মুসলিম বিশ্বে ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব by সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.
Publisher মুহাম্মদ ব্রাদার্স
Quality হার্ডকভার
ISBN 9789849017714
Edition 1st Published, 2012
Number of Pages 279
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা
পাশ্চাত্য সভ্যতা সম্পর্কে কোন কোন দেশের বিরুদ্ধাচরণ অথবা নিরপেক্ষতা অবলম্বন
মুসলিম বিশ্ব পাশ্চাত্য সভ্যতার কবলে খৃস্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইসলামী বিশ্বকে একটি সংকটপূর্ণ , জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয় । এ বিষয় সম্পর্কে তাদের সঠিক কর্মপন্থা ও দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করত একটি স্থায়ী ও স্বাধীন দুনিয়া হিসেবে তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও অস্তিত্ব । এটা ছিল কর্মক্ষম জীবন ও প্রফুল্লতা , সাহসিকতা ও সংকল্প এবং উন্নতি ও সম্প্রসারণ ক্ষমতায় পরিপূর্ণ পাশ্চাত্য সভ্যতার বিষয় । কারণ এটাকে মানব ইতিহাসের অধিক শক্তিশালী ও অতি বিস্তৃত সভ্যতার মধ্যে গণ্য করা যায় । প্রকৃতপক্ষে ( যদি গভীরভাবে দেখা যায় ) তা ছিল ঐ সমস্ত প্রভাব ও কার্যক্রমের স্বভাবগত ফলাফল যা বহুদিন হতে ইতিহাসে কাজ করছিল এবং যথাসময়ে এই নতুন আকারে প্রকাশের অপেক্ষায় ছিল । মসলিম বিশ্ব অধিকভাবে এ বিপদের সম্মুখীন ছিল । কেননা জীবনের কারখানা হতে যখন সমস্ত পুরানো ধর্ম বাদ পড়ে যায় তখন কেবল ইসলামই দীনী ও উত্তম আচার – ব্যবহারের দাওয়াতের বাহক এবং মানব সমাজে জীবন যাপনের একমাত্র রক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে অবশিষ্ট রয়ে যায় । অনেক বিশাল বিস্তৃত উর্বর দেশ এই ইসলামী বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত হয় ।
তাই এই যান্ত্রিক সভ্যতার চ্যালেঞ্জ অন্য কোন জাতির ও জীবন পদ্ধতির তুলনায় মুসলিম বিশ্বের দিকে অধিক পরিমাণে ধেয়ে এসেছে । মিশ্র সভ্যতা এই সভ্যতা নিজ প্রশস্ত গণ্ডিতে শামিল করেছিল অনেক কিছু : আকিদা – বিশ্বাস , চিন্তা – চেতনা , তত্ত্বীয় বিধি – বিধান , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শন , সামাজিক , প্রাকৃতিক ও নির্মাণশিল্প সংক্রান্ত আশ্চর্যজনক ও অভিনব জ্ঞান – বিজ্ঞান যা পাশ্চাত্য জাতির উন্নতির দীর্ঘ ভ্রমণের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের সামনে উপস্থিত হয়েছিল ।
এই সভ্যতা সাধারণত মানবিক জ্ঞান , বিশেষ করে পদার্থ বিজ্ঞান , কারিগরি ও গণিতশাস্ত্রের উন্নতির অবশ্যম্ভাবী সফলতা অর্জন করেছিল । এটি বিজ্ঞ ও দক্ষ
পদার্থবিদদের ধারাবাহিক চেষ্টা ও পরীক্ষা – নিরীক্ষারও নির্যাস ছিল । এ হিসেবে ওটা বিভিন্ন অংশ ও উপাদানের এমন একটি মিশ্রণ ছিল যার সম্পর্কে একই ধরনের নির্দিষ্ট কোন মত প্রকাশ করা সম্ভব নয় । , এই মিশ্র সভ্যতা এক পর্যায়ে অসম্পূর্ণ ও আরেক পর্যায়ে সম্পূর্ণ ছিল । অপকারীও ছিল , আবার কোন কোন ক্ষেত্রে উপকারী ও যথার্থও ছিল । কোন ক্ষেত্রে সঠিক ছিল , আবার কোন ক্ষেত্রে ত্রুটিযুক্ত ছিল । তার মধ্যে ঐ সমস্ত প্রকাশ্য ও সন্দেহাতীত জ্ঞানের সঙ্গে এমন ত্রুটিপূর্ণ অনুমান , কল্পনা ও চিন্তা এবং তাদের ধারণা মতে এমন সিদ্ধান্তও অন্তর্ভুক্ত ছিল যার মধ্যে বাদানুবাদ , গভীর চিন্তা ও বিবেচনার স্থান রয়েছে । তার মধ্যে এমন জ্ঞানের ফলাফলও ছিল যা গভীর চিন্তা ও বিবেচনা এবং ধ্যান ও অভিজ্ঞতার সারভাগ ছিল । আর এমন কিছু ছিল যার সম্পর্কে কিছু বলা সময়ের পূর্বে কথা বলা হতো ।
