- মুসলিম নারীদের জন্য নারী সাহাবিদের আদর্শ
- লেখক : মাওলানা আব্দুস সালাম নদবি রঃ
- প্রকাশনী : মাকতাবাতুল আরাফ
- বিষয় : ইসলামে নারী, সাহাবীদের জীবনী
- পৃষ্ঠা : 128, কভার : হার্ড কভার
যে গোষ্ঠীর ওপর সন্তুষ্ট হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা কুরআনে, প্রিয়নবির একনিষ্ঠ সাহচর্য পাওয়া সেই গোষ্ঠীই আমাদের আদর্শ। তাঁরা যেভাবে ইসলাম পালন করেছেন, সেই পদ্ধতি-ই আমাদের মডেল। সেই পথ আর পদ্ধতি মেনে চললেই আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে হবো চির-সফল। জীবনের নানা ক্ষেত্রে, নানা দিগন্তে তাঁরা যে নীতি বাস্তবায়ন করেছেন, যেভাবে বাস্তবায়ন করেছেন, তার মধ্যেই নিহিত আমাদের মুক্তির মূলমন্ত্র। তাই আমাদের জীবনে সাহাবিদের আদর্শ অপরিহার্য। তাঁদের জীবন-যাপন পদ্ধতি আমাদের জন্য অনুকরণীয়। তাদের ইবাদত পালনের পন্থা আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
একটা প্রজন্ম গড়ে ওঠে নারীর কোলে। নারীর নিবিড় পরিচর্যায় বেড়ে ওঠে। আমাদের সমাজ। কথায় আছে না, ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি শিক্ষিত সমাজ দেবো।’ যে নারীর পরিপালনের ওপর ভিত, মুসলিম সমাজের, মুসলিম প্রজন্মের, সেই নারীর ধর্ম পালনের অবস্থা আজ বেহাল। নারীদের দ্বীনি জীবন-যাপন আজ হারাতে বসেছে! পুরুষ বিভিন্ন মাধ্যমে ইসলামি দিক-নির্দেশনা পেতে পারে, জুমা-পূর্ব আলোচনা ও বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলে তাদের জন্য পরিবেশিত হয় নসিহা ও উপদেশ।
কিন্তু নারী! তারা সংসার আর পরিবার গোছানোতেই লিপ্ত। সংসার আর পরিবার তো তারা অবশ্যই গোছাবেন, কিন্তু তাই বলে ইসলামের বিধান তাদের থেকে এভাবে হারিয়ে যাবে! কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে-ই তারা জীবন পার করছেন, মুআমালাত আর মুআশারাতে তাদের অবস্থা জীর্ণ-শীর্ণ! নারীদেরকে এ অবস্থা থেকে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনতে একটা-ই রাস্তা—তাদেরকে দ্বীন জানাতে হবে, ইসলামের বিধি-নিষেধ সম্পর্কে অবগত করাতে হবে।
আর দ্বীন সম্পর্কে জানার সর্বোত্তম পদ্ধতি-ই হলো, নারী সাহাবিদের অবস্থা জানা। তাদের কর্ম-পদ্ধতি, আচার-আচরণ সম্পর্কে অবগতি লাভ করা। এবং তাদের পথে পা বাড়ানো।
মুসলিম নারীদেরকে নারী সাহাবিদের আদর্শ জানানোর জন্যই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। মাওলানা আব্দুস সালাম নদবি রহিমাহুল্লাহ এই বইতে উল্লেখ করেছেন, নারী সাহাবিদের বিভিন্ন কর্মপন্থা। ইবাদত, আর্থিক লেনদেন, ঈমান, আখলাক এবং সামাজিক আচরণে তাদের কর্মনীতি সুন্দরভাবে উল্লেখ করেছেন নদবি রহিমাহুল্লাহ। তাই, আপনি বইটি আপনার বোন, মেয়ে, স্ত্রী, মা, খালা, চাচি, ফুফুসহ যেকোনো প্রিয় মানুষকে সংগ্রহ করে দিতে পারেন। ইনশাআল্লাহ, তারা এতে দ্বীন অনুযায়ী চলার যথেষ্ট খোরাক পাবেন।
