তারপরেও এই টিউশনির পেছনের গল্পটা জানার আগ্রহ থেকেই বইটা পড়া যায় নিঃসন্দেহে।লেখক তার ‘টিউশনি’ উপন্যাসে টিউশনির অন্তরালে দেশে নারী নির্যাতনের নানান দিক উন্মোচন করেছেন। লেখক তা লেখার মাধ্যমে সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন।
কাহিনী সংক্ষেপ :
গল্পকথক আবীর ক্লাস টেন পড়ুয়া ছাত্রী লাবিবাকে পড়াতে যায়। সামনে তার এসএসসি পরীক্ষা। কিন্তু কোনো শিক্ষকই তাকে একমাসের বেশি পড়াতে রাজি হয় না। গত পাঁচ মাসে পাঁচজন শিক্ষক বদলিয়েছে। কিন্তু কেন কেউ একমাসের বেশি পড়ায় না? লাবিবার মায়ের অনুরোধে আবির লাবিবাকে পড়াতে রাজি হয়ে যায়। তখন লাবিবা পরিচয় করিয়ে দেয় রহস্যময়ী এক চরিত্র মিস ব্রুটালের সাথে। কিন্তু কে এই মিস ব্রুটাল? আর কেনইবা লাবিবা তাকে আবিরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো?
অন্যদিকে আবিরের প্রেমিকা রাইসার সাথে লাবিবার অদ্ভুত মিল খুঁজে পায় আবির। রহস্যের কিনারা করার আগেই আত্মহত্যা করে রাইসা। রাইসার আত্মহত্যার কারণ কী?
এছাড়াও আরও অনেক রহস্য আছে উপন্যাসটাতে। সব রহস্যের সমাধান জানতে চাইলে অবশ্যই বইটা পড়তে হবে৷
চরিত্র কথন :
উপন্যাসটিতে কথক হিসেবে অভিনীত হয়েছে আবির। সে কারণেই বলা যায় প্রধান চরিত্র হিসেবে রয়েছে আবির এবং লাবিবা। এই দুজনের সাথে সম্পৃক্ত অন্যতম চরিত্র হলো মিস ব্রুটাল। এছাড়াও রয়েছে রাইসা, রাশেদ, লাবিবার মা এবং লাবিবার বাসার কাজের মেয়ে সহ অন্যান্য আরও চরিত্র। প্রত্যেকটি চরিত্রই নিঁখুত ভাবে বর্ণনা করেছে লেখক।
পাঠ-প্রতিক্রিয়া :
টিউশনি নামটা শুনেই অন্যরকম একটা আকর্ষণ অনুভব করেছিলাম। যখন বইটা চোখে পড়ে তখন আমার মাথায় আসে যে টিউশন জীবনের কোনো কাহিনী হবে। কিন্তু বইটা পড়ার পর আমি পুরো অবাক। ভৌতিক, থ্রিলিং মিলিয়ে দারুণ একটা বই। পড়া শুরু করলে কখন শেষ হয়ে যায় টের পাওয়া যায় না। এক বসায় শেষ করার মতো বই।
প্রথমে ভৌতিক মনে হলেও শেষে থ্রিল দিয়ে ভরপুর এক গল্প। শুরুতে ভৌতিক মনে করে পাঠক এগিয়ে গিয়ে পাঠ শেষ করে ভড়কে যাবে পাঠক। আরে এটাতো ভৌতিক নয়। আসলে আমাদের সমাজব্যবস্থাটাই ভৌতিক। এখানেই লেখকের স্বার্থকতা। পাঠক একধরনের উত্তেজনা নিয়ে বইটা শেষ করলেই লেখকের কৃতিত্ব।
বইটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। থ্রিলিংয়ের সাথে সমাজের বাস্তবিক চিত্রগুলো লেখক খুব সাধারণ ভাবেই তুলে ধরেছে। সমাজে প্রতিবাদ করার মতো কেউ না থাকলেও গল্পে আবিরের প্রতিবাদের বিষয়টুকু আমার খুব ভালো লেগেছে। সাথে মিস ব্রুটালের চরিত্রটুকু বেশ উপভোগ করেছি। যদিও কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম তবুও ভালো লেগেছে অনেক।
লেখক দু’টো ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপন্যাসকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন ৷ ছাত্রী লাবীবার পাশাপাশি প্রেমিকা রাইসার সাথে প্রেমের পরিণতি এবং সমাজে বিদ্যমান নারীর প্রতি অবহেলা লেখক অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তুলে ধরেছেন।
আবিরের বলা একটা উক্তি,
“হ্যামলেট জানতো তার বাবার হত্যাকারী কে। হ্যামলেটের মন প্রতিশোধ স্পৃহায় উন্মত্ত ছিল। কিন্তু সে ছিল দ্বিধাগ্রস্ত। সে তার চাচাকে হত্যা করার সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হয়েছিল বেশি ভেবে ভেবে সময় নষ্ট করার কারণে।”
“একদিন ঠিক সব অপরাধ হয়ে যাবে শেষ,
যদি জেগে উঠে সাম্যের স্লোগানে স্লোগানে দেশ ৷”
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?