আর এমন অংশ ও উপাদানও ছিল যা কোন বিশেষ দেশ ও জাতির জন্যে নির্দিষ্ট নয় । যেমন অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান । আর এমন জিনিসও ছিল যাতে পাশ্চাত্য সভ্যতার স্থানীয় প্রভাব সম্পূর্ণভাবে বিদ্যমান ছিল এবং পাশ্চাত্য পরিবেশ ও সামাজিকতার গভীর ছাপও তাদের ওপর পড়েছিল । ওটা সেই ঐতিহাসিক বিপ্লব ও ঘটনাসমূহের ফল ছিল যা পাশ্চাত্য জাতিসমূহকে নিজ কাজের সীমা ও কেন্দ্রের মধ্যে অতিক্রম করতে হয়েছিল । আবার এমন জিনিসও ছিল যার দীন ও আকীদার সাথে গভীর সম্পর্ক ছিল । আর এমন অংশও ছিল যার সাথে ধর্মের কোন সম্পর্কই ছিল না । সভ্যতার এই মিশ্রণ এই বিষয়টিকে অধিক কঠিন করে দিয়েছে এবং এর গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছে । মুসলিম বিশ্বকে এক সংকটপূর্ণ ও কঠিন অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে এবং মুসলিম বিশ্বের নেতা ও চিন্তাবিদদের বুদ্ধিমত্তার জন্যে এটা একটি পরীক্ষাস্বরূপ হয়ে দাড়িয়েছে ।
নেতিবাচক ব্যবস্থা এই নতুন ও কঠিন অবস্থা হতে বাঁচার জন্যে তিনটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে : প্রথম ব্যবস্থা হলো বিরুদ্ধাচরণ করা অর্থাৎ মুসলিম বিশ্ব এই সভ্যতার সমস্ত ফলাফল ও উপকারিতাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করবে । তার কোন ভাল বা মন্দ কথা শুনতে ইচ্ছুক হবে না । দ্বিতীয় ব্যবস্থা হলো নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে ঐ সভ্যতা হতে একদিকে সরে পড়া এবং তা হতে কোন ফল ভোগ না করা , এমন কি ঐ জ্ঞান – বিজ্ঞানের সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক না রাখা , যে জ্ঞান – বিজ্ঞান দ্বারা পাশ্চাত্য জাতি শ্রেষ্ঠত্ব ও স্বাতন্ত্র্য লাভ করেছে । যেমন পদার্থ বিজ্ঞান , গণিতশাস্ত্র , “
কারিগরি জ্ঞান ইত্যাদি পাশ্চাত্য জাতি হতে অর্জন করা নিষিদ্ধ মনে করা এবং নতুন যন্ত্রপাতি , মেশিন , আসবাবপত্র ও জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিসকে গ্রহণ করা হতে বিরত থাকা । , এই নীতির প্রকৃতি ও শরীয়ত অনুযায়ী এর হুকুম ও ফলাফল এই নীতি বা ব্যবস্থা গ্রহণের স্বাভাবিক পরিণতি হলো বিশ্ব হতে মুসলিম বিশ্বের পেছনে পড়ে থাকা এবং জীবনের দ্রুতগামী যাত্রীদল হতে বিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া আর কিছুই নয় । এতে মুসলিম বিশ্ব অন্যদের হতে ছিন্ন হয়ে যাবে । মুসলিম বিশ্ব সীমাবদ্ধ একটি দ্বীপে পরিণত হবে যার চতুষ্পার্শ্বস্থ দুনিয়ার সাথে কোন সম্পর্ক নেই । সমুদ্রে এরূপ অনেক দ্বীপ হওয়া সম্ভব । কিন্তু স্থলভাগে এ ধরনের দ্বীপের কোন স্থান নেই । মানুষের প্রকৃতির সাথে ( যা নিজের পরিবেশ দ্বারা অল্প বিস্তর প্রভাবান্বিত ও উপকৃত হয় ) যুদ্ধ করা হলে তা কোন সময় কৃতকার্য হয় না । এ সমস্ত বাস্তবতা ছাড়াও এ নীতি ব্যবস্থা সংকীর্ণতার ওপর প্রতিষ্ঠিত । এ দ্বারা সৃষ্টিগত শক্তিসমূহকে অকেজো করে দেয়া হবে । এটা এই স্বাভাবিক দীনের সঠিক ব্যাখ্যা ও বর্ণনাও নয় । কারণ তা জগতে জ্ঞান ও দূরদর্শিতাকে ব্যবহার করার প্রতি বিশেষ জোর দিয়েছে এবং লাভজনক জ্ঞানসমূহ হতে উপকৃত হওয়ার প্রতি উৎসাহ দিয়েছে । বরং তা দীনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং শত্রু ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য নিজের অনুগতদেরকে যথাসাধ্য প্রস্তুতি গ্রহণের আদেশ দিয়েছে Read More After Buy Hardcover
সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহিমাহুল্লাহ এর জীবনী
