নিত্যদিনে চলতে ফিরতে যাদের থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজি, যাদেরকে পদে পদে অনুসরণ করতে চাই, তারা হলেন সালাফ—আমাদের পূর্বসূরি। অনুসরণযোগ্য সব মানুষের উপরে আছেন প্রিয়নবি মুহাম্মাদ ﷺ। সাথে আছেন তাঁর সমকালীন প্রজন্ম এবং পরবর্তী দুই প্রজন্ম।
অনন্য সব গুণাবলিতে ভাস্বর ছিলেন তারা। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ইখলাস বা অকৃত্রিম নিষ্ঠা। তাদের অন্তরগুলো ছিল শতভাগ খাঁটি। ইসলামকে জানাবোঝা এবং পালনের বেলায় কোনো ধরনের শঠতা ছিল না তাদের মাঝে।
আমাদের সালাফেরা তাদের বাহ্যিক কর্মকাণ্ড, হাবভাব, পোশাকআশাকেও এড়িয়ে চলতেন সব ধরনের অশোভন ছোপ। লোক দেখানোপনা বা রিয়া’ থেকে দূরে থাকতেন পুরোপুরি।
আমাদের যাবতীয় কথা-কাজ—সবই হতে হবে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে। না হলে পণ্ড হবে সব। সুমহান আল্লাহ বলছেন, “সত্যিকার অনুরাগ কেবল আল্লাহরই জন্য।” (৩৯:৩)
আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন, “আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে তাঁর প্রতি একান্তভাবে নিবেদিত হয়ে কোনো কাজ না করলে তিনি তা কবুল করেন না।” (নাসা’ই, ৬/২৫)
ইবরাহিম তাইমি (আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন) বলতেন, “যারা আন্তরিকভাবে নিবেদিত, পাপ কাজগুলোর মতো তারা লুকিয়ে রাখে তাদের ভালো কাজগুলো।”
শা’বি (আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন) বলেছেন, “মনীষীদের আচার-আচরণ এত ভালো—(ইসলামের ব্যাপারে) কোনো কিছু জানামাত্রই চর্চা করতেন তারা। আর একবার সেই জ্ঞান চর্চা করা শুরু করলে অযথা লোকজনের সঙ্গে সময় অপচয় করতেন না। লোকজন তখন নিজেদের মাঝে তাদের খুঁজে না পেয়ে তাদের কথা মনে করে। মনীষীরা যখন জানতে পারেন, লোকজন তাদের খুঁজছে, তারা তখন সটকে পড়েন নিজেদের ইসলামের চর্চায় কোনো কিছু কমে যাওয়ার ভয়ে।”
ফুদাইল বিন ইয়াদ (আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন) বলতেন, “যদি দেখো শাসক বা লোকজনের সামনে নিজের নাম উল্লেখ হতে দেখে কোনো মনীষী বা ‘ইবাদাতকারী খুশি হয়, তা হলে জেনে রেখো, এই লোক মানুষকে দেখানোর জন্য করে এসব।”
সুমহান আল্লাহর কাছে যে-বিপুল ভাণ্ডার আছে, জ্ঞানে আর চর্চায় তা হাসিল করার চেষ্টার মাঝেই অকৃত্রিম নিষ্ঠার পরিচয়।
নিজের ভালো কাজের জন্য প্রশংসা পেয়ে, বা মানুষের নজরে পড়ে খুশি হওয়ার মাঝে আছে গুপ্ত লোক দেখানোপনা খাসলত। আমাদের বটবৃক্ষসম বিদ্বানেরা বলতেন, বড় অপরাধের চেয়েও এ ধরনের খাসলত বেশি খারাপ। কারণ, এগুলো এক ধরনের শির্ক (আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার করা)। আর শির্ক সবচে মারাত্মক অপরাধ। এ থেকে অনুশোচনা না করলে জাহান্নামের খপ্পর থেকে নিষ্কৃতি নেই।
প্রিয় ভাইবোন, আসুন নিজেদের দীন পালন আর ইসলামি জ্ঞান চর্চার কারণগুলো খতিয়ে দেখি ভালো করে। আল্লাহর জন্য কিছু করার মোড়কে যদি লোকে আমাদের দেখবে, আমাদের নাম জানবে—এই হয় আমাদের মতলব, আল্লাহর সন্তুষ্টির চেয়ে যদি লোকের সন্তুষ্টি বড় হয়, তা হলে আমাদের কপালে মারাত্মক দুর্গতি অপেক্ষা করছে। আমাদের মনে রাখা দরকার, এই পৃথিবীর ঘুর্ণন আল্লাহরই ইচ্ছায়। একটি ক্ষুদ্র বীজও মাটি ফুঁড়ে বেড়ে ওঠে আল্লাহর আদেশে। সবকিছুর উপর তাঁর কড়া নজরদারি। তিনি চাইলে আমাদের লোক দেখানো কাজের জন্য শাস্তির খড়গ চাপাতে পারেন। ফাঁস করে দিতে পারেন আমাদের অন্যায়গুলো এই দুনিয়াতে এবং পরজীবনে।
আল্লাহ ছাড়া কারও সাধ্য নেই যে আমাদেরকে এই দুর্গতি থেকে বাঁচাবেন। খারাপ কাজ থেকে তো আমরা আল্লাহর কাছে শরণ খুঁজিই, যেসব ভালো কাজ আল্লাহর জন্য না করায় খারাপ কাজে বদলে গেছে, সেগুলোর জন্যও আমরা আশ্রয় চাই আল্লাহর কাছে।
সিয়ান│বিশুদ্ধ জ্ঞান│বিশ্বমান