লেখকের ধারাবাহিক আলোচনাকে আমি এখানে ১২টি অধ্যায়ে বিভক্ত করেছি। প্রত্যেক অধ্যায়ের একাধিক পরিচ্ছেদও আছে এতে। ইতিহাস, হাদিস ও রিজালের গ্রন্থসমূহের প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন বইতে লেখক। সূত্র উল্লেখ করতে গিয়ে, লেখক শুধু অধ্যায় আর পরিচ্ছেদের নাম-ই উল্লেখ করেছেন। বেশ কয়েক স্থানে লেখক শুধু বইয়ের নাম উল্লেখ করেছেন। আমি খুঁজে খুঁজে হাদিস নম্বর উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি। হাদিসের কিতাব ব্যতীত অন্য বইগুলোর পৃষ্ঠা নং উল্লেখ করেছি। বিভিন্ন জায়গায় টীকাও সংযুক্ত করার প্রয়াস চালিয়েছি। টীকার অধিকাংশ আলোচনাগুলো আমারই করা।
প্রিয় পাঠক, আমরা বইটিকে নির্ভুল ও সুন্দর করার যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। বানান, ভাষা ও আলোচনা-সহ সবগুলো বিষয়ই আমরা গভীর যত্নের সাথে সম্পাদন করার চেষ্টা করেছি। তবুও বানান ও ভাষাগত কোনো ভুল থাকলে, অথবা অন্য যেকোনো ভুল তথ্য থাকলে, আমাদেরকে জানানোর অনুরোধ করছি।
এ পর্যায়ে এসে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, বইটির প্রকাশক মাহমুদ হাসান ভাই ও ভাষ সম্পাদক, প্রিয় বিন ইয়ামিন সানীম ভাই সহ সকলের। বিভিন্ন সময়ে যারা বইটির কাজের খোঁজ নিয়েছেন, সেই সকল প্রিয় মানুষের প্রতিও জানাচ্ছি একান্ত কৃতজ্ঞতা। বিশেষত, জীবন-সঙ্গিনী প্রেয়সী আহলিয়ার কথা না বললে-ই নয়। আমি অনেকটা অলস প্রকৃতির, তাই কাজে অনেক ধীরগতির। সে ক্ষেত্রে তিনি আমাকে প্রায়-ই জোর দিয়েছেন। অনুবাদ না করে ঘুমিয়ে থাকার কারণে বিভিন্ন সময় অভিমান করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাকে জাযায়ে খায়ের দান করেন। আমিন।
সুমিলপাড়া, আদমজী, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
মুহাম্মাদ ইমদাদুল্লাহ – নারী সাহাবীদের আদর্শ
নারীদের শিক্ষা-দীক্ষা অর্জনের বিষয়ে মৌলিকভাবে কোনো মতভিন্নতা নেই। নারী শিক্ষার বিষয়ে মতভিন্নতার কারণ অন্য একটি। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার দরুন একজন মুসলিম নারী নিজের দ্বীন, শিষ্টাচার এবং সামাজিকতার পুরাতন নীতিমালা বহাল রাখতে পারবে কি না? অন্যভাবে বললে, ইসলামের প্রাচীন ধারাসমূহের সংরক্ষণ করতে পারবে কি না? এই সংশয়ের কারণেই মূলত নারী শিক্ষা নিয়ে মতভিন্নতা তৈরি হয়েছে। যারা নারী শিক্ষার বিপরীত মত প্রদান করেন, তারা এই সংশয়কে-ই নিজেদের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। বর্তমান সময়ে শিক্ষিত পুরুষগণ দ্বীন-ধর্ম, শিষ্টাচার আর সামাজিকতার বিষয়ে যে দৃষ্টান্ত প্রকাশ করেছে, তাতে উপর্যুক্ত সন্দেহ আরও দৃঢ়তা পায়।
অন্য ধর্মীয় নারীগণও আমাদের মুসলিম নারীদের জন্য উত্তম কোনো আদর্শের প্রকাশ ঘটাতে পারেনি। আর এটা সম্ভবও ছিল না। পক্ষান্তরে ইসলামের প্রাচীন ইতিহাস আমাদের সামনে মুসলিম নারীদের জন্য উত্তম আদর্শ, আর সংস্কৃতির মৌলিক নমুনা সমুজ্জ্বল করে রেখেছে। এখন তো যুগ-ই পালটে যাচ্ছে। ইউরোপীয় সভ্যতা আর ইউরোপীয় সামাজিকতা সম্পর্কে আমাদের আধুনিক শিক্ষিত লোকজন-ই অসন্তোষ প্রকাশ করছে।