মাওলানা সাইয়িদ আবুল হাসান আলী নদভী ( র ) সেই যে ত্রিশের দশকে তাঁর পূর্বপুরুষ বালাকোটের শহীদ আমীরু’ল – মু’মিনীন হযরত সাইয়িদ আহমদ বেরলভী ( র ) -এর অনুপম চরিত গ্রন্থ “ সীরাত সাইয়িদ আহমদ শহীদ ” লিখে তারুণ্যদীপ্ত বয়সেই উর্দূ সাহিত্যের আসরে নিজের একটি উল্লেখযোগ্য আসন করে নিলেন তারপর বিগত প্রায় পৌণে এক শতাব্দী ধরে তাঁর কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখে গেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরবদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত । পাঁচ খণ্ডে রচিত ‘ তারিখে দাওয়াত ও আযীমত ’ – এর ভাবানুবাদ ‘ সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ‘ তাঁর এমনি একটি অমূল্য গ্রন্থ । সীরাত থেকে ইতিহাস , ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তাঁর অবাধ গতি । তাঁর ” মা – যা খাসিরা’ল আলামু বিনহিতাতি’ল মুসলিমীন ” Islam and the World– এর বঙ্গানুবাদ ‘ মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো ? ‘ একখানি চিন্তাসমৃদ্ধ অনবদ্য আরবী গ্রন্থ যার অনুবাদ পৃথিবীর অনেক ভাষায় হয়েছে । নবীয়ে রহমত ‘ ছাড়াও তাঁর রচিত “ আল – মুরতাযা ” শীর্ষক হযরত আলী ( রা ) -এর জীবনী গ্রন্থখানা আরবী , উর্দূ ও ইংরেজী ভাষায় প্রভূত সুনাম অর্জন করেছে । ‘ শায়খুল হাদীছ হযরত মাওলানা মুহাম্মদ যাকারিয়া রহ . ‘ ও ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব তাঁর একটি অনবদ্য রচনা । , সমসাময়িক বিশ্বে তাঁর চাইতে অধিকতর খ্যাতিমান ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অন্য কোনও আলেম জন্মেছেন কি না এবং থাকলেও তাঁর মত এত অধিক স্বীকৃতি লাভ করেছেন কিনা সন্দেহ রয়েছে । প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের প্রায় সকল জনপদে যেমন তিনি আমন্ত্রিত হয়ে সে সব দেশ সফর করেছেন , তেমনি নোবেল পুরস্কার তুল্য মুসলিম বিশ্বের সব চাইতে মূল্যবান বাদশা ফয়সাল ‘ পুরস্কারে তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন । তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী – এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য , লখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম নদওয়াতুল – উলামা – এর রেকটর , ভারতীয় মুসলমানদের ঐক্য বদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পার্সোন্যাল ল ‘ বোর্ডের সভাপতি ছিলেন ।
তাঁর অস্তিত্ব কেবল ভারতীয় মুসলমানদের জন্যই নয় , গোটা বিশ্বের মুসলমানদের জন্যই এক বিরাট নেয়ামত ছিলেন । তাঁর বেশ কটি বই ইতিমধ্যেই বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে । একাধিকবার তিনি বাংলাদেশ সফরও করেছেন । তাঁর আত্মজীবিনীমূলক গ্রন্থ এ পর্যন্ত ৭ খন্ডে প্রকাশিত ‘ কারওয়ানে যিন্দেগী ‘ শুধু তাঁর আত্মজীবনীমূলক নয় , এটা সমসাময়িক বিশ্বের অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ও ব্যক্তির এক অপূর্ব আলেখ্যও বটে । তাঁর রচনায় আল্লামা শিবলীর অনবদ্যতা , আল্লামা সাইয়েদ সুলায়মান নদভীর সূক্ষ্মদর্শিতা , মাওলানা মানাযির আহসান গিলানীর সতর্কর্তা , মাওলানা আশরাফ আলীর থানবীর তাওয়া , সর্বোপরি তাঁর পূর্বপুরুষ সাইয়েদ আহমদ বেরলভী ( র ) -এর দরদ প্রতিফলিত হয়েছে । শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া ( র ) , মাওলানা মনযূর নোমানী ( র ) , ও রঈসুত – তাবলীগ মাওলানা ইউসুফ ( র ) -এর অনেক মুল্যবান গ্রন্থে তাঁর লিখিত সারগর্ভ ভূমিকাগুলো পড়বার মতো । আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে তিনি মাওলানা আহমদ আলী লাহোরী ( র ) এবং মাওলানা আবদুল কাদির রায়পুরী ( র ) -এর খলীফা । বিগত হিজরী ১৪২১ সনের ২২ রমযান জুম’আর পূর্বে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইতিকাল করেন । রায়বেরেলীর পারিবারিক কবরস্থানে রওযায়ে শাহ্ আলামুল্লায় তাঁকে দাফন করা হয় ।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?