যদি আমাদের নারীদের সামনে ইসলামের মহীয়সী এবং সম্মানিত নারীদের আদর্শ এঁকে দেওয়া যায়, তাহলে তাদের স্বভাবজাত স্বাভাবিকতার কারণে তারা ইসলামের মহীয়সীদের আদর্শে আরও বেশি প্রভাবিত হয়ে যাবে। বর্তমান সময়ের বিভিন্ন আকর্ষণ আর ঝোঁকের প্রতি বিরাগ হয়ে, তারা-ই বিশুদ্ধ ইসলামি শিষ্টাচার, ইসলামি সামাজিক নীতিমালা এবং ইসলামি সংস্কৃতির জীবন্ত নিদর্শন হয়ে ওঠবে।
ইসলামের প্রত্যেক যুগে যদিও বিভিন্ন নারীগণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছেন। কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মহীয়সী স্ত্রীগণ এবং নারী সাহাবিগণ সকল ক্ষেত্রে-ই সমানহারে বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। তাঁদের-ই দ্বীনি, চারিত্রিক, সামাজিক আর জ্ঞানকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডগুলো আমাদের নারীদের জন্য উসওয়ায়ে হাসানা হতে পারে। হতে পারে অনুপম আদর্শ। তাঁদের কর্মকাণ্ডের অনুসরণের মাধ্যমে-ই কেবল বর্তমান সময়ের সকল সামাজিক আর সাংস্কৃতিক অবক্ষয় থেকে পরিত্রান সম্ভব।
আমি ‘উসওয়ায়ে সাহাবা’ গ্রন্থের উভয়খণ্ডে সাহাবি যুগের সামাজিক, চারিত্রিক আর জ্ঞানকেন্দ্রিক বিবরণ একত্র করেছি। সেখানে নারী সাহাবিদের এই সকল কর্মকাণ্ডও উল্লেখিত হয়েছে সযত্নে। কিন্তু নারী সাহাবিদের মহত্ত্ব আর বড়োত্বের প্রতি লক্ষ রেখে, উসওয়ায়ে সাহাবা গ্রন্থে ছড়িয়ে থাকা নারী সাহাবিদের বিভিন্ন আদর্শগুলো ভিন্ন গ্রন্থে একত্র করেছি। সাথে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্যের উল্লেখও করেছি। এতে একসঙ্গে দুটি লাভ হয়েছে।
ক. নারী সাহাবিগণের দ্বীনি, সামাজিক, চারিত্রিক আর জ্ঞানকেন্দ্রিক জীবনকথা স্বতন্ত্রভাবে সংরক্ষিত হয়ে গেছে।
খ. আমাদের মহিলা ও মেয়েদের অধ্যয়ন, পাঠ আর হিদায়াত গ্রহণের জন্য নির্ভরযোগ্য এবং প্রভাবশীল ঘটনাসমূহের একটি গ্রন্থও তৈরি হয়ে গেছে। এই বইয়ের আদর্শ অনুযায়ী আমল করে, আমাদের নারীগণ ইসলামি দিক নির্দেশনার উৎকৃষ্ট নমুনা আর দৃষ্টান্ত হয়ে যাবে। নারীদের শিক্ষা অর্জন সম্পর্কে যে সকল সন্দেহ প্রকাশ করা হয়, এই বইয়ের মাধ্যমে সে সন্দেহগুলোর জবাবও হয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলা-ই একমাত্র তাওফিক দাতা।
আব্দুস সালাম নদবি
মানব প্রকৃতির কোমলতা, অন্তরের নম্রতা আর প্রভাব গ্রহণকারী আত্মা— একজন ভালো মানুষের মূল সম্পদ। এর মাধ্যমে সে সর্বপ্রকার উপদেশ, শিক্ষা-দীক্ষা আর দিক-নির্দেশনা গ্রহণ করতে পারে। ফুলের পাপড়ি ভোরের কোমল আর হালকা বাতাসেই নড়ে ওঠে। পক্ষান্তরে শক্তিশালী গাছকে ঝড় বাতাসের তীব্রতাও নাড়াতে পারে না। চোখের দৃষ্টি স্বচ্ছ গ্লাস অতিক্রম করতে পারে। কিন্তু তীব্র স্পিডের তিরও ঢুকতে পারে না পাথরের অভ্যন্তরে। মানুষের অবস্থাও হুবহু এমন।
কোমল প্রকৃতি আর নম্র হৃদয়ের মানুষ, হক ও ন্যায়ের সব ধরনের দাওয়াত কবুল করে নেয়। পক্ষান্তরে কঠোর প্রকৃতি আর কঠিন হৃদয়ের মানুষের অন্তরে বড়ো বড়ো মুজিযাও প্রভাব ফেলতে পারে না। এই স্তর বিন্যাসের উদাহরণ সর্বত্রই সহজে পাওয়া যায়। কিন্তু ইসলাম প্রসারের ইতিহাস পুরোপুরিভাবেই এই ধরনের দৃষ্টান্তে ভরপুর। কাফেরদের এমন অসংখ্য মানুষের নাম ইতিহাসে সংরক্ষিত আছে, যাদের ওপর হাজার প্রচেষ্টার পরও তারা আল্লাহ তাআলার সামনে মাথা নত করেনি।
পক্ষান্তরে সাহাবিদের ইতিহাসে এমন অগণিত মানুষ আছেন, যারা ইসলামের বাণী শুনতেই ইসলামের দলে শামিল হয়ে গিয়েছেন। এই শ্রেষ্ঠত্বে সাহাবিগণ রাদিয়াল্লাহু আনহুমের সাথে নারী সাহাবিগণও অংশীদার ছিলেন পুরোপুরিভাবে। তাঁরা সাহাবিগণের এই শ্রেষ্ঠ দলেই কেবল অংশীদার ছিলেন এমন নয়, বরং তাঁরা সাহাবিদের থেকেও অগ্রগামী ছিলেন। ইসলামের আগমনের পরপরই প্রথম খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা কোনো প্রকারের চাপাচাপি ও প্রচেষ্টা ব্যতীত ইসলাম গ্রহণ করেছেন, আল্লাহর বিধানের সামনে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। সাহাবি রাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সোমবার দিন আমি নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছি।
ঐ দিনের শেষ ভাগেই খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা নামায আদায় করেছেন। পরদিন মঙ্গলবার আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু নামায পড়েছেন। এরপর যায়েদ বিন হারিসা ও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নামাযে অংশগ্রহণ করেছেন।”
এই বর্ণনা থেকে জানা গেল, রিসালাতের সূর্য হতে প্রথম দিন যে কিরণ দুনিয়ার দিদিগন্তে চমকে উঠেছে, সেটা একজন কোমল হৃদয়সম্পন্ন নেককার নারীর বরকতময় সিনাকেই প্রথম আলোকিত করেছ।
(১) তারিখুল খামিস ফি আহওয়ালি আনফাসি নাফিস, পৃষ্ঠা : ২৮৬।
ইসলামের সূচনাকালে ইসলাম গ্রহণ করতে যতটা হিম্মত, বীরত্ব আর সাহসের প্রয়োজন ছিল, তারচেয়ে অনেক বেশি সাহসিকতার প্রয়োজন পড়ত — ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা করতে। ঘোষণা দিলেই কাফের, মুশরিকদের অনেক বেশি নির্যাতনের শিকার হতে হতো। কিন্তু তবুও পুরুষ সাহাবিগণের সাথে সাথে নারী সাহাবিগণও অত্যন্ত সাহসিকতা আর বীরত্বের সাথে, নিজেদের ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা প্রকাশ্যে দিয়েছেন। ইসলামের প্রারম্ভে যে সাতজন মহান মানুষ ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ছয়জন পুরুষ ছিলেন। আর একজন ছিলেন নারী। পুরুষদের মধ্যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবি আবু বকর, সাইয়্যেদ বিলাল, সাহাবি খাব্বাব, সুহাইব ও আম্মার রাদিয়াল্লাহু আনহুম। আর সপ্তম নাম্বারে ছিলেন একজন দরিদ্র নারী সাহাবি। আম্মার রাদিয়াল্লাহু আনহুর মা মহীয়সী সুমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা।
নারী সাহাবিগণ নিজেদের পবিত্র মানসিকতার দরুন সহজে ইসলাম গ্রহণ করেই ক্ষান্ত যাননি। বরং তাঁরা অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে ইসলাম প্রচারের কাজও করেছেন।
এক সফরে সাহাবিগণ একজন নারীকে ধরে এনেছিলেন, যার কাছে পানির থলে ছিল। সাহাবিগণ পানির প্রয়োজনেই তাকে গ্রেফতার করেছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার থেকে পানি নিয়ে মূল্যও পরিশোধ করে দিয়েছিলেন। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই আদর্শবাদীতা আর নৈতিকতা দেখে তাঁর নবুওয়াতের ব্যাপারে সেই নারীর বিশ্বাস সুদৃঢ় হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তার দাওয়াত আর প্রচেষ্ঠায় তার পুরো গোত্র মুসলিম হয়ে গিয়েছিল।
(১) তারিখুল খামিস, পৃষ্ঠা নং: ২৫৭।
(২) সহিহুল বুখারি, তায়াম্মুম অধ্যায়। হাদিস নং: ৩৪৪। হাদিসটি অনেক বড়। সাহাবি ইমরান থেকে বর্ণিত। এই ঘটনায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক বড় একটি মুজিযাও প্রকাশ পেয়েছিল—অনুবাদক।
মাওলানা আব্দুস সালাম নদবি
মাওলানা আব্দুস সালাম নদবি রহিমাহুল্লাহ আযমগড়ের দারুল মুসান্নিফিনের অন্যতম লেখক ও গবেষক। গবেষণার ক্ষেত্রে সুলাইমান নদবি রহিমাহুল্লাহর ডানহাত বলা হয় তাঁকে। শিবলি নুমানি রহিমাহুল্লাহর মামাতো ভাই এবং তাঁর মিশনের অন্যতম সদস্য।
১৮৮২ সনে আযমগড়ের আলাউদ্দিন পট্টি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন। আগ্রা ও নদওয়াতে শিক্ষা অর্জন করে অবশেষে ১৯১০ সনে নদওয়া থেকে শিক্ষা অর্জন সম্পন্ন করেছেন। সে বছরই সেখানে সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। শিবলি নুমানি রহিমাহুল্লাহ তখন নদওয়ার শিক্ষা সচিব ছিলেন। তিনি তখন আব্দুস সালাম নদবিকে লেখালেখির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি প্রথমে মাসিক আন-নদওয়ার সহকারী সম্পাদক, পরে সম্পাদক নিযুক্ত হয়েছিলেন।
শিবলি নুমানি রহিমাহুল্লাহর ইন্তেকালের পর তার অসম্পূর্ণ লেখালেখি পূর্ণতা দানের দায়িত্ব যাদের ওপর পড়েছিল, আব্দুস সালাম নদবি ছিলেন তাদের অন্যতম।
১৩৭৬ হিজরির ২৭শে সফর, মুতাবেক ১৯৫৬ সনের ৪ই অক্টোবর তিনি ইন্তেকাল করেছেন। শিবলি নুমানি রহিমাহুল্লাহর পাশেই তাকে দাফন করা হয়।
তাঁর রচিত গ্রন্থাবলি
১. উসওয়ায়ে সাহাবা। (পুরুষ সাহাবিগণের আদর্শ) ২. উসওয়ায়ে সাহাবিয়্যাত (নারী সাহাবিগণের আদর্শ)
৩. তারিখে আখলাকে ইসলামি। (ইসলামি চরিত্রের ইতিহাস) ৪. সিরাতে উমর বিন আব্দুল আজিজ
৫. ইকবালে কামেল
৬. শিরুল হিন্দ
৭. ইমাম রাজি
৮, হুকামায়ে ইসলাম ৯. ফুকারায়ে ইসলাম
১০. আল-কাযা ফিল ইসলাম। এ ছাড়া আরও বহু কিতাবের উর্দু অনুবাদ করেছেন তিনি। লিখেছেন অনেকগুলো প্রবন্ধ । নারী সাহাবীদের আদর্শ Original Copy